somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদাচোখে বিশ্লেষণ: "যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে মুহাম্মাদ ﷺ এর বিয়ে কি অজাচার (Incest) ছিল, নাকি ইতিহাস নিয়ে ইসলাম বিদ্বেশী মহলের চরম মিথ্যাচার?" প্রথম পর্ব।

১৫ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব।

বিধবা যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে সর্বপ্রথম "যাইদ বিন হারিসা (রাঃ) এর বিয়ে অতঃপর বিবাহ বিচ্ছেদ ও পুনরায় আল্লাহর রাসূল ﷺ এর সাথে বিবাহবন্ধন" এমন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা নিয়ে ইসলাম বিদ্বেশী মহল দীর্ঘদিন থেকে ব্যাপক মিথ্যাচার ও বিকৃত তথ্য উপস্হাপন করে সাধারণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করে আসছে। মহান আল্লাহ এই ঘাত ও প্রতিঘাতের ঘটনা দ্বারা আরবের বংশমর্যাদা সংক্রান্ত কুসংষ্কার, পোষ্যপুত্র ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কুপ্রথার উপরে সজোড়ে আঘাত হানেন ও তা বিলোপ সাধন করেন এবং পর্দা সংক্রান্ত আয়াত ও হুকুম আহকাম নাজিল করেন

প্রথমেই বলে নিচ্ছি ইনশাআল্লাহ! আমি বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ও বিস্তারিত আলোচনা করব, যেন আমার আলোচনার সামান্যতম দূর্বলতার কোন সুযোগ নিয়ে ইসলাম বিদ্বেশী মহল মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ না পায়। কাজেই যাদের পড়ার, জানার ও বোঝার মত ধৈর্য্য ও আগ্রহ নেই তাদের জন্য আফসোস!

উম্মুল মুমিনীন যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর পরিচয়:

যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ) ৫৯০ খৃষ্টাব্দে মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের বিখ্যাত বনি হাশেম গোত্রের জাহাশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাসূল ﷺ এর আপন ফুফু উমায়মা বিনতে আবদুল মুত্তালিব এর কণ্যা। তিনি হালকা-পাতলা গড়নের মহিলা ছিলেন। মর্যাদায় তিনি ছিলেন প্রথম দিককার মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত। মক্কায় চরম নির্যাতনের মুহূর্তে ভাই আবদুল্লাহ (রাঃ) সহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের সাথে তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে সপরিবারে আল্লাহর রাসূল ﷺ এর সাথে মদিনায় হিজরত করেন। ইসলাম গ্রহণের সময়কালে তিনি ছিলেন বিধবা, ৬২২ খৃষ্টাব্দে তার প্রথম স্বামী ( তার নাম ও অন্যান্য ব্যাপারে হাদিস বা ইতিহাসগ্রন্হে বিস্তারিত কোন তথ্য পাওয়া যায়না) মৃত্যুবরণ করেন। কাজেই রক্ত সম্পর্কে তিনি ছিলেন রাসূল ﷺ -এঁর আপন ফুফাতো বোন। ইসলামি বিধি মোতাবেক ফুফাতো বোনের সাথে বিয়ে কোন অনৈতিক ব্যাপার নয়। কিন্তু যেসকল দুশ্চরিত্র (যারা নিজেরাই অশ্লীলতার ধরাক-বাহক) ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল ﷺ_ এর চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করার প্রচেষ্টায় মহাব্যস্ত, তারা কখনোই পাঠকদের সামনে তাদের এই সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন না, বরং মোটা হেডিং এ " মুহাম্মাদ ﷺ_ এঁর আপন ছেলের স্ত্রী" পরিচয়টির প্রচারণা চালাতে সদা ব্যস্ত থাকেন। এই অভিযোগ জঘণ্য মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।

যাইদ বিন হারিসা (রাঃ) এর পরিচিতি:

