somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জিয়াউল শিমুল
.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

চন্দ্র ।। পর্ব - ০৩

২১ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুদ্রর নানা বোরহান উদ্দিন সাহেবের চার ছেলে এক মেয়ে। বোরহান উদ্দিন সাহেবের বংশে মেয়ে সন্তান জন্মানোর হার অনেক কম। ওনার যেমন বোন ছিলো না তেমনি ওনার বাবারও কোন বোন ছিলো না। তবে পর পর চার জন ছেলে সন্তান জন্মানোর পর ওনার ঘর আলো করে রুদ্রর মা ফারহানা বেগম জন্মগ্রহন করেন। এই বংশে মেয়ে জন্মগ্রহন করা মানে আকাশের চাদ হাতে পাওয়া। মেয়ে যার ঘরেই জন্মগ্রহন করুক না কেন বংশের অন্য সদস্যরা সবাই সেই মেয়েকে নিজের সন্তানের মতো খেয়াল রাখে, ভালোবাসে। সে মেয়ে বড় হয় রাজকন্যার মতো। এই বংশের অলিখিত একটা নিয়ম হচ্ছে- সে মেয়ের বিয়ে হবে নিজেদের বংশেরই অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন সমবয়সি কারো সাথে, যাতে সবার চোখের সামনেই সে সব সময় থাকতে পারে, তাকে যেন কোন দুঃখ ছুতে না পারে। আর এই মেয়ের বিয়ে ছোট বেলাতেই দেয়া হয়। ছোটতে বিয়ে হলেও সংসার করার জন্য পুর্নাঙ্গ যুবতি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। যার সাথে বিয়ে হয় সে বিয়ের পর ছোট বেলা থেকেই সবার কাছেই জামাইয়ের সমাদর লাভ করে। ছেলে মেয়ে উভয়েই নিজের পরিবারে বেড়ে ওঠে। তবে এদের প্রতি সবারই আলাদা একটা পরিচর্যা থাকে যাতে কেউ বিপথে যেতে না পারে। ফারহানা বেগমের বিয়ে হয় আট বছর বয়সে তার চাচাতো ভাই মাহমুদ উদ্দিনের সাথে, মাহমুদ উদ্দিনের বয়স তখন বারো বছর ছিলো। তবে তাদের সংসার জিবন শুরু হয় বিয়ের ঠিক দশ বছর পরে।
.
বোরহান উদ্দিনের বড় তিন ছেলের মেয়ে না হলেও ছোট ছেলে রাফাত উদ্দিনের ঘরে এক ছেলের পর জন্ম নেয় এক মেয়ে। ফুটফুটে মেয়েটার সৌন্দর্য দেখে সবাই অভিভুত হয়ে পড়ে। মনে হয় ছোট্ট শিশুর চেহারা থেকে পূর্নিমার জ্যোৎসা যেন ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে। বোরহান উদ্দিন প্রিয় নবজাতক নাতনিকে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগঘন কন্ঠে ডেকে ওঠেন- চন্দ্র। সেই থেকে ওর নাম হয়- চন্দ্র। চন্দ্র বেড়ে ওঠে পরম মমতায়, ও হয়ে ওঠে সবার চোখের মনি। ওকে কোলে নেয়ার জন্য সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। একটু কাদলেই সবাই কাজ ফেলে ছুটে আসে ওর কান্না থামানোর জন্য।
.
রুদ্র চন্দ্রের চেয়ে চার বছরের বড়। কিন্তু বংশের ছেলেদের মধ্যে রুদ্রই সবার ছোট। তাই সাভাবিক ভাবেই রুদ্রর সাথেই চন্দ্রের ভাবটা বেশি হয়। ঘুড়ি উড়ানো, মাছ ধরা কিংবা যে কোন খেলাই হোক না কেন চন্দ্র সব সময় রুদ্রের সাথেই লেপ্টে থাকতো। মাঝে মাঝে ওদের ঝগড়াও হতো। আর রুদ্রই সব সময় বকা খেতো। শত অপরাধ করলেও চন্দ্রকে কেউ কিছু বলতো না। রুদ্রর মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হতো চন্দ্রর পিঠে ধুপধাপ করে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়ার। কিন্তু শত মেজাজ খারাপ হলেও এই ইচ্ছেটা কখনো পুরন হয় নি ওর। কারন চন্দ্রকে মারার শাস্তি ছিলো ভয়ানক। একবার চাচাতো ভাই ফারহান ওকে একটা চড় দিয়েছিলো আর এর জন্য ফারহানের বাবা ফারহানকে মেরে অজ্ঞান করে দিয়েছিলো। চন্দ্রর গায়ে হাত তোলার মতো দুঃসাহস এ বংশের ছেলেদের কারো নেই।
.
