বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ব্যাপারটা নিয়ে প্রতিদিন দেখছি অনেক পোস্ট। অতি নারীমণা নারীরা আবেগে ফেটে পরছেন এমনকি নারীকন্ঠে এটাও বলতে শুনেছি, নারী হয়ে জন্মানোটাই অপরাধ। কেউ আবার হিজাব নিয়ে টানাটানি শুরু করেছেন। একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসীরা বিপরীত মতে বিশ্বাসীদের উপর আচ্ছামত মনের ঝাল মেটাচ্ছেন কারণ ব্যাপারটা যে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হাতেই ঘটেছে। কেউ কেউ আবার সেই নারীদেরই দোষ দিচ্ছেন, "সব জানার পরেও তারা কেন যায়?" আবার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেক প্রশ্ন তুলছেন, এত মানুষ ছিল তারা কেন প্রতিরোধে এগিয়ে আসলোনা?
সত্যি বলতে এদেশের সিষ্টেম এদেশের সবাইকেই selfish এ পরিণত করেছে। তাই এটা শুধু নারীদের বেলায় না, বরং সবার বেলাতেই একই ব্যাপার প্রযোজ্য। বিপদে নারী বা পুরুষ যেই-ই পরুক না কেন, কেউ কারো সাহায্যে এগিয়ে যায়না। বাস্তবতা হল, আপনি কোন অন্যায় দেখলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন প্রতিবাদ করবেন। মনে মনে ভাববেন "আমি আগাই সম্ভবত অন্যরাও এসে আমাকে সাহায্য করবে" কিন্তু অন্যরা কখনো এগিয়ে আসবেনা। আপনি প্রতিবাদ করতে যাবেন তো দেখবেন, উল্টা আপনার উপরেই সন্ত্রাসীরা হামলে পরেছে যারা কিছুক্ষণ আগে আপনি যাকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন, তার উপর আক্রমণ করেছিল।অর্থাৎ এখন তাদের victim দুজন,
১. আপনি
২. যাকে আপনি বাঁচাতে গিয়েছেন তিনি।
মানুষ সবই দেখছে কিন্তু কেউ আপনার বা তার সাহায্যে এগিয়ে আসছে না, বরং তারা বউ-বাচ্চা বগলদাবা করে নিরাপদ দূরত্বে সরে পরছে। আসলেই যেখানে আইনের শাসন নেই, সুবিচার পাওয়ার অধিকার নেই, নিরীহ মানুষের প্রতি শাসকদের কোন দায়বন্ধতা নেই_ সেখানে কোন মানুষও মানুষের জন্য নেই। আজ আমি রাস্তায় অন্যায় দেখেও সরে পরব, কাল আমিই আবার বিপদে পরব কিন্তু সবাই না দেখার ভান করে সরে পরবে। এখানে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে নিজেকেই ভাবতে হবে, নিজের আপন মানুষটাকে আমি বাঁচাতে না পারলে অন্য কেউই বাঁচাতে আসবেনা।
প্রশ্ন আসে, হটাৎ সবাই এত স্বার্থপর হয়ে উঠল কেন?এদেশের মানুষগুলো তো আগে এমন ছিলনা। সম্ভবত হতাশার উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় প্রাক-সেকুলার পশ্চিমা সমাজের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে।
ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, জীবদ্দশায় ঈসা (আঃ) এর চরম শত্রু গোড়া ইহুদি সেন্ট পল বা পৌল বা হিব্রু ভাষায় শৌল নামের ব্যক্তির হাতে বিকৃতরূপে প্রকাশিত খৃষ্টধর্ম ইউরোপে প্রবেশ করার পর তা ধর্মযাজকদের ধর্মপ্রচার ও রোমানদের দেশ জয়ের সাথে সাথে গোটা ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পরে। যেখানে ঈসা (আঃ) এর অনুসারীরা নাসারা নামে পরিচিত ছিল, সেখানে সেন্ট পলের বিকৃত ধর্মের অনুসারী ইউরোপীয়রা খৃষ্টান নামে পরিচিতি লাভ করে। তার পর হাজার হাজার বছর ধরে পশ্চিমা সমাজ খৃষ্ট ধর্মের উপর ভিত্তি করেই টিকে ছিল। যুগে যুগে পাদ্রিদের হাতে সেই বিকৃত খৃষ্ট ধর্মের ধর্মগ্রন্হ বাইবেলও কাটা-ছেড়া হতে হতে তা হয়েছে আরো