somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি মোশতাক আহমদ এর লেখা কবি আবুল হাসানের জীবনভিত্তিক উপন্যাস "ঝিনুক নীরবে সহো" বই এর রিভিউ

২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একজন কবির প্রতি আগ্রহ ও কবিকে ভালবেসে এমন বিশাল এক বই রচনা করাও সম্ভব! যা “ঝিনুক নিরবে সহো” ও কবি মোশতাক আহমদ (মোশতাক ভাই) কে না দেখলে বুঝার উপায় নেই।
হাই স্কুল জীবন থেকেই আমার টুকটাক গল্প/কবিতার বই পড়ার অভ্যাস ছিল। তবে আবুল হাসানের কোন বই পড়া হয়নি অথবা তাঁর কথা হয়তো তেমন ভাবে কেউই বলেনি।
আমি স্কুলে পড়া অবস্থায়ই টুকটাক কবিতা লিখতাম। কবির নামের জায়গায় জাকির হোসেন নামটা কেমন জানি বেমানান মনে হতো। তাই বদলে দিয়েছিলাম জাকির হাসান।
পেটের খোরাক জোগাতে গিয়ে আত্মার খোরাকের কথা দিব্যি ভুলে গেলাম। দীর্ঘদিন আর কোন কবিতা লিখিনা। নিজের আবিস্কৃত নামটিও ভুলে গেলাম। "ঝিনুক নীরবে সহো" বইয়ে আবুল হোসেন থেকে আবুল হাসান হওয়ার গল্প পড়ে আমার পুরনো কথা মনে পড়ে গেল।
আমার স্কুল-কলেজ সময়টা ছিল সম্ভবত সাদাকালো টেলিভিশনের শেষ যুগ। হারিকেন কিংবা প্রদীপ শিখার আলো-অন্ধকারের শেষ স্বাক্ষী।
৯ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি অবধি আমার কলমী বন্ধু তৈরির অনেক শখ ছিল। কলমী বন্ধু তৈরি করার জন্য রেলস্টেশনের বুক স্টল থেকে কলমী বন্ধু ম্যাগাজিন কিনে আনতাম। ম্যাগাজিনে অনেক ছেলে মেয়ের ছবিসহ নাম ঠিকানা দেয়া থাকতো। আমি প্রতি নিয়ত অনেকের কাছে চিঠি লিখতাম, আবার অনেকের কাছে পোস্ট কার্ডও পাঠিয়েছি। ২৪/২৫ বছর আগের সে কথা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। "ঝিনুক নীরবে সহো" পড়ে আমার সেই পুরনো কথা মনে পড়ে গেল।

