ব্যতিক্রম যেবার হলো সেবারের কথা বলি। একটা ছোটখাট মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করি। অফিসিয়াল কাজে মাঝে মাঝে ঢাকার বাইরে যাওয়া লাগে। আমাদের একটা কর্মশালা ছিল রাজশাহীতে। কর্মশালার রিপোর্ট করতে আমি গেলাম। কর্মশালায় রাজশাহীর বিভিন্ন জেলা থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা এসেছিল। প্রথম দিনেই একটা মেয়ের দিকে বারবার চোখ পড়ে যাচ্ছিল। নিজেরই বিরক্ত লাগছিল। মনে হচ্ছে পুরোনো রোগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পরিচয় দেবার সময় সে তার গৃহিণী পরিচয়টাও দিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সময় সব প্রেম উবে যায়। আমার মনে হয় বেড়ে গেল। যা হোক আমি আর তার দিকে না তাকাবার চেষ্টা করলাম।
মেয়েরা নাকি পুরুষের চোখের ভাষা খুব সহজেই পড়তে পারে। কথাটা সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে কর্মশালার বিরতিতে সে আমাদের অফিস সহকারী মারফত আমার সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলো। আমার মনে হলো চাঁদ হাতে পেলাম। আলাপ জমিয়ে দিলাম। জানতে চাইলাম, আপনি যে নিজেকে গৃহিণী পরিচয় দিলেন, কার গৃহিণী জানতে পারি কি? আঙ্গুল দিয়ে দেখাল। ঘাড় ফিরে দেখলাম ততক্ষণে তার স্বামী এসে দাড়িয়েছে। সেও একজন প্রশিক্ষণার্থী। সৌজন্য আলাপ সেরে আমি নিজের জায়গায় এসে বসলাম। এরপর থেকে প্রশিক্ষণের ফাকে ফাকে সে আমার দিকে বারবার তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো। আমি খুন হয়ে যাচ্ছিলাম। বিষয়টা বোধহয় তার স্বামীরও চোখ এড়ালো না। প্রথম দিনের কর্মশালা শেষ হবার আগেই তারা দু’জন চলে গেল। সে অবশ্য আস্তে করে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেল। আমি পরদিন অবশ্যই আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে দিলাম। সে সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। প্রথমদিনের কর্মশালা শেষ করে রুমে ফিরে গেলাম।
রুমে ফেরার পর থেকে নিজেকে প্রথমবার প্রেমে পড়া অল্পবয়সি ছেলে মনে হচ্ছিল। এরকম অনুভূতি হতো কলেজ জীবনে। রাতে ঠিকমত ঘুম হলোনা। আমি শুধু কর্মশালার দ্বিতীয় দিনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
দ্বিতীয় দিন কর্মশালায় সে এবং তার স্বামী কাউকে দেখলাম না। আমি ধারণা করলাম নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা হয়েছে। ছেলেটির মামাও আমাদের কর্মশালার স্থানীয় আয়োজকদের মধ্যে একজন ছিলেন। তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না, তবে তাকে কেমন গম্ভীর মনে হলো। আমার নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো। আমি ঘোরমুক্ত হতে লাগলাম। তার স্বামী একা কর্মশালার শেষ দিকে এসেছিল। আমার আর তার একটা বিষয়ে মিল হলো, আমরা দু’জনেই গান করি। দু’দিনের কর্মশালার শেষে আমিই তাকে আমন্ত্রন জানালাম গান করতে। হই-হুল্লোড় গান বাজনা অনেক হলো। আমি স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। সে রাতেই ট্রেনে ঢাকায় ফিরলাম।
আমার বন্ধু-বান্ধবেরা এই গল্প শুনলে আমার আগের সব প্রেমে পড়ার সাথে তুলনা করবে। তবে আমি জানি, এটা অন্য সব ঘটনার থেকে আলাদা। আমি সত্যিই গভীরভাবে তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আর পড়া থেকে উঠে গিয়েছিলামও খুব দ্রুত। বলে রাখা ভাল, এর আগে আমি কখনও বিবাহিত জেনে কারও প্রেমে পড়িনি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