বিকৃত, অগ্রহণযোগ্য, মূল্যহীন। শিক্ষাব্যাবস্হা, আইন, বিচারকার্য ইত্যাদি সব কিছুই ছিল গীর্জা ও পাদ্রি কেন্দ্রীক। অনেকক্ষেত্রে রাজাদের চাইতে তাদের ক্ষমতার দাপট ছিল দ্বিগুণ আবার রাজারাও তাদের উপর ছিল নির্ভরশীল। পাদ্রিরা নিজেদের ইচ্ছামত ধর্মের বিকৃতি ও নিজেদের সুবিধামত তার প্রসার ও প্রয়োগ করত এবং মানুষকে শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করত। পাদ্রিদের বাড়াবাড়ি, অন্যায়-অত্যাচার, প্রতারণা, ধর্মের নামে সম্পদ লুন্ঠন, জীবনহানি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার পরিমাণ ছিল ভয়াবহ। এই কারণে মানুষ হয়ে পরেছিল নিরুপায়।
ধর্মকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা সমাজে পরপর কয়েকটি সংঘাত ও বিপ্লবের ঘটনা ঘটে যা আজ পশ্চিমা সমাজকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মধ্যযুগে পাদ্রিরা ব্যাপক দূর্নীতিপরায়ন ও অত্যাচারী হয়ে ওঠে। তারা গরীব মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তাদের কাছে স্বর্গের টিকিট বিক্রি করা শুরু করে যাতে লাগানো থাকত গীর্জার সীল। পাদ্রিদের এই কার্যকলাপে এবার আপত্তি ওঠে গীর্জার ভেতর থেকেই। নৈতিকতাসম্পন্ন কিছু পাদ্রি ধর্মের নামে ধোঁকাবাজি, মানুষের উপর অত্যাচার এসবের প্রতিবাদ করেন। ফলে পাদ্রি ও গীর্জা ভাগ হয়ে পরে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টট্যান্ট দুটি অংশে। কিন্তু এই বিভক্তি পশ্চিমা সমাজকে আরো সমস্যায় পতিত করে। পরে আবার নতুন করে শুরু হয় রাজাদের সাথে পাদ্রিদের ক্ষমতার দ্বন্দ। ধর্মের সাথে ৩য় সংঘাতটি ছিল, "শিল্প বিপ্লব ও নারী অধিকার আন্দোলন।"
শিল্প বিপ্লবের কিছুকাল আগে থেকে বিজ্ঞানীরা সহিংসতার শিকার হন কারণ বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত খৃষ্টান ধর্মের বিপক্ষে যাচ্ছিল। মানুষও ধর্মের নামে অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে চেয়েছিল।এসময় দুরখেইম, কার্লমার্কস, এঙ্গেলস, নিৎসে, ফ্রয়েড, ডারউইন, ডিডেরট, বেরন ডি হোলবাখ এর মত বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা পশ্চিমা সমাজকে ধর্ম থেকে মুক্ত করে নাস্তিকতাবাদ ও বিজ্ঞানের পথে পলিচালিত করেন। ধর্ম ও গীর্জা থেকে আইন ও শাসনব্যাবস্হা, শিক্ষাব্যাবস্হা ইত্যাদি সব কিছুকেই পৃ্থক করে ফেলা হয়। আইন তৈরীর জন্য বানানো হয় পার্লামেন্ট এবং আইনপ্রনেতা বা এমপি। এখন থেকে মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক মানুষ নিজে, গড না। গড শুধু থাকবে গীর্জায় ও মানুষের মনে মনে। সমাজে, আইনে, শাসনব্যাবস্হায় ও শিক্ষায় তার কোন হস্তক্ষেপ আর মানা হবেনা। এখন থেকে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। এটিই হল সেই তত্ত্ব যা আমরা আজ গণতন্ত্র নামে চিনি। যেহেতু ধর্মের মুলোৎপাটন করা হয়েছে কাজেই সেকুলারদের হাতে নতুন সমাজব্যাবস্হার রূপরেখা তৈরী হয়। কিন্তু সেকুলাররা ছিল কার্যত পাদ্রিদের চাইতেও নিকৃষ্ট মানষিকতার। তারা পরিবার প্রথা বিলোপ সাধনের পক্ষে মত দেয়। তাদের মতামত হল, পরিবার প্রথা হল নারীকে দাসী বানিয়ে রাখার একটি ধর্মীয় প্রক্রিয়া। হাজবেন্ড-ওয়াইফের ভালবাসা মূলত যৌনতা ব্যতীত আর কিছুইনা কাজেই তা বিলুপ্ত করে নারীদের কর্মক্ষম করে অর্থনীতিতে