somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্পঃ শহর

২২ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
আজকাল প্রায় সকালেই আমিনুলের ঘুম ভাঙে পুরনো এক স্বপ্ন দেখে।
একান্ত ব্যক্তিগত এই স্বপ্নে আমিনুল প্রায়ই এক ছোট্ট গ্রামে চলে আসে। বাউন্ডুলে কিশোরের অগোছালো চুলের মত কিছু ছনের ঘর নিয়ে সেই গ্রাম। তার এক ধারে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন পাহাড়। চাইলে গ্রাম থেকে সূতোর মত পায়ে হাঁটা মেঠোপথ ধরে সেই পাহাড়ের মাথায় ওঠে যাওয়া যায়। সেখানে আকাশের দিকে উঠে যাওয়া এক মন্দির দেখে আমিনুল, ভেতরে চকচকে কালো পাথরের এক অচেনা দেবী প্রতিমা। বয়সের গাছ-পাথরহীন এই পুরনো মন্দির কে বা কারা বানিয়েছিল তা আমিনুল জানে না। জানে না সেই গ্রামের বাসিন্দারাও। তবে প্রতি পূর্ণিমার নতুন চাঁদে তাতে পূজো হয়। গ্রামের লোকজন ফল-ফসলের নৈবেদ্য রেখে যায়।
পূজোর সময় বাদে পুরো সময়ই মন্দিরের সামনে ছোট্ট উঠোনটা থাকে খাবারের লোভে জোটা একপাল দাঁড়কাকের জিম্মায়। কর্কশ পাখি হিসেবে নাম থাকলেও এই মন্দিরের কাকগুলো অস্বাভাবিক শান্ত। পূজোর সময়ে তারা বিনা প্রতিবাদে পূজারীদের জায়গা ছেড়ে দেয়, আশ্রয় নেয় পাহাড়ের গায়ে বেড়ে উঠা বড় বড় কড়ই, শিমুল আর কাঁঠাল গাছে।
আমিনুলের স্বপ্নে এই গ্রাম একেকদিন আসে একে রূপ নিয়ে। কখনো পাহাড়ে শিমুল ফুলের আগুন লাগে। কখনো ছনের ঘরের পাশ দিয়ে আমিনুল দেহহীন সত্ত্বার মত ভেসে বেড়ায়। এই স্বপ্নগুলো ভালোই লাগে তার।
কিন্তু কিছু কিছু স্বপ্নে গ্রামের মাঝখানে গোল এক আগুন দেখা যায়। গ্রামবাসীরা গোল হয়ে বসে তার চারদিকে। কোরাসের মত গান গায়, কখনো কাঁধে হাত রেখে রেলগাড়ির মত ঘুরে নাচে। এই গানে ভয় লাগে আমিনুলের। কোন অপার্থিব কারও প্রতি নেমে আসার আহবান মনে হয় তার। আবার কোন কোন দিন সে নিজেকে পাহাড়চূড়ার দেবী প্রতিমার ভেতর আবিষ্কার করে। তার দেহহীন সত্ত্বা যেন আটকে যায় পাথুরে মূর্তির ভেতর। সে তার সামনে জড়ো হওয়া পূজারীদের দেখে, নৈবেদ্য জড়ো হয়। তারা নেমে গেলে আসে কাকেরা। পাথুরে প্রতিমায় স্বপ্নের ভেতর ছটফট করে আমিনুল ছাড়া পাওয়ার জন্য।
আজকের স্বপ্ন সেরকমই এক দুঃস্বপ্ন।
ঘুম ভেঙে হাত-মুখ ধুয়ে বদ্ধ মেস রুম থেকে বের হয় আমিনুল। আজ হাতে অনেক কাজ।

২।
