somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুই একটা বোকাচোদা

১৮ ই মে, ২০২৩ দুপুর ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ট্রেন ধরতে বসে ছিলাম স্টেশনে। ট্রেন ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় পেড়িয়ে গেছে আরও ২০ মিনিট আগে। যাত্রী আসা এখনও শেষ হয়নি। শুধু ট্রেনটাই আসা বাকি। পাশেই বসে থাকা ব্যক্তির নিরুত্তাপ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ততা দেখে মনে হলো আমি একাই বোধহয় একটু বেশী উদ্বিগ্ন। পকেট থেকে টিকিটা বের করে আর একবার টাইম টা দেখে নিলাম। সবই ঠিকঠাক আছে। এমন সময় অপরিচিত ছেলেটির সালাম দিয়ে সামনে এসে হাসি মুখে দাড়িয়ে যেতে দেখে চেনার চেষ্টা করছিলাম।
২০/২১ বছরের একটি হাস্যজ্বল ছেলে। মস্তিস্ক সংরক্ষিত পরিচিত, স্বল্পপরিচিত, অপরিচিত মানুষদের ডাটাবেস সার্চ করছে দ্রুত এবং একই সাথে বোঝার চেষ্টা করছিলাম সালাম এর প্রাপক আমিই কিনা। কিছুটা সময় নিয়ে ভদ্রতাসুচক সময় পার হবার আগেই জবাব দিলেও চোখে ঝুলিয়ে রেখেছি স্বপ্রভিত প্রশ্ন, আমাকেই বলছো? তুমি কে বাবা ?
প্রশ্ন বুঝতে সমস্যা হয়নি বোঝা গেল তার জবাবে। আমাকে চিনতে পারেন নাই স্যার ? আমি আপনার ছাত্র তপু (গল্পের স্বার্থে একটি ছদ্ম নাম দেয়া হলো।, একটু পর একটা স্কুলের নাম বলা হবে সেটিও ছদ্ম) । ঐ যে, অশোকপুর ক্যাডেট স্কুলে ক্লাস ফোর এ পড়তাম। আপনি আমাদের অংক ক্লাস নিতেন । স্কুল এর পর কোচিং ও করাতেন আমাদের।
মনে পড়তে শুরু করেছে একটু একটু। লেখাপড়া শেষে চাকরীতে ঢোকার মাহেন্দ্রক্ষন বেকারত্বের সময়টুকুতে বাসা থেকে বেশ খানিকটা দুরে একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়িয়েছিলাম বছর খানেক। ৫ম শ্রেনী পযন্ত ক্লাস থাকলেও ছাত্রছাত্রী ছিলো হাতে গোনা। আমরা শিক্ষক শিক্ষিকা মোটে ৪জন। এর মধ্যে আমি বাদে অন্য শিক্ষক যিনি আছেন তিনি অফিস সহকারী কাম শিক্ষক । আবার মাঝে মাঝে তার আবাদী জমির কৃষকদের নির্দেশনা দিতে চলে যান। ফলে সারাদিন ক্লাস একটার পর একটা চলতেই থাকে একমনকি কখনও কখনও ২টি ক্লাস একইসাথে চলে। সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। মাস শেষে শুধু বেতন না সাথে পেতাম আশ্বাস। ছাত্র বাড়লে বেতন বাড়বে। বেতনের চাইতে আশ্বাসটাই ছিলো বড় সান্তনার। অবশ্য বসে ছিলাম না। ৫ম শ্রেনীর একটা ব্যাচ সকালে ক্লাস শুরুর আগে আর ৪র্থ শ্রেনীর একটা ব্যাচ ক্লাস শেষে পড়িয়ে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছিলো। সেই ৪র্থ শ্রেনীর ব্যাচের ছাত্র তপু।
