গতদিনের হেফাজতের জমায়েতের আঁচ সর্বত্র। রাস্তায়, চা স্টলে, বাসে। বেশীর ভাগ মানুষ জোয়ারেই ঝোঁকে। আলোচনার ঝোঁকটা সেই দিকেই। বাস বাড্ডা পর্যন্ত আসতে না আসতেই তুমুল তর্ক। কেউ হয়তো শাহবাগের পক্ষে বলেছে, তার সাথে উত্তপ্ত তর্ক জুড়ে দিয়েছে অনেকে। এক চাচা বলেই বসলো ইমরান নাকি হিন্দু।
আমি অন্যদের চেয়ে কন্ঠ সরব করলাম। ভাই, আমার সমস্যাতো নাস্তিক-আস্তিক না। আমার সমস্যা এখন পর্যন্ত বাসা ভাড়া দিতে পারছি না। আমার সমস্যা ৮মাসের শিশুর মুখে বিষাক্ত ফরমালিন খাবার তুলে দিতে হচ্ছে। জরুরী প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে পারছি না। ছেলের ক্লাস ভর্তির টাকা এখনও বাকি রেখেছি। এ শহরে এত ধর্মপ্রাণ মানুষ, আমি এত ঠকছি ক্যান বলেনতো। একটু অসর্তক হলেই প্রতিটি জিনিষ কিনতে ঠকি। মাছ, মাংস, কাপড়, জুতা ঘড়ি.. যা-ই কিনতে যাই, প্রচন্ড সতর্ক থাকতে হয়। মনে হয় ঐসব জিনিষের ব্যবসার উপর ২০ বছরের যদি অভিজ্ঞতা থাকতো তাহলে ঠকতাম না। কাউকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। হে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভায়েরা আপনাদের ধর্ম তখন কোথায় উড়ে যায়?
দেখি কেউ কথা বলে না।
আমি আরো বললাম, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি আমার সমস্যা, হলমার্ক কেলেঙ্কারী আমার সমস্যা, পদ্মাসেতু না হওয়া আমার সমস্যা, যানজট আমার সমস্যা।
কয়েকজন হেসে ফেলল।
মানুষ আসলেই বোঝে, আগের চেয়ে অনেক বেশী বোঝে। আমাদের মত শিক্ষিত মানুষদের চেয়ে সাধারন মানুষের জাজমেন্ট জলের মত পরিস্কার। শুধু প্রয়োজন দুটো শর্ত। দেখুন বন্ধুরা শাহবাগ কিন্তু দুটো গুরুত্বপুর্ণ জিনিষ শিখিয়েছে আমাদের ।
শিখন নাম্বার এক:
মানুষের প্রাণের দাবি ছুড়ে দিলে মানুষ জোয়ারের মত এসে হাজির হয়।
শিখন নাম্বার দুই:
যখন দেখে মঞ্চের পাশে দাঁড়ানো লোকটাও খুনি, লুটপাটকারী, টেন্ডারবাজ, তখন তারা দ্বিধায় পড়ে। ধীরে ধীরে সরে পড়ে। আমি জানি আমার এই মতের সাথে অনেকে একমত হবেন না। বলবেন, সুবিধাবাদী মধ্যবিত্ত ভেগেছে। ঐতো বললাম, মানুষের জাজমেন্ট অত জটিল নয়, সরল। লুটেরাদের সাথে দেখলে বিশ্বাস করতে চায় না। বিশ্বাস করা উচিতও নয়।
ঐ বাসের আলোচনা থেকে আমার দৃঢ় বিশ্বাস মানুষ সহজেই বুঝবে। শুধু দুটো শর্তে।
প্রথম শর্ত:
তুমি স্বচ্ছ হও। লুটেরা, খুনী, ধর্ষকদের সঙ্গ ছাড়।
দ্বিতীয় শর্ত:
মানুষের জরুরী সমস্যাগুলো তুলে আসল শত্রু চেনাও। ধর্ম নাস্তিকতা প্রসঙ্গ এমনিতেই গৌন হয়ে যাবে।
এটাই সহজ পথ। এরজন্য নতুন কোন রিসার্চের প্রয়োজন নেই। লেলিন অনেক আগেই এসব পরিস্কার করে লিখে গেছেন।
'ধর্মীয় প্রশ্নকে বিমূর্ত, আদর্শবাদী কায়দায়, শ্রেণীসংগ্রামের সাথে সম্পর্কহীন 'বুদ্ধিবাদী' প্রসঙ্গরূপে উপস্থাপিত করার বিভ্রান্তিতে আমরা কোন অবস্থায় পা দিব না।'- লেলিন (সমাজতন্ত্র ও ধর্ম)
এটাই পথ। এর বাইরে যারা ঘুরবেন তারা সারা জীবনই ঘুরপাক খাবেন।
তবে সবাই যে বুঝবে এমন নয়। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র আপা, আমার ফেসবুক বন্ধু, বাইরে থাকেন, শাহবাগ নিয়ে ব্যঙ্গ করছেন। উনি ছাত্রদল নেত্রী ছিলেন, উনি বুঝবেন না। নারী হয়েও বুঝবেন না নারীনীতি, গার্মেন্টস শ্রমিকেরা বাইরে বের না হলে কিভাবে ঘুরবে দেশের চাকা? এদের বোঝার দরকারও নেই। বোঝাতে হবে দেশের শ্রমজীবি জনসাধারনকে। পাড়ায় পাড়ায় রুমী স্কোয়াড করতে হবে। মঞ্চ দরকার নেই। মুখে মুখে। চা স্টলে, ফ্লেক্সিলোডের দোকানে, ওষধের দোকানে, সব্জীওয়ালার কাছে। দায়িত্ব সকলেরই। যে অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরবেন সে ওষধ কিনতে গিয়ে বোঝাবেন। এভাবেই অর্গল ভাঙ্গবে। গনমানুষের একটা পার্টিও বিকশিত করতে হবে। এরকোন বিকল্প নেই।
আমরা ছাড়া কে বাঁচাবে এদেশকে। শাসকশ্রেণীর দলের লোকদের দায়িত্ব কেবল লুটেপুটে খাওয়ার।
কিভাবে মানব বলুন, এদেশের মুক্তিসংগ্রামে যাদের কোন ভুমিকা নেই সেইসব আগাছারা আমার পতাকা ছিঁড়বে, শহীদমিনার ভাঙ্গবে..
অসংখ্য রুমী স্কোয়াড হবে অসংখ্য আলোকবর্তিকা। আধার ঠিকই দুর হবে। শাসকশ্রেণী ও মৌলবাদ আলো সহ্য করতে পারে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




