somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খবরখাদ্য

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ খবর খায় না; পড়ে কিংবা শোনে। তার পরও সংবাদমাধ্যমগুলোয় এটিকে বিবেচনা করা হয় খাদ্যের মতোই। প্রকাশের জন্য নির্বাচন করার আগে সংশ্লিষ্টরা বারবার ভাবেন, পাঠক বা দর্শক-শ্রোতা তা খাবে কিনা; অর্থাৎ খবরটি তাদের আকর্ষণ করবে কিনা। প্রশ্ন হলো, খবর কি আসলেই খাদ্য?

একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে পাল্টা প্রশ্নই ওঠা স্বাভাবিক— এ যুগে খাবারের তুলনায় সংবাদ জানার প্রয়োজনীয়তা কি মানুষ কোনো অংশে কম অনুভব করে? মানুষ সংবাদ ভক্ষণ করে না ঠিকই; কিন্তু এটি ছাড়া কেউ কি কল্পনা করতে পারে একটি দিন? ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই, সভ্যতা যত উত্কর্ষ লাভ করেছে, সংবাদ মানুষের কাছে ততই হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। অজানাকে জানার আগ্রহ তার মধ্যে বেড়ে উঠেছে প্রবলভাবে। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সংবাদ পাঠ বা শোনা ছাড়া আধুনিক জীবন হয়ে উঠেছে অসম্ভব। লক্ষ করলে দেখা যাবে, একজন সচেতন মানুষের দিন শুরু হয় সংবাদ পাঠের মাধ্যমে। এজন্য তিনি দৃষ্টি রাখেন পত্রিকার পাতায়। এ সুযোগ যাদের নেই, সংবাদ শোনার জন্য তারা আশ্রয় নেন রেডিও অথবা দেখার জন্য টেলিভিশনের। আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও একইভাবে টিভি স্ক্রলে বা ইন্টারনেটে দেখে নেন দেশ ও বিদেশের সর্বশেষ খবর। প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিন নিয়ম করে খাবার গ্রহণের মতোই সংবাদ জানাও হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। সংবাদ পাঠ বা শোনার প্রবণতার দিকেও লক্ষ করলে দেখা যাবে খাবার গ্রহণের মতোই এখানেও রয়েছে রুচির তারতম্য। পত্রিকা পাঠ সবাই এক সংবাদ দিয়ে শুরু করে না। রেডিও বা টেলিভিশনে পরিবেশিত সংবাদের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায় এ প্রবণতা। এক সংবাদ সবাইকে আকর্ষণ করে না সমানভাবে। এ পরিস্থিতিতে খবরকে খাদ্য হিসেবে অভিহিত করা কি ভুল হবে?

খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের শারীরিক প্রক্রিয়ায় তার ফল লক্ষ করা যায়। সংবাদ জানার ফলে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জগতে পরিবর্তন ঘটা অস্বাভাবিক নয়। তার প্রভাব কি শরীরেও পড়ে? বাংলাদেশের সংবাদপত্র বা অন্যান্য সংবাদমাধ্যম থাকে নেতিবাচক সংবাদে ঠাসা। সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা আরো বেড়ে উঠেছে। এসবে এমন কিছু ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে, যেগুলো এক কথায় বলা যায় বিভত্স। এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে আমাদের শিশুরা। তাদের মানসিকতায় কি এর প্রভাব পড়বে না? খাদ্যের মতো ভেজাল মেশানোর ঘটনা সংবাদেও কম ঘটছে না। এর মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আমাদের। সংবাদ এখন খাদ্যের মতো অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বটে; কিন্তু এ ভেজাল সংবাদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা আর বাড়ছে জটিলতা। সাধারণত প্রাত্যহিক জীবনে এ ধরনের সংকট আমরা এড়িয়ে চলতে চাই। কথা হলো, আমাদের দেশে যে কায়দায় সংবাদমাধ্যমের বিকাশ ঘটছে, তাতে এসব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার উপায় আমরা রাখছি কোথায়?

খাদ্যের মতোই সংবাদও প্রভাব ফেলছে মানবজীবনে। এ লক্ষে বাড়ছে ব্যয়। প্রযুক্তি কেনার পাশাপাশি পত্রিকা, ডিশ কানেকশন, ইন্টারনেট, সেলফোনে নিউজ অ্যালার্ট প্রভৃতির জন্য বাড়াতে হচ্ছে বরাদ্দ। সংবাদ জানার জন্য মানুষের অতিরিক্ত সময়ও ব্যয় হচ্ছে। সংবাদ জানার জন্য আমাদের মাথাপিছু খরচ কত? প্রতিদিন এ লক্ষে আমরা কতটা সময় ব্যয় করি? কোন ধরনের সংবাদমাধ্যমের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি? এসব নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কিন্তু আমাদের নেই। কিছু সংবাদ যেমন মনে আনন্দ সঞ্চার করে, তেমনি কিছু আবার সৃষ্টি করে মানসিক উত্তেজনা। এর কী ধরনের প্রভাব পড়ে প্রাত্যহিক জীবনে? তাতে লাভ-ক্ষতির হিসাবটাইবা কেমন? মানুষের আগ্রহের কারণে সংবাদ ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়ছে। এ মাধ্যমে কাজের জন্য ঝুঁকছে মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে সমাজে তারাও পাচ্ছেন বাড়তি সম্মান। এসব হয়েছে কেবল খবর খাদ্য হয়ে উঠেছে বলেই। এ অবস্থায় উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তর খোঁজা কি জরুরি নয়?

Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×