somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোরের রাজ্যে ক্ষুধার্ত বাসিন্দা!

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মত বাংলাদেশ ও ভয়াবহ করোনায় আক্রান্ত। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস অর্থাৎ কোভিট-১৯ আক্রান্ত রোগী সনাক্তের পর প্রতিদিই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। কোভিট-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর জন্য আজো প্রতিষেধক আবিস্কারে বিজ্ঞান ব্যর্থ তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা রাতের ঘুম দিনের আরাম হারাম করে কোভিট-১৯ অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্করের জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সমগ্র বিশ্ব আজ এক মৃত্যুপুরী । সবার মনেই আজ মৃত্যু আতংক। জাতিকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার জন্য ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারন ছুটি ঘোষনা করে অফিস আদালত মার্কেট গনপরিবহন প্রায় সবই বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এই ছুটি ঘোষনা নিয়ে আমার ভিন্নমত আছে। কেন সরকার এই বন্ধকে সাধারন ছুটি বলে আখ্যায়িত করলেন! সাধারন ছুটি সাধারনত ঘোষনা করা হয় কোন উৎসব পার্বনে। কিন্তু এই বন্ধতো উৎসব পার্বনের সাধারন ছুটি না এটা হলো একটা আপদকালীন বন্ধ। কিন্তু আমাদের অসচেতন জনগন এই আপদকালীন ছুটিকে সাধারন ছুটি ভেবে উৎসবে মেতে উঠেছিল বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র সহ বিনোদন কেন্দ্রগুলিতে। কিন্তু দীর্ঘ এই আপদকালীন বন্ধে কাজ কর্মহীন আমাদের সাধারন মানুষ আজ দিশেহারা। প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ। সেই আর্তনাত কতটুকু পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে আমার তথা কথিত কিছু রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কানে? সরকার দেশের এই আপদকালীন সময়ে নিন্মবিত্তের মানুষের খাদ্য ব্যবস্হার জন্য সামান্য কিছু জরুরী পদক্ষেপ নিলেও তা নিয়ে যা চলছে তা সত্যি আমাদের নীতি ও মানবতাকে চরম প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। প্রতি মুহুর্তে করেনার সংবাদের সাথে আমাদের শুনতে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রতিনিধি ও স্হানীয় সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের ত্রানের চাল চুরির কাহিনী। বর্তমান সময়ে আমাদের স্হানীয় সরকার থেকে শুরু করে সাংসদ পর্যন্ত প্রায় সবই সরকারীদল তথা আওয়ামীলীগের দখলে। নির্বাচনের মাধ্যমে নিজের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার কথা আজ আমরা জনগন প্রায় ভুলতেই বসেছি। জনগন যে আজ ভোটকেন্দ্র বিমুখ তার প্রমান আমরা গত ঢাকা সিটি নির্বাচন সহ অন্যান নির্বাচন গুলিতে দেখেছি। আজ জনপ্রতিনিধিরা জনগনের চাওয়া পওয়ার কোন তোয়াক্কাই করেন না। আর করবেন ই বা কেন তাদের চিন্তা যে কোন মুল্যে ক্ষমতাসীন দল থেকে নির্বাচনের জন্য একটা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ। তার পর আর পায় কে। আজ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পর্যন্ত অঘেষিত ভাবে দলীয় পরিচয়ে নির্বাচিত হচ্ছে। আর ইউপি চেয়ারম্যান তে দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে নির্বাচিত হচ্ছে। যাদি দললীয় মনোনয়নে স্হানীয় সরকার প্রতিনিধি নির্বাচনের পক্ষে অনেকের মত আমার ও মত। কারন আমাদের নির্বাচন ব্যবস্হায় নিজেদের তথাকথিত সুনাম ধরে রাখার জন্য ক্ষমতাশীনরা যে কোন মূল্যে তাদের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রানপন চেষ্টা করাই আমাদের দেশের নীতিতে পরিনত হয়েছে। এটার প্রমান মাগুরার থেকে ঢাকা-১০ প্রায় সব নির্বাচনেই দেখেছি।

আজ গরীবের ত্রান চাল সহ করোনার কালে সহায়তা হিসেবে ওএমএস ১০ টাকা কেজি দরের চাল গন্তব্য হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মেম্বার কিংবা স্হানীয় সরকারদলীয় নেতাদের গুদম গোয়াল ঘর এমনকি ঘড়ের ভিটির মাটির গর্ত। যদি এই ঘটনা অনেক পুরোনো। আদিকাল থেকেই আমাদের কিছু কিছু ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের বিরুদ্ধে গম চুরির আছে। তবে সময়ের সাথে এই গম বিবর্তন হয়ে চাল চোরে পরিনত হয়েছে একশ্রেণীর জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা । তবে আগের গম চুরির সাথে এবারের চাল চুরির সময়টা নীতিগত ভাবে পুরোই ভিন্ন। এবারের দুর্যোগ কোন বন্যা খরা বা অন্য দুর্যোগ নয়। এবারের দুর্যোগ মরনের দুর্যোগ এবারের দুর্যোগ মহামারি দুর্যোগ এবারে দুর্যোগ বৈশ্বিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগে পৃথিবীর কোন দেশ অন্যকোন দেশকে সাহায্য করবে এটা চিন্তা করা খুবই কঠিন। চীন জাপান ইউরোপ আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার মত রাষ্ট্র ও আজ কাবু হয়ে গেছে এই দুর্যোগে। বিশ্ব বানিজ্যের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক আজ মৃতদের শহর প্রতি দিন ই এখানে করোনার থাবাশয় জীব যাচ্ছে শত শত মানুষের। ওখানে আজ আর মৃত্যুতে শোকেরর মাতাম নেই শুধুই দাফনের চিন্তা।