রুদ্রকে সবাই একটু আলাদা চোখে দেখতো। ও ছোট বেলা থেকেই অন্যান্য ছেলেদের থেকে একটু আলাদা ছিলো। ওর আচরন, কথাবার্তা একদিকে যেমন মধুর তেমনি অন্যদিকে ডানপিটে। ওকে যেমন সহজ সরল মনে হয় তেমনি পরক্ষনেই মনে হয় জটিল। অন্যান্য ছেলেরা যেমন অপ্রয়োজনে চিতকার চেচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলে তেমনটা কখনোই ও করে না। কিন্তু যখন যেটা জেদ ধরে সেটা পুরন না করেও ছাড়ে না। ফারহানা বেগমও তার ছোট ছেলেকে মাঝে মধ্যে বুঝতে পারেন না। তবে এটুকু বোঝেন তার ছোট ছেলে আর দশটা ছেলের মতো নয়।
.
ওদের বাড়ির সামনে বিশাল এলাকা জুড়ে আবাদি জমি। জমিতে যখন আউশ ধান একটু বড় হয় তখন হালকা বাতাসেই আউশ ধানের কচি ডগায় ঢেউ উঠে। আর ছেলেরা সে সময় ক্ষেতের আইলে দাড়িয়ে ঘুড়ি উড়ায়। এমনই একদিন বিকাল বেলা অনেকের সাথে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলো রুদ্র। আর চন্দ্র রুদ্রর ঘুড়ির লাটাই হাতে নেয়ার জন্য জোরাজুরি করছিলো। জোরাজুরির এক পর্যায়ে লাটাইয়ের সুতো ছিড়ে যায়। ঘুড়ি ডিগবাজি খেতে খেতে জঙ্গলের দিকে হারিয়ে যায়। রুদ্রদের গ্রামের পাশে বিশাল এক জঙ্গল আছে। আর সে জঙ্গলে আছে একটি পোড়া মন্দির। রাতে জঙ্গলের ভিতর থেকে মাঝে মাঝে আগুনের গোলা দেখা যায়। সন্ধ্যার পরে ভয়ে তাই ওদিকে কেউ পা মাড়ায় না। ঘুড়ি হারানোর সাথে সাথে দিগ্বিদিক জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে রুদ্র। যা কখনো করতে পারে নি সেটাই আজ কান্ডজ্ঞান হারিয়ে করে বসে ও। হঠাত করে লাটাই দিয়ে চন্দ্রকে জোরে আঘাত করে। লাটাইয়ের আঘাতে চন্দ্রের কপাল গভির ভাবে কেটে যায়। চন্দ্র ব্যাথায় 'ও মাগো' বলে চিতকার করে ওঠে। তারপর ব্যাথার জায়গায় হাত দিতেই হাতে রক্ত লেগে যায়। চন্দ্র রক্ত সহ্য করতে পারে না। রক্ত দেখেই অজ্ঞান হয়ে ধপ করে জমিনে পড়ে যায়। চন্দ্রের চিৎকারে অন্য সবাই ছুটে আসে। রুদ্র ভিষন ভয় পেয়ে যায়। এমনটা হবে সেটা ও ভাবতে পারে নি। এর পরিনাম যে ভয়ংকর হবে সেটা বুঝতে ওর বিলম্ব হয় না। ও জঙ্গলের দিকে দৌড় দেয়।
.
