কিছু কাল আগেই বহু টাকা পয়সা ব্যয় করে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিলো। সেই তথ্য সংগ্রহ ফর্ম ফিলাপ করার সময় দেখেছি , শিক্ষাগত যোগ্যতা , ছবি থেকে শুরু করে আল্লাহর দুনিয়ায় যা কিছু দরকারী তথ্য আছে , সবই নেওয়া হয়েছিলো । এই ধরেন , নাম , ধাম, বয়স , ঠিকানা ইত্যাদি ইত্যাদি ।
এই তথ্য গুলা যোগাড় করা , সেই গুলা লিপিবদ্ধ করা , ভুল হইলো কিনা যাচাই বাছাই করা যে কত্ত জরুরী আর কত কষ্টের সেইটা যে কিনা অন্তত একবার জীবনে একটাও সার্ভে বা রিসার্চ করেছে , সে জানে । বাংলাদেশের মানুষের রোগ, শোক, স্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করে সেই হতভাগা গুলা আরো ভালো করে জানে , বাংলাদেশে কোন পপুলেশন বেসড স্টাডি পাওয়া কি পরিমান কঠিন! মিত্র সাহেবের কাছে গেলে জানা যাবে , কয় বছর পর পর যে বাংলাদেশ হেলথ এন্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভে টা হয় , যা কিনা আমাদের সর্ব প্রকার রিসার্চ , পলিসি এবং জাতীয় স্বাস্থ্য বাজেট ও জনগন সংক্রান্ত বহু বহু সরকারী -বেসরকারী সিদ্ধান্তের মূল, দাতা গোষ্ঠীদের ঋণ কার্যক্রমের অন্যতম তথ্যখাতা , সেইটা কত্ত সহজ হয়ে যেতে পারে যদি খালি ভোটার লিস্ট থেকে স্যাম্পল নেওয়া যায় । উল্লেখ্য , এই সার্ভেটা হয় আমেরিকার বদান্যতায় ।
হ্যাঁ, এই রকম প্রায় সর্বপ্রকার " জাতীয় সংখ্যা তথ্য বা স্ট্যাটিস্টিক্স " এর জন্য আমাদের ভরসা কেবলই "বিজাতীয় স্টাডি" । হয় শ্রীলংকা , নয় ভারত , এমন কি পাকিস্তান থেকেও আমদানি করতে হয় " বাংলাদেশের রোগ, শোক , সম্ভাব্য চিকিৎসার" রিসার্চ স্টাডি । দু 'চারটা আমাদের নিজস্ব যা আছে তাও আগেই বলেছি , বিভিন্ন বিজাতীয় সরকার নয়ত রিসার্চ অরগানাইজেশনের বদান্যতা । তাও বাবা আমি খুশি, অন্তত অন্য দেশের মানুষের পার্সেন্টেজ দেখে আমাদের কি করা উচিত সেইটা প্রোজেক্টেড তো হচ্ছে না । হরে দরে তাই তো করতে হয় হরদম। এই বদান্যতার উপযুক্ত কৃতজ্ঞতা স্বরুপ ভোটার লিস্টখান অন লাইনে খুলে দিলে আমরা , হতভাগা বাংলাদেশী রিসার্চাররা একটু সহজে কাজটা করতে পারতাম।
পপুলেশন বেসড রিসার্চ গুলা করতে পারতাম। বাংলাদেশের আছেই কয়টা টাকা , ঋণই বেশি , সেই কয়টা টাকা আসলেই কোন খাতে ঢালা উচিত , সেইটার দিক নির্দেশনা গুলা পাওয়া যাইতো পপুলেশন বেসড স্টাডি গুলা করতে পারলে।
পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মত একটা জাতীয় পরিচয়পত্র , একটা পরিচয়ের নাম্বার পেয়েছিলাম। অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম । এই কার্ড একদিন ডিজিটাল কার্ড হবে । এই নম্বর , এই পরিচয় পত্র দিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো । পাস্পোর্ট নেব । এই নাম্বারেই ট্যাক্সের যাবতীয় কাজ কর্ম সারবো । ভোট দেব। লাইব্রেরী থেকে বই পত্র নেব । হাসপাতালে চিকিৎসা নেব। ব্যাংকিং এর যাবতীয় কাজ কর্ম সারবো । আরো কিছুদিন পরে , এই নাম্বারটা দিয়ে হয়ত ডিজিটাল ওয়ালেট ( বাইরের দেশের মত) বানিয়ে কার্ড দিয়ে নিত্যদিনের বাজার , কেনা কাটা করতে পারবো ।
" বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিকের একটা আলাদা পরিচয়পত্র থাকবে। "
