৫০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষনা
বিশ্বের প্রত্যন্ত ও টেকি পুওর অঞ্চলের ( ডেভেলপিং কান্ট্রি) ক্রিটিকাল হেলথ চ্যালেঞ্জ এর কোন সমাধান যা মোবাইল ফোন এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব , যদি বের করতে পারেন, এই পুরস্কার সাথে কোম্পানি খুলে ব্যবসা বাণিজ্য করার সম্ভাবনা আপনার হাতের মুঠোয় !
কেন?
মনে করুন আপনার পরিচিত কেউ মারা গেছে ক্যান্সারে। তার বেচে যাওয়া বাচ্চা দুটো আবার মায়ের মতন ক্যান্সারেই মারা যায় কিনা আপনি সেইটা আগে থেকেই সাবধান হইতে চান । আপনি জানতে চান বাংলাদেশে কয়জনের ক্যান্সার হয়? তার ফ্যামিলি রিস্ক কত %? কোন ধরনের ক্যান্সার বাংলাদেশে কাদের বেশি হয় ?
পরিচিত কেউ রোড এক্সিডেন্টে হাত পা ভেঙেছেন। ডাক্তার বলছে , বাংলাদেশে এই অপারেশন হয় না কিন্তু আপনি জানতে চান আসলেই এই চিকিৎসা এইখানে করা সম্ভব কি না!
আপনি শুনেছেন বাংলাদেশে নাকি প্রতি দশজনে একজনের হেপাটাইটিস বি হইতে পারে , ভ্যাক্সিন নিয়েছেন ভয়ে কিন্তু যেই সব উপায়ে এই রোগ ছড়ায় সেই রক্ত সঞ্চালন, ডেন্টিস্ট কিংবা অন্য সারজিকাল অপারেশনে স্টেরিলাইজড যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় কিনা এই ভয়ে রক্ত দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। দাঁতের ব্যথাও আপনাকে ডেন্টিস্ট এর কাছে নিতে পারে না।
আব্বু আম্মুর ডায়বেটিস আছে । প্রতিবার চেক করাতে বারডেম যাওয়া একটা যন্ত্রনা হয়ে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু উপায় কি ?
এই রকম নানান কাজে আমাদের প্রতিদিন কোন না কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তথ্য লাগে । আর আপনি যদি হোন কোন হাসপাতাল এর ম্যানেজার, থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার, পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, বাংলাদেশ পুষ্টি ও স্বাস্থ্য প্রকল্পের কর্মী কিংবা জেলার সিভিল সার্জন, অথবা দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী - আপনাকে প্রতিদিনই এই রকম কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় যার জন্য চাই সঠিক তথ্যের সাহায্য।
কি অবস্থা ?
কিন্তু এমন খুব কম রোগ বা কন্ডিশনই আছে যার উপর বাংলাদেশের নিজের হেলথ পপুলেশন ডাটা আছে । আমরা কোটি কোটি টাকা দিয়ে মেডিকেল যন্ত্রপাতি , ড্রাগ, ভ্যাক্সিন , ইত্যাদি কিনি কিন্তু এই সব কেনাকাটা কিংবা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যেই ডাটা ব্যবহার করি ( আসলেই আমাদের দরকার আছে কি নাই) তা সবই আমেরিকা , ইউরোপ নয়ত প্রাণের বন্ধু পাকিস্তান-ভারতের কাছ থেকে ধার করা । বাংলাদেশের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর উপর সার্ভে ডাটা , ডিজিজ ডাটা , পপুলেশন ডাটা লজ্জাজনক রকমের কম । ঘুরে ফিরে ইউ এন, হু, এনজিও যা কালেক্ট করে , তাও আবার সব এক জায়গায় পাওয়া যায় না , তাই ভরসা। তবে অতি সম্প্রতি এই অবস্থা বদলাচ্ছে । বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিক্স এর সাইটটা দেখুন বুঝতে পারবেন, কি হারকিউলিন টাস্ক এই বেচারাদের করতে হয়। যে কোন সিদ্ধান্ত , সেইটা ইন্টারন্যাশনাল, ন্যাশনাল , রিজিওনাল হোক আর আপনার আমার ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালের জন্যই হোক, ডাটার গুরুত্ব নাই বা বললাম!