লেখক মোশতাক আহমদ আবুল হাসান কে "ঝিনুক নীরবে সহো" বইটিতে এমন ভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, প্রতিবারই মনে হয়েছে তিনি আবুল হাসানকে খুব কাছ থেকে অনুসরণ করছেন।
কবি মোশতাক আহমদ আবুল হাসানকে হৃদয়ে ধারণ করেছেন এবং লালন করেছেন বহুকাল আগে থেকেই। মোশতাক ভাই আবুল হাসানকে নিয়ে করেছেন গবেষণা, করেছেন সাধনা দীর্ঘ সময় ধরে। প্রায় ১২-১৫ বছরের (সামান্য কম বেশি হতে পারে, আমি ধারণা থেকে বলছি) সাধনার ফল এই "ঝিনুক নীরবে সহো"।
"ঝিনুক নীরবে সহো" বইটি লিখতে গিয়ে লেখক অনেক পরিশ্রম, কষ্ট ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, যা বইটির শেষের দিকে রেফারেন্স দেখলেই বুঝা যায়। আবুল হাসান কে নিয়ে ইতোপূর্বে অল্প-স্বল্প লেখা থাকলেও এটিই সম্ভবত পুর্নাঙ্গ লেখা। যা আবুল হাসানের কবি হয়ে উঠা থেকে আকাশের তারা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
মোনায়েম খান যেমন জানতেন না রবীন্দ্রনাথ সংগীত চাইলেই অন্য কেউ লিখতে পারেনা, আমাদের বর্তমান সমাজে অনেক নেতৃস্থানীয় অনেক ব্যক্তিরাই তেমন অনেক বিষয় জানেন না।
বইটিতে অন্যান্য সাধারণ উপন্যাসের মতো গল্পের ধারাবাহিকতা না থাকলেও রয়েছে শব্দের ঝনঝনানি। সিকোয়েন্স বর্ননার কারুকার্য।
"বাইরে শীতের ছোবলে গাছে গাছে কন কন শব্দ, লেকের পানি মৃত্যুময় পাথরশীতল।” কিংবা “তিনি কখনো কখনো নেমেও যান দুর্বাঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির পা দিয়ে ছুঁতে।” কিংবা “এখানে জঙ্গল নেই, কিন্তু শেয়াল আছে, দু পেয়ে।”
আবুল হাসান ঢাকা ও ঢাকা বাইরে যেসব জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন (সদরঘাট, নারিন্দা, গুলিস্তান, নীলক্ষেত, পাবলিক লাইব্রেরি, গেন্ডারিয়া, ভিক্টোরিয়া পার্ক, জগন্নাথ কলেজ, তাঁতীবাজার, বাংলাবাজার, কমলাপুর, মধুর ক্যান্টিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিজি হাসপাতাল, বরিশাল, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, বাটালি হিল, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, আন্দরকিল্লা, জয়দেবপুর জমিদারবাড়ি, শ্মশানঘাট)
আমিও প্রায় সেই সব জায়গায় ঘুরেছি কর্মময় জীবনে বা অবসরে (আমি তো নারিন্দা মসজিদের মেসেই ছিলাম ১বছরের বেশি সময়) ।
"ঝিনুক নীরবে সহো" বইটি তে একদিকে যেমন উপন্যাসের স্বাদ পেয়েছি, অন্যদিকে ঠিক তেমনি একজন কবির আত্মজীবনী, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭ই মার্চ, ২৫শে মার্চের ব্ল্যাকআউট, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও পঁচাত্তরের নিদারুণ নির্মমতার ছুঁয়াও পেয়েছি।

কবি বা লেখকরা প্রায় সবাই আত্মজীবনী লিখতে চান, অনেকে আবার লিখেনও। কবি আবুল হাসান যদি বেঁচে থাকতেন তবে হয়তো আমরাও তাঁর নিজের লেখা একটি আত্মজীবনী পেতাম। আর যদিও বা না লিখতেন, এই “ঝিনুক নীরবে সহো” পড়ে হয়তো মন্তব্য করতেন -আমি লিখলেও আমার আত্মজীবনী এতো সুন্দর ও সুগঠিত হতো না।
মোশতাক ভাই "ঝিনুক নীরবে সহো" বইটিতে আবুল হাসানকে বিশাল এক উচ্চতায় দাঁড় করিয়েছেন। আবুল হাসান একজন কবি হওয়ার যে আকুলতা ব্যক্ত করেছিলেন এখানে যেন তার পূর্ণতা পেয়েছে।
২৪/২/১৯৭৫ সালে বার্লিন থেকে প্রিয় বন্ধু মাহফুজকে লেখা দীর্ঘ চিঠি পড়ে আমার চোখ কখন ভিজে গেল আমি টেরই পাইনি। একজন দৃঢ়চেতা, উদ্বাস্তু-উন্মুল জীবনে অভ্যস্ত আবুল হাসান সেই চিঠিতে নিজেকে অসহায় ও হতাশাগ্রস্থ হিসেবে আত্মসমর্পন করেন।
মোদ্দা কথা হলো কবি আবুল হাসানকে জানার জন্য এবং তিনি কত বড়মাপের কবি ছিলেন তা বুঝার জন্য অবশ্যই "ঝিনুক নীরবে সহো" বইটি পড়া উচিত।
আবুল হাসানের সমসাময়িক কবি বা বন্ধুরা বর্তমান বাংলাসাহিত্যাকাশে এক একটা নক্ষত্র।
আবুল হাসান যেমন পিজি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তাঁর শেষ কবিতার বই “পৃথক পালঙ্ক” হাতে পেয়ে আবেগাক্রান্ত হয়ে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি মোশতাক ভাইও ২০২১ সালে প্রাণঘাতী অসুখে হাসপাতালবাসী হয়েও আবুল হাসানকে নিয়ে লেখা “ঝিনুক নিরবে সহো” বইয়ের ১ম প্রকাশনার প্রুফ দেখেছেন এবং নতুন বই হাতে আবেগাক্রান্ত হয়ে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়েছিলেন।

