somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পূর্ণতা

০৯ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টানা দুইদিন বৃষ্টিতে ভিজে শরীরের এক্কেবারে বাজে অবস্থা। সারাদিন দুই ভাই খক খক করে কাশছিলাম কালকে- আমি আর সাফাত। দিন শেষে তাই নিতান্তই বাধ্য হয়ে দু বোতল অবৈধ কফ সিরাপ মেরে দিয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকলাম বিছানার উপর।
কফ সিরাপ স্বর্গীয়। মাঝে মাঝে আমি অবাক হই- ছোট ছোট এই বোতলগুলো জিবরাঈলের হাত দিয়ে না এসে ফার্মাসিস্টদের হাত দিয়ে পৃথিবীতে এসেছে- হাউ কাম!!
যাই হোক, বোতল দুটোকে আমরা লম্বা লম্বা তামাক পাতা দিয়ে বাঁধলাম, তার উপরে পাটাতন বানালাম সিগারেটের সাদা সাদা একরাশ ধোঁয়া দিয়ে। তারপর পঙ্কিল এই পৃথিবীর অসুস্থ একটা ঘাট থেকে দু ভাই ওই ভেলায় করে ভেসে গেলাম বেহেশতগামী এক আঁকাবাঁকা নদীর বুকে। আকাশে ঝুলছিল স্নিগ্ধ সবুজ রঙের বিশাল একটা চাঁদ...
বাতাসে সেদিন সূর ছিল- সূর ছিল স্বর্গগামী ওই নদীর ঢেউয়ের ক্লান্তিতেও। আমরা দুজন অনেকক্ষণ কথা না বলে দু দিকে তাকিয়ে থাকলাম- মাঝে মাঝে কথা বলা লাগে না। কিন্তু সঙ্গী কিন্তু লাগেই...
সঙ্গীর কথা মনে হতেই বাতাসটা যেন আরেকটু শীতল হয়ে গেল...সূরটা হল আরেকটু বিষন্ন...
"সিয়াম ভাইয়া, মানুষ প্রেম করে কেন? জাস্ট নিজেকে আরেকটু পরিপূর্ণ ফীল করানোর জন্য না? কিন্তু এটা তো কখনো হয় না। পুরোপুরি পরিপূর্ণ কি কেউ কাউকে করতে পারে?"
আমি আমার অসাড় হয়ে যাওয়া ডান হাতটাকে কোন রকমে মুখের কাছে তুলে এনে আরেকটু ধোঁয়া টেনে নিলাম। কিসের ধোঁয়া কে জানে...
ওদিকে সাফাত বলেই চলছে-
"সেক্স মনে হয় এটা কিছুটা দিতে পারে- তাই না? আর এইজন্যই হয়ত প্রাচীন ধর্মে সেক্স একটা পবিত্র বিষয় ছিল। সেক্স মানুষের সাথে মানুষের পূর্ণতা যদি দিতে পারে- তাহলে তো গডের সাথেও পুর্ণতা দিতে পারবে।"
"সেক্স কি আদৌ পূর্ণতা দিতে পারে, সাফাত? একটা অতৃপ্তি তো সবসময় থেকেই যায়- আরো কাছে পেতে ইচ্ছে করে, আরো অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে- যা এই শরীর দিয়ে করা যায় না..."
এমন সময় একটা আশ্চর্যকর স্বপ্ন দেখা শুরু করি আমি- ইচ্ছাস্বপ্ন।
অপূর্ব সুন্দর এক মারমা মেয়ে আমার পাশে বসে আছে- একটা লোকাল বাসে- বাসের ড্রাইভারের পাশের "লেডিস" সিটে আমরা বসা। বাস চলছে বান্দরবান থেকে থানচির দিকে। পাশের খোলা জানালা দিয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টি আমাদেরকে থেকে থেকেই ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে... বাসটা চিম্বুক পাহাড়ের কাছাকাছি এসে এক দল মেঘের ভেতরে ঢুকে গেল... চনমনে একটা শীতল বাতাস আমার বেঁচে থাকার সকল অণীহাকে টেনে বের করে নিয়ে গেল মগজের ভেতর থেকে। আমি সুখে চোখ বুঁদলাম। মারমা মেয়েটা এতক্ষণ আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল। এবার সে ঘুমের ঘোরে আমার ডান হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। আমি চমকে উঠি তার শরীরের উষ্ণতায়। আমার নির্জীব মস্তিষ্কের অর্ধেকটা অবশ হয়ে যায় সেই উষ্ণতায়, আর বাকিটা অবশ হতে থাকে মেঘের মাঝে ডুবে থাকা চিম্বুকের সৌন্দর্যের বিষে- অবশ হয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে রাস্তার পাশের খাড়া পাহাড়ের ঢাল বেঁয়ে- পাহাড় ধসের মত...
