somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা তুমি মিথ্যেবাদী !

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবা!

আচ্ছা বাবা আমি যেদিন প্রথম এই অচেনা নগরীতে চোখ খুলেছিলাম সেদিন যে তুমি ই প্রথম যে আমায় তার কোলে তুলে নিয়ে মনে মনে বলছিলে ‘কিসের ভয় রে তোর? এই যে আমি আছি না! তোর বাবা। চিনতে পারছিস না! এই নগরীতে আমার কাছে এটাই ছিল প্রথম সত্য এবং সেটার বক্তা যে তুমি ই ছিলে। বাবা হিসেবে এটা নিয়ে তোমার যতটা গর্ব হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুন গর্ব আমার হচ্ছে এই ভেবে আমার সত্যের যাত্রা আমার বাবাকে দিয়েই শুরু হয়েছে। আমার এই সত্যে-মিথ্যের নগরীতে অনিঃশেষ এক ভরসার প্রদীপ জ্বলেছে।

আচ্ছা বাবা আমার যখন হাটা শিখতে দেরী হচ্ছিল তুমি যে অহেতুক আমায় নিয়ে ভাবতে সেটা কি তোমার মনে আছে। আমি ত কত চেষ্টা করতাম তবে পেরে উঠতাম না। তুমি বারবার বুড়ো আঙুলটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিতে আর আমি সেটা ধরে ধরে বাড়ির উঠোনে মহানন্দে বিচরন করতাম। সেই সামান্য খুশিতেই তুমি কোলে নিয়ে আমাকে আকাশের দিকে ছুড়ে দিতে। মা’র হাজার বারনগুলো তুমি একটুও কানে দিতে না। বাবা সত্যি বলতে তোমার সেই আকশের দিকে ছুড়ে দেয়া থেকেই আমি আজ আকাশের মত বিশাল বিশাল স্বপ্ন দেখতে পাই। তোমার চোখে আমায় নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলোকে মরে যেতে দেই না।

আমার মুখ থেকে বের হওয়া প্রথম শব্দটা শোনার পর তুমি অতটা বিস্মিত হয়েছিলে কেন? তুমি কি ভেবেছিলে আমি কথা বলতে পারবো না? তুমিও না কি সব ভাবতে। কেন এমনটা ভাবতে? তুমি কি জানতে না তোমার চোখে আমায় নিয়ে দেখা প্রতিটা স্বপ্নকে আমি বাস্তবায়ন করবো। মানুষকে বলে বলে বেড়াবো যে আমার সব কিছু আজ তোমার জন্যই হয়েছে শুধু। স্বপ্ন কি, কিভাবে দেখতে হয়, কিভাবে তাকে বাস্তবের সূতো দিয়ে সেলাই করতে হয় সবকিছুই ত তুমি শিখিয়েছ আর তারপরেও ভাবতে আমি সামান্য কথাটা বলতে পারবো কি না। তুমিও না।

বাবা আমার ‘ঙ’ লেখা শেখার ইতিহাসটা তোমার মনে আছে? তুমি হাত ধরে ধরে কতবার চক দিয়ে আমায় এটার উপর দিয়ে হাত ঘুরাতে বলতে আবার নিজেও ঘুরিয়ে দিতে। তবুও তুমি হাল ছাড়তে না। সেটা তুমি শেষমেশ আমাকে শিখিয়েই ছেড়েছিলে। আজ বুঝি সেটা করতে কতটা ধৈর্য তুমি আমার পেছনে ব্যায় করতে। আর সেজন্যই আজ তাই এইরকম ঙ দিয়ে আমি একটা সাহিত্যই লিখে দিতে পারি।

দিনটা বোধহয় রবিবার ছিল। প্রথম যেদিন তুমি আমায় স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তখন কিছুই না বুঝে মনমড়া হয়ে তোমার হাত ধরে স্কুলের সেই আঁকাবাঁকা অচেনা পথ ধরে হাটছিলাম। সেদিন আমার খুব ভয় লাগছিল বাবা। তবে কয়েকদিন স্কুলে যাওয়ার পর বুঝেছিলাম বাবা তুমি আমায় সেদিন আমাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কত বড় গুরুদায়িত্বটা পালন করেছিলে আমায় স্কুলের বারান্দায় শত শত অপরিচিত মুখের মাঝে একা ফেলে দিয়ে। আজ আমি নিজেকে চিনতে পারছি বাবা। তোমার মত নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় সৃষ্টি করতে পারছি নশ্বর এই নগরীতে।

বাবা সেবার হওয়া আমার প্রচন্ড জ্বরের কথা তোমার মনে আছে? মা’র কান্না মুছতে গিয়ে তুমিও যে কেঁদে ফেলছিলে আমি কিন্তু দেখছিলাম। দিনের পর দিনে কিছু খেতে পারছিলাম না আমি। ফকির-কবিরাজ কত কিছুরই না আশ্রয় নিয়েছিলে তুমি। আমায় কাঁধে করে সারাদিন রাস্তার হাওয়া-বাতাস খাওয়াতে। দেরীতে হলেও তোমার কপালে চিন্তার ছাপ পড়ার আগেই আমি ভালো হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝলে বাবা তোমার ছেলে বলে কথা। ঐ রকম রোগ কি আর আমায় কাবু করতে পারে।

