somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভিমরুল জীবন - সৈয়দ রাকিব

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৩ সালের শেষ দিকে আমরা তখন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা অনেকের চোখে আঁতেল টাইপের ছেলেপেলে, যারা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যাই, ক্লাসের বই বাদ দিয়ে তথাকথিত আউট বই পড়ি। বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে গিয়ে আড্ডা মারি আর পত্রিকার পাঠক সংগঠন নিয়ে প্রায় ভাঙা গলাটা আরও ফাটানোর চেষ্টা করি। আমার পত্রিকায় প্রথম প্রবেশ একটি জাতীয় দৈনিকের কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠক সংগঠনের কর্মী হিসেবে। সাংবাদিক বড় ভাইদের মুখে শুনতে পাচ্ছিলাম অচিরেই নতুন পত্রিকা আসছে নাম ‘আমার দেশ’। খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ পাবে। আমার আগ্রহ এর ফান ম্যাগাজিন হবে কি না, হলে কে এর বিষধর সর্প (বি.স)? ততদিনে আমি পাঠক সংগঠন পাতা থেকে রম্য পাতায় প্রায় ৮০ শতাংশ বিতাড়িত, কারণ আর কিছুই না, রম্য পাতায় লিখতে, কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, অন্যপাতার জন্য লিখতে গেলে শরীরে চিকন ঘাম দেখা দেয়, লেখা আসে না, পাতার মেকাপ মিস করি আরও নানা উপসর্গ দেখা দেয়। তাই রম্য লেখায় জীবন যৌবন সঁপে দিলাম! ২০০৪ সালের মার্চ/এপ্রিল মাসে কবির ভাইকে (আহসান কবির, ভিমরুলের প্রথম বিষধর সর্প) ফোন করে একদিন হাজির হলাম বিএসইসি ভবনের এগারো তলায়। এসে দেখি কিসের অফিস, ২০-২৫ জন মিস্ত্রি মাত্র কাঠে করাত চালাচ্ছে আর ২/৩ জন সাংবাদিক একটি রুমে বসে আড্ডা মারছে। তাকে আবার ফোন, ভাই আপনি কোথায়? আমি চলে এসেছি এই পাঁচ মিনিট। এর আগে কবির ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় ছিল না, তাই বুঝি নাই তার পাঁচ মিনিট হতে কয় মিনিট লাগে! প্রায় দেড় ঘণ্টা পর কবির ভাই এলেন। কিন্তু আমি তো তাকে চিনি না ...আমি ধরে নিয়েছি যেহেতু ফান ম্যাগাজিনের দায়িত্বে, তাই হাসি-খুশি কেউ হবেন, ওমা! ভয়ঙ্কর দর্শন চান্দিছিলা এক লোক, হাতে একটি ‘বাটারবন’ মোবাইল নিয়ে এগিয়ে এলেন। নতুন কোনো চায়না ব্র্যান্ড নয়, আকার-আকৃতিতে এতই বড় ছিল যে, এটাকে আমরা বাটারবন ডাকতাম। সর্বশেষ তথ্যমতে, সেই মোবাইলটি এখন কোন এক জাদুঘরে রক্ষিত আছে। তখন পত্রিকা অফিসে সবার বসার জায়গা তৈরি না হলেও বাথরুম বানাতে হয়েছিল, আর আমরা ভিমরুল বাহিনী আমাদের মিটিংগুলো বাধ্য হয়ে করতাম বাথরুমের সামনে। ৩ অক্টোবর ২০০৪ ভিমরুলের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় আর আমরা কিছু পাগল এপ্রিল ২০০৪ থেকে কিরকম হবে ম্যাগাজিন তার পরিকল্পনা করি, আর ভার্সিটির ক্লাসটা শেষ করেই চলে আসি ভিমরুলে। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন, কিসের টানে জানি না। তবে এটা জানি জীবনের সবচেয়ে রঙিন সময়গুলো আমি কাটিয়েছি ভিমরুলের সঙ্গে। ফিচার বিভাগেই আমাদের ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি, আড্ডা আর উর্বর সব আইডিয়াবাজি। আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল আমাদের ভিমরুল। ৮ অক্টোবর ২০০৫ প্রকাশিত হলো আমাদের পঞ্চাশ নম্বর সংখ্যা। স্মৃতির ঝাঁপি খুলে সেদিন বলেছিলাম অনেক কথা, তারপর একদিন একশ’তম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১১ নভেম্বর ২০০৬। আবারও অনেক স্মৃতি এসে কড়া নাড়ে আর আজ এর তিনশ’তম সংখ্যা! ১ থেকে ১০০ নম্বর সংখ্যা পর্যন্ত আমি সরাসরি ছিলাম ভিমরুলের সঙ্গে, অনেক পত্রিকাতেই কাজ করেছি। কিন্তু আজও আমি অনেক মানুষকে পরিচয় দিই সৈয়দ রাকিব ‘ভিমরুল’-এর নামে। কবির ভাইয়ের হাত দিয়ে শুরু, আর আজ ভিমরুলের ৩০০তম সংখ্যায় এসে এর কান্ডারি প্রিন্ট মিডিয়ায় আমার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু রকিবুল হক রকি যে আমার মতো অলসকে প্রায় অবসর থেকে আবার নিয়ে আসছে লেখালেখিতে। রকির টি-শার্ট আসক্তি কঠিন কিন্তু দুঃখের বিষয় তার টি-শার্ট বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, দেশের বাইরে থেকে কিনতে হয়। রকিকে ফোন করলেই তার উত্তর ‘দোস্ত আমি তো বসুন্ধরায় টি-শার্ট কিনতে যামু, তুই আয়া পর।’ সম্প্রতি আমাদের এক ভ্রমণে আমরা আবিষ্কার করেছিলাম রকির রোপন করা আশ্চর্য এক পেয়ারা গাছকে, যে গাছে মাইক্রোবাস থেকে শুরু করে লটকন পর্যন্ত ফলে...! ২০০৪-২০১১ বিভিন্ন আকারে/অবয়বে পাঠকের হাতে গিয়েছে আমাদের ভিমরুল, সে বড় হচ্ছে আর আমরা বুড়ো, আমরা একসময় থাকব না, কিন্তু ভিমরুল বেঁচে থাকুক অনন্তকাল—এই কামনায়...।

ভিমরুল- ৩০০তম সংখ্যা
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×