শৈশবে বেদুইনরা তাকে একটি কাফেলা থেকে অপহরণ করে এবং উকায মেলায় কৃতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। হাকিম ইবনে হিজাম তাকে নিজ ফুফু খাদিজা (রাঃ) এর জন্য ক্রয় করেন। রাসূল ﷺ এর সাথে বিয়ের পর খাদিজা (রাঃ) যাইদ বিন হারিসা (রাঃ) কে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ এর হাতে অর্পন করেন। রাসূল (সাঃ) তাকে মুক্ত করে দেন এবং নিজ পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। যাইদ (রাঃ) এর পিতা হারিসা তার সংবাদ জানার পর রাসূল ﷺ এর নিকট আসেন এবং বলেন, তার জন্য তার মা অস্হির হয়ে আছে, পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত। তিনি পুত্র যাইদকে সাথে করে নিয়ে যেতে চান। আল্লাহর রাসূল ﷺ ব্যাপারটি সম্পূর্ণরূপে যাইদ (রাঃ) এর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেন। কিন্তু যাইদ (রাঃ) যেতে অস্বীকার করেন, জবাব দেন, তিনি মুহাম্মাদ ﷺ কে ছেড়ে কোথাও যাবেননা। আল্লাহর রাসূল ﷺ তাকে আপন পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন এবং পিতার মায়া-মমতা দিয়েই তাকে বড় করে তোলেন। এজন্য সাহাবীরা তাকে যাইদ বিন মুহাম্মাদ (মুহাম্মাদের ছেলে যাইদ) বলেই ডাকত এবং আরবের পৌত্তলিক বিশ্বাস অনুযায়ী তাকে নবী ﷺ এর পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য করা হত।

কুরান ও হাদিসে বর্ণিত জাহিলিয়াতের সময়কার বেশ কিছু কুসংষ্কার সম্পর্কে নিচে বর্ণনা দেয়া হল।

#মহান আল্লাহ কোন মানুষের জন্য তার বুকে দুটি হৃদয় সৃষ্টি করেননি; তোমাদের স্ত্রীরা, যাদের সাথে তোমরা যিহার (স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করা) করে থাকো, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং যাদেরকে তোমরা পোষ্যপুত্র ডাকো, তাদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি, এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ সত্য বলেন এবং তিনি এবং তিনিই সরল পথ নির্দেশ করেন।

#তোমরা তাদেরকে ডাকো তাদের পিতৃ পরিচয়ে, আল্লাহর দৃষ্টিতে ইহাই অধিক ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই এবং তোমাদের বন্ধু। এ ব্যাপারে ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে দৃঢ় সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব, মাদানী, আয়াত: ৪ ও ৫)

#আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগের কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম হলঃ কারো বংশ-কুল নিয়ে খোটা দেওয়া, কারো মৃত্যু উপলক্ষে শোক প্রকাশার্থে বিলাপ করা। আরেক হাদিস বর্ণনা কারী সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, নক্ষত্রের সাহায্যে বৃষ্টি কামনা করা।(বুখারী, অধ্যায়: ৫০ আম্বিয়া কিরাম, হাদিস নাম্বার :৩৫৭১, মান সহীহ)

কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, জাহিলিয়াতে "যিহার ( যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করে, মা ডাকে, তবে সেই স্ত্রী মায়ের সমতুল্য হয়ে যাবে, ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে বা তালাক হয়ে যাবে), পোষ্যপুত্র ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কুপ্রথা, বংশমর্যাদা নিয়ে গর্ব-অহংকার প্রদর্শন, কারো মৃত্যুতে বিলাপ, নক্ষত্রের সাহায্যে বৃষ্টি কামনা করা" সহ প্রচুর কুসংষ্কার, ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস ইত্যাদি ছিল আরবের লোকদের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাসের মূলভিত্তি বা অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তাই জাহিলিয়াত পরিত্যাগ করে সদ্য মুসলিম হওয়া ব্যক্তিগণ যারা কিছুদিন আগে জাহিলিয়াত মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেছেন, "জাহিলিয়াতের মাঝে জন্মগ্রহণ, তাদের সাথে কুরাইশদের রক্ত সম্পর্ক বা আত্নীয়তা বিদ্যমান, পূর্বে তারা একই ধর্মবিশ্বাস-সামাজিক রীতি-নীতি লালন-পালন করেছেন, দীর্ঘদিন কুরাইশদের মাঝে অবস্হান করেছেন" ইত্যাদি কারণে এসব মুসলিমগণ তখনো জাহিলিয়াত যুগের এসব কুসংষ্কার হতে মুক্ত হতে পারেননি।"

উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, যখন আরবের বেদুইনরা পৌত্তলিকতা ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন তারা বলাবলি করতে লাগলেন, "আমরা তো মুমিন হয়ে গেলাম" ঠিক সেই মুহূর্তে কোরানের আয়াত নাজিল হয়:

