সালাম সাহেবের ঘুম ভেঙ্গেছে সকাল ৭টায়। এতো সকালে ঘুম থেকে তিনি ওঠেন না। সকাল সকাল উঠেই এককাপ চায়ের অভাব বোধ করে । কিন্তু এতো সকালে তার চা করে দেবে কে। ভেবে মেজাজ টা আরো একবার খারাপ হয়ে গেলো। তবু গলা উচিয়ে ডাকলো,
মনুর মা, ও মনুর মা আছো নাকি।
খুব সময় এই সময় মনুর মা বাসায় থাকে। সে আসে সেই ১২টার পরে। দুপুরের রান্নাটা করে। রাতের টা আলাদা করে রেখে দেয়। ঘরদোর গুছিয়ে রাখে। কাপড় চোপড় ধোয়ার থাকলে ধুয়ে দিয়ে যায়।
আমারে ডাকচেন ভাইজান ? চা বসাইচি। শুনতে পাইনাই ডাক।
মনুর মায়ের কথা শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে মনুর মা। ঠিক একই রকম, একইভাবে এক পায়ে দাড়িয়ে দরজায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে। ফিঙ্গার প্রিন্ট এক্সপার্ট নিয়ে এসে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে তার হাতের ও পায়ের ছাপ গত দুই বছরে একটুও এদিক ওদিক হয় নাই।
মনুর মায়ের গলা শুনেই মনটা ভালো হয়ে গেলো সালাম সাহেবের। তার সাথে চা বসিয়েছে শুনে মন ভালো না হয়ে কোন উপায় নেই। চা শব্দটা শুনেই যেন সে চায়ের স্বাদ পেয়ে গেছে।
এতো সকালে আজকে আসছো যে ?
কিছুটা অবাক হয়ে জানতে চায় সালাম সাহেব।
একটু তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে যাবো ভাইজান। মেয়ের বাপে আসছে। মেয়েরে নিয়ে যাবে গ্রামে। আমারে কয় যাইতে। আমি ক্যামনে যাই। হঠাৎ কইলে কি আর যাওয়া যায় কন। তাছাড়া, আপনারে কিছু কই নাই। কিন্তু এতো করে ধরছে যে না বলারও কোন উপায় নাই। এতোদিন পর বাড়ি যাইবো কইতেছে, মুখের উপর কি আর না বলোন যায় ভাইজান।
যাওয়ার পুরো প্রস্তুতি নিয়ে হাজির হয়ে আসছে বুঝতে পারে সালাম। তার হাঁ না বলা টা অপ্রাসঙ্গিক ভেবে পিছনে তাকিয়ে দেখে এখনও দাড়িয়ে আছে সেখানে।
আর কিছু বলবে ?
কিছু টাকা লাগবে ভাইজান। সামনের মাসের টাও দিয়েন।
এইভার একটু চিন্তা পেয়ে বসে সালাম সাহেবকে। গত বুয়া টাও এভাবে টাকা নিয়ে আর আসে নাই। ব্যাপারটা নতুন না। প্রতিবার তার মনে হয় বুয়া কথা দিযে রাখবে। কিন্তু শেষমেষ দেখা যায় কথা রাখার জন্য আর একটা বুয়া খুজতে হয়।
যাবার সময় দিয়ে যাবো। আমার একটু বের হবো তাড়াতাড়ি। তুমি যেহেতু থাকবা না দুদিনের জন্য যা পাওয়া যায় রান্না করে রেখো।
ভাইজান নাস্তা কি করে দেবো না বাইরে খাবেন।
প্রতিদিন বাইরে খেয়ে অভ্যাস । আজকে আর খেয়ে কি হবে ভেবে নিষেধ করে দেয় সালাম সাহেব। বাইরের পোশাক পরে মনুর মা কে ডাকে। গতকাল পেনশনের টাকা তুলে এনেছে । টাকাটা খুলেও দেখা হয়নি। টুকটাক বাজার করতে হবে আর মনুর মা কেও দিতে হবে ভেবে টাকাটা বের করে।
ততক্ষনে মনুর মা এসে দাড়িয়েছে। তাকে দুই মাসের টাকার সাথে আরও একহাজার টাকা বেশী দিয়ে টাকাটা আগের জায়গায় রেখে বেরিয়ে যায় সালাম সাহেব।
বাসা থেকে বেরিয়ে রিকসা নেয়। আজকে ঘুরবে বেশ কিছুক্ষন। যদিও বুয়া রান্না করে রাখবে তবু বাইরে খাবে । একদম সন্ধায় ফিরবে মনস্থির করে একটু ফুরফুরে লাগে তার। কিছুটা সামনে যেয়ে তিন মাথার মোড় থেকে বা দিকে মোড় নেয় রিকসা।
আরও কিছুটা সময় পরে তিন মাথার মোড়ের ডান দিক থেকে দ্রুত পায়ে একজন লোক সালাম সাহেবের বাসার পথে যেতে থাকে। একটু পর সালাম সাহেবের দরজায় টোকা পড়ে।
সালাম সাহেব তাহের হোটেলে ততক্ষনে দুধ চায়ে পরাটা রোল করে ভিজিয়ে খেতে শুরু করে দেয়। অনেকদিন পর এভাবে পরটা চায়ে ভিজিয়ে ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়। দুটো পরোটার পরে আরও একটা পরোটা দিতে বলে সে। তৃতীয় পরোটা শেষ করার আগেই তার বাসা থেকে মনুর মা সেই অচেনা লোকসহ বেড়িয়ে পরে।
আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিতে থাকা সালাম সাহেবের কোন ধারনাও নেই ঠিক সেই সময় তার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে তার দীর্ঘ ২৮ বছরের চাকুরী জীবনের সঞ্চিত ভবিষ্যৎ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