বাবা বারবার তুমি আমায় ফার্স্ট হতে কেন বলতে? আমায় কেন পড়ার জন্য এত পেদাতে? মাও তোমার সাথে সাথে আমাকে খুব আচ্ছা করে বানাতো। সেবার ইচ্ছা করে রেজাল্ট আমার খারাপ হচ্ছিল না। তাও তুমি আমায় কত্ত বকাজকা করলে। আমার খুব রাগ হচ্ছিল তোমার উপর। তবে ভয়ে তা দেখাতে পারছিলাম না। পাড়ার গেঞ্জামের পর তুমি আমায় ওদের সাথে মেশার কারণে কি মারটা না মেরেছিল তার স্মৃতি তখনো আমি ভুলি নি। আর সেই ভয়েই রাগটা দেখাতে পারছিলাম না। তবে বকা আর মারার পরে রাতে যখন শোয়ার সময় মা’কে বলছিলে আমায় এত মারার পরেও যদি আমি ঠিক না হই! আবারো রেজাল্ট খারাপ করি, পাড়ার ওদের সাথে আমার মিশতে যাই তাহলে ত আমাকে নিয়ে দেখা সকল স্বপ্নই ভেঙে যাবে। আমি কিন্তু ঠিকি সব শুনেছিলাম আর মনে মনে প্রথমবারের জন্য অনুতপ্ত হচ্ছিলাম। পণ করেছিলাম আমায় নিয়ে দেখা তোমার প্রতিটা স্বপ্ন আমি তোমাকে বাস্তব করে দেখাবোই।

বাবা জামা-কাপড় কেনার সময় তোমার চয়েস এত্ত বাজে হত কেন? প্রতিবার উৎসবের আগে মার্কেটে নিয়ে কি সব উদ্ভট ড্রেস কিনে দিতে। একবার দোকানদার চকচক করা গেঞ্জিটা তোমার হাতে ধরিয়ে বললো বাবুটাকে এটায় খুব মানাবে। দিল্লীর সালমান দেখাবে। কি সব উদ্ভট প্রলোভনে তুমি পটে গিয়ে শেষমেশ সেই ড্রেসটাই আমায় নিয়ে দিলে। আজকে বলছি ‘ঐ ড্রেসটাই ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে বাজে একটা ড্রেস। তুমি রাগ করছো নাকি!

বাবা তুমি মা’কে এতটা ভালোবাসতে কিভাবে? যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই তোমাদের দেখে এই একটা কারনেই হিংসে হত। ভাবতাম দুনিয়ার সব অকৃত্রিম ভালোবাসা মনে হয় ইশ্বর তোমাদের দু’জনের জন্যই বরাদ্ধ করেছে। তখন ভাবতাম আমিও কি তোমার ছেলের বউটিকে তোমাদের মত ভালোবাসায় বাঁধতে পারবো। পবিত্রতার সংজ্ঞায় ভালোবাসাকে দিতে পারবো! এখনো আমার সেই সময় হয়ে উঠে নি। তবে আশা রাখি আমিও তোমাদের মত ভালোবাসা আমার জীবনে বরাদ্ধ করতে ইশ্বরকে বাধ্য করবো।

বাবা তুমি কি সব শুনছো? বাবা তুমি কোথায়? এতক্ষন ত আমার পাশেই ছিলে। আমি কি এতক্ষন স্বপ্ন দেখতেছিলাম? বাবা কোথায় তুমি? আজ আমার কেন জানি ভয় করছে। তোমার সেই ভরসার হাতটা একটু বাড়িয়ে দাও না!

বাবা আজ তোমাকে বড্ড দরকার। আজ আমি অনেক বড় হয়েছি। যেই কোলে করে আমার পুরো দেহটাকে বাড়ির চারিদিকে নিয়ে পায়তারা করে বেড়াতে আজ তোমার সেই দিন শেষ। তুমি চাইলেও পারবে না। আজ আমার দিন। তোমাকে দিব্বি আরাম করে শুধু বাড়ি না পুরো শহরটা ঘুরে আসতে পারবো আমি।

বাবা আমার গ্রেজুয়েশনের টুপিটা মাথায় দিবে না? আমার চাকরির প্রথম বেতনে তুমি নতুন জামা কিনবে না? মা’কে গর্ব করে বলবে না আমার ছেলে বড় হয়ে গিয়েছে? বাবা তুমি না বলেছিলে আমার প্রথম সন্তানের নাম রাখবে। তুমি না বলেছিলে নাতি-নাত্নীকে নিয়ে বুড়ো বয়সে আনন্দ ফুর্তি করবে। আমার বউকে দিয়ে তোমার ময়লা কাপড়গুলো ধুইয়ে নিবে। কোথায় তুমি আজ? তুমি ত দেখছি মিথ্যে বলাও শিখে গেছ।

তুমি আমার সেই বাবা না যে এই নগরীতে এক সত্যের সাথে পরিচয় করে আমায় স্বাগতম জানিয়েছিল। যে কিনা আজ অনেকগুলো মিথ্যে বলে আমায় একা রেখে চলে গেলে। বাবা তুমি মিথ্যেবাদী।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×