" সুদূর ভবিষ্যতে , প্রতিটা শিশু জন্মের সাথে সাথে একটা নম্বর , একটা পরিচয় পত্র পাবে। যাতে তার সমস্ত তথ্য সংগৃহিত , সন্নিবেশিত থাকবে । বাংলাদেশ এর জাতীয় ডাটা ব্যাংকে এই তথ্য গুলা দেখে দেখে স্থানীয় সরকার এবং অন্যান্য সংস্থা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কোথায় কি করা দরকার । (হাইসেন না , সুদূ উ উ উ উ র ভবিষ্যত বলছি) "
হ্যাঁ, এই স্বপ্ন গুলো ধাপে ধাপে আগানো যেত । সব জায়গায় জাতীয় পরিচয়পত্র , যেটাকে খুব সহজেই ডিজিটাল কার্ডে রুপান্তরিত করা যায় , যা কিনা রিডার মেশিন দিয়ে রিড করলেই মালিকের পরিচয় ও তথ্য দেখাতে পারে ( কার্ডের উপরেও ছবি , পিছনে সিগ্নেচার দেওয়া যায়) কম্পিউটারে , ব্যবহার করা যেত। একাধারে পাসপোর্ট, ভোটার আই ডি হিসেবে এবং অন্যান্য যে কোন কাজে যেখানে বার বার নিজের বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্টির তথ্য দিতে হয় -- সেই সব জায়গায় খুব সহজেই ব্যবহার করা যেত ।
" দুর্নীতি করা কঠিন হয়ে যাইতো সবার জন্য । কাজে কর্মে টাকা ব্যবহার না করে পরিচয় পত্রের বিপরীতে একটা ডেবিট একাউন্ট খুলানো যায় । ডেবিট কার্ডে টাকা ভরে ডিজিটাল আদান প্রদান করা যায় । সব কাজে জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করতে বাধ্য করা হলে কে কোথায় কি করছে সেইটা মনিটরিং করা যায় । দুর্নীতি রোধ করা যায়।"
যারা বি এম ডি সি রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন , যারা ট্রান্সক্রিপশন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে , যারা শিক্ষা বোর্ড থেকে কোন কারনে নতুন করে সার্টিফিকেট তুলতে গেছেন , তারা খুব ভালো করেই জানেন কি ধরনের হ্যাপা সইতে হয় । আমার মনে আছে , একটা কাজের জন্য , তিন বার তিন জায়গা থেকে একই ধরনের ফর্ম মেডিকেল কলেজ থেকে সত্যায়িত করতে হয়েছিলো । মানে প্রোভিশনাল সার্টিফিকেট এর জন্য একবার । সেই সার্টিফিকেট দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় এক বার ।মূল সার্টিফিকেটের জন্য আবার।
প্রভিশনাল সার্টিফিকেট , যা কিনা কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয় - উকিল - কুকিল -পারলে মন্ত্রী মিনিস্টার সব দিয়ে পরীক্ষা ও সত্যায়িত করে তারপর নিতে হয়েছিলো , সেইটা জমা দিয়ে সেই একই প্রক্রিয়ায় আবারো ( কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয় - উকিল - কুকিল -পারলে মন্ত্রী মিনিস্টার সব দিয়ে পরীক্ষা ও সত্যায়িত করে) সব কিছু করে প্রোফেশনাল সার্টিফিকেট নিতে হলো । আমি প্রশ্ন করেছিলাম , " প্রভিশনাল সার্টিফিকেট আপনারাই ইস্যু করেন । আপনারাই একই প্রক্রিয়ায় সব কিছু যাচাই বাছাই করে দেখেন, একই মানুষ , একই প্রতিষ্ঠান প্রভিশনাল সার্টিফিকেটের জন্য সব কিছু সাইন করে । এপ্লিকেশন কারী মানুষ্টাও এক। আমার সমস্ত তথ্য প্রভিশনাল দেওয়ার সময় থেকেই আপনাদের কাছে আছে । তাহলে মূল সার্টিফিকেট দিতে সেই একই কাজ আবার করান কেন? প্রভিশনাল সার্টিফিকেট, যেইটা আপনারা নিজে যাচাই বাছাই করে দিয়েছেন , সেই কাগজটাকে আপ্নারা নিজেরাই বিশ্ব্বাস করেন না? স্রেফ এইটা জমা দিলেই তো মূলটা পাওয়া যাওয়া উচিত! "
এই ছাগ্লামির কোন উত্তর পাইনি।
