somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিন্তার শ্রেণীবিভাগ

২৪ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের চিন্তার ক্যাপাসিটি আর ফিল্ডের উপর ভিত্তি করে একটা শ্রেণীবিভাগ বানাইলাম। ফেইসবুকে যারা বিভিন্ন লেখা পড়েন তাদের কাজে আসতে পারে লেখার মেরিট বিচারের ক্ষেত্রে। ক্যাপাসিটির ডিসেনডিং অর্ডারে শ্রেণীগুলা সাজান হইল (দ্রষ্টব্য: শ্রেণীগুলা ওভারল্যাপ করতে পারে):

*দার্শনিক: কোন ফিল্ডের কোর আইডিয়াগুলা নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন (কোর আইডিয়াগুলা কেমনে উদ্ভব হইসে, যুগের সাথে কেমনে পরিবর্তিত বা বিকশিত হইসে), জ্ঞানকাণ্ডের বিকাশ অবজার্ভ করবেন (কোন কিছু লয়া মানুষের আন্ডারস্ট্যান্ডিং কেমনে ডেভেলপ হইসে), উত্থাপিত এবং উত্থাপিতব্য প্রশ্নগুলো চিহ্ণিত করবেন (প্রয়োজনে মোকাবিলা করবেন), বিতর্ক অবজার্ভ করবেন এবং শক্তিকেন্দ্রগুলা চিহ্ণিত করবেন, বিভিন্ন পক্ষের ইনট্রেস্ট বুঝবেন ইত্যাদি। ইনারা হয়ত আপনারে বলবে না- আপনার চিন্তা সঠিক না ভুল, কিন্তু আপনার চিন্তার মেরিট যেন আপনে নিজেই যাচাই করতে পারেন সেটার মাপকাঠি আপনেরে দিতে পারবেন। ইনাদের সংখ্যা খুব কম।

*বয়ান উৎপাদক: উত্থাপিত এবং উত্থাপিতব্য প্রশ্নগুলোর উত্তর তৈরি করবেন। উনার চেষ্টা থাকবে একটা মনোলিথিক সামগ্রিক রূপ অঙ্কন করা (এমন একটা থিওরি তুইলা ধরা- যেটা উত্থাপিত সব প্রশ্নগুলারে স্যাটিসফাই করে)- তবে এই কাজে তিনি সচেতনভাবে বা অবচেতনভাবে কোন কোন ইনট্রেস্ট সার্ভ করতে পারেন। কী করা উচিত, আসলে কী ঘটসিল বা আসলে কী চলতেসে- এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি গাইড বুকের মত উত্তর বানায় দিবেন। ইনারাও রেয়ার। এই রকম চিন্তার উদাহরণ হইল: মানুষের জীবন কেমন হওয়া উচিত (ধর্মের প্রবর্তক), জাতীয় পরিচয় কেমন হওয়া উচিত (কোন স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা), কোন প্রাকৃতিক ঘটনার পেছনে কারণ কী হইতে পারে (বিজ্ঞানী), কোন ঐতিহাসিক ঘটনা কেমনে ঘটসিল (ইতিহাসবেত্তা- যিনি সর্বপ্রথম সেই ঘটনা লিপিবদ্ধ করসেন) ইত্যাদি। ইনারা জটিল সত্য কিঞ্চিৎ সরলীকরণ করলেও করতে পারেন।

*বয়ান প্রিচার ও ডিফেন্ডার: ইনি উৎপাদিত বয়ান প্রচার করবেন (এজন্য তিনি বয়ানের সাথে আবেগ অ্যাটাচ করতে পারেন) আর একই সাথে যুক্তি আর তথ্যের হাতিয়ার দিয়া সেটা প্রোটেক্ট করবেন। কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার- তাবৎ শিল্পীরা এই ভূমিকা পালন করতে পারেন। সংবাদপত্র, স্কুল-কলেজের টেক্সটবই, কলামিস্ট, বেশিরভাগ ফেইসবুক লেখক আর ব্লগারদেরও এই শ্রেনীতে ফেলা যায়। ইনি আরেকটা মজার কাজ করতে পারেন, ক্ষুদ্র পরিসরে উত্থাপিত প্রশ্নগুলার ব্যাখ্যা মূল বয়ানের সাথে অ্যালাইন কইরা দিবেন, যাতে মূল বয়ানের ইমেজ অটুট থাকে। ইনি জটিল সত্য অনেক সরলীকরণ কইরা পাবলিকের হজম করার উপযোগী করবেন। বয়ানটা কোন ঐতিহাসিক ঘটনা হইলে তিনি এক পক্ষরে গুড গাইজ, আরেক পক্ষরে ব্যাড গাইজ হিসেবে দাঁড় করাইতে পারবেন।