কবি মোশতাক আহমদ ভাইয়ের কবিতা পড়া শুরু করছি ২০১০ সাল থেকে। কবিতা গুলো একটু ভিন্ন ধাঁচের। ঠিক বুঝা যাচ্ছিল না তাঁর কবিতায় কার প্রভাব পরিলক্ষিত। কিন্তু আবুল হাসানের কবিতা যখন পড়া শুরু করলাম তখন বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার হলো। তবে পুরোপুরি বুঝলাম ২০২৪ সালে মোশতাক আহমদ ভাইয়ের লেখা “ঝিনুক নীরবে সহো পড়ে”। মোশতাক আহমদ ভাইয়ের কবিতা গুলো অনেক উঁচু লেভেলের, প্রতিটি কবিতায়ই রুপক অর্থ ব্যবহার করেছেন। আমার মতো সাধারণ পাঠকের এই সব কবিতা সহজবোধ্য নয়। তাঁর কবিতার ভাষা বুঝতে হলে প্রয়োজন আরো উঁচু মানের পাঠ শৈলী।

৩২০পৃষ্ঠার বইটিতে ভুল নেই বললেই চলে। “ঝিনুক নিরবে সহো” বইয়ে খুব সযত্নে ও সচেতন ভাবে বাংলা বানান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তথাপি কিছু কিছু প্রিন্টিং মিসটেক আমার চোখে ধরা পড়েছে, পরবর্তী প্রকাশনায় আশা করছি ঠিক হয়ে যাবে।
মিসটেক সমূহঃ
১। পৃষ্ঠা নং ২৯, লাইন নং ১৬ এর শেষের দিকে ”রাখতে” শব্দটা তিনরার প্রিন্ট করা হয়েছে।
২। পৃষ্ঠা নং ২৯, লাইন নং ১৬ এর শেষের দিকে ”রাখতে” শব্দটা তিনরার প্রিন্ট করা হয়েছে।
৩। পৃষ্ঠা নং ১০২, লাইন নং ১ এর ১ম শব্দ লেখা হয়েছে ”আয়ুব খান”, যা ১০৬ পৃষ্ঠার ২৪নং লাইনে লেখা হয়েছে আইয়ুব খান।
৪। পৃষ্ঠা নং ১০৬, লাইন নং ১৬ তে লেখা হয়েছে ”আইউব”, যা ২৪নং লাইনে লেখা হয়েছে আইয়ুব।
৫। পৃষ্ঠা নং ১৮৫, লাইন নং ২৯ এর শেষ শব্দ লেখা হয়েছে ”পওয়া”।
৬। পৃষ্ঠা নং ২২৩, লাইন নং ২ এর প্রথম শব্দ ”লিখেছ”, বাক্যের মিলকরণে আমার মনে হয় এটা হবে লিখেছে।
৭। পৃষ্ঠা নং ২৬০, লাইন নং ১৯ এর ৫ম শব্দ ”যা” লেখা হয়েছে। আমার মনে হয় এটা হবে যান।
৮। পৃষ্ঠা নং ২৭৯, লাইন নং ৭ এর ২য় শব্দ লেখা হয়েছে ”কারতে”, এটা আমার মনে হয় হবে করতে।

ধন্যবাদ সবাইকে।
জাকির হোসেন
২৫.০৭.২০২৪

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×