somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখক সম্মানী, সময় ও ন্যায্যতা

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিচিত একজন সিনিয়র সাংবাদিক নিয়মিত কলাম লিখতেন প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় দৈনিকে। ওই পত্রিকাটা আমি রেগুলার ফলো করতাম না। তিনি যখন লেখা শুরু করলেন, তখন মূলত তার লেখা পড়ার জন্যই পত্রিকাটা নিয়মিত ফলো করতাম। মাঝখানে খেয়াল করলাম ওই পত্রিকায় দীর্ঘদিন তার কোনো লেখা নাই। অথচ বাকি যেসব কাগজ ও অনলাইনে তিনি লেখেন, সেগুলোয় লেখা প্রকাশ হচ্ছে রেগুলার। মনে কৌতুহল হলো। জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই ওই পত্রিকায় আর লিখতেছেন না যে?

তিনি বললেন, দুইটা কারণে। এক. যেভাবে লেখা দিই, ওরা হুবহু সেভাবে ছাপে না। মাঝে মধ্যে কাটাকুটি করে লেখা নষ্ট করে। দুই. বিলটাও নিয়মিত দেয় না।

লেখক সম্মানীর টাকাটা যে তার খুব দরকার, তা নয়। এ লেখার বিষয়বস্তু যেহেতু ‘লেখক সম্মানী’, সেহেতু এ প্রসঙ্গে তার সঙ্গে যেসব কথা হয়েছিল, সেগুলোই বলি। তিনি বললেন, ‘সবাই তো দিচ্ছে। ওরা দেবে না কেন? আর একটা লেখা তৈরি করতেও তো খাটাখাটি করতে হয়, নাকি? এর বুদ্ধিবৃত্তিক মূল্য বাদ দিলাম। এজন্য যে লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার, সেগুলো জোগানোর জন্যও তো অর্থ দরকার; নাকি? যাদের জন্য এত খাটাখাটি করি, তারা পয়সা না দিলে লেখার জন্য এসব প্রয়োজনীয় উপকরণ আসবে কোত্থেকে?’

আমি চুপচাপ তার কথা শুনতে থাকি। পাল্টা প্রশ্ন করার মতো কিছু খুঁজে পাই না। শুধু এটুকু বললাম, আপনার সিদ্ধান্ত যথার্থ। আপনি যদি এমন সিদ্ধান্ত না নিতেন, তাহলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টা হয়তো কখনও উপলব্ধি করত না।

এটা একটা উদাহরণ মাত্র। মিডিয়ায় যারা কাজ করেন, ভেতরের ঘটনাগুলো তারা আরও ভালো জানেন। অনেক লেখককেই মুখোমুখি হতে হয় এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার। নিউজপ্রিন্ট, কালি, ইন্টারনেট বিল, টেলিফোন বিল, মুদ্রণযন্ত্রাংশ, পরিবহন ব্যয়- সবকিছুই তো পরিশোধ করা হয় নিয়মিতভাবে। তাহলে লেখক বিল দেয়ার ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ কিংবা অনিয়ম কেন? আমার জানতে ইচ্ছে করে, কোনো বিজ্ঞাপন দাতা পাওনা অর্থ দিতে দেরি করলে সেটা কি কর্তৃপক্ষের ভালো লাগে? কোনো কারণে লেখকের যদি লেখা দিতে দেরি এবং এজন্য যদি মেকআপ রুমে বাড়তি প্রেসার পড়ে, ট্রেসিং ছাড়তে যদি দেরি হয়, তখন কি ওই লেখকের ওপর কর্তৃপক্ষের মেজাজ খারাপ হয় না? আরও একটি জিজ্ঞাসা, এ অবস্থায় কোনো লেখক যদি সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় লেখা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, সেটাকে কি অযৌক্তিক বা অযথার্থ বলা যাবে?

সব লেখকের বিল নিয়েই যে এমন অনিয়ম করা হয়, তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো লেখক অগ্রীম চেক পান। আবার কেউ পান মাস শেষে। কিন্তু চেক পাওয়ার জন্য যাদের চার-ছয় মাস এমনকি বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তাদের কি দোষ? তাদেরকে বিল দেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা হয় কেন? কত দিনের মধ্যে লেখক বিল পরিশোধ করতে হবে, এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলে?

মনে পড়ে, একটি দৈনিকে কাজ করার সময় ক্রোড়পত্রের লেখার জন্য এক অগ্রজকে ফোন দিলে তিনি বলেছিলেন, ‘আগের লেখাটার জন্য যে চেকটা দিছেন, সেটার অ্যামাউন্ট খুবই পুওর। তাই লেখা দেব না।’ সাংবাদিকতা জগতে তিনি পরিচিত মুখ। তার গদ্য ও বিশ্লেষণের প্রশংসাও শুনেছি অনেকের মুখে। অথচ ১২শ শব্দের একটা নিবন্ধের জন্য যে সম্মানী তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেটা দেখে আমিও লজ্জিত হয়েছিলাম। টাকার পরিমাণের বিষয়টি তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলার পর তার কাছে লজ্জা প্রকাশ ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না।

মার্কেটে যে লেখকের ডিমান্ড আছে, উপযুক্ত সম্মানী না পেলে তার পক্ষে এমন কথা বলাই সঙ্গত। সেজন্য কিছুই মনে করিনি। তবে এখানে লক্ষ করার মতো বিষয় হলো, ওই পত্রিকার লেখক সম্মানীর হার নির্ধারণের পদ্ধতি তার পছন্দ হয়নি, সেটাই ফুটে উঠেছে তার বক্তব্যে। লেখক সম্মানীর হার নির্ধারণের ক্ষেত্রেও যে একটি স্ট্যান্ডার্ড থাকা দরকার, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সেটাও কিন্তু স্পষ্ট হয়।

এসব কথা বলার একটা উদ্দেশ্য আছে। সরকার সম্প্রচার নীতিমালা করার পর মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমি মনে করি, লেখকরা যাতে সময় মতো এবং ‘ন্যায্য হারে’ বিল পান, সে ব্যাপারেও কথা হওয়া উচিত। এ ব্যাপারেও কথা সংবাদমাধ্যমে কর্মরতদেরই বলতে হবে। কেননা লেখার জন্য সাংবাদিকদেরকেই তো যেতে হয় লেখকের কাছে; যথা সময়ে কিংবা ন্যায্য হারে সম্মানীবঞ্চিত লেখকদের প্রশ্নের উত্তরও তো তাদেরই দিতে হয়।

বিল পাওয়া একজন লেখকের অধিকার। তাদেরও পেট আছে। স্ত্রী-সন্তান ও সংসার আছে। লেখালেখির জন্য প্রচুর সময়, শ্রম ও মেধা ব্যয় করতে হয়। বন্ধু, আড্ডা, আত্মীয়-স্বজনসহ সামাজিক কাজ-কারবারও পরিত্যাগ করতে হয় কখনও কখনও। অসুস্থ অবস্থায়ও বসে যেতে হয় লেখার টেবিলে। একজন লেখকের এ ত্যাগকে ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই।

বড় কথা হলো, লেখা দিয়ে পত্রিকাকে যারা প্রতিদিন সহযোগিতা করেন, যথা সময়ে বিল না দিয়ে তাদেরকে অসহযোগিতা করা কি সঙ্গত?
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×