কয়েক বছর পর পর যেই " বাংলাদেশ হেলথ এন্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভে রিপোর্ট" বের হয় , তা যথেষ্ট নয় ভাই। একটা উদাহরণ দেই । বাংলাদেশের বরিশাল সংলগ্ন এলাকায় সেভ দা চিল্ড্রেনের জীবন ও জীবীকা প্রজেক্টে ৩০০০ কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার কাজ করে । এই ৩০০০ কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার অত্র এলাকার হাজার হাজার বাড়ির লাখো মানুষের ডাটা নিয়মিত কালেক্ট করে। এই কাজে কি পরিমান টাকা লাগে, পেপার খরচ হয়, ডাটা ম্যানেজমেন্ট এর সমস্যা, কার কি লাগবে না লাগবে সেই সব হিসাব রাখা - কাজটা কত বড় ?
ব্র্যাকের কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার ৩০,০০০ এর কম না ।
বাংলাদেশের সরকারের নিজস্ব ফ্যামিলি প্ল্যানিং ওয়ার্কার আছে ।
মা মৃত্যুর হার কমানোর জন্য দাই এর ট্রেনিং হয়। সারা দেশে কয়জন দাই কাজ করে? কয়জন মা তাদের কাছে যায়? এদের কয়জন কি সমস্যার জন্য মারা যায়? এই তথ্য গুলা নিয়মিত মনিটরিং করা লাগে । কিন্তু কি ভাবে?
আমার মনে হয় এতক্ষণে বুঝে গেছেন কি বলতে চাইছি।
জিঞ্জার ট্রেডার শিপ নিউজ হোয়াই ?
ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। ২০০৫ সালে যখন পাবলিক হেলথ এর উপর মাস্টার্স করি , তখন মাথায় জ্ঞানের পরিধি ডাক্তারি, জনস্বাস্থ্য , রিসার্চ এবং গরীবের রোগ - ডায়রিয়া, যক্ষা, ম্যালেরিয়া , বাচ্চা হতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু, বাচ্চার মৃত্যু - এই সব। গরীব মানুষ খাইতেই পায় না ত স্বাস্থ্য কেমনে ঠিক ঠাক রাখবে , হতাশ হয়ে ভাবি আর প্রতিদিন গ্রামে যাই , প্রথম প্রথম নিড বেসড সলুশন ; কমিউনিটি যা চায় সেইভাবে তাকে সার্ভিস দাও ধরনের হেলথ প্রোগ্রামিং শিখি আর ভাবি, ইয়া আল্লাহ! ১৪ কোটি মানুষ কি চায় এইডা কেমতে জানুম!!! কেমনে কি?
তখন কম্পিউটার খালি টিপতে জানি আর মহামান্যদের বদান্যতায় জীবনে পেহলি বার ২৪ ঘন্টা হাই স্পিড ইন্টারনেট চৌক্ষে দেখলাম। বুঝতেই পারছেন, তখন কম্পিউটার , মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটের মত প্রযুক্তি আমার কাছে আদার ব্যাপারি জাহাজের খবরে কি হবে?