“তুমি দেখি ভালই পার্ভার্ট আছো, ব্রো। এক মেয়ে ঘুমের ঘোরে কাঁধে মাথা রাখছে- আর তুমি ফীল নিচ্ছো? সেই...” সাফাতের মুখে টিটকারি।
আমার ইচ্ছাস্বপ্নে ছোট্টো একটা ছেদ পড়ল। মৃদু হেসে পরক্ষণেই আমার জড়িয়ে গেলাম ধোঁয়াটে ওই স্বপ্নের চাদরে।
মেয়েটা এখন জেগে আছে। সে আমার হাতটা ধরে রেখেছে তীব্র একটা কামনায়। আমার বাহুতে ঠোঁট চেপে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছে বারবার। আমি থেকে থেকে শিউরে উঠছি শার্টের উপরে তার ঠোঁটের আবছা স্পর্শে। আমি তার দিকে ঘুরে তাকালাম- বাসে এখন আর কোন মানুষ নেই। বাস থেমে আছে চিম্বুকের একদম চূড়ায়। তীব্র কামনা নিয়ে আমরা সাঁতার কাঁটছি একে অপরের চোখের ভেতরে জমে থাকা শান্ত দীঘিতে।
এই তীব্র কামনা কি আমাদের এই তুচ্ছ শরীর দিয়ে মিটবে?
মানুষের আত্মবোধ নাকি তার বস্তুগত শরীরকে ছাপিয়ে যায়- যাকে কেউ বলে আত্মা, কেউ বলে কনশাসনেস ।
তাহলে সেই বস্তু ছাপিয়ে যাওয়া কামনাকে কিভাবে নিবৃত করবে এই বস্তুগত শরীর?
“তুমি কিন্তু কখনই তোমার গার্লফ্রেন্ডের মাথায় ঢুকে দেখতে পারবা না ও কি ভাবতেছে। কখনই ওর নার্ভের সাথে নিজের মাথা জুড়ে দিয়ে ফীল করতে পারবা না ও কি ফীল করতেছে... সুতরাং পূর্ণতার আশা থেকে যেই প্রেম- সেটা একটা মরীচিকা, ভাইয়া।” – সাফাত অনর্গল বালছাল বলেই যাচ্ছে। ওদিকে আমি কিন্তু এখনও ওই চিম্বুকের চূড়ায়। পরস্পরের প্রতিটা অণুতে অণুতে মিশে যাওয়ার একটা অসহ্য কামনা নিয়ে আমরা তাকিয়ে আছি একে অপরের দিকে...
হুট করে একটা দমকা বাতাস এলো- সাথে এলো একদল হিমশীতল মেঘ। মেঘের পরশে আমরা গলে গেলাম। গলে মিষ্টি সিরাপ হয়ে আমরা পাহাড় গড়িয়ে নিচে পড়ে যেতে থাকলাম। তখন চিম্বুক তার দু হাত বাড়িয়ে আমাদেরকে দুটো নীল রঙা বোতলে ভরে নিল। তারপর ঢেলে দিল পাহাড় ঘেরা ছোট্টো একটা বেসিনে।
আমরা মিশলাম...
আমরা মিশে যেতে থাকলাম পরস্পরের সবথেকে ছোটো কণাটার সাথেও - আমরা ঢুকে যেতে থাকলাম পরস্পরের প্রতিটি অণুর ফাঁকে ফাঁকে... উথাল পাথাল টগবগে এক মিলন শেষে আমরা একসাথে মিলে মিশে নিথর পানি হয়ে পড়ে থাকলাম সুদূর এক পাহাড়ি চোঙ্গের ভেতরে- যাকে এখন লোকে বগা লেক বলে।
“হাহাহাহা... এটা কিন্তু ভাল ছিল...” সাফাত যেন তার হাসি থামাতেই পারছে না... ওর হাসি দেখে আমিও হাসতে থাকলাম...