বেদুইনরা বলে, আমরা ইমান এনেছি৷ আপনি বলে দিন; তোমরাতো ঈমান আননি, বরং বল, আমরা মুসলিম হয়েছি, আর ঈমানতো এখনও তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, কাজেই যদি তোমরা আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর, তবে তিনি তোমাদের কর্মসমূহ থেকে একটুও কম করবেন না৷ নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"৷ (সূরা হুজরাত-১৪)



প্রাথমিক পর্যায়ে সদ্য মুসলিম হওয়া ব্যক্তিদের মানষিক অবস্হাও ছিল সবে পৌত্তলিক ধর্ম পরিত্যাগী মুসলিম হওয়া বেদুইনদের মতই। মুসলিম হবার পরেও তারা নানান প্রাচীন কুসংষ্কার দ্বারা আচ্ছাদিত ছিলেন।

এটি খুব স্পষ্ট প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সমাজ ও মানবসৃষ্ট ধর্ম বিধবা নারীদের সাথে আচরণে সবসময়েই ছিল কঠোর মনোভাবের, আরবও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। ইসলাম এ অবস্হার পতন ঘটাল। কুরআন নির্দেশ দিল:

#তোমাদের মধ্যে যারা স্বামীহীন তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন তাদেরও(বিবাহ সম্পাদন কর); তারা অভাবগ্রস্হ হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ( সুরা নূর: ৩২)

আগেই উল্লেখ করেছি যে, যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) ছিলেন বিধবা এবং তার বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল-ﷺ -চিন্তিত ছিলেন। তিনি ঠিক করলেন তার পোষ্যপুত্র যাইদ (রাঃ) এর সাথে যয়নাব (রাঃ) এর বিবাহ দিবেন। যাইদ (রাঃ) ছিলেন একজন আলিম এবং যয়নাব (রাঃ) ছিলেন একজন দানশীলা পরহেজগার মহিলা এবং এই দুজনেই ছিলেন প্রথম দিককার মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর রাসূল ﷺ তাদের বিবাহ প্রদানের মাধ্যমে তাদের ইসলামিক জীবন আরো মজবুত করতে চেয়েছিলেন। কারণ কুরআন বলছে,

চরিত্রবান নারী চরিত্রবান পুরুষের জন্য এবং চরিত্রবান পুরুষ চরিত্রবান নারীর জন্য (সূরা নূর : ২৬)

তিনি জাহাশ পরিবারের কাছে তার মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। কিন্তু জাহাশ পরিবার রাসূল এর এমন প্রস্তাবে বিস্ময় প্রকাশ করে। কারণ একদিকে কুরাইশ বংশীয়া যয়নাব (রাঃ), অন্যদিকে যাইদ (রাঃ) ছিলেন দাস। একদিকে সম্ভ্রান্ত পরিবারের যয়নাব (রাঃ), অন্যদিকে পিতৃপরিচয়হীন যাইদ (রাঃ) যাকে পরবর্তীতে রাসূল-ﷺ - পোষ্যপুত্র হিসেবে লালন-পালন করেন। তৎকালীন সমাজে কুরাইশ বংশের নারীর সাথে মরুচারী বেদুইন পুরুষের বিবাহই ছিল চরম দোষণীয়, সেখানে একজন দাসের সাথে বিবাহের কথা তো অকল্পনীয়। অর্থাৎ বংশমর্যাদার কুসষ্কার সদ্য মুসলিম হওয়া কুরাইশদের মাঝে তখনো বিদ্যমান ছিল যা একটি হাদিস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়।

#ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী ﷺ –কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, লোকদের মধ্যে অধিক সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহ ভীরু, সে সবচেয়ে অধিক সম্মানিত। সাহাবা কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তা হলে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলেন, আল্লাহর নবী ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁরা বললেন, আমরা এ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তবে কি তোমরা আমাকে আরবদের উচ্চ বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? তারা বলল, হ্যা। তখন নবী ﷺ বললেন, জাহেলিয়াতের যুগে তোমাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন ইসলাম গ্রহণের পরও তারাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, যদি তাঁরা ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। (বুখারী:৩১৩৫, অধ্যায় ৫০-নবী রাসূল)

