somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুউউউ ঝিক ঝিক।

২০ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যখন খুব ছোট তখন আমার বড় খালারা মালিবাগ থাকতেন। অবশ্য এখনও থাকেন। নিজেদের করা বাড়ি ছেড়ে আর যাবেনই বা কই!! খালাতো ভাইবোনরা দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। ছোট বেলায় তাদের বাসায় যাওয়ার প্ল্যান থাকলেই মনটা লাফিয়ে উঠত। কারন খালার বাসা বাগানবাড়ি আর ঠিক তার সামনেই রেললাইন। আর আমি ছিলাম ট্রেন এর পাগল। আমি ট্রেন এর পাগল কিভাবে হলাম জানিনা কিন্তু ট্রেন দেখলেই আমার দারুন লাগত। কি সুন্দর বড় একটা জিনিস কু ঝিক ঝিক ঝিক করতে করতে যাচ্ছে। তবে ভাগ্য আবার আমার সেরকম খারাপ কিনা, তাই আমার শত চাওয়ার মাঝেই রিকশাওয়ালারা কখনই রেল ক্রসিং এর লাইনটা পড়ার আগে থামাতে পারত না। সব সময় পার হয়ে যেত আর আমি মন খারাপ করতাম। এটা খুবই অবাক করা ব্যাপার রিকশাওয়ালারা টাইমিং মিস করতই না। রেলক্রসিং পড়ার আগেই পার হয়ে যেত আর আমার আফসুস বেড়ে যেত। আহা একবার যদি দাঁড়ায় শান্তিমত ট্রেন যাওয়াটা পুরা দেখতে পারতাম। ট্রেনের মানুষ গুলাকে যে কি দারুন মনে হত। আর এখন অবস্থা হইসে উলটা। জরুরি কোন কিছু হইলেই রিকশা আটকাবে। উফফ কি যে বিরক্ত লাগে! সম্ভবত আমি রিকশা তে উঠলেই কমলাপুর কোনো সিগনাল চলে যায়, জিকোভাই এখন রিকশাতে জলদি ট্রেন ছাড়েন যাতে উনি রেল ক্রসিং এ আটকা পড়েন। দলছুটওয়ালারা (বাপ্পা মজুমদার) গায়, “যেতে হবে আজ অনেক দূরে, চলেছে রাতের ট্রেন, নিরবতা ভেঙ্গে দিয়ে” আর আমি বলি “ যেতে হবে তাড়াতাড়ি, আসেনা কেন বালের ট্রেন, ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে দিয়ে”

খেলনা ট্রেন খুবই লোভনীয় খেলনা তখন। একবার কার বাসায় গিয়ে দেখলাম খেলনা ট্রেন তখন থেকেই এই জিনিস আমার চাই। মধ্যবিত্ত পরিবার দেখে সবসময় কিছু শখ পুরন হবে কিছু হবে না। ১৯৯১ সালে (ক্লাস ওয়ান)আব্বা সরকারী কাজে এবং খরচে ফিলিপাইন গেল। খুব করে বলে দিলাম একখান ট্রেন চাই। আব্বা যেদিন ফিরে আসার কথা ওইদিন আমার মায়ের টেনশন আর টেনশন। বাংলাদেশ এর ঘুর্নিঝড় এর ইতিহাসে কালোতম অধ্যায়। দেড়লাখ লোক মারা যায়। আমার আব্বাও বলেন প্লেন নাকি ল্যান্ড করার আগে দুইবার ঝাকুনি দিয়েছিল তারাও (প্লেনের যাত্রিরা) বেশ ভয় পেয়েছিল। আমি ৭ বছরের বাচ্চা এই ভয়াবহতা আমার জানার কথা না। রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলয়াম সকালে উঠলাম। চকলেট খেলনা আর জামা কাপড়। ৭ বছরের বাচ্চা কখনই জামা কাপড় এর প্রতি উচ্ছ্বাস দেখাবেনা। আব্বা খেলনা বের করলেন। প্রথমটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি। খেলনা জগতের ভয়াবহ জিনিস। যদিও সেই গাড়ির কোন সমস্যা ছিল। শালা খালি পিছন দিকে যেত। এরপর পিস্তল। পিস্তলটাও দারুন। আট রকমের আওয়াজ হয়। স্টেনগান এর আওয়াজটা দারুন। কিন্তু ট্রেন কই? না আব্বা ট্রেন আনেনি। কারন সেটা নাকি ফিলিপাইন এ সে দেখেনি মানে যে দোকানে গিয়েছে। বাচ্চাদের মন খারাপ দূর করার উপায় হল সে যা চায় তার থেকে ভাল কিছু দেওয়া। আব্বা এয়ারপোর্ট সেট বের করল। ভয়াবহ জিনিস। এরকম কোন খেলনা যে হতে পারে সেটাই আমার জানা ছিলনা। প্লেন আছে। কয়েক রকমের গাড়ী। প্লেন এ উঠার গাড়ী। তার থেকে মজার ব্যাপার হল একটা ফায়ার বিগ্রেড এর গাড়ী। প্লেন এ আগুন লাগলেও সমস্যা নাই। আমি নিশ্চিত এখনকার দিনে অনেক বাচ্চার চোখ ও ছানাবড়া হয়ে যাবে এই জিনিস দেখলে। কিন্তু নাহ!! ট্রেন যে নেই।

