somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজল ও সাহেদদের কারাবন্দি জীবন

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শফিকুল ইসলাম কাজল ফটো সাংবাদিক হিসেবে খুবই পরিচিত মুখ। তিনি দৈনিক সমকাল, বণিকবার্তাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক পক্ষকাল নামের একটি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ও ছিলেন। গত ১০ মার্চ তার নিজ পত্রিকা দৈনিক পক্ষকাল এর হাতিরপুল অফিস থেকে বের হয়ে ই হঠাৎ নিখোঁজ হন শফিকুল ইসলাম কাজল। নিখোঁজের ৫৩ দিন পর ২ মে গভীর রাতে বিজিবি বেনাপোলের রঘুনাথপুর সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে বেনাপোল থানায় হস্তান্তর করেন কাজলকে। নিখোঁজ হওয়ার দিন দুয়েক আগে কারাগারে আটক বহুল সমালোচিত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত একটি খবর কাজল তার ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন৷ এই সংবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান সহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন৷ ওই মামলায় তিন নাম্বার আসামি হলেন কাজল৷ কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর কাজলকে নিয়েই অনেক কিছুই দেখেছি। পুলিশ সময় মত মামলা নেয়নি এমন কি মামলা নিতে ও অনেক গাফলতি। তার পর ও কাজল ও তার পরিবারের ভাগ্য ভাল যে কাজল অন্তত জীবিত অবস্হায় আছেন। গত কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে আলোচিত ও আতংকিত ঘটনা গুলির মধ্যে অন্যতম হঠাৎ করেই দিনের আলো বা রাতের আধারে নাই হয়ে যাওয়া যা গুম নামে আমাদের কাছে পরিচিত। রাজনৈতিক ব্যবসায়ী সাংবাদিক মানবাধিকার কর্মী ছাত্র শিক্ষক কে না আছেন এই গুমের তালিকায়। যার ভাগ্য ভাল তিনি জীবন নিয়ে ফিরতে পারলে ও অনেকের খোঁজ আজো মিলেনি। কে বা কারা এই গুমের ঘটনা ঘটাচ্ছে তার ও কোন সুস্পষ্ট ধারনা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আজো আমাদের দিতে ব্যর্থ। তবে অনেকেই এই নাই হওয়ার সাথে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সম্পৃক্ততার কথা বলে আসলে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনোই তা পরিস্কার করেন নি এমন কি কোন অজানা কারনে গুম হয়ে ফেরত আসা কেউই আর পরবর্তীতে জনসম্মুখে এসে ও গুমের ঘটনার বিস্তারিত নিয়ে মুখ তো খুলেন ই নাই বরং জনসম্মুখে আসা ই অনেকে বন্ধ করে দিয়েছেন ।

দীর্ঘদিন ধরে জেল খানায় বন্দী কাজল তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে কিন্তু আজ ও কালজের জামিন হয় নি। সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের মুক্তির দাবিতে গত ২৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানবাধিকার ও সংস্কৃতিকর্মীদের এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়, তাতে অন্যদের সঙ্গে তাঁর পুত্র মনোরম পলকও ছিলেন। বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই পলকের একটি পলক ও শান্তিতে কাটেনি প্রথমে পলক বাবার উদ্ধার নিয়ে ছিল উদ্বিগ্ন আর এখন কারা মুক্তি নিয়ে। সাংবাদিক কাজল খুবই অসুস্হ শারীরিক অবস্হা ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। পলকের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর বাবার বাঁ হাত অচল হয়ে গেছে। দিনে দিনে তাঁর শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। একনাগাড়ে ৫৩ দিন চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকায় চোখেও ভালো দেখতে পান না। কারাগারে তাঁর চিকিৎসা সম্ভব নয়। কাজলের আইনজীবী ইতোমধ্যে কাজলের শারীরিক অবনতি সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করলে ও আদালত কাজলের জামিন নামঞ্জুর করে সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে চিকিৎসা কোথায় হবে আদেশে এমনটি ছিলনা বলেই কারা কতৃপক্ষের বক্তব্য করোনার কারণে কাজলকে বাইরের কোথাও নিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তাই কেরানীগঞ্জ কারাগারের ভিতর ই কাজলের চিকিৎসা ব্যবস্হা করছেন বলে যত দুর জানাজায়। তবে কারাগারের হাজার হাজার বন্দীর মাঝে কাজলের কতটুকু সুচিকিৎসা করা সম্ভব সেটা সবার ই কম বেশি জানা।