ল্যাবএইড থেকে বাবার ইসিজি রিপোর্ট নিয়ে রাস্তায় নামে আমিনুল। মোটরসাইকেল স্টার্ট দেয়। একটা সময় নিজের খরচ যোগাতে টিউশনি করতো, এখনো করে। তবে একটা টিউশনির টাকায় ঢাকা শহরে টিকে থাকা শক্ত। উপরন্তু পরিবার বলতে আছে এক অসুস্থ বাবা। মাঝেমধ্যে তাকেও দেখতে হয়। তাই আজকাল ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালায় সে। পাঠাও, উবারের মত অ্যাপ চলে আসায় ব্যাপারটা এখন বেশ লাভজনক। বন্ধুর মোটরসাইকেল চালায়, তেল খরচ শেষে যা বাঁচে দুজন সমান ভাগ করে নেয়। ভূ-সম্পত্তি বলতে আমিনুলদের কিছু নেই। গ্রামে একটা ভিটা আছে। সেখানে একসময় তার বাবা একাই থাকতেন। তবে আজকাল হার্টের সমস্যার জন্য তাকে প্রায়ই ঢাকা আসতে হয়। হাতে টাকাপয়সার টানাটানি থাকলেও সে চেষ্টা করে বাবাকে ভালো ডাক্তার দেখানোর। অবস্থা খুব সুবিধের নয়। ডাক্তার বাই-পাস সার্জারির ইঙ্গিত দিয়েছেন। এছাড়া সামনে পরীক্ষা। শীট সংগ্রহে নামতে হবে। পরীক্ষার কয়েকদিন মোটরসাইকেল ধরাও হবে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল ফলাফল করা যতটা শক্ত, কোনমতে পাশ দিয়ে যাওয়া ততটাই সহজ। পাশ দিয়েই কোনরকম এগুচ্ছে আমিনুল। চাকুরীর বাজারে দাঁড়ানোর জন্য তার এই অনার্স ডিগ্রীটা খুবই প্রয়োজন।
এইসব চিন্তা নিয়ে সাইন্সল্যাবের দীর্ঘ সিগনালে নামে আমিনুল। ধ্যানী বৌদ্ধ সাধুর মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা লোকাল বাসগুলিকে দেখে।
৩।
ড্রাইভার মানিক মিয়া ঢাকা শহরে বাস চালান প্রায় সাত বছর। প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ওঠে গাড়ি নিয়ে বের হন, রাত বারোটা পর্যন্ত ডিউটি। মাঝখানে চাইলে অবশ্য ফাঁক বের করে নেওয়া যায়। সেটা তিনি বের করেনও। আগে এই সময়টাতে মানিক মিয়া চা-সিগারেট খেতেন। মাঝেমধ্যে দু-এক পুরিয়া গাঁজাও চলতো। এখন এই সময়টায় বন্ধু-বান্ধব মিলে ইয়াবা খান। মিষ্টি গন্ধের ক্ষুদ্র গোলাপি এই ট্যাবলেট বন্ধু মহলে "মুড়ি" নামে পরিচিত। ফয়েলে দুই টান দিলেই ভাল লাগে মানিক মিয়ার। ক্লান্তি দূর হয়, মনে হয় সারাদিন গাড়ি চালানো কোন বিষয় না। সেটা তিনি করেনও।
একটু আগেই "মুড়ি" তে বেশ বড় টান দিয়ে এসেছেন। এই সময়টায় জোরে গাড়ি টানতে খুব ভালো লাগে তার। সাইন্সল্যাব সিগনাল ছাড়তেই শক্ত করে এক্সেলেটর চেপে ধরেন মানিক মিয়া। সামনে থাকা ছোট লাল রঙের মটরসাইকেলটার অস্তিত্ব তিনি টেরই পান তা সামনের চাকার নীচে চলে যাওয়ার পর। কিছুক্ষণের জন্য বিহবল লাগে তার। এক্সেলেটর থেকে পা উঠে না। পিষে সামনে এগুতে থাকে সবুজ রঙের বাস।
(সমাপ্ত)
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×