somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরস্ত্রীর প্রতি ক্ষণস্থায়ী গভীর প্রেম

১৫ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারীদের প্রতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দুর্বলতার জন্যে ছাত্রজীবনে আমার বেশ সুনাম ছিল। কিছুদিন পরপরই এক একজন নারীর প্রতি লাগামছাড়া প্রেম অনুভব করতাম; যার শেষ হতো পরবর্তী আরেকজনের প্রতি প্রেম অনুভূতির মধ্য দিয়ে। মানে সবসময় কারো না কারো প্রতি গভীর প্রেমে মগ্ন। এটাকে রোগই বলা যায়। তো আমার যে প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ালো সে প্রেমে আমার চেয়ে বেশি অংশগ্রহণ ছিল আমার বর্তমান স্ত্রীর। বিয়ের পরে অবশ্য বুঝলাম, বড় উপকার হলো। প্রেমরোগ উধাও। মাঝে মাঝে বরং বিকর্ষণ বোধ করি। যাক বাঁচা গেল তাহলে।

ব্যতিক্রম যেবার হলো সেবারের কথা বলি। একটা ছোটখাট মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করি। অফিসিয়াল কাজে মাঝে মাঝে ঢাকার বাইরে যাওয়া লাগে। আমাদের একটা কর্মশালা ছিল রাজশাহীতে। কর্মশালার রিপোর্ট করতে আমি গেলাম। কর্মশালায় রাজশাহীর বিভিন্ন জেলা থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা এসেছিল। প্রথম দিনেই একটা মেয়ের দিকে বারবার চোখ পড়ে যাচ্ছিল। নিজেরই বিরক্ত লাগছিল। মনে হচ্ছে পুরোনো রোগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পরিচয় দেবার সময় সে তার গৃহিণী পরিচয়টাও দিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সময় সব প্রেম উবে যায়। আমার মনে হয় বেড়ে গেল। যা হোক আমি আর তার দিকে না তাকাবার চেষ্টা করলাম।

মেয়েরা নাকি পুরুষের চোখের ভাষা খুব সহজেই পড়তে পারে। কথাটা সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে কর্মশালার বিরতিতে সে আমাদের অফিস সহকারী মারফত আমার সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলো। আমার মনে হলো চাঁদ হাতে পেলাম। আলাপ জমিয়ে দিলাম। জানতে চাইলাম, আপনি যে নিজেকে গৃহিণী পরিচয় দিলেন, কার গৃহিণী জানতে পারি কি? আঙ্গুল দিয়ে দেখাল। ঘাড় ফিরে দেখলাম ততক্ষণে তার স্বামী এসে দাড়িয়েছে। সেও একজন প্রশিক্ষণার্থী। সৌজন্য আলাপ সেরে আমি নিজের জায়গায় এসে বসলাম। এরপর থেকে প্রশিক্ষণের ফাকে ফাকে সে আমার দিকে বারবার তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো। আমি খুন হয়ে যাচ্ছিলাম। বিষয়টা বোধহয় তার স্বামীরও চোখ এড়ালো না। প্রথম দিনের কর্মশালা শেষ হবার আগেই তারা দু’জন চলে গেল। সে অবশ্য আস্তে করে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেল। আমি পরদিন অবশ্যই আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে দিলাম। সে সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। প্রথমদিনের কর্মশালা শেষ করে রুমে ফিরে গেলাম।

রুমে ফেরার পর থেকে নিজেকে প্রথমবার প্রেমে পড়া অল্পবয়সি ছেলে মনে হচ্ছিল। এরকম অনুভূতি হতো কলেজ জীবনে। রাতে ঠিকমত ঘুম হলোনা। আমি শুধু কর্মশালার দ্বিতীয় দিনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

দ্বিতীয় দিন কর্মশালায় সে এবং তার স্বামী কাউকে দেখলাম না। আমি ধারণা করলাম নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা হয়েছে। ছেলেটির মামাও আমাদের কর্মশালার স্থানীয় আয়োজকদের মধ্যে একজন ছিলেন। তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না, তবে তাকে কেমন গম্ভীর মনে হলো। আমার নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো। আমি ঘোরমুক্ত হতে লাগলাম। তার স্বামী একা কর্মশালার শেষ দিকে এসেছিল। আমার আর তার একটা বিষয়ে মিল হলো, আমরা দু’জনেই গান করি। দু’দিনের কর্মশালার শেষে আমিই তাকে আমন্ত্রন জানালাম গান করতে। হই-হুল্লোড় গান বাজনা অনেক হলো। আমি স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। সে রাতেই ট্রেনে ঢাকায় ফিরলাম।

আমার বন্ধু-বান্ধবেরা এই গল্প শুনলে আমার আগের সব প্রেমে পড়ার সাথে তুলনা করবে। তবে আমি জানি, এটা অন্য সব ঘটনার থেকে আলাদা। আমি সত্যিই গভীরভাবে তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আর পড়া থেকে উঠে গিয়েছিলামও খুব দ্রুত। বলে রাখা ভাল, এর আগে আমি কখনও বিবাহিত জেনে কারও প্রেমে পড়িনি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:১৯
১৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×