কাজে লাগাতে হবে। পরিবার থাকবেনা কারণ নারী তার অর্থনৈতিক চাহিদা পুরণের জন্য তার হাজবেন্ডের উপরে নির্ভর করতে পারে। তাই নারীকে পরিবার থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করতে হবে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় ডারউইনের তত্ত্ব, "survival of the fittest." তাকে বলা হল, হে নারী! শোন, তুমি পুরুষের সমান, কাজেই তোমাকে সমাজে টিকে থাকতে হলে পুরুষের সাথে অর্থনৈতিক প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে টিকতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠলো, পরিবার না থাকলে মানব শিশুর জন্ম হবে কিভাবে? তারা পরিবারের বিকল্প হিসেবে কমিউন (১০০ জন নারী ও ১০০ জন পুরুষের ছোট সমাজ) ব্যাবস্হা গড়ে তোলার পক্ষে রায় দিল যেখানে কমিউনের নারী-পুরুষ যে যার সাথে ইচ্ছা যৌনকার্যে লিপ্ত হবে, সন্তান জন্ম নিলে "কার সন্তান?" এটি কেউই জানবেনা। বাচ্চাটিকে তারা ঠিক ততদিনই লালন-পালন করবে, যতদিননা সে সাবালক-সাবালিকা হচ্ছে। তারপর প্রাপ্তবয়ষ্ক মানব সন্তানটিকে নিজের যোগ্যতায় সমাজে টিকে থাকতে হবে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নারী অধিকার আন্দোলন। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন সুসান বি এন্হনি, মেরি পার্কার ফলেট, মার্গারেট স্যাংগার এর মত নারীরা। তবে তা বর্তমান নারী অধিকার আন্দোলনের মত ছিলনা। তারা আন্দোলন করেছিলেন নারীর শিক্ষা, স্বাস্হ্য, সম্পত্তি, নিরাপদ মাতৃত্ব, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদির নিশ্চয়তা, ভোটাধিকার সহ বিভিন্ন ইস্যুতে। যেহেতু ধর্মের অবসান হয়েছে এবং সমাজে সেকুলার বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের জয়জয়কার ফলে নারী অধিকার আন্দোলন প্রভাবিত হয় বিজ্ঞানী ও সেকুলার দার্শনিকদের চিন্তাধারা দ্বারা, পরিণত হয় সহায়ক শক্তিতে। নারী ঘর ছেড়ে বাইরে আসে পুরুষের সাথে সমানত্বের লড়াইয়ে, কিন্তু হোচট খায়। কারণ প্রকৃতিগতভাবেই পুরুষেরা নারীর চাইতে শারিরিকভাবে অধিক শক্তিশালী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, চলার পথে তার উপর শুরু হয় যৌন নির্যাতন কিন্তু কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসতে চায়না কারণ survival of the fittest. সে টিকতে না পারলে অন্যের কি করার আছে? নৈতিকতা, মনুষত্ব ইত্যাদির তাড়নায় একজন মানুষ অন্য মানুষকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। কিন্তু নৈতিকতা-মনুষত্বের ভিত্তিই হল ধর্ম অথচ এখানে ধর্ম অনুপস্হিত তাই সমাজ পরিণত হয় এক দয়ামায়াহীন, ভোগবাদী, কঠোর মনোভাবের, স্বার্থপর একদল মানুষের অভয়ারণ্যে। যেহেতু সেকুলারিজম ও গনতন্ত্রের হাত ধরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় পুঁজিবাদ যার ভিত্তিই হল, survival of the fittest_ তাই পুঁজিবাদিরা হয়ে ওঠে সমাজের নিয়ন্ত্রক। শাসনে-শোষণে শ্রমিকশ্রেণী হয় নিষ্পেষিত আর নারী হয়ে পরে সম্পূর্ণরূপে নিরাপত্তাহীন। নারী নিরাপদ আশ্রয় ঘর হারালো, বাইরে পুরুষের যৌন নির্যাতন, অর্থনীতিতে পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়েও কম উপার্জন_ এসব তার নিত্য সঙ্গী। কিন্তু এখানেই শেষ না এবার শুরু হল রক্তসম্পর্কের