৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ এক দাবীর রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। আমাদের রাজপথ সহ সমগ্র বাংলাদেশই যেন এক দাবী আদায়ের ক্ষেত্র। কারো দাবী যৌক্তিক কারো দাবী অযৌক্তিক কারো দাবী ভিত্তিহীন আবার কারো কারো দাবী রাষ্ট্র ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেরই অংশ। যেমন আমাদের পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের দাবী সম্পুর্ন যৌক্তিক এবং সমর্থন যোগ্য। এছাড়াও কিছু দাবী আছে অযৌক্তিক যা কোন ভাবে এই মুহুর্তে বাস্তবায়ন করা মোটেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় তার মধ্যে একটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবী এরই মধ্যে একটি হলো তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবী। এছাড়াও ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালদের দাবীর যৌক্তিকতা আছে। যেহেতু একটি মানুষের জীবন জীবিকার একটি বৈধ মাধ্যম তবে তাদের দাবী যৌক্তিক হলেও আমাদের রাজপথে এই ব্যাটারি চালিত রিক্সার চলাচল কোন ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। কারন আমাদের রাজপথে দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ এই দ্রুতগতির অদক্ষ চালক দ্বারা চালিত ব্যাটারির রিক্সা।ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকদের আন্দোলনে যাদের উপস্থিতি দেখালাম তাদের অনেকেই স্হানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, নিষিদ্ধ ঘোষতি ছাত্রলীগের সদস্য। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে আন্দোলনরত রিক্সা চালক হয়ে কথা বলতে দেখলাম রাজনীতির ঢাকা মহানগর উত্তর খিলক্ষেত থানার ৪৩ নাম্বার ওয়ার্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সহ সভাপতি আশরাফুল আলমকে। তার মানে রিক্সা চালকের দাবী নিয়ে আন্দোলনের পেছনে উস্কানি দাতা কারা তার হয়তো আর বুঝার বাকী আছে বলে মনে হয় না।
কিছু দাবী রাষ্ট্রের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ই অংশ। যেমন গত মাসের শুরুতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন দাবী নিয়ে আন্দোলন। ঐ আন্দোলনটি সম্পুর্ন ভাবে উদ্দেশ্যে প্রনোদিত তার ও যথেষ্ট প্রমান আছে। আন্দোলনরত তথাকথিত আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে প্রবেশ করে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সেই সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা ও চলায় ।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানে মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও পলায়নের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত থেকে গত পনের বছর যারাই নানান অন্যায় অপকর্ম করছে যার মধ্যে আছে মন্ত্রী, এমপি সহ অনেক হাতী নেতা ও পাতি নেতা তাদের বাড়ী ঘড় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর অগ্নি সংযোগ করেছে উত্তেজিত জনতা। এর মধ্যে ধর্মের বাছবিচার মোটেও ছিল না। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা মন্ত্রী এমপি সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে নানা অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। এর ই ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর উত্তেজিত জনতার রোষানলে পরে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারো কারো বাড়ী ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর অগ্নি সংযোগ হয়েছে। কেউ কেউ শারীরিক ভাবে হেনস্তা শিকার ও হয়েছেন। যদিও এই ধরনের হামলা ভাংচুর কখনোই সমর্থন যোগ্য নয় বা সমর্থন করা যায় না। অথচ এই ঘটনাকে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই বোনেরা বিশেষ কারনে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টায় নেমেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্হানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১ হাজার ৬৮ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয় এসব স্হাপনার অধিকাংশের মালিক ই পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নানান অন্যায় অপকর্মের ভাগিদার।
গত ২৫ অক্টেবর আট দফা দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি ময়দানে গণসমাবেশের আয়োজন করে " বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ " নামের একটি সংগঠন। যদিও এই সমাবেশে ইসকনের সাথে সম্পৃক্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের ই উপস্থিতি ছিল।
সেই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার লোক চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে অংশ নেন। সেই সমাবেশের কিছু নেতার ইন্ধনে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্বাধীনতা