প্রশ্ন কর্তারা ছিলেন কুরাইশ সাহাবী যাদের মাঝে বংশমর্যাদা সংক্রান্ত বিশ্বাসের প্রভাব তখনো বিদ্যমান ছিল। এজন্য দেখা যায় কুরাইশ বংশীয়া যয়নাব (রাঃ) নিজেও প্রথমে এ বিয়ের প্রস্তাবে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

ইসলাম বলে সমতার কথা, ভ্রাতৃত্বের কথা_ তাই বংশ মর্যাদার ভিত্তিতে মুসলিম সমাজ বিভক্ত থাকুক, সেটি মহান আল্লাহ অপছন্দ করলেন না, তাই তিনি এ ব্যাবস্হা উচ্ছেদ করতে মনস্হির। তখন কোরান ঘোষণা করল:

#যখন মহান আল্লাহ ও তার রাসূল কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন মুমিন নর-নারীদের সেই সেই বিষয়ে (ফয়সালার বিপরীতে) কোন এখতিয়ার থাকবেনা; আর যে মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের (সিন্ধান্তের) বিরুদ্ধাচরণ করবে, সে সুস্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হবে (আহযাব ৩৬)

যয়নাব (রাঃ) ছিলেন খুবই পরহেজগার নারী তাই কুরআনের এই আয়াত নাজিল হবার পর তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং যাইদ (রাঃ) এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এই বিয়েতে যয়নাব (রাঃ) এর অনাগ্রহের অন্য আরো একটি কারণ ছিল, সেটি হল, তিনি উম্মুল মুমিনীন হতে চেয়েছিলেন, যা তিনি তখন রাসূল ﷺ এর নিকট প্রকাশ করেননি। এটি প্রকাশ করলে আল্লাহর রাসূল ﷺ তাকে ফীরিয়ে দিতেননা। কারণ আমরা মায়মুনা (রাঃ) এর ব্যাপার জানি যে, তিনি যখন রাসূল ﷺ কে বিয়ের প্রস্তাব দেন, তখন সূরা আহযাব এর ৫০ নাম্বার আয়াত নাজিল হয় এবং আল্লাহর রাসূল মায়মূনা (রাঃ) কে বিয়ে করেন। কাজেই ব্যাপারটি গোপন না থাকলে, আল্লাহর রাসূল ﷺ তার অন্য কোন বিধবা আত্নীয়াকে দিয়ে এমন কুপ্রথা ভাঙ্গার দৃষ্টান্ত স্হাপন করতে চাইতেন।

ইতিহাসবিদ মন্টোগোমারী ওয়াটের মতে- যায়নাব (রাঃ) নিজে উম্মুল মুমিনীন হবার বাসনা পোষণ করতেন। হ্যাঁ, সেই সময়ে আরবের যে কোন মেয়েদের উম্মুল মুমিনীন হবার বাসনা থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল। তখনকার সমাজে নেতৃ-পর্যায়ের এবং প্রতাপশালী ব্যক্তিকে তার অপরাপর স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করতে অনেক মহিলা এগিয়ে আসতেন।

যাইহোক, আল্লাহর রাসূল ﷺ এই বিয়েতে প্রচন্ড খুশি হয়েছিলেন। এই বিয়েতে আল্লাহর রাসূল বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, সাংসারিক নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, খাদ্যশস্য ও খেজুর ইত্যাদি উপহার হিসেবে প্রদান করেন। ৬২৫ খৃষ্টাব্দের দিকে এ ঘটনা ঘটে। যদিও ঘটনাপ্রবাহে এই বিয়ে খুব বেশিদিন স্হায়ী হয়নি, কিন্তু সমকালীন আরবের সামাজিক অবস্হানের উপর এটি ছিল বিশাল এক কুঠারাঘাত। যেখানে সমাজে দীর্ঘদিনের বিশ্বাস ছিল সামাজিক মান-সন্মান ও মর্যাদা ইত্যাদির ভিত্তিই হল "উচু বংশমর্যাদা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি", সেখানে ইসলাম সামাজিক মর্যাদার মানদন্ড হিসেবে স্হাপন করে "তাকওয়া বা আল্লাহভীতি" কে।

১ম পর্বের সমাপ্তি_________

আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে ইনশাআল্লাহ পরবর্তী পর্বগুলো রোজার মাসে প্রকাশ করব।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৪২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×