আত্বীয় দ্বারা পারিবারিক যৌন নির্যাতন (incest)। যেই পুরুষের দায়িত্ব ছিল তার সম্ভ্রম রক্ষা করার, সে নিজেই তার সম্ভ্রম কেড়ে নিচ্ছে। ঘরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, চলার পথে সবখানেই যৌন নির্যাতন। তাকে সবাই ভোগ্যপণ্যের চোখেই দেখতে লাগল। ফলে নারী হারালো পুরুষের প্রতি বিশ্বাস, ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধ এবং সে হয়ে উঠল পুরুষ বিদ্বেশি। পাশাপাশি পশ্চিমা সমাজ নারীকে সম্পত্তির অধিকার ও অন্যান্য কিছু বাড়তি সুবিধা দিতে গিয়ে এমন কিছু জটিল আইন তৈরী ও প্রয়োগ শুরু করল যা হাজবেন্ডের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, এর ফলে পুরুষেরা বিয়েতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। আর যে সমাজে নারী-পুরুষের একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, ভালবাসা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ, নির্ভরতা নেই সেখানে সম্পর্ক টিকবে কিভাবে? এখানে নারী-পুরুষের সম্পর্ক মানে শুধুই যৌনতা। যৌনতা তো সেখানে খুবই সস্তা তার জন্য বিয়ের দরকার হবে কেন? আবার অনেকক্ষেত্রেই এই সস্তা ও সহজলভ্য যৌনতার ফলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে এই অবিশ্বাস, বিদ্বেশ, স্বার্থপরতা আর সস্তা যৌনতা ইত্যাদি থেকে সেখানে জন্ম নিল সমকামিতা ও লিভ টুগেদার। নারী যৌন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিল নারীকে আর পুরুষ বেছে নিল পুরুষকে কিন্তু অনেকেই আবার যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য প্রকৃতির নীতির বাইরে যেতে চাইলোনা তাই তারা শুরু করল লিভ টুগেদার। এখানে বিবাহিত হাজবেন্ড-ওয়াইফের মত কারো প্রতি কারো কোন দায়বদ্ধতা নেই, নির্ভরশীলতা নেই। তারা নিজের ব্যাপারে স্বাধীন, একে অন্য থেকে মুক্ত তারা শুধু যৌনতা নিবারণের জন্যই একে অন্যের সাথে অবস্হান করছে, সম্পর্ক শুধু এটুকুই। পশ্চিমা নারীরা "ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে" এই ভয়ে সন্তান নিতে চায়না। সেখান থেকে জন্ম আরেক ব্যাবসার_ পিল, কনডম কত কি!!
এবার দেশে ফেরার পালা নিশ্চয়ই ভাবছেন তবে বিদেশ নিয়ে কেন এতগুলো কথা বললাম? কারণ আমাদের দেশেও আজ সেই একই ঘটনাগুলো ঘটছে। কেন ঘটছে? কারণ ঘটানো হচ্ছে। পশ্চিমা সেকুলার সমাজ তার নৈতিক অবস্হান নিয়ে আজ মোটেও লজ্জিত না কারণ secularism, democracy, capitalism, Open market তাকে সুযোগ করে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের মানুষের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে, তাদের খনিজ সম্পদ ও অর্থনীতির উপর তার মালিকানা পাকাপোক্ত করতে, যা দিয়ে তারা গড়ে তুলছে চোখঝলসানো শহর-বন্দর এবং অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনী।
George Curzon, the british secretary of state for foreign affair (1911-1921) বলেছিলেন, "We must put an end to anything which brings about any Islamic unity between the sons of the Muslims. As we have already succeeded in finishing off the Khilafah, so we must ensure that there will never arise again unity for the Muslims, whether it be intellectual or cultural unity."