যদিও ২০০২-০৩ সালেই পেশেন্টের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য মোবাইল কিনে ও মিনিটে ১০ টাকা দিয়ে ফতুর হয়ে গিয়েছিলাম।
তো সারা বিশ্ব হেলথ ওয়ার্কারদের অবস্থা ডেভেলপিং কান্ট্রিতে অনেকটা এই রকমই। আমরা ও আমাদের যারা টাকা পয়সা দেয়, সেই পলিসি মেকাররা স্বাস্থ্য যাও বা কিঞ্চিত বোঝে তো প্রযুক্তি বুঝে না , যারা প্রযুক্তি বুঝে মানে ইঞ্জিনিয়ার, প্রোগ্রামার তারা সাধারনত হেলথ এবং হেলথ ওয়ার্কারদের প্রয়োজন, সমস্যা , চাওয়া পাওয়া নিয়ে কাজ করে না । কিছুদিন আগে পর্যন্তও প্রযুক্তি নির্ভর হেলথ ইন্টারভেনশনকে উন্নত বিশ্বের উন্নত লোকজনের কাজ কারবার ভাবা হইত, গরীবের জন্য, অনুন্নতদের জন্য, নিরক্ষরদের জন্য ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন নির্ভর উপায় গুলা বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর মতই ছিলো । কিন্তু সমস্ত কিছুকে বদলে দিলো মোবাইল টেলিফোন। সারা বিশ্বে দাবানলের মতন ছড়িয়ে পড়া নতুন প্রযুক্তি যা আজকে হাতের মুঠোয় বিশ্বকে এনে দিয়েছে । এইটা এখন অনেকটা মিনি কম্পিউটারের মতই কাজ করে যা আকারে ছোট্ট, দামে সস্তা , কাজে কর্মে পটু এবং কম্পিউটারের মতই এইটাকে চাইলে লাখ লাখ ভিন্ন ভিন্ন কাজে লাগানো যায় । একাধারে এইটা ক্যামেরা, মাইক্রোস্কোপ, টেলিফোন, ডাটা ম্যানেজার , জিপিএস - দশভূজা মা দুর্গা বললে ভুল হবে না ।
বর্তমান বিশ্বে মোবাইল (ফোন) হেলথ এর জন্ম ও অবস্থা ঃ
এরপর জল অনেক গড়িয়েছে । বাংলাদেশের একজন টেকনোলজি কানা ডেন্টিস্ট এর মাথায় " মোবাইল ফোনকে ব্যবহার করে হেলথ ও ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের চিন্তা" যেইটা এসেছিলো ও হালে পানি পায়নি সেইটাই আজকের , মানে , ২০০৯ সালে ইউনাইটেড নেশন্স, এম আইটি -কলম্বিয়া - স্ট্যানফোর্ড ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়, রকফেলার ফাউন্ডেশন, ভোডাফোন এলায়েন্স , বিল মেলিন্ডা গেটস সহ বিশ্বের তাবড় তাবড় ফান্ডিং ও ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির শয়ন, স্বপন , জাগরনে পরিনত হয়েছে । হালে তেল - পানি দুটাই পাচ্ছে ।
বাংলাদেশ ও পিছিয়ে নেই বলা যায় । সারা দেশে ২৪ ঘন্টা ফোন হেলথ সার্ভিস চালু হয়েছে । বারডেম এম কেয়ার মিলে মাই গ্লুকো মিটার চালু করেছে ( যদিও ব্যয় বহুল)। আরো এপ্লিকেশন পাইলটিং হচ্ছে । তাতে আপনার কি ?
দেবে আর নিবে - কিভাবে মিলিবে?
বাংলাদেশের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে ঢাকা শহর পর্যন্ত সমস্ত ডাক্তার, নার্স, সরকারি অফিসার, এন জি ও সহ যে কেউ, আবার বলছি, যে কেউই ব্যবহার করতে পারবে এমন সম্ভাব্য প্রযুক্তি এখন মোবাইল ফোন। অতি সম্প্রতি নাকি আমাদের ইউজার সংখ্যা ৪০ মিলিওন ছাড়িয়েছে । কিন্তু কম্পিউটার, ইন্টারনেট , মোবাইল ফোন - এই সব প্রযুক্তির ভিতর একমাত্র কথা বলা বা ভয়েস ডাটা আদান প্রদান করা ছাড়া অন্যান্য যে কোন এপ্লিকেশন ব্যবহার করতে গেলেই একটা নির্দিষ্ট পরিমান জ্ঞান থাকা লাগবে।লেখা লেখি বাংলায় না হলে ইংরেজি জানতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী বা দাই হইলে লেখাপড়া জানা লাগবে । যা বুঝি তার সবই হাইটেক ব্যাপার স্যাপার , কিন্তু আমার তো দরকার সিম্পল , সস্তা , যে কেউ কিনতে ও ব্যবহার করতে পারবে এমন জিনিস !
