somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জিয়াউল শিমুল
.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

চন্দ্র ।। পর্ব - ০৪

২১ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভৌতিক আলোটা নেচে নেচে মন্দিরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে! মেঘে চাদ ঢেকে যাওয়ায় পুরো জঙ্গল গভির অন্ধকারে ঢেকে গেছে। ভৌতিক আলোর নাচুনি ছাড়া কয়েক হাত দুরেও ঠিক ভাবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। ভয়ে জমে গেছে রুদ্র। ভয় যেন শিরদাড়া দিয়ে শিরশির করে উপরে উঠছে। একটু পরেই আলোটা নাচতে নাচতে হঠাত করে হারিয়ে গেলো। রুদ্র বুঝতে পারলো আলোর গোলাটা এবার মন্দিরের ভিতরে ঢুকে গেছে। রুদ্রর শরির থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। জিবনে এতোটা ভয় কখনোই পায় নি ও। চন্দ্রকে মারার ভয় ছাড়া জিবনে কখনো ভয় পেয়েছে কি না সেটা ওর মনে নেই। ও বরাবরই ডানপিটে ছেলে, ভয়ডর ওর নেই বললেই চলে। ভুতের গল্প শুনে অন্য ছেলেরা যখন ভয়ে চুপছে যেতো ও তখন মজা পেতো। কিন্তু এই মুহুর্তে যে ভয় ওকে গ্রাস করেছে সেটাকে অস্বিকারের কোন উপায় নেই। ও শুধু ভাবছে- যদি আলোর গোলাটা ওকে দেখে ফেলে তখন কি হবে? গোলাটা ওকে কি মেরে ফেলবে? নিজেকে গাছের সাথে ভালো ভাবে চেপে ধরে ও। ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে গেছে, শরিরের ভিতরে কাপুনি শুরু হয়ে গেছে। মনে মনে আল্লাহর নাম জপতে থাকে। মা বলেছে- বিপদে আল্লাহর নাম স্মরন করলে সব বিপদ থেকে তিনিই রক্ষা করেন। আল্লাহ ছাড়া ওকে রক্ষা করার এখন কেউ নেই।

কিছুক্ষন পরেই মন্দিরের দিক থেকে মন্ত্রপড়ার চাপা আওয়াজ ভেসে আসা শুরু করলো। আশ্চার্য হয়ে গেলো রুদ্র। এতো রাতে এই পোড়া মন্দিরে মন্ত্র পড়ছে কে! ভুতটুত নয় তো! কিন্তু নানু তো বলেছে- ভুত বলতে কিছু নেই, এ সব মানুষের বানানো। তবে জ্বিন পরি আছে। আর আছে শয়তান। তাহলে কি জ্বিন পরি বা শয়তানের কেউ মন্দিরটাকে আস্তানা বানিয়ে নিয়েছে? তারা কি মন্দিরে থাকে? তারা কি হিন্দুদের মতো মন্ত্র পড়ে? নানুর কাছ থেকে জানতে হবে। কিন্তু ওর কি আর সে সুযোগ হবে? ও কি আর কখনো বাড়ি ফিরতে পারবে? ওরা যদি ওকে দেখে ফেলে তাহলে কি ওকে জিবন্ত ছেড়ে দিবে? রুদ্র যতই এ সব ভাবছে ওর ভয় ততোই বেড়ে যাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষন পরে মেঘ সরে যেতেই আবার চাদ উকি দিলো। জঙ্গলের আধার পুরো না কাটলেও আবার আবছা ভাবে সব কিছু ফুটে উঠলো। গাছে হেলান দিয়ে মন্ত্র পড়ার চাপা শব্দ শুনতে শুনতে ভৌতিক মন্দিরটার দিকে সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে থাকলো রুদ্র। সময় বয়ে চললো। দেয়ালে যখন কারো পিঠ ঠেকে যায় তখন হয় তাকে কাপুরুষের মতো পরাজয় বরন করতে হয়, নয় তো বিরপুরুষের মতো সামনের দিকে এগুতে হয়। ভয়ে রুদ্রর পিঠও দেয়ালে ঠেকে গেছে। রুদ্র দ্বিতিয় শ্রেনিতে পরে। বাকি ছেলেদের সাথে এখানে ওর স্পষ্ট পার্থক্য আছে। ওর ধারনা যে কোন সময় ওর কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। যদি হয় তবে সেটা ঠেকানোর হয়তো কোন উপায় ওর নেই। তাই যা হয় হোক, ভয় করে লাভ নেই। কিছু হওয়ার আগেই ভয়ে মরে যেতে রাজি নয় ও। ও মন্দিরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মন্দির থেকে যে কোন সময় নিশ্চয়ই কিছু একটা বেড় হবে- হয় আলোর গোলা নয়তো অন্য কিছু। যাই বেড় হোক না কেন সেটাকে এবার ভালো করে দেখতে চায় ও। আগের মতো এবার অতোটা গভির অন্ধকার নেই, আবছা ভাবে কিছুটা হলেও সব কিছু বোঝা যাচ্ছে। ও এই আলোর গোলাটার রহস্য জানতে চায়। ওর ভিতর থেকে ধিরে ধিরে ভয় কেটে গিয়ে সেখানে সংকল্প দানা বাধতে শুরু করলো। তবে মন্দিরে গিয়ে রহস্য উদঘাটনের মতো সাহস ওর হলো না। ও গাছে বসেই অপেক্ষা করতে লাগলো।

দির্ঘ সময় পরে মন্ত্র পড়া বন্ধ হলো। রুদ্র নড়াচড়া করে বসলো। সময় হয়ে গেছে। এবার নিশ্চয়ই মন্দির থেকে কিছু একটা বেড় হবে। মন্ত্র পড়া বন্ধ হওয়ারও কিছুক্ষন পরে মন্দির থেকে সেই আলোর গোলাটাকে বেড় হতে দেখলো রুদ্র। গোলাটা নাচতে নাচতে এবার ওর দিকে আসতে লাগলো।

রুদ্রর বুক ধক্ করে উঠলো। আলোর গোলাটা সোজা ওর দিকে এগিয়ে আসছে কেন! ওকে কি তবে দেখতে পেয়েছে! ওই তো ধিরে ধিরে ভৌতিক আলোটা ওর দিকেই আসছে! দুরত্ব কমে যাচ্ছে দ্রুত! ওকে কি গোলাটা মেরে ফেলবে! ও কি আর কখনো বাবা মায়ের কাছে ফিরতে পারবে না? মায়ের মুখটা মনে হতেই ওর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরতে শুরু করলো। আল্লাহর কাছে বারবার সাহায্য চেয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো- আল্লাহ আমাকে বাচাও! বাচাও! বাচাও!
.
চলবে....

পর্ব - ০৩
পর্ব - ০৫
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×