আমরা দেখেছি তুরষ্কে ওসমানী খেলাফত উচ্ছেদ করে তারা মুসলিম ভূখন্ডকে ৫৭ টি ভাগে, ৫৭ টি জাতীয়তায়, ৫৭ টি জাতীয় পতাকায় বিভক্ত করেছে। শুধু ভূখন্ডই নয় বরং তারা মুসলিমদের মাঝেও বিভক্তি সৃষ্টি করেছে । secularism, democracy, capitalism, nationalism ইত্যাদি দিয়ে মুসলিমদের টুকরো টুকরো করেছে, একের বিরুদ্ধে অন্যকে দাড় করিয়ে দিয়েছে। তারা তাতেও আশ্বস্ত হতে পারেনি কারণ তারা মুসলিমদের বিভক্ত করছে, যার নেতৃত্বে রয়েছে আলেমরা, যাদের কাছে রয়েছে ওহীর জ্ঞান। তাই তারা চেয়েছিল আলেমদের নেতৃত্বে ফাঁটল ধরাতে। এজন্যই তারা তৈরী করেছিল মডারেট ইসলামিস্ট যাদের হাতে তৈরী হয়েছে মডারেট ইসলামিক মুভমেন্ট বা গণতান্ত্রিক ইসলামি দল। এই দলগুলো না জেনে হোক বা জেনে হোক, মানুষকে আলেমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। মানুষকে খেলাফত থেকে দূরে এনে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে উৎসাহিত করছে। আবার তাদের বিরুদ্ধেও সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলোকে দাড় করিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বার্থের জন্য, লোভের জন্য কিছু নামকাওয়াস্তে মুসলিম তাদের অনুসরণ করছে। টাকা খাইয়ে কিছু মিডিয়া, সুশীল, চেতনাধারীদের ভাড়া করা হয়েছে যারা ঘটা করে বর্ষবরণ, ভালবাসা দিবস, হ্যাপি নিউ এয়ার, কিস ডে, হাগ ডে ইত্যাদি ছাইপাশ পালন করার জন্য তরুণ-তরুণীদের উৎসাহিত করছে। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় ঘটছে যৌন নির্যাতন। এসব অনুষ্ঠানে যৌন নির্যাতন হটাৎ কোন দূর্ঘটনা না, বরং এসবও বিভক্ত জনগোষ্ঠীকে আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত করার প্রক্রিয়া। সম অধিকার, নারী অধিকার ইত্যাদির দোহায় দিয়ে তারা এখন নারীকে পুরুষের বিরুদ্ধে আর পুরুষকে নারীর বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দিবে। সমাজ থেকে বিয়ে, নারী-পুরুষের মধ্যকার বিশ্বাস, দায়বদ্ধতা, ভালবাসা সব কিছুই একে একে বিদায় নিবে আর এর বদলে সমাজে জায়গা করে নিবে, "ব্যভিচার,সমকাম, লিভ টুগেদার, Incest." পরিবার বিলুপ্ত হবে ফলে এমন কোন মুসলিম মনীষী জন্ম নিবেনা যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠবে মুসলিম নেতৃত্ব ও ভ্রাতৃত্ব।
লাখো কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গিয়ে যৌন হয়রাণির শিকার একজন নারীর মন্তব্য এটা।
"আমার নিজেরো কান্না পাচ্ছে যে , এতটা বর্বর হতে পারে পুরুষরা ? তাদের লালসাগুলো কি রাস্তায় মেয়েদের দেখলে ঠিকরে পড়ে ? এতবড় একটা জাতীয় অনুষ্ঠানে এসেও কি লাইনে দাঁড়ানো মেয়েদের সাইড না দিয়ে চাপ দিতে হবে শরীরের নানা স্থানে ? বিকৃত যৌনতা কি রাস্তাতেই দেখাতে হবে? হে পুরুষ! তোমার কামবাসনাগুলো কি এতটাই দূর্বলচিত্তের যে, তা সামান্য চাপাচাপি আর জিভ দিয়ে দূর থেকে চুকচুক করলেই পূরন করা যায় রাস্তাঘাটে? আজ আবারো আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, আমাকে কখনও ছেলে সন্তান দিও না । ছিঃ ছিঃ ছিঃ !_
রোকসানা কানন
এম.ফিল গবেষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হে মুসলিম পুরুষ! তোমার জন্ম একজন নারীর গর্ভে।হে মুসলিম নারী! তোমার জন্ম একজন পুরুষের শুক্রাণুতে।তুমি পুরুষ কিন্তু তোমার শরীরে একজন নারীর রক্ত বইছে। তুমি নারী কিন্তু তুমিও একজন পুরুষের রক্ত বহন করে চলেছ। তোমার স্বতন্ত্রতা কিসে?
আল্লাহর রাসূল বলেছিলেন, "সমস্ত মুসলিম হল একটি শরীরের মত যার একটা অংশ আঁঘাত পেলে সমস্ত অংশ ব্যাথা অনুভব করে।" আজ তোমার শরীর কেটে-ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দেয়া হচ্ছে অথচ মুসলিম তুমি ব্যাথা পাওনা কেন?কার বিরুদ্ধে দাড়াচ্ছ তুমি? নিজের বোনের বিরুদ্ধে!! নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে!! কিসের অহংকার তোমার? আল্লাহ তোমাকে নারী আকৃতিতে পাঠিয়েছেন তাই তুমি নারী, আল্লাহ তোমাকে পুরুষ আকৃতিতে পাঠিয়েছেন তাই তুমি পুরুষ। অথচ তুমি শরীরের বড়াই কর। ওহে! এই শরীর কি তোমার?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



