somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি চলচ্চিত্র,অনেকগুলি ঘটনা এবং ইউটিউব

০৫ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল সবাই এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। আর তাই, আরো একবার এই চর্বিত চর্বন গেলানোর জন্য আগেই ক্ষমাপ্রার্থনা করে নিচ্ছি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক পরিচালকের নির্মিত চলচ্চিত্র “Innocence of Muslim”। এখানে শুনেছি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে অপমান করা হয়েছে মুসলিমদের রসুল তথা সমগ্র মুসলিম জাতিকে (দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য, কোনটাই হয় নাই এখনো)। এ ব্যাপারে মুসলিম জনগোষ্ঠি বেশ উৎসাহের সাথে প্রতিবাদ করে চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই খবরে দেখছি কোন না কোন জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদেরকে ধরে কুরবানি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশও সেইদিক থেকে পিছিয়ে নেই। দেশের প্রায় সব মসজিদ থেকে মিছিল বের হচ্ছে শুক্রবার নামাজের পর। পুলিশ মিছিলে বাধা দেওয়ার অপরাধে আবার দেশের মানুষকে একটি গোটাদিন শাস্তিও ভোগ করে ফেলতে হয়েছে ইতিমধ্যে। সরকারের ভূমিকা বেশ পরিস্কার; এই ভিডিও দেখার দুর্ভাগ্য যেন দেশের মানুষের না হয়, সেই লক্ষ্যে YOUTUBE বন্ধ করে দিয়েছে তারা। জনশ্রুতি আছে GOOGLE বন্ধেরও চিন্তাভাবনা আছে। ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে যেই সরকারের এত সুনাম ও দুর্নাম, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধোয়া তুলে যারা সবাইকে ভুলিয়ে রাখতে চায়, সেই সরকার কিভাবে এমন এনালগ কাজ করতে পারে, সেই প্রশ্ন যদিও বেশ যুক্তিযুক্ত বলে মনে হতে পারে, তবুও সেই আলোচনা নাহয় আরেকদিন করবো।
এই সব দেখে আমার নিজের কিছু উপলব্ধি হয়েছে, সেগুলোই আজ লিখবো বলে ঠিক করেছি।
মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) ইসলাম ধর্মের শেষ নবী ও রসুল। তার অবস্থান নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষের অনেক উপরে। তাকে যখন রক্ত-মাংসের কেউ অপমান করে বসে, তাতে কি আসলেই তার কোন অমর্যাদা হয়? কোন অমুসলিম যখন ইসলাম/মুসলিম/মুহম্মদ (স) সম্পর্কে কিছু বলে, তবে কি আসলেই আমরা খুব ছোট হয়ে যাই। নির্ভরযোগ্য হাদিস থেকে জানা যায় (আমি আলেম নই, তাই পৃষ্ঠা এবং অনুচ্ছেদ উল্লেক্ষ করতে সক্ষম নই। তবু ভুল তথ্য লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোন ইচ্ছা আমার নেই) এক অমুসলিম একদা মুহম্মদ (স) এর উপস্থিতিতে মসজিদে এসে মুত্রবিসর্জন করেছিলেন। এতটা ঘৃন্য কাজ করা সত্ত্বেও মুহম্মদ কিন্তু তার সাহাবীদের বাধা দিয়েছিলেন সেই লোকটিকে দৈহিক আক্রমন করা থেকে। তাকে শুধু বের হয়ে যেতে বলা হয়েছিল মসজিদ থেকে (এমনকি তার মুত্রবিসর্জন প্রক্রিয়া সম্পুর্নরূপে শেষ হওয়া পর্যন্ত মুহম্মদ তাকে কোন বাধা পর্যন্ত দেন নাই, তার শারীরিক অসুবিধা হতে পারে এই ভেবে)। ইসলাম কি আমাদের এই ধর্য্যের শিক্ষা দেয় না? খুব ছোটবেলায় বাংলা পাঠ্যবই “আমার বই”-এ পড়া একটি ঘটনা উল্লেক্ষ করতে পারি। এক অমুসলিম বৃদ্ধা প্রচন্ড ঘৃনার কারণে প্রতিদিন মুহম্মদ (স)এর পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো। মুহম্মদ সেই কাটা সরিয়ে, অথবা কখনো কষ্ট স্বীকার করে সেই কাঁটা অতিক্রম করে তার গন্তব্যে পৌছাতেন। একদিন সেই কাঁটার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে, মুহম্মদ (স) এর কারণ উদঘাটনে সচেষ্ট হন; অতঃপর তিনি সেই বৃদ্ধার বাড়িতে এসে পৌছান। সেখানে গিয়ে বৃদ্ধার প্রচন্ড জর দেখে সাথেসাথে তিনি বৃদ্ধার সেবা-সুশ্রুষা শুরু করেন এবং তাকে সুস্থ করে তোলেন। আমার আবারো প্রশ্ন, ইসলাম কি আমাদের এই মমত্ববোধ ও মানবিকতার শিক্ষা দেয় না? মহানবী যদি এখন বর্তমান থাকতেন, তবে তিনি কি ঠিক এই কথাটাই সবাইকে বলতেন না? প্রতিবাদের যে ঝড় আমরা তুলেছি, সেটা কি তিনি মেনে নিতেন। প্রতিবাদের নামে রক্তপাত দেখে তিনি কি কষ্ট পেতেন না?
