somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবাক ভালবাসা

২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টার জ্যাম... ৬টার মধ্যেই আমার ধানমন্ডিতে থাকার কথা। আর আমি এখনও মিরপুর ১০ এর জ্যামে আটকা।
বিরক্তি ভুলতে কানে হেডফোন ঢোকালাম।
“অবাক ভালবাসা”...
সেই ভয়ংকর সোলোটা শুরু হল... গিটার বাজছে- আর আমার কানে গেঁথে যাচ্ছে একের পর এক শব্দের বর্শা...
আমার মাথার সবগুলো তার একটা একটা করে ছিঁড়তে শুরু করলো... নাহ... এ কোনো যন্ত্রণা নয়- এ হল এক মুক্তি... মাথার ভেতরে জীবন নামক এক সমস্যার ২৪ বছর ধরে তিলে তিলে তৈরী করা জটা পাকানো প্রত্যেকটা চিন্তার থ্রেড আজকে একে একে ছিঁড়ে যেতে শুরু করল... আমি মুক্ত হচ্ছি- আমি আস্তে আস্তে মুক্ত হচ্ছি কালো মগজটার ভেতরে বাসা বাঁধা প্রত্যেকটা যন্ত্রণা থেকে... আমি আনন্দে চোখ বুঁদলাম...
একসময় সমুদ্র ফুঁসে উঠলো গানের ভেতরে... আর শব্দের ওই তীক্ষ্ণ ফলাগুলো আমার মস্তিষ্ককে গলাতে শুরু করলো বিন্দু বিন্দু করে... গলে পরা ওই মগজ জমা হতে থাকলো আমার বুকের নিচের দিকটাতে- ফোঁটায় ফোঁটায় তারা সৃষ্টি করলো বিশাল এক সমুদ্র...
সব আলো নিভে যাক- আঁধারে
শুধু জেগে থাক ঐ দূরের তারা রা,
সব শব্দ থেমে যাক- নিস্তব্ধতায়,
শুধু জেগে থাক এই সাগর- আমার পাশে
আহা হা হা আহা হা……………
আমি সব আলো নেভালাম। আর সমুদ্র ছাপিয়ে গেল আমার বুকের ওই ছোট্টো কুঠুরীটাকে... উত্তাল ঢেউ এসে ছুঁয়ে দিয়ে গেল আমার সমস্ত শরীরকে...
আমি একটা সাগর... হ্যাঁ, সত্যিই তাই... আমি আবছাভাবে চোখ মেললাম- শান্ত ঢেউ বয়ে চলছে আমার হাতের উপর দিয়ে, ঢেউ ভেঙ্গে চলছে আমার পিঠ, পেট আর গালের তল বেয়ে... ঢেউ আছড়ে পড়ছে আমার নখের গোড়ায় এসে... আমি বন্ধ চোখে হারিয়ে গেলাম আমার নতুন ওই সত্ত্বাটার ভেতরে...
আলো আধারীর এক অদ্ভুত মায়া আমাকে ঘিরে রেখেছে আজ রাতে- পূর্ণিমার চাঁদের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আমি উদ্বেলিত হয়েছি তাকে পাবার আশায়- গত হাজার বছরের মত আজকেও...
একটু পর গানের সুরে সুরে আমার সমুদ্র শরীরে জেগে উঠলো একটা শান্ত মায়াবী দ্বীপ...
আমি এই দ্বীপকে চিনি- এর নাম সেন্ট মার্টিন...
শহুরে জীবনের ক্লান্ত দিনগুলোর শেষে প্রতিরাতে শুণ্য বিছানায় হাতড়ে বেড়ানো ওই জাদুময় দ্বীপটা আজ জেগে উঠেছে আমার নিজেরই দেহের ভেতরে- বুকের একটু বামপাশে... কি অদ্ভুত না? আজ আমি এই সৌন্দর্যের অংশ নই- আজ এই সীমাহীন সৌন্দর্যই আমার ছোট্টো একটা অংশ...
একসময় আমার বুকের ওই দ্বীপটাতে একটা নারিকেল গাছ জন্মালো। তার হাত ধরে মুহুর্তে শত শত নারিকেল গাছ ভরিয়ে তুললো আমার বিশাল বেলাভূলিটাকে... আমার খুব নিজের ভেতরে মানুষ হয়ে হেঁটে বেড়াতে ইচ্ছে করলো কেন জানি... প্রথম জন্ম নেয়া ওই নারিকেল গাছটার নিছে টুপ করে জন্ম হল আমার আরেকটা স্বত্বার...
শুভ্র বালির সৈকতে-
এলোমেলো বাতাসে- গীটার হাতে
নিস্তব্ধতা চৌচির, উম্মাদ ঝংকারে কাঁদি
অবাক সুখের কান্না- যেন চুনি হীরা পান্না
সাগরের বুকে- আল্পনা এঁকে দিয়ে যায়-
অবাক ভালোবাসায়…….
অবাক ভালোবাসায়……
আমার আশপাশে আর কোন মানুষ নেই... আমি একা একা পায়ে চাঁদের আলোতে হেঁটে বেড়াচ্ছি সেই চির আরধ্য স্বর্গটাতে... খোলা পায়ে ঐ বালুর পাড় ঘেঁষে আমি তন্ময় হয়ে দেখছি ওই আমাকেই- আমি একটু পরপর এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছি আমার ওই নগ্ন পা’দুটিকে... আমি ঠান্ডা বাতা হয়ে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছি আমার আরেকটা ছোট্টো শরীরকে, বিনি কেটে দিচ্ছি নিজেরই চুলের গোড়ায়...
আজ আমাকে আর শূণ্যতা গ্রাস করছে না- প্রকৃতির সাথে মিশে যাবার ওই আজন্ম ব্যার্থ স্বপ্নে আজ আর আমার মন আর আঁধারে ডুবে যাচ্ছে না। আজ আমি হাঁটছি- আমার নিজের ভেতরে- আমি নোনা পানি হয়ে দেখছি আমার নিজের পথচলাকে, আমি ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ছি আমার নিজের বেলাভূমিতে, আমার মায়াবী আলো উদ্ভাসিত করে রেখেছে আমার নিজের সারা শরীরকে...
ওহ... আমি আমার জীবনে এতটা পরিপুর্ণতা কখনো অনুভব করিনি... আমি আজ নিখাঁদ, আর কোন অতৃপ্তি নেই আমার মনে, নেই কোন কালো চিন্তা... আমি আজ মিলে মিশে একাকার হয়ে আছি এই পুরো সৃষ্টিলীলার মাঝে, আমি আজ সবকিছু... সবকিছুই আজ আমি...
.
.
অবাক ভালবাসাঃ https://youtu.be/tijeIi3CFpA
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×