ঠিক এই জায়গাটাতেই আপনাদের ভুমিকা । বাংলাদেশে বিশ্বমানের প্রোগ্রামার, ডেভেলপার , ইঞ্জিনিয়ারের অভাব নাই। সামুর ব্লগার ও সচলায়তনের ডেভেলপার অরুপের সাথে প্রথম দেখায় এইটা নিয়েই মূলত কথা বলি। পরিকল্পনাটা আসলে ছিলোই যে শেষ পর্যন্ত এমন কোন প্রযুক্তি বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জের মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে দেওয়া যায় কিনা যা একাধারে সস্তা, বাংলা ভাষায় কাজ করে , যেইটাকে চালাইতে খুব বেশি জ্ঞান বা ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী লাগে না , এবং যেইটা কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার প্রতিদিনের কাজে কর্মে , বিশেষ করে ডাটা কালেকশনে কাজে লাগানো যাবে ।
সম্প্রতি আম্রিকার সি ডি সি এর এক ডাক্তার তার প্রোগ্রামার টিম নিয়ে বানানো এই রকম একটি সফট ওয়ার এপি সার্ভেওর ফ্রি দিচ্ছে । এইটার কোডও ওপেন সোর্স। জিনিসটা কি ও কিভাবে কাজ করে জানতে ভিডিও দেখুন এইখানে
অথবা পড়ুন এদের সম্পর্কে এইখানে ।
মোবাইল ফোন ব্যবহার করে হেলথ ও ডেভেলপমেন্ট এর উপর কাজ করার জন্য ইউনাইটেড নেশন্সের এলায়েন্স পাবেন এইখানে
বুঝতেই পারছেন , কাজ , ফান্ডিং , মানুষকে সাহায্য করার ইতিহাসে নাম লেখানোর সুযোগ সবই পাবেন । এই প্রযুক্তি ও সম্ভাবনা এখনো শিশু পর্যায়ে । এম আইটি, কলম্বিয়া, স্ট্যানফোর্ডের সাথে আমরা অনেক জায়গাতেই পাল্লা দিতে পারি না । কিন্তু সফটোয়ার ডেভেলপের কাজটা আমার বিশ্বাস বাংগালীদের নাগালের মধ্যে । কি ধরনের ওয়েব এপ্লিকেশন কিংবা সফটওয়্যার বানাতে পারেন তার নির্দেশনা পেতে ডাঃ সেলানিকিও ( ১ম ভিডিও) এর এম আই টি - লেমেলসন এওয়ার্ড এর প্রেজেন্টেশনটা দেখুন।
বাংলাদেশের মৃদুল চৌধুরীকে দেখুন এখানে যারা ডেভেলপমেন্ট 2.0 এর রানার আপ এবং এখন সারা বিশ্বে কাজ করছে ক্লিক ডায়াগ্নোস্টিক্স নামে গ্লোবাল কোম্পানি খুলে । মৃদুলকে কেউ কেউ চিনতে পারেন ডি নেট কোম্পানির মাধ্যমে যারা পল্লী বাংলায় কম্পিউটার ইন্টারনেট কমিউনিকেশন পাইলটিং করে দারুন কাজ দেখিয়েছিলো।
তাহলে আর কি? লেগে পড়ুন! কিছু রিয়েল সমস্যার রিয়েল সমাধান বের করুন !
হ্যাপি ডেভেলপিং!
[ প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। ]