হাসি সংক্রামক। আমাদের হাসি সংক্রমিত হল কনকনে বাতাসে- সংক্রমিত হল স্বর্গগামী ওই এন্ডলেস নদীতে...
সাফাত একটা সিগারেটের মাথা ভালভাবে পেঁচিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিল- “নাও, তুমিই ধরাও এটা- বগা লেক তৈরী করলা- এটা তোমার প্রাপ্য। এখন কি তাজিওডং তৈরী করবা?”
আমি দু পায়ের মাঝে হাত দিয়ে একটা ঝাঁকি দিয়ে বললাম- “তাজিওডং?”
হাহাহাহাহাহা... দুই ভাই গড়িয়ে পড়লাম আমাদের ছোট্টো ভেলাটার উপর...
আকাশে সবুজ চাঁদ। সেটাকে একটু ঝাপসা করে দিয়েছে সাদা রঙের মেঘ... আমি সাফাতের দেয়া জিনিসটায় আগুন ধরালাম। সবুজ ধোয়ায় মেঘ ভেসে গেল... সবুজ চাঁদের নিচে খেলা করতে থাকলো সবুজ ধোঁয়া। আর তাতে আমাদের নিজেদেরকে গাছ মনে হতে লাগলো। তবে গাছ কিন্তু হাসতে পারে না। তাই আমাদেরও হাসি বন্ধ হয়ে গেল মুহুর্তেই। আমি সমুদ্র ঘেঁষা ঝাউ গাছের কন্ঠ্যে বলতে শুরু করলাম-
“অণুতে অণুতে মিশলেও আসলে লাভ নেই সাফাত। পার্ফেক্ট প্রেম কোনটা জানো?”
“শুট ম্যান...” সাফাতের কন্ঠ্যে কাঁঠাল গাছের ঘ্রাণ...
ঝাউ গাছটা আবার বলতে শুরু করলো- “প্রথমে একটা মানুষের মস্তিষ্কে মাল্টিপল সত্ত্বা তৈরী হতে হবে। এদের মাঝে একটা ছেলে, একটা মেয়ে। এরপর তাদের মাঝে প্রেম হবে- গভীর প্রেম। মিথ্যের দাগহীন স্বচ্ছ নির্মল একটা প্রেম । তারা প্রেম করবে, চুমু খাবে, সেক্স করবে... আর তৃতীয় আরেকটা সত্ত্বা থাকবে যে কিনা এই দুইজনকেই একসাথে ফীল করতে পারবে। তাহলে ওই লাস্ট সত্ত্বাটা যেই অনুভূতিটা পাবে- সেটা হবে পূর্ণতা।”
কাঁঠাল গাছটা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। ভেলার উপর উপুর হয়ে শুয়ে হাত ডুবালো স্বর্গগামী নদীর পানিতে...
“তুমি জানো উপনিষদে যে এরকম একটা লাইন আছে?”
আমি ঝাউ গাছ থেকে আবার মানুষের রূপ নিলাম- সবুজ রঙের মানুষ- মাথায় একগুচ্ছ সাদা মেঘ। নাক- মুখ দিয়ে সবুজ ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললাম – “তুমি জানো যে আমি এগুলা পড়ি নাই... সো, বল...”
“এটা তো এভাবে বলা যাবে না- উড়ে উড়ে বলতে হবে...”
কাঁঠাল গাছটা হুট করে একটা হলুদ রঙের কাক হয়ে উড়ে গেল রাতের কালো আকাশে। আমি বুকভরে টেনে নিলাম সবুজ ধোঁয়া। আটকে ধরে রাখলাম কালো ফুসফুসটাতে। আস্তে আস্তে আমার সবুজ দেহ কর্পুরের মত উবে যেতে থাকলো- সবুজ ধোঁয়া হয়ে... সেই সবুজ ধোঁয়া একসময় ঢেকে ফেলে হলুদ রঙের কাকটাকে। শীতের অন্ধকার আকাশ চিঁড়ে স্বর্গের দিকে উড়ে যেতে থাকে ছোট্টো একটা হলুদ রঙের কাক- আর তাকে ঢেকে রাখে সবুজ রঙের একটুখানি মেঘ... তারা কি নিয়ে জানি গল্প করতে থাকে সারাটা রাস্তায়- কোন একটা দুর্বোধ্য ভাষায়। যে ভাষা বোঝার সাধ্য আর কারও নেই...


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×