বিয়ের মাত্র এক বছর হয়েছে।এর মাঝেই যেন জগতের সমস্থ তিক্ততা দখল করে নিয়েছে নিশির মন। আগের আরিফকে কোন ভাবেই মেলাতে পারছে না এখনকার আরিফের সাথে। প্রবাসি হলেও আরিফের সততা, আর যে কোন বিষয় খুব সহজ করে নেয়া, জীবন টা কে একটা সাদামাটা ফ্রেমে ফেলার আনন্দ নিয়ে খুব সহজ সরল ব্যখ্যা গুলো মুগ্ধ করেছিল নিশিকে। আরিফের ছোট ছোট এসএমএস গুলো সত্যিই মন ছোয়ার মত। "রাজপথে হাটছি এবং রুপালি সকাল দেখছি আর ভাবছি- জীবন টা সত্যিই প্রভাতের নরম রদ্রুর মতই সুন্দর, যদি তাকে সরল করে নেওয়া যাই। " এটা পরে নিশির চোখে পানি এসেছিল। নিজেকে পৃথিবির সবচেয়ে ভাগ্যবতি মনে হয়েছিল। নিশির বিশ্বাস জন্মেছিল এই মানুষ টা তার জীবনসঙ্গি হলে সে অবশ্যই সুখি হবে!
বিয়ের পর এক বার দেশে এসেছে আরিফ। সব মিলিয়ে প্রায় দু'মাস তারা একসাথে থেকেছে। ভাল করে চেনা, বোঝার জন্য এটা খুব অল্প সময়। তাই লং ডিস্টেস্ রিলেস্যানসিপ টা মেইনটেন করার জন্য অনলাইন টাই বেছে নিয়েছে তারা। আরিফের সেখানেও চরম গাফেলতি। দিনে একবার বউ এর সাথে কথা বলার সময়টাও যেন হয়ে ওঠে না তার। অথচ বিয়ের আগে প্রায় দিবানা হয়েই বিয়ে করেছিল নিশি কে। যদিও চেহারাই কোন আহামরিতা নেই নিশির।
পেশায় সাংবাদিক হওয়ায় মানুষের সাথে সাক্ষ্যতা একটু বেশি ছিল আরিফের। সেটা অনলাইন জগৎ হোক আর বাস্তব জগতে। তাই সে যতই বলুক আমি এমন ই... আমি কারো সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি না...' কথা গুলো বিশ্বাস করা নিশির জন্য সহজ ছিল না। তার চেয়ে বড় কথা- বেশকিছু দিন থেকে আরিফ অমানবিক আচরন করা শুরু করেছে। নোংরা কথা বলার এবং গালি দেবার যেন সুযোগ খুজতে থাকে সে সব সময়।
সাভাবিক ভাবেই ধিরে ধিরে আবিশ্বাসি হওয়া শুরু করেছে নিশি। মনে করা শুরু করেছে আরিফের নিশ্চই কোথাও এফেয়ার আছে। নইলে সে এমন আচরন করবে কেন? এত দুরে থাকলেও আমি তাকে না বলে বাসা থেকে এক পা বের হইনা, কখনো মিথ্যা বলি না। আমার মমতার কোথায় কমতি দেখলো সে যে এমন করছে!
প্রায় প্রতি রাত-ই নিশির জেগে কাটে। এ-সব ভাবতে ভাবতে ডুকরে কেদে ওঠে কখনো। কেউ দেখে না। কেউ বোঝে না। নিশির সারা দিনের হাস্যজ্বল মুখ টা দেখে সবাই বিভ্রান্ত হয়। ভাবে কি সুখি মেয়ে টা! কোন এক অদ্ভুত কারনে সজনদের কাছে আরিফের প্রশংসায় পন্চমুখ হতে নিশির খুব ভালো লাগে। সে বিশ্বাস করতে চায় এবং অন্যকে বিশ্বাস করাতে চায় আরিফ তাকে অনেক ভালবাসে।
কি মনে করে এক দিন নিশি ফেক্ নামে ফেসবুকে এক টা একাউন্ট করে আরিফের এক ফেসবুক ফ্রেন্ড কে এড করলো। মেয়ে টা মিডিয়ায় জব করে। সুযোগ বুঝে এক দুপুরে মেয়ে টা কে অনলাইনে পেয়ে চ্যাট করা শুরু করলো।দুই এক কথাতেই নিশি সাহস করে জিগ্যেস করে বসলো, 'আপু আপনার কোন পছন্দের মানুষ নেই?' বলেই নিশি ব্যক্তিগত কথা জানতে চাইবার জন্য মাফ চেয়ে নিল। মেয়ে টা হেসে খুব সাবলিল ভাবে যে রিপ্লাই দিল তা শুনে নিশির মাথা ঝিম ঝিম করা শুরু করেছে, হাত দু'টোও কাঁপছে, স্বাভাবিক ভাবে যেন নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে নিশির। না এতো ভেঙ্গে পরলে চলবে না। আমাকে এর শেষ দেখতেই হবে! এত সহজে একজন বেইমানি করে পার পেয়ে যাবে তা কি করে হয়! সরলতা কে দু্র্বলতা ভাবা যে বোকামি এটা আরিফ কে বুঝতে হবে। কিন্তু কি করবে সে? একজন খুব সাধারন মেয়ে কি-ই বা করার ক্ষমতা রাখে? বাসার কাউকেও তো এ লজ্বার কথা বলতে পারবে না!
রাগে দুঃখে চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরা শুরু করেছে নিশির। ঝাপসা চোখে রিপ্লাই টা বার বার পড়ছে নিশি- "হুম ... আছে একজন। নাম আরিফ। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে দেখ। এবার ও দেশে আসলেই আমরা বিয়ে করবো।"
এর পর সামহইয়ার ইন ব্লগে আরিফের ছদ্যনামের একাউন্ট টা খুজতে খুজতে পেয়ে গেল নিশি। ২০০৮ সাল থেকে ব্লগ লেখা শুরু করেছে সে। আরিফের প্রতিটা পোষ্ট এবং তার কম্যান্ট গুলো খুঁটে খুঁটে পড়তে লাগলো। নিশি খুব আবাক হয়ে দেখল আরিফের যখন যাকে মনে ধরেছে ঠিক একই ভঙ্গিতে কথা বলেছে তাদের সাথে যেমন টা সে নিশির সাথে বলেছে এক সময়। অনেককে নিয়ে কবিতাও লিখেছে।সমস্থ্য মন জুরে থাকা আরিফের প্রতি ভালবাসা যেন মুহূর্তে ঘৃনায় রুপ নিল। কেন কাঁদছে সে? এমন এক ভন্ডের জন্য তার চোখের পানি পরবে কেন? চোখের পানি কি এতোই সস্থা? নিজেকে বার বার ধিক্কার দিতে লাগলো নিশি।
কোন কিছুতেই নিজের মন কে মানাতে পারছে না সে। আকাশ পাতাল হাতড়ে যেন নিশি উদ্ধার করার চেষ্টা করছে, তার কি করা উচিত!
এখন কি করবে সে ?????????????????????????????
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