স্তম্ভে জাতীয় পতাকার ওপর হিন্দু ধর্মের ইসকনের গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করে সুপরিকল্পিতভাবে দেশের সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা প্রদর্শনের হীন উদ্দেশ্যে, দেশের অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার মানসে এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্বের প্রতীক স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন পূর্বক অবমাননা করেন। এই ঘটনায় পরবর্তীতে চট্রগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দন কুমার ধর প্রকাশ ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে প্রধান করে ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা করা হয়। ৫ নভেম্বর চট্রগ্রামের টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেন ইসকন নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ওসমান নামে এক ব্যবসায়ী ও তার ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় ওই এলাকার ইসকন সমর্থক বেশ কিছু উগ্র হিন্দুবাদী। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওসমানকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময়, ওসমানকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাত থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় ইসকানের সদস্যরা । এতে ব্যর্থ হয়ে ইসকনের সদস্যদের হামলায় ও এসিড নিক্ষেপে আহত হন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ১২ সদস্য। এই ঘটনায় সেখান থেকে বেশ কয়েক জন ইসকনের সমর্থকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, আটককৃত ইসকন সমর্থকদের জিজ্ঞাসাবাদে চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাঙচুরের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ৫ আগষ্টের পর পালিয়ে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক নেতার নির্দেশে পাঞ্জাবী ও টুপি পরিহিত অবস্থায় ছদ্মবেশে মন্দিরে হামলা এবং মূর্তি ভাঙ্গার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে বেরিয়ে আসে। পূর্ব পরিকল্পিত এই ঘটনাটির পেছনে স্হানীয় যুবলীগ নেতা সঞ্জিব বিশ্বাস সাজু, সাবেক কাউন্সিলর বলরাম চক্রবর্তী বলয় এবং জহর লাল হাজারীর পিএস এর নাম পাওয়া গেছে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে থাকা কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপক দাসের ইশারায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে।
গত ২৩ নভেম্বর হিন্দু জাগরণ মঞ্চ রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ কলেজ মাঠে সেই ৮ দফা দাবির বাস্তবায়ন নিয়ে আয়োজন করে হিন্দু মহাসমাবেশ। এই সমাবেশে প্রচুর লোকের সমাগম ও হয়। সমাবেশে আগতদের অভিযোগ তাদের সমাবেশে আসতো বাঁধা দিয়েছে একটি মহল। তবে অভিযোগ আছে এই সমাবেশকে বহিঃবিশ্বে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপনের চেস্টা করছে একটি বিশেস মহল। তাই এই সমাবেশে হিন্দু ধর্মের মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্যদের উপস্থিতি ও ছিল প্রচুর। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো রংপুরের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ শেষ না হতেই সীমান্তের ওপারের অর্থাৎ ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এই নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্যসম্বলিত সংবাদ প্রচার শুরু করে। এমনকি পশ্চিম বঙ্গের বিজেপি বিধায়ক ও রাজ্য সরকারের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী তো রীতিমতো জাত গেল জাত গেল শুরু করে দিয়েছেন। শুভেন্দুর অধিকারী তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওয়ালে লিখেছেন , " বাংলাদেশের হিন্দুদের স্যালুট। প্রধান উপদেষ্টা জিওবি মহম্মদ ইউনুস প্রশাসন কর্তৃক সংখ্যালঘু বাংলাদেশী সনাতনী সম্প্রদায়কে ভয় দেখানো, আধিপত্য বিস্তার ও দমন করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, “সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চ” আয়োজিত আজকের রংপুর সমাবেশে বাংলাদেশী হিন্দুদের অটুট চেতনা সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শিত হয়েছিল। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে, বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের অধিকার ও মর্যাদার জন্য ৮-দফা দাবির সমর্থনে প্রায় এক লাখ হিন্দু রংপুরের মহিমাগঞ্জ কলেজ মাঠে সমবেত হয়েছিল যারা বর্তমান প্রশাসনের দ্বারা ক্রমাগত হয়রানি, হেনস্থা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’জয় ভবানী’ এবং ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে বাতাস ভরে ওঠে। সীমান্তের ওপার থেকে আমার বোন এবং ভাইয়েরা তোমাদের আরও শক্তি । " একই সাথে শুভেন্দু অধিকারী সোশাল মিডিয়া গেরুয়া রংগের অক্ষরের শিরোনামে ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। যেই ভিডিও রংপুরের ওই সমাবেশের বলেই দাবি করেছেন তিনি।
এবার জেনে নেই হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ৮ দফা দাবিতে কি আছে। হিন্দু জাগরন মঞ্চের ৮ দফা হলো,
১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. অবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে।
৩. ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করতে হবে।
৪. হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ‘হিন্দু ফাউন্ডেশন’-এ উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
৫. দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেল প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করতে হবে।
৭. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করতে হবে।
৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি দিতে হবে।