করোনায় মৃত্যুর ভয়ের চেয়ে আজ আমাদের সাধারন মানুষের ক্ষুধায় মরার চিন্তাই বেশি। পেটের ক্ষুধা মৃত্যুর ভয় মান ইজ্জত অনেক কিছুই দুরে ঠেলে দেয়। বর্তমানেও আমাদের সাধারন মানুষেরা পেটের ক্ষুধায় অনেক কিছুই ভুলে যাচ্ছে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি
পেটের ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়েছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচির আলম শেখের দশ বছরের কিশোরী কন্যা আফরেজাকে। করোনার লকডাউনের প্রভাব পরেছে আলম শেখের খাবারের হাড়িতে । বেশ কয়েকদিন লক হয়ে আছে আলম শেখের আয় রোজগার। তাই খাবার না পেয়ে বাপের বকুনি খেয়ে মরতে হয় আফরোজাকে। খাবারের দাবীতে কিছু ক্ষুধার্ত মানুষ নারায়নগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সামনে সেনাবাহিনীর গাড়ি আটকে দিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে পেটের ক্ষুধার জানানদেন। ত্রাণের দাবিতে জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের বগালী গ্রামের কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজন বিক্ষোভ করেছেন। এসব মানুষের বেশির ভাগই রাজমিস্ত্রীর জোগালি, মাটিকাটা শ্রমিক ও রিকশাচালক। ৮ এপ্রিল রাত থেকে জামালপুর জেলা লকডাউন অবস্থায় আছে। স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য তার এলাকায় ছয় হাজার হত দরিদ্র পরিবার থাকলে ও ত্রান মিলেছে মাত্র তিনশতর মত পরিবারের। আর স্হানীয়দের দাবী তারা অধিকাংশ ই খেটে খাওয়া মানুষ লকডাউনের অধিক সময় ধরে তারা অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করছেন। এটা শুধু আজ জামালপুরের বগালী গ্রামের চিত্র ই না। এটা আজ সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র। গত ১২ এপ্রিল জামালপুর পৌরসভার ক্ষুধার্ত মানুষের ট্রাক থেকে লুট করে নেন ত্রানের খাদ্যসামগ্রী। যদি ও নিজের সম্মান রক্ষার্থে পৌর মেয়র এই ঘটনা অস্বীকার করছেন। কিন্তু সোস্যালমিডিয়া এই যুগে যে অনেক অস্বীকার করা অসম্ভব।

বর্তমান সরকারদলীয় লোক সহ অনেকের মুখেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ও সমস্ত অপকর্মেই বিএনপি জামাতের সম্পৃক্ততা বুলি । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দুর্নীতির ব্যাপারে নিজের জিরো টলারেন্সের কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে দুর্নীতির রাঘব বোয়ালেরাই দখল করে আছে ক্ষমতার একটি বিরাট অংশ। দুর্নীতির জন্য বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া আর তেমন কাউকেই বিচারের মুখোমুখি হয়ে সাজা পেতে দেখিনি। তার জন্যই চলছে দুর্নীতির মহোৎসব।
মেগা প্রজেক্টের মাঝে মেগা দুর্নীতির কথা আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ শুনে আসছি। বালিশে দুর্নীতি পর্দায় দুর্নীতি রাস্তা ঘাট ব্রীজ কালভাট তৈরিতে দুর্নীতি এমন কি মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা প্রদানের ক্রেস্টে ও দুর্নীতি। চিকিৎসা খাতে বরাদ্দের সিংহভাগ ই দুর্নীতি বাজদের পেটে। তাই বিপদের এই ভয়াবহ দিনে আমাদের খবর শুনতে হয় বাজেটের অভাবে খাদ্য মিলছেনা করোনা রুগীদের অন্যতম চিকিৎসা কেন্দ্র কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ডাক্তার নার্স সহ চিকিৎসা কর্মীদের। সেখানে রোগীদের কি অবস্হা এটা শুধুই অনুমানের বিষয়।

দুর্নীতির এই টাকা আজ অনেকেই শত কোটি টাকার মালিক। গ্রামের যেই মানুষটির কোন এক সময় নুন আনতে পান্থা ফুরিয়েছে। ঘরের ছিল টুয়া উদাম তারা আজ বিশাল অট্টালিকা কোটি টাকার গাড়ী কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। সবই শুধু একটি মাত্র পরিচয়ে। করোনার থাবার শুরুতে যখন স্হানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগ আসছিল সত্যি তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। যেখানে সবাই মেগা দুর্নীতি নিয়ে ব্যস্ত সেখানে গরীবের জীবন রক্ষার দুই পয়সার চাল নিয়ে কি তারা এমন অপকর্ম করতে পারে? বরং তাদের অবৈধ আয়ের কিছু অংশ ভুখা মানুষদের সাহায্য করে পরকালের কিছু নেকির চিন্তা করবে। তবে কথায় আছে চোরের কাছে নিজের মায়ের নাকফুল ও নিরাপদ না। এই ক্ষেত্রেও এটাই তারা প্রমান করেছেন। বর্তমানে করোনার থাবায় অনেক মেগা প্রকল্প বন্ধ বিধায় মেগা দুর্নীতি ও বন্ধ। করোনার থাবা থেকে জাতি রক্ষা পেলে নতুন নতুন মেগা প্রকল্প চালু হবে আবার মেগা দুর্নীতির সুযোগ আসবে । হয়তো ঐ সময়ের জন্যই তাদের আজকের এই ছোট খাটো চুরি চামারি করে হাত পরিস্কার রাখা। কথায় আছে না অনভ্যাসে বিদ্যানাশ৷


৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×