প্রতিবাদ করার ব্যাপারেই আমার ভীষন আপত্তি, আর তার কারণ অনেকগুলো।
প্রথমত, এটি একটি অত্যন্ত স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র, যার নির্মানের একমাত্র কারণ মুসলিমদের উসকে দেয়া। এটির প্রতিবাদ করার মতো গুরুত্ব দিতে রাজি নই আমি।
দ্বিতীয়ত, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি গুটির চাল মাত্র। অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন আমি কি বলছি, তবুও বুঝিয়ে বলছি। বাংলাদেশের নির্বাচনে যেমন ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশের সমর্থনের একটি বড় প্রভাব থাকে, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনেও মুসলিমদের পক্ষের এবং বিপক্ষের শক্তিগুলোর প্রভাব থাকে। ঠিক নির্বাচনের কিছুদিন আগে যারা এই চলচ্চিত্র নির্মান করেছে, তারা জানে মাথা গরম মুসলিম জনতার কি প্রতিক্রিয়া হবে। আর এই কারণের এই ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছে, যাতে করে আমেরিকার মানুষ দেখে কত বর্বর এখনো মুসলিম বিশ্ব, অতঃপর যেই প্রেসিডেন্ট মুসলিম বিশ্বকে টাইটের মাঝে রাখবে তাকে ভোট দেয়া নিজের দায়িত্ব মনে করে। এই নোংরা রাজনীতির গুটিবাজীতে অংশ নেয়ার কোন ইচ্ছা নেই আমার।
তৃতীয়ত, প্রতিবাদ ব্যাপারটাতেই আপত্তি আমার। যে এই কাজ করেছে, তার কেশাগ্র পর্যন্ত যদি স্পর্ষ করা না যায়, তবে সেই প্রতিবাদের অর্থ আমার কাছে পরিস্কার নয়।
এবং চতুর্থত, আমার জানামতে ইসলাম ধর্মে কোথাও বলা নেই যে মুহম্মদ বা আল্লাহকে নিয়ে অমুসলিমরা কিছু বললেই “নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর” বলে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। বরং কোথাও কোন অন্যায় হলে, কারো কোন অধীকার অরক্ষীত থাকলে অথবা কারো হক নষ্ট হলে প্রতিবাদ করতে বলা হয়েছে হাত দিয়ে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে সরব প্রতিবাদ করতে হবে, আর যদি সেটাও সম্ভব না হয়, তবে মনেমনে প্রতিবাদ করতে হবে। এই ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে মানুষের ধর্মীয় মনোভাবে আঘাত লাগা স্বাভাবিক, কিন্তু একে কি আসলেই অধীকার হরণ করা বলা যায়?
যেই আমজনতা রাস্তায় কারো ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বশ্রান্ত হতে দেখেও ভ্রুক্ষেপ না করে হেটে চলে যায়, যেই ছাপোষা কর্মচারী, যিনি বৃষ্টি-ঝড় যাই থাকুক একটি মানুষও সিটিং বাসে দাঁড়িয়ে গেলে নানারকম হল্লাপাল্লা শুরু করে দেন, বাসে মহিলাদের জন্য সংরক্ষীত আসনে ঠ্যাংএর উপর ঠ্যাং তুলে বসে থাকেন যেখানে মায়ের বয়সী মহিলা থাকে দাঁড়িয়ে, তাদের কি হঠাৎ এই কারনে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠা সাজে? আমার প্রশ্ন থাকলো।
বাংলাদেশ প্রায়ই বিভিন্নভাবে পশ্চাদপদতার পরিচয় দিয়ে আসছে ইন্টারনেটে। কিছু ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুনের কারণে ফেসবুক বন্ধ করা খুব বেশিদিন হয় নাই। এখন আবার দেখছি ইউটিউব বন্ধ করে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে সরকার। শুধু তাই না, অতিউৎসাহী ফেসবুকারগণ ইউটিউব প্রত্যাক্ষান করার লক্ষ্যে ইভেন্ট পর্যন্ত তৈরী করে বসে আছে। আমিও প্রতিবাদ করছি। আমার প্রতিবাদ পশ্চাদপদতার বিরুদ্ধে। আমার বন্ধু ফাহিম বখতীয়ারের সাথে সুর মিলিয়ে আমারো বলতে হচ্ছে, “বাংলাদেশ হচ্ছে সেই মুসলিম প্রধান দেশ, যেখানে পর্ন ব্রাউজ করা যায় কোন বাধা ছাড়াই, অথচ ইউটিউব ব্রাউজ করতে প্রক্সি লাগে”। কথাটা খুবই দুঃখের।
পরিশেষে ইউটিউব ব্লকের প্রতিবাদ হিসেবে ইউটিউব ব্রাউজের একটি সহজ উপায় বাৎলে দেই।
নিচের লিংকে গেলে একটি ব্রাউজার ডাউনলোড হবে, সেখান থেকে ইউটিউব ব্যবহার করা যাবে। কারো কোন অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন।
টর ব্রাউজার

আমি আমার ধর্ম নিয়ে গর্বিত, আপনাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, এমন কিছু কেউ করবেন না যাতে গর্বের বদলে লজ্জার কালীমা এসে লাগে গায়ে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×