তাদের ৮ দফার দাবীর অনেক দাবীকেই আমি সমর্থন করছি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন গত ৫ আগস্টের আগে এই তথাকথিত হিন্দু জাগরন মঞ্চ নামের সংগঠনটি কোথায় ছিল? আর তাদের এই দাবীগুলো ই বা কেন আনা হয় নাই ? বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭২ সাল থেকে ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত এবং গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নির্যাতন শিকার। তার প্রমান বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন ও দেশী-বিদেশী সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন। শুধু মাত্র গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে-পরের ১০ দিনে অর্থাৎ ৪ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যালঘু নির্যাতন ও হামলার অন্তত ১৩টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছেন। এর আগে ২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে রামুতে ঘটে নৃশংস সাম্প্রদায়িক হামলা। এই হামলায় ১২ টি বৌদ্ধ মন্দির ও মঠ বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ৫০ টি বাড়ি ধ্বংস করা হয়। এর আগে ২০১২ সালের ৪ই আগস্ট দিনাজপুরের চিরিরবন্দর সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলা করে আওয়ামী লীগের লোকজন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে যশোর সহ দেশের বিভিন্ন স্হানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের বাড়ী ঘরে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা।
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্হানে সাম্প্রদায়িক হামলার নেপথ্যে ছিল আওয়ামী লীগ,,কুমিল্লার দুর্গাপূজার সময় পবিত্র কোরান অবমাননা কেন্দ্র করে হামলার ঘটনাকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল এই শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ। এত কিছুর পর ও আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই বোনেরা আজ যারা প্রতিবাদী তারা বোবা হয়ে বসে ছিল। এবারের মত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ খুব কমই শারদীয় দূর্গা পূজা পালিত হয়েছে। আজ যখন দেশে একটি শান্তিপূর্ণ সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান বিরাজ করছে তখন শেখ হাসিনা তার আওয়ামী লীগ ও একটি বিশেষ রাষ্ট্রের উস্কানি ও সহযোগিতায় ইসকনের সদস্যরা দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে রাস্তায় নেমেছে দেশকে অস্থিতিশীল করতে । ইতোমধ্যে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাষ্ট্রদ্রোহিতা অভিযোগে ইসকন নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করেছেন। তার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে চট্রগ্রামে ইসকন সমর্থক উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত হন চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফ। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতারের পর থেকেই সরব ভারতীয় গণমাধ্যম। তারা তাদের মত করে নানান গুজব আর মিথ্যা তথ্য পরিবেশ করেই যাচ্ছেন। ৫ ই আগস্টের পর ৎেকেই বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে ‘ব্যাপক অত্যাচার’ হচ্ছে বলে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম। সেই সাথে ভারতীয়রাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন মিথ্যা, গুজব ও উস্কানিমূলক তথ্য । এই গুজব ছড়ানোর সঙ্গে সামিল হয়েছেন ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিজেপি নেতা ও বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ও তার চেলা চামুণ্ডার। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্ট করেন।
গত ৫ আগস্ট পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালানোর পর তার দেশী ও বিদেশী দোসররা বাংলাদেশেকে অস্থিতিশীল করার জন্য সব ধরনের চেষ্টায় লিপ্ত। গত পনের বছরে শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন । আজ দেশকে অস্থিতিশীল করতে তারা নানা ষড়যন্ত্র স্বার্থক করার জন্য শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে দ্বিধা করবেন না আর তারা সেটাই করছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিষয়টা কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে তা আমরা এখনো অনুধাবন করতে পারছিনা। তাই সরকারের উচিত হবে
হিন্দু সম্প্রদায়ের যারাই আজ তাদের উপর নির্যাতনের দাবী তুলে দেশ গরম করছেন তাদের সাথে বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসা তাদের কাছে হামলা সহ সকল অভিযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমান ও যুক্তি চওয়া। যদি তাদের তথ্য সঠিক হয় তাহলে সঠিক ভাবে আইনগত ব্যবস্হা নেওয়া। আর যদি তাদের দাবীর পক্ষে যথা যথা যুক্তি প্রমান ও তথ্য উপস্হাপন করতে ব্যর্থ হয় তা হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্হা নেওয়া। শুধু হিন্দুদের সাথেই নয় যারাই বর্তমান সময়কে দাবী আদায়ের মৌসুমে পরিনত করেছেন তাদের সকলের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্হা নিতে হবে সেই সাথে আমাদের সকল গোয়েন্দা সংস্থা সহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো সচল করতে হবে। তাহলেই দেশকে সঠিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি গনতান্ত্রিক বাকস্বাধীনতার ও মানবাধিকারের বাংলাদেশ গঠন করতে স্বার্থক হবে বর্তমান সরকার। তা না হলে জুলাই -আগস্টের শহীদের আত্মদান সম্পুর্ন ভাবে বৃথা যাবে।