জঙ্গল কোথাও হালকা, কোথাও ভারি। রুদ্র জঙ্গলের গভিরে ঢুকে যায়। জঙ্গলের ভয়ের চেয়ে চন্দ্রকে মারার শাস্তিটাই ওর কাছে ভয়ানক মনে হয়। তাই চন্দ্রকে মারার শাস্তির কাছে জঙ্গলের ভয় কিছুটা হলেও পরাজিত হয়। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে এক সময় চুন সুরকি দিয়ে গড়া পোড়া মন্দিরটা দেখতে পায় রুদ্র। মন্দিরের দেয়াল অনেক জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। যেটুকু বাকি আছে তার পুরো জায়গা জঙ্গলি গাছে ভরে আছে। বাহির থেকে মন্দিরের ভিতরটা দেখা যায় না। মন্দিরটা দেখে এবার কিছুটা হলেও ভয় পেলো ও। ওর মনে হচ্ছে- গ্রাম থেকে রাতে যে আগুনের গোলা দেখা যায় সে রহস্য নিশ্চয় এই মন্দিরের ভিতরেই আছে। ও মন্দিরের দিকে যাওয়ার সাহস পায় না। এদিকে ধিরে ধিরে সূর্য ডুবতে লাগলো। এক সময় আধার ঘনিয়ে এলো পুরো জঙ্গলে। আধার যতোই বাড়তে লাগলো ওর ভয়ও ততোই তিব্র হতে লাগলো। কিন্তু তারপরেও বাড়ি ফিরে যাওয়ার চিন্তা করতে পারছে না ও। ও একটা মাঝারি গাছে উঠে পড়লো। এ গাছটাতেই রাত কাটাবে আজ। আকাশে হালকা চাদ উঠেছে। কিন্তু সে চাদের আলো ঘন গাছের ডালপালা ভেদ করে জঙ্গলকে আলোকিত করতে পারছে না। গাছের ফাক দিয়ে কিছুটা দুরে মন্দিরের সামনটা আবছাভাবে দেখা যায়। একটা চ্যাপ্টা ডালে বসে গাছের সাথে পিঠ দিয়ে আধশোয়া হয়ে মন্দিরটার দিকে তাকিয়ে থাকলো ও। গাছ থেকে পরজিবি একটা লতা ছিড়ে সেটা দিয়ে নিজেকে গাছের সাথে ভালো ভাবে বেধে নিয়েছে, যাতে ঘুমের ঘোরে পড়ে না যায়। ক্ষুধায় পেটের ভিতরে বার বার মোচড় দিয়ে উঠছে। খুজলে এই জঙ্গলে খাওয়ার মতো নিশ্চয়ই কিছু পাওয়া যাবে। কিন্তু কাল সকাল হওয়ার আগে কিছু করার নেই। রাত বেড়ে চললো। মাঝে মধ্যে পাখিদের পাখা ঝাটানোর শব্দ আর ঝিঝি পোকার একটানা ঝিঝি শব্দ ছাড়া এখন আর কোন শব্দ নেই। মন্দিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওর এক সময় ঝিমুনি আসলো। হঠাত কোথাও খুট করে শব্দ হতেই পুরো সজাগ হয়ে উঠলো ও। ঝট করে চোখ খুলে ফেললো। প্রথমে কিছুই দেখতে পেলো না। চাদকে মেঘ ঢেকে ফেলায় পুরো জঙ্গল গভির অন্ধকারে ঢেকে গেছে। চারদিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ও। নাহ্! কোথাও কিছু নেই। নিশ্চয়ই ভুল শুনেছে। চোখ বন্ধ করতে যাবে এমন সময় আবার শব্দ হলো। এবার শুকনো পাতা মাড়ানোর মতো মচমচ শব্দ! হঠাৎ ওর বিষ্ফোরিত চোখে ধরা পড়লো একটা আলোর গোলা! ওর কিছুটা দুর দিয়ে আলোর গোলাটা নেচে নেচে মন্দিরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
.
এবার সত্যি ভয় পেলো রুদ্র। ভয়ে শিউরে উঠলো ও। শরিরের সমস্ত লোম ভয়ে শিরশির করে দাড়িয়ে গেলো।
.
কিন্তু কিসের আলো ওটা!
.
চলবে.......

পর্ব - ০২
পর্ব - ০৪
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×