somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমায় দিলাম

২০ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যার শেষ আলোটা তখনো মিইয়ে যায়নি। আমি নিজেকে আবিষ্কার করি বিশাল একটা খোলা মাঠের একদম মাঝখানটায়। এত বড় মাঠ আমি এর আগে কখনো দেখিনি...
এটাকেই কি “তেপান্তরের মাঠ” বলে?
আচ্ছা, একটা মাঠকে তেপান্তর হতে হলে ঠিক কতটুকু বিশাল হতে হয় ?
আমি এর উত্তর জানি না...
মাঠের অপর দিকে- দিগন্তের সাথে লেপ্টে আছে কমলা রঙের পরাবাস্তব একটা আকাশ। আকাশের ওই কমলা রং মাঠের উপর নুয়ে পড়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, নিজের অপার্থিবতা ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো মাঠটাতে।
দিগন্ত লেপ্টে থাকা ওই আকাশের টুকরো আর আমার চোখের মাঝে তিনটি মাত্র আবছা অবয়ব। দুটো ঘোড়া- মাথা নুইয়ে ঘাস খাচ্ছে একটা বট গাছের পাশে।
আমি পা ছড়িয়ে বসে পড়ি। প্রায় ২৪ ঘন্টা হল আমি এই সভ্যতার দেয়া সকল “উপহার” ফিরিয়ে দিয়ে আদিকালে পা বাড়িয়েছি। সভ্যতার শেকলে এতদিন আটকে থাকা আমার চোখ, আঙ্গুল, সবাই আজ ক্লান্তিতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে পরাবাস্তব এই আলোটার মাঝে। সমস্যা করছে শুধু ফুসফুস। এই বিশুদ্ধ বাতাসে হাঁপিয়ে উঠেছে সে, হন্যে হয়ে খুঁজছে একটুখানি সাদা ধোঁয়া...
কিন্তু আজ কোন ধোঁয়া হবে না, আর কোনদিন কোন ধোঁয়া হবে না- আমি মনস্থির করেছি।
কমলা রঙের আকাশটা বিদায় নিল আস্তে আস্তে... আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম প্রকৃতির পরিবর্তনটা। আকাশে এখন রাজত্ব করছে রূপালি রঙের স্নিগ্ধ গোল এক দেবী... দেবীর পবিত্রতায় ভেসে গেছে সমগ্র তেপান্তর...
আমি উঠে দাঁড়াই। ২৫ বছর ধরে শরীরে জড়িয়ে থাকা সব জঞ্জাল ঝেড়ে ফেলি এক এক করে... অদ্ভুত এক সম্মোহনে হাঁটতে থাকি ঘোড়াগুলোর দিকে।
পেছনে ঘাসের উপর খুব অপাংক্তেয়ভাবে পড়ে থাকে আমার ফেলে রাখা কাপড়গুলো...
আমি কার্তিকের মৃদু বাতাস গায়ে মেখে এগিয়ে যাচ্ছি ঘোড়াগুলোর দিকে... আমি গোসল করছি- কোন এক তেপান্তরে- কার্তিকের কোন এক রাতের মৃদু বাতাসে...
আমি ঘোড়াদুটোর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। খুব কাছে এসে হঠাৎ চিনতে পারলাম ওদেরকে- ওরা ৪০ বছর আগে মহীনের হারিয়ে যাওয়া সেই ঘোড়াগুলো। আজ – আজ এতদিন পর আমি ওদেরকে খুঁজে পেলাম... খুঁজে পেলাম এই তেপান্তরের স্বাধীন প্রান্তরে- কার্তিকের জ্যোৎস্নায় তারা আজও ঘাস খাচ্ছে...
আমি ঘোড়াদুটোর গলা ধরে আদর করলাম। গালে চুমু খেলাম।
ঘোড়াদুটো আমাকে বুঝতে পারে... সামনের দু’ পা তুলে নিঃশব্দে আমাকে জড়িয়ে ধরে, ওদের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক বিন্দু অশ্রু...
“ গত ৪০ বছরে এ পথে অনেকেই হেঁটে গেছে, জানো? সবাইকে আমরা এভাবে বিদায় জানিয়েছি, দিয়েছি ভালবাসা, আর কয়েক বিন্দু অশ্রু... ”
“এর চেয়ে বেশী আর কী-ইবা দেয়ার আছে?” আমি মৃদু হেসে ওদের ঠোঁটে চুমু খেলাম। ওরে খুব ধীরে আমাকে নিজেদের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে দিল...
আমি হেঁটে গেলাম ওদেরকে পাশ কাটিয়ে- আরেকটু সামনে- যেখানে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে বুড়ো গাছটা।
আমি বটের গা বেঁয়ে উপরে উঠলাম। মাঝামাঝি একটা ডাল থেকে ঝুলে আছে বেশ কিছু শেকড়। আমি সবথেকে মোলায়েমটাকে বেছে নিলাম। নিগুঢ় মমতায় অনেকক্ষণ ধরে সেটাকে পেঁচালাম, গিট দিলাম শক্ত করে...
ঘোড়াদুটো আবার ঘাস খাচ্ছে এখন। নিজের জগতের এক মিনিটের ছুটিতে একটা আলিঙ্গন, দুটো চুমু আর কয়েক ফোঁটা অশ্রু... এক কার্তিকের রাতে এটাই কি যথেষ্ট না?
“আর কী-ইবা দিতে পারি...???” আমার মাথায় হুট করে বেজে উঠলো লাইনটা।
আমি নিঃশব্দে হাসলাম... রূপালি দেবীর দিকে ফিরে তাকালাম। পরম ভালবাসায় আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে বটগাছটা- যেন আমি কোন শিশু, আর সে আমার মা... আমি পরম নির্ভরতায় তার আলিঙ্গনের মাঝে নিজেকে সমর্পণ করি- আরামে চোখ মুঁদে আমার পা দুটো... চোখ বুঁদি আমিও... আধবোজা চোখে আমি দেখতে থাকি কার্তিকের জ্যোৎস্নায় ভিজে থাকা এক বিশাল ফাঁকা প্রান্তর, গোসল করতে থাকি মাঝরাতের শীতল বাতাসে...
আমার মুখে সেদিন লেগে ছিল পরিতৃপ্তির মৃদু হাসি...

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১:১৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×