somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরল প্রতিভার অবসান। (রম্য আত্মকথন)

০২ রা জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে অনেক কাল আগের কথা। দেশে তখন মাত্র গনতন্ত্র ফিরে আসল বলে। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে আমি তখন কেজি তে পড়ি একটি প্রিপারেটরি স্কুল এ। আমার মায়ের কাজ ছিল আমাকে স্কুল এ নিয়ে গিয়ে মেয়েদের মাঝখানে বসানো। X( কারন তাহলে নাকি আমি দুষ্টামি কম করব। তা মেয়েদের সাথে বসার মত লোভনীয় প্রস্তাব ঐ বয়সে খুব সুবিবেচনার জিনিস বলে কখনও মনে হত না। আর মেয়েদের জগতে নিজেকে গাধা প্রমান করার সেটা ছিল সুচনা মাত্র। আমি যার পাশে বসতাম সে বর্তমানে টিভি জগতের নামি একজন অভিনেত্রী। কেজি স্কুল এর টিচাররা বাচ্চাদের যেই পেইন টা দেয় সেটা হল বাস্তবের সাথে বেমানান এবং অপ্রচলিত লাইন গুলা দশবার করে লেখা। এটা নাকি আবার হাতের লেখা অভ্যাস। “ সদা সত্য কথা বলিব” টাইপ লাইন গুলা দশ বার করে লিখে কার কি লাভ হইসে কে জানে!! এগুলা আবার বাসায় হোমওইয়ার্ক ও থাকত। মাঝে মাঝে ঐ টিভি অভিনেত্রি এর হোম ওয়ার্ক করে দেওয়াও আমার কাজ ছিল। :((

দেশের দুই সেরা স্কুল তখন আইডিয়াল আর গভঃ ল্যাব। দুই জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা। ক্লাস ওয়ান ভর্তি পরীক্ষার সাথে পৃথিবীর কোন ভর্তি পরীক্ষার তুলনা চলেনা। আরবি ১২ মাসের নাম ঐ বয়সে পারতাম এখন পারিনা। “ক” দিয়ে ৫ টা ফলের নাম, নানা দেশের পাখির নাম আরো কত হাবিজাবি ব্যাপার। ওই প্রিপারেশন দিয়ে মোটামুটি চাইলে বিসিএস দিয়ে দেওয়া যায়। এরপরেও আইডিয়াল ভর্তি পরীক্ষায় ঝামেলা লাগল। “SWAN” শব্দের অর্থ কি জানতে চাইল। ৬-৭ বছরের বাচ্চা এইটার মানে কিভাবে জানবে!! পরীক্ষা হলের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কে বুড়া আঙ্গুল দেখানোর টাইম সে প্রথম। খুবি অবাক করিয়া দেখিলাম পাশের বড়ই মায়াবতি কন্যা ঐ শব্দের মানে লিখেছে রাজহাস (ব্লগের রাজসোহান না)। একটা মেয়ে পেরে ফেলসে আমি পারিনা এই জিনিসটা খুব বিচলিত করলেও কাজের কাজটা করলাম। ;) লিখলাম রাজহাস।

পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর সবাই যখন জানল যে রাজহাস এর ইংরেজি আমাকে জানানো হয়নায় তারপরেও আমি পেরে ফেলসি সবার বুঝতে বাকি থাকে এ এক নতুন জিনিয়াস এর আগমন। তবে সেই জিনিয়াস ডাউন খাইতেও সময় লাগল না। গভ ল্যাব ভর্তি পরীক্ষায় এলোমেলোগেলো শব্দ সাজিয়ে লিখ নামক একটা জিনিস আসত। ম, ক, লা এটাকে গুছিয়ে লিখতে হবে কমলা। আমিও সেরকম একটা প্রশ্ন পেলাম। না, স, হা, না, হে এইটা যে কি জিনিস বুঝিয়া উঠতে বড়ই বেগ পাহিতে হল। অনেক চিন্তা করিয়া নিজের সব উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাইয়া লিখিলাম নানাহাসেনা। পরীক্ষা হল থেকে বের হয়ে আম্মাকে বললাম যে আম্মা একটা প্রশ্ন যে একটু অন্যরকম। তা আম্মার আব্বা মানে আমার নানা যে হাসেন না সেটা আর আম্মা ভাল ভাবে নিবে কিভাবে!! গাধা কোথাকার ঐটা কি লিখসিস? ঐটা তো হাসনাহেনা। :-*

গভঃ ল্যাব এ ক্লাস ওয়ান-এ প্রথম ক্লাস করতে গিয়ে প্রথম দিন স্যার বলল চার লাইনের একটা জানা কবিতা সবাই লিখ। আমি চার লাইনে যে ২-৪-৫ টা কবিতা জানতাম তার মধ্যে সব থেকে ইল-লজিকাল কবিতাটা লেখা শুরু করলাম।

আতা গাছে তোতা পাখি,
ডালিম গাছে মৌ

আতা গাছটাই বা কই আর ঐ হারামজাদা তোতা পাখি ঐখানে কি করতেসে সেটার ব্যাপারে আমার নলেজ খুব ই কম। মৌ তখনও জাহিদ হাসান কে বিয়ে করেনায় তাই হয়ত রুপকথার রাজপুত্র ডালিম কুমারের অপেক্ষায় সে ডালিম গাছে আছে। তারপর আমি আবার সেইয়া আমার উদ্ভাবনী শক্তি খরচ করলাম। যেহেতু পরের দুই লাইন ভুলে গেছি কবিতাতে লিখলাম,

আমি এত কথা বলি
তুমি কেন বলোনা বউ

(মোটামুটি মৌ কে আমার বৌ বানায় ফেললাম।) B-)

নিয়ে স্যার এর কাছে গেলাম। যেহেতু আমার বিরল প্রতিভা কেউ কখনও মুল্যায়ন করেনা স্যার ও করল না। বলল এইসব কি লিখেছিস? এত অল্প বয়সে পাকনামি!!

স্কুল থেকে ৭ বছর বয়সে একবার নিজে হেটে হেটে পথ চিনে বাসাই ফিরলাম (এই কাজটা দুইবার করসিলাম)। ধানমন্ডি থেকে বেইলি রোড। এই বিরল প্রতিভাটার ও মুল্যায়ন হয় নায়। বাসায় পৌছানোর পর ব্যাপক উত্তম-মধ্যম-অধম-সর্বোত্তম চলতে লাগল। পাশের বাসার রিপা আপা এসে উদ্ধার করল। রিপা আপার ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেল। রিপা আপার ভাইকে বলল, এই ছেলে ধানমন্ডি থেকে একা একা বেইলিরোড চলে আসছে। :|

রিপা আপার ভাই তখন আর্মি তে। আর্মি তে থাকার কারনে রিপা আপার ভাই এর তখন একটা বন্দুক ছিল । এরপর থেকে বিরল প্রতিভা দেখাইতে গেলেই আম্মা আব্বা সবাই ঐ বন্দুকের ভয় দেখাইত। ওই বন্দুকের মালিকও অবশ্য বিরাট প্রতিভা। বাংলাদেশ এর সবাই তাকে চিনে। হাসান মাসুদ ওরফে হাসান ভাই। :)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১:৪২
৭৯টি মন্তব্য ৬৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×