লাশের আত্মকাহিনী!!
জানো! তুমি আমি একদিন মারা যাব। জগতের সবচেয়ে সরল সত্যটার কাছে আত্মসমর্পণ করবো। আমরা লাশ হব। লাশ!!
নিজেদের মালিকানায় আমাদের সেদিন একটা আকাশ হবে। তবে সেই আকাশে কিন্তু কখনো কোন মেঘ হবে না, মেঘ গর্জে বৃষ্টি হবে না। আকাশের রংটাও কালো কিংবা আকাশী হবে না। সেই আকাশ জুড়ে কারো কোন পার্থণা থাকবে না। আমরা শুধু চেয়ে থাকবো সেই আকাশের এপাশ থেকে অপাশে। নির্বিকার সেই চোখগুলোতে সেদিন থাকবেনা কোন পতিক্রিয়া। সেই আকাশে কল্পনাপ্রসূত কোন ছবি বা চরিত্রের সৃষ্টি হবে না। ভয় পেও না! সেই আকাশে কোন বজ্রপাত ও হবে না যাতে শঙ্কিত হয়ে আমাকে বারবার খুঁজতে হবে তোমার।
আমাদের কিছু অতীত হবে। সেই অতীত নিয়ে পাড়া প্রতিবেশীরা মাঝে মধ্যে তাদের আড্ডার আসর মাতাবে। অতীত ঐতিহাসিক হলে সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হবে, পক্ষ-বিপক্ষ নামক দুই প্রজাতি আত্মপ্রকাশ করবে। এদের এক পক্ষ ইতিহাস গুলোকে বিকৃত করবে আর অন্য পক্ষ উৎকৃষ্ট। তাতে আমাদের কিছু যাবেও না, আসবেও না। মেঘ আকাশে ভেসে বেড়ায়, আমরা ছুতে পারি না। লাশেদের কাছে অতীতটা সেইরকম ই।
আমাদের একটা ঘর হবে। চারিদিক ঘেরা থাকবে। সে ঘরে কেউ আসবেও না, যাবে না কিংবা আদতে কেউ সেটা চাইবেও না। সে ঘরটি হবে আলো বাতাসহীন। দিয়াশলাই জ্বালিয়ে আত্মহনন হবে না কোন মোমবাতির, জ্বলবে না সোডিয়ামের ২৩ ওয়াটের কোন বাল্ব। সভ্যতার ছুড়ে দেয়া অতীত গুলোও সেখানে আস্তানা গাড়বে।
আমাদের একটা প্রজন্ম হবে। আত্মাপ্রজন্ম। যেটার সৃষ্টি মূলত জীবন্তবাসীর সাইকোলজির যত শত ত্রুটি থেকে। জীবন্ত বাসীরা আত্মাদের নাম রাখে- ভূত, প্রেত, পেত্নী ইত্যাদি। আত্মাপ্রজন্ম সব্যসাচী। এরা জীবন্তপূরের যেকোন যায়গায় বিচরণের ক্ষমতা রাখে। জীবন্তবাসীর মস্তিষ্কের রন্দ্রে রন্দ্রে এরা ঘুরে বেড়াতে পারে। এরা দূরদর্শক। মিথ্যার চাঁদরে ঢেকে থাকা নগরীর ভেতরটা এরা দেখতে পায়। হাজারো ছল-চাতুরী আর তাদের প্রতারিত করতে পারে না। আত্না পরপ্রজন্ম অক্ষম। এতকিছু দেখার ক্ষমতা থাকা সত্তেও তার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা প্রায় শুন্যের কোঠায়।
আমাদের কিছু শঙ্কাও রয়েছে। লাশ হয়ে পাওয়া নবজীবনটার মেয়াদ যদি হয় অনন্তকাল। দরজার ওপাশে যদি সত্যি সত্যি কোন ঈশ্বর থেকে থাকে। সে যদি জবাবদিহিতা চেয়ে বসে! উত্তর দেওয়ার সব কিছুই তো ফেলে এসেছি জীবন্তপূরে। চাইলেও যে আর আনতে পারবোনা। আমাদের হাতটা ধরে একমুঠো আশ্বাস দেয়ার মত কেউ যে আর থাকবেনা তখন।
মজার ব্যাপার হলো, শুধুমাত্র সেদিন ই আমরা আমাদের হব। সেদিন আর চেহারায় লাগাতে হবে না মিথ্যের মুখোশ কিংবা পড়তে হবে না ভন্ডামির কোন উর্দি। চোখে মুখে থাকবেনা ছল-চাতুরীর কোন ছায়া। বড্ড খুশি লাগবে বোধহয়! জগতের সৃষ্ট হাসি-কান্না কিংবা সুখ-দুঃখ জাতীয় অনুভূতি গুলোকেও আর ধার করতে হবে না। পকৃতভাবে আমরা সেদিন ই হব স্বাবলম্বী কিংবা এনাটমির কোন ছাত্রের রিসার্চ মেটেরিয়াল।।