তার উপর , বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গায় বসে সাইন করবেন , টাকা দিতে হবে আরেক মুল্লুকের একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের একটা মাত্র শাখায় , অন্য কোন রকমের ফি দিটে হইলে সেটা দিতে হবে আরেক ব্যাংকের আরেকটি নির্দিষ্ট শাখায় , সেইটা আবার সাত সকালে মাত্র কিছুক্ষনের জন্য টাকা নেয় , কলেজের প্রিন্সিপাল আজ আসেন নাই , কাল মিটিং এ । পাঠক , বিশ্বাস করুন , গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছা হয়েছিলো । শিক্ষা বোর্ডের কাজের সময় জনৈক মহিয়সী দয়া পরবশ হয়ে বললেন , " আপনি কি বিদেশে পাঠাবেন এই সার্টিফিকেট? তাহলে জরুরী ফি দেন। নাইলে ৩/৪ মাসেও এইটা পাবেন না।"
আমি থ । বললাম , " আপনারাই লিখে রেখেছেন জরুরী ফি না দিলেও ১-৩ সপাহের মধ্যে দিবেন!" তিনি হেসে বললেন , " কতকিছুই তো লেখা থাকে !" রক্তজল করে আয় করা টাকা কয়টা দিয়ে দেবার পরেই উপকারী প্রানীদের আনাগোনা বেড়ে গেলো । একলা তরুনীকে দয়া করে দোতলায় নিয়ে যাওয়া হলো । এবং " নতুন সার্টিফিকেট ইস্যু " করার মত অতি জটিল , অতি ভয়াবহ, অতিমাত্রায় দামী কাজটা দেখার রোম হর্ষক ঘটনাটা আমার চোখের সামনেই সংঘটিত হইলো ( যেইটা করতে টাকা না দিলে ৩-৪ মাস সময় লেগে যায়) । একটা লোক সার্টিফিকেটের কাগজ বের করলো ( যার এক মাত্র যোগ্যতা তার হাতের লেখা সুন্দর) । পুরানো সার্টিফিকেট দেখে , খাতার সাথে মিলিয়ে , নতুন সার্টিফিকেটে " সুন্দর হস্তাক্ষরে" লিখলো । সার্টিফিকেট আগে থেকেই সাইন করা । তারপর আমার হাতে দিয়ে বললো , " আপনার ভাগ্য ভালো আজকে সবাইকে এক সাথে পেয়ে গেছেন । নইলে একদিনে আমরা এই সব কাজ করি না।" ( আল্লাহ , তুমি সাক্ষী , সেই মহিয়সীর উপকার বুঝতে পেরে আমি আজও তাদের খুরে শত কোটি সালাম জানাই)
ভেবেছিলাম এই নিরন্তর ছাগুগিরি বন্ধ হবে এই জাতীয় পরিচয় পত্র ( যার ফিল আপ ফর্মে আমার ছবি, আমার আঙ্গুলের ছাপ , চাইলে জেনেটিক ইনফর্মেশন নেওয়ারও হয়ত জায়গা আছে) একবার ডিজিটাইজড হয়ে গেলে ।
বিশ্বাস করেন মাননীয় কমিশনার , নিরন্তর দুর্ভোগ , কিছু দাঁতালের শুয়োরামি , ঘুষ খাওয়া , দুর্নীতি আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে - এই চিন্তা করে আমি এতটাই খুশি হয়েছিলাম যে আপনি যদি বলতেন , " ল্যামিনেট করা কাগজের টুকরো" আমার জাতীয় পরিচয় পত্র / ভোটার আই ডিটা ডিজিটাল মেশিন রিডেবল কার্ডে পরিণত করার জন্য যে টাকা লাগবে , সেইটা ফি আকারে আমাকেই দিতে হবে , আমি সানন্দে রাজি ছিলাম / আছি ।"
সেই টাকার পরিমান যদি ৫০০, ১০০০ কিংবা ৫০০০ও হয় আমি রাজি । একটা পাসপোর্ট এর পিছনে এই রকমই ব্যয় করতে হয় আমাকে । আমি প্রচুর "গরীব" মানুষকে দেখি হাজার হাজার টাকা দিয়ে মোবাইল কিনতে , অভিজাত রেস্টুরেন্টে খেতে, কম্পিউটার এর বিভিন্ন এক্সেসরিজ কিনতে । মানুষ যদি বোঝে , এই একটা কার্ড তার সারাটা জীবন কত কাজে লাগবে , কত ভোগান্তি থেকে তাকে বাচাবে , আমি জানি মানুষ ব্যাংক লোন নিয়ে হলেও কার্ডের ফি দেবে মাননীয় কমিশনার । মানুষ সিংগার মেশিন, ব্রাভিয়া টিভি কিংবা ওয়াশিং মেশিনের মত তখন এই সর্ব কাজের কাজী ডিজিটাল জাতীয় পরিচয় পত্রটাও ইন্সটল্মেন্টে কিনবে । চাই শুধু আপনার সাহায্য । চাই বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার প্রতিজ্ঞায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সরকারের উদ্যোগ ।
অতএব , মাননীয় কমিশনার, বিনীত প্রার্থনা এই যে ,
হয় , আমাদের পরিচয় পত্রকে একটা কার্যকরী বহুমাত্রিক ডিজিটাল কার্ডে পরিণত করুন ,
না হয় ,
ভোটারদের প্রাথমিক তথ্য গুলা আমারে দেন , আমি রিসার্চ করি ।