সেও এখন ঢাকায় থাকে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের ছাত্র। পরীক্ষা শেষ তাই বাসায় চলে যাচ্ছে। ছাত্র হিসেবে খুব একটা খারাপ ছিলো না। পড়ালেখা কম করতো কিন্তু কোন কিছু বোঝালে কম সময়েই বুঝে যেতো । ভীষন দুষ্ট প্রকৃতির ছেলে। ক্লাসে ওর নামে প্রতিদিন অভিযোগ থাকতো কারও না কারও। ওই স্কুলে আমি বেশিদিন ছিলাম না । এক বছর পড়িয়েছি । সে ও পরের বছর অন্য স্কুলে চলে গিয়েছে। তারপরও এতদিন পর দেখা হয়েছে চিনতে পেরেছে ব্যাপারটা বেশ অবাকই লাগলো। ওর কাছেই খবর নেয়ার চেষ্টা করলাম স্কুলটার ও ওর সহপাঠীদের। তেমন কোন তথ্য সে দিতো পারলো না। স্কুল ছেড়ে চলে যাবার পর আরও ওখানকার কারও সাথে আর ওর যোগাযোগ হয়নি ।
ছোট্ট একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো। সেদিন ওদের ক্লাস নিচ্চিলাম। ১৫/১৬জন ছাত্রছাত্রী। তাদের কাজ দিয়েছিলাম। অংক ক্লাস। সাধারনত ছাত্র ছাত্রী কম থাকায় ক্লাসের কাজ ক্লাসেই বুঝে নেয়ার সুযোগ থাকে। কোন একটা ছোট অংক করতে দিয়েছিলাম। বাচ্চারা সাধারনত ক্লাসে কোন কাজ দিলে কে কত আগে সমাধান করে দ্রুত শিক্ষকের কাছে নিয়ে আসতে পারে তার একটা প্রতিযোগীতা চলে। একজন দুজন করে আসতে আসতে একসময় টেবেলের চারপাশে এসে সবাই জুটে যায়। যার খাতা দেখা হয়েছে সেও থাকে কে কে ভুল করেছে সেটা দেখে মজা নেয়ার জন্য। সেদিনও তেমনটাই অবস্থা। বাচ্চাকাচ্চা সব আশেপাশেই। খুবই ছোট অংক । সবাই মোটামুটি পেরেছে। তপুর খাতাটা দেখছিলাম। সে একটা ভুল করেছে। সহজ অংক। তার আগে যেগুলো খাতা দেখা হয়েছে তারা সবাই করতে পেরেছে। ওর ভুলটা ধরিয়ে ওকে জিজ্ঝেস করলাম, এ্যই এটা কি করেছো ?
ভুলটা বুঝতে পেরে তাৎক্ষনিক জিভ এ কামড় দিয়ে সে বলে উঠলো,
স্যার, মুই একটা বোকাচোদা।
বেশ একটা হাসির রোল পড়ে গেলো বাচ্চাদের মধ্যে। একটা ধমক লাগালাম আমিও। ধমকটা দিলাম ভুল করার জন্য। ওর শব্দ প্রয়োগ টা কে খুব একটা গুরুত্ব দিলাম না। বাচ্চারও ওর ধমক খেয়ে আৎকে ওঠাতেই খুশি। অন্য ব্যাপারটাকে তারাও গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে হলো না। তবে আমি একটু অবাকই হলাম ওর স্বাভাবিকতা দেখে। ওর মাথাতে ভুলটাই ঘুরছিলো । কি বলেছে বা বলা টা ঠিক হয়েছে কিনা সেটা তার মাথতেই নেই। মনে হলো সে হয়তো এটা বলাতেই অভ্যস্ত। ক্লাস শেষে ওকে অবশ্য সতর্ক করেছিলাম ।
পুরনো কথাটি মনে পড়ায় একটু হাসি পেলো। একটু পর ট্রেন ঢুকে পড়লো স্টেশনে। আমিও বোকাচোদাসহ ভিন্ন ভিন্ন বগিতে ছুটে চললাম একই গন্তব্যে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২৩ দুপুর ২:০৯
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×