*হিপস্টার বা কর্মী: ইনারা বয়ানের সাথে অ্যাটাচড আব্গেটারে অ্যামপ্লিফাই করবেন। বয়ান ধারণটারে পবিত্র দায়িত্ব মনে করবেন, বয়ানের মধ্যে জীবনের লক্ষ্য খুঁইজা পাইবেন ইত্যাদি এবং এগুলার মাধ্যমেই তাগো সেলফ অ্যাকচুয়ালাইজেশন তৃপ্ত হইব। এই জন্য তারা ইভেন্ট আয়োজন করবেন, ঝগড়া করবেন, মারমুখি হয়া থাকবেন। ইনারা লেখালেখি করলে লেখায় সারবস্তু কম, কিন্তু আবেগ, স্যাটায়ার, চটকদারী, বিদ্রূপ বেশি থাকব।

*উদাস: বয়ান নিয়া ইনাদের কনসার্ন নাই্। ইনারাও বয়ানের সাথে নিজেদের অ্যালাইন করেন, কিন্তু আবেগীয় অ্যাটাচমেন্টটা ইনাদের তেমন একটা স্পর্শ করে না। একটা বয়ান থাকলে ভালো হয়, তাই তারা সেটা নিয়া আছেন। বয়ান ধারণ তাগো কাছে খুব বেশি হইলে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট, ট্রেন্ডি (এক্ষেত্রে পিয়ার প্রেসার কাজ করতে পারে) বা কুলনেসের উপাদান হিসেবে থাকতে পারে, যেমন, বিভিন্ন উৎসবে সাজগোজ কইরা ঘুরাঘুরি করা, চে গুয়েভারার গেঞ্জি, কাপড়ের ব্যাগ কিনা ইত্যাদি। তবে চাপে পড়লে বা বয়ান বিপন্ন মনে হইলে ইনারা হিপস্টারদের লেভেলে উত্তীর্ণ হইতে পারেন।

একটা উদাহরণ দিয়া পুরাটা পরিষ্কার করা যায়: যেমন '৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বাঙালি জাতীয়তাবাদরে একটা গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি ধরা হয়। ধরলাম, স্বাধীনতার পর কোন আদিবাসী/উপজাতির মনে প্রশ্ন জাগল, আমাগো পরিচয় কী হইব? রাষ্ট্রের লগে জাতীয় পরিচয়ের সম্পর্ক কী? সেটার গুরুত্ব কী?- ইত্যাদি। এটারে দার্শনিক পর্যায়ের চিন্তা বলা যাইতে পারে। তারপর কোন একজন আদিবাসী/উপজাতি কইলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সব পাহাড়ীর পরিচয় তারা "জুম্মজাতি"। এটা বয়ান উৎপাদন হইল। এরপর বয়ান প্রিচার আর ডিফেন্ডাররা এটা প্রচার করার কাজে লাইগা যাইবেন, যুক্তি দিয়া এটারে প্রোটেক্ট করবেন আর আবেগ দিয়া পাহাড়ীদের মধ্যে জুম্ম-জাতীয়তাবোধ জাগায় তুলবেন। হিপস্টার যারা আছেন, তারা প্রিচার আর ডিফেন্ডারগো লেখা শেয়ার করবেন অথবা মূল লেখার কমেন্ট থ্রেডে বিরোধীগো লগে বিতর্ক করবেন। আর যারা এত কাণ্ডকারখানা লয়া উদাসীন থাকব তারা উদাস। তবে ধরেন, একদল উদাস পাহাড়ীগোরে উচ্ছেদ করা হইল, তখন বসতভিটার প্রয়োজনে তারা কর্মী লেভেলে উত্তীর্ণ হয়া আন্দোলন করতে পারেন।

সমাজে সব স্তরের মানুষগোরেই দরকার আছে বইলা মনে করি। আমার মতে, সবাই দার্শনিক হইতে চাইলে সমাজ ফাংশন করতে পারব না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×