আবারও বর্ষা।
ঘামে ভেজা প্রতিটা পুতিময় শরীর আজ বর্ষার অনিয়ন্ত্রিত বর্ষণে ভিজছে। অন্যরাও ভিজছে, অন্যরাও ভেজাচ্ছে। কিছু নিয়মিত দর্শক আজো জানালার ভিতর দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে নিজের কাছে টেনে আনার আকুতি ব্যক্ত করছে। অনিয়মিতরা আবার অলস সময় কাটাচ্ছে। ৪-৫ লাইনের ছন্দময় ছড়া লিখে মৃদুল মাঝে মধ্যেই নিজেকে কবি বলে দাবী করছে। করুক গে দাবি, এতে কার কি আসে যায়। হাজার হোক সেটা তো আর গীতাঞ্জলির ধারে কাছেও ঘেষতে যাচ্ছেনা।
অন্যদিকে ঘড়ির কাটা বাম থেকে ডানে যতই বাক নিছে, বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু জল ততই ভারী হয়ে উঠছে। ৪ নাম্বার ট্রান্সমিটারের বৈদ্যুতিক শকে নিহত কাক টাও ভিজে চুপসে গেছে। লজেন্স কিংবা আইসক্রিমের কোনোরূপ প্রলোভন ছাড়াই ৮ বছরের শিমুল ভিজতে নেমে গেছে তার নতুন দাঁত ওঠার আনন্দের রেশ কাটিয়ে।
অলসতার মাঝে কেউ কেউ আবার ব্যস্ততার সংজ্ঞা খুঁজছে। চারিদিকের পরিবেশ ক্রমশই নির্মল থেকে নির্মম হয়ে পরছে। রাস্তায় ভিড় করে থাকা মানুষ গুলো তাদের প্যান্টের দৈর্ঘ্যকে কমিয়ে নিচ্ছে। অন্যথায় অসস্তিকর কাদাকে যে সেখানে আশ্রয় দিতে হবে। পা পিছলে নতুন স্লিপার্টি ছিড়ে ফেললো সামনের লোকটি। খানিকটা মুচকি হাসি প্রতিধ্বনিত হল পাশের লোকদের মাঝ থেকে।
দিন এনে দিন খাওয়া নূর ভাই আজ আর কাজে বের হন নি। গত ২ দিনের অতিরিক্ত কিছু আয় দিয়ে আজকের দিনটা তার ভালোভাবেই চলে যাবে। তবে আগামীকালের কথা ভেবে প্রায়-ই তার চোখে মুখে বিষণ্নতার ছানি লক্ষ করা যাচ্ছে। নানাবিধ অনিশ্চয়তা গুলো কুণ্ডলী পাক খাচ্ছে তার সাময়িক এই কর্ম বিরতিতে। আগামীকাল ও যদি এইরকম বৃষ্টি হতে থাকে !
অনেকদিন পর বাবা-মাকে একসাথে কাছে পেয়েছে লামিয়া। আর তাই আজ তাকে বেশ খুশি খুশিও লাগছে। বাবা-মাকে গত সপ্তাহের প্রতিটা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় গল্প শোনাতে রীতিমত সে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।
পক্ষান্তরে, আমার এবং তার মাঝের মান-অভিমানের কাচা রাস্তাটা প্রবল বর্ষণে ধুয়ে যেতে শুরু করেছে। ভুল-ত্রুটি গুলো আজ ক্ষমার ফলাফলে সমাধিত হচ্ছে। প্রজাপতির সন্ধি গুলো আজ বিগ্রহে আছে এবং তার বিপরীতে দেয়াল দেয়াল প্রেমটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে বসেছে।
উচু রাস্তার ফলকে দাড়িয়ে চারিদিকে নিত্য নতুন দ্বীপের জন্ম হতে দেখছে আরমান। ব্যাটার ঠান্ডা বলতে আদৌ কিছু নেই। সেই সকাল থেকে ফলকের সামনে দাড়িয়ে ভিজছে তো ভিজছেই। এরই মধ্যে কে যেন ব্যাস্ত নগরীর শান্ত রূপটি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে ধূসর মেঘলা আকাশের মাঝ থেকে টাংস্টেনের ফ্লাশ আলোর ঝলকানি দিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছে। আমি নিশ্চিত সেই ছবিতে নগরীর লোকদের আজ অনেকটাই সভ্য দেখাচ্ছে।
ঐদিকে বর্জ্যপাতের প্রকাণ্ড শব্দে ভয় পেয়ে শিমুল ঘরে ফিরে গেছে, কাকটা এখনও ভিজেই চলছে, বিন্দু বিন্দু জলের ভর ও গতি বেড়েই চলছে, অনিয়মিত দর্শকরা নিয়মিত হ্ওয়ার চেষ্টা করছে।
দিনশেষে সবাই প্রতিক্ষায় আছে আবারও বর্ষার।