কারা কতৃপক্ষ করোনার অযুহাতে যেহেতু সাংবাদিক কাজলের চিকিৎসা ব্যবস্হা বাহিরে করতে পারছেন না সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে প্রতারক সাহেদ ক্যাসিনো সম্রাট বা অন্যদের বেলায় কিভাবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসার ব্যবস্হা করা সম্ভব? আমি যত দুর জানি প্রতারক সাহেদ মোটেও তেমন অসুস্হ নয় যে তাকে কারাগারের বাহিরে চিকিৎসা দিতে হবে। তার পর ও যেহেতু আদালতের আদেশ তা অবশ্যই মানা কর্তব্য এবং সেই আদেশের প্রতি সম্মান ও জানানো উচিত। কাজলের প্রথম যেই মামলাটি ছিল সেখানে তার অপরাধ ছিল দৈনিক মানবজমিন এর সংবাদ তার ফেইবুকের ওয়ালে শেয়ার করা। একটা সংবাদ শেয়ার করার জন্যই কি এমন অবস্হা? না মোটেও না। দৈনিক মানবজমিন একটি জাতীয় পত্রিকা এই পত্রিকায় প্রকাশিত সকল সংবাদের দায় ঐ পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক ও প্রতিবেদকের। স্বাভাবিক ভবেই একজন সাধারন মানুষ একটি বহুল প্রকাশিত ও পরিচিত সংবাদমাধ্যমের সংবাদকে সত্য বলেই গন্য করবে আর তা পাঠ করা অপরকে পাঠকরার জন্য শেয়ার করারর এই দায় ঐ পাঠক বা শেয়ারকারীর হতে পারে না। একজন ফটো সাংবাদিক হওয়ার কারনে কাজন আওয়ামী মহিলালীগ ও আওয়ামী যুব মহিলালীগের অনেক অনুষ্ঠানেই ফটো সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই কাজলের সংগ্রহে অনেক বির্তকিত ছবি ছিল যা যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামিমা নুর পাপিয়ার গ্রেপ্তারের পর তিনি পাপিয়াসহ যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। ঐ ছবি পোস্ট ই কাজলের কাল হয়ে দাড়িয়েছে । কারণ এর মাধ্যমে অনেকের থলের কালো বিড়ার বের মত অবস্হা হয়ে দাড়ায়। আর সেই থলের বিড়ালকে থলের ভিতর রাখতেই কাজলের উপর এই নির্যাতন।

কাজল কোন রাষ্ট্রদ্রোহী নন, কাজল কোন দুর্নীতিবাজ নন এমন কি কাজল কোন দাগী আসামী নন এর পর ও আজ দীর্ঘদিন ধরে কাজল কারাগারে অসুস্থ সময় পার করছেন। কাজলের ভাগ্যে জুটছে কারাগারের নুন্যতম খাবার ও চিকিৎসা। কাজলের মুক্তির জন্য আমাদের দেশের সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন গুলি আজ তথাকথিত সংগঠনের ভুমিকা পালন করলেও কাজলের মুক্তির জন্য দেশ বিদেশের অনেক মানবাধিকার সংগঠন সহ নানান সংগঠন নানান ভাবে কথা বলে গেলে ও আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের কানে সেই শব্দ আজো পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ যেই সাহেদ নানান মামলার আাসামী তার দেশ ও দেশের মানুষের সাথে করোনার এই ভয়াবহ সময়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে মতা জালিয়াতি ও প্রতারনা করে ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসার নামে আয়েসি জীবন যাপন করছে। সাহেদ তো একটি উদাহরণ মাত্র ক্যাসিনোর হোতারা সহ অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও নাকি সাহেদের মত জেল জীবন পার করছে। এই থেকেই আমরা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের আসল রুপ দেখতে পারি। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও আড়াই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আর্জিত আমাদের বাংলাদেশে তো এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জীবনের দীর্ঘ সময় জেল জীবন পার করে তার পর ও জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে গেছেন এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু আজ যারা মুখে মুখে জাতির জনকের আর্দশের কথা বলছে তারা কেউই তার আর্দশকে কোন ভাবেই লালন করেন না বরং জাতির জনকের আর্দশের কথা বলে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করে জতির জনকের আর্দশকে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন। তা না হলে আজ কাজলকে কারাগারে পঁচতে হতো না সাহেদরা ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসার নামে আয়েসি কারাবন্দী জীবন যাপন করতে পারতো না। আশা করি জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাজলের সুচিকিৎসা ও কারা মুক্তির ব্যাপারটি অবশ্যই দেখবেন। তা না হলে এই রাষ্ট্র থেকে কাজলরা ধ্বংস হয়ে সাহেদরাই প্রতিষ্ঠিত হবে।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×