১৯৯২ সালে আমার আরেক খালার মেয়ের বিয়েতে প্রথম বারের মত ট্রেন এ চলার সুযোগ হল। আমার দেশের বাড়ী মাদারীপুর নানাবাড়ি বরিশাল এর দিকে তাই লঞ্চে চড়লেও তখনও যে ট্রেন এ উঠা হয়নি। ঢাবি সয়েল সাইন্স ডিপার্টমেন্ট এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান শফিউর রহমান খালুর ৪ জন মেয়ের ২ নম্বর জনের বৌভাত হবে চিটাগাং এ। ফেব্রুয়ারী মাসের ১০ তারিখ, ১৯৯২ আমার প্রথম ট্রেন এ চড়া (আমার দিনক্ষন ভাল মনে থাকে)। ঢাকা থেকে চিটাগাং। কিযে ভাল লাগল। সেইবারই প্রথম আমি সমুদ্রও দেখলাম। জিয়াউর রহমান যেখানে মারা যান সেটা তখনও সার্কিট হাউস। সেখানেই ছিলাম আমরা। জিয়াউর রহমানের মারা যাওয়ার রুমটাও দেখলাম। বৌভাত খাইলাম এবং আবার আফসুস। ট্রেন এ নাকি ফিরা হবেনা। আফসুস, আফসুস এবং আফসুস।

১৯৯৫ সালে আমি আমার জীবনের সেরা সিনেমাটা দেখলাম। এখানে অনেকেই আমার উপর হাসবে কিন্তু দিলওয়ালে দুলহানাইয়া লে জায়েঙ্গে আমার মনে গভীর ছাপ ফেলল। থ্রী-ইডিয়টস, লাগান, মুন্নাভাই, দিল চাহাতা হে এগুলা দেখার পরেও, এমন কি আমির খান আমার প্রিয় নায়ক তারপরেও আমার প্রিয় সিনেমা দিলওয়ালে দুলহানাইয়া মানে ডিডিএলযে। আর সিমরান রাজ এর প্রেম শুরু ট্রেন থেকে। ট্রেন এ হাত ধরার দৃশ্যের কোনই তুলনা নাই। দিল হে কি মানতা নেহি তে আমির খান এর প্রেম হয় বাসে। টাইটানিক এ জাহাজের প্রেম দেখলাম। দিল চাহতা হে তে প্লেনে। হয়ত রকেট এর প্রেম ও আছে কিন্তু কোনটাই রাজ সিমরান এর ট্রেন এর প্রেম এর সাথে তুলনীয় না। এখন ও দেখলে মনটা ভরে যায়, দিলটা ছুয়ে যায়। ঐ দৃশ্য দেখার পর থেকে আমার একটা ফ্যান্টাসি হচ্ছে আমি এইভাবে একটা মেয়েক ট্রেন এ তুলব এবং এটাই হবে প্রেম এর সুচনা। ফ্যান্টাসি সব সময়ি ফ্যান্টাসি। ২০০৩ এ এইচএসসি দিয়ে বন্ধুদের সাথে সিলেট গেলাম। ট্রেন এর যাত্রা। মাঝপথে কই জানি থামলাম। পানি খেতে হবে (অন্য জায়গা হইলে ডাইল পুড়ি খাইতে নামতাম কিন্তু সিলেটে নাকি এই কথা বললে মাইর একটাও মাটিতে পরবেনা, ক্যান!! কে জানে!!)। আমি আর আমার বন্ধু নিশু (ঢাবি ইংলিশ এ এমএ করছে এখন)। আমরা নলকুপ এ চাপ দিলাম পানি খাওয়ার জন্য আর ট্রেন এর হুইসেল বাজল। অবাক করা ব্যাপার ঠিক ডিডিএলযে এর মত অবস্থা। খালি কাহিনি উলটা। একটা মেয়ে সামনের বগির দরজা তে দাঁড়ানো। মেয়েটা বলল "তাড়াতাড়ি"। আমি দৌড় দিলাম। নিশু ও দৌড় দিল। তবে নিশু মেয়েকে দেখেনি অন্যটাতে উঠেছে। আফসুউউউস। মেয়েটা আমাকে না আরেকজন কে বলেছিল "তাড়াতাড়ি"। সেই ছেলেকে সে তুলল। আমি আমার বন্ধু আসিফ রেজয়ান (বর্তমানে আইবিএ তে এমবিএ করছে) এর হাত ধরে উঠলাম। হায়রে ডিডিএলযে। হায়রে ফ্যান্টাসি। হায়রে রাজ আর সিমরান।

ঢাবি তে পড়ার সময় যতবার কক্সবাজার গেলাম সবসময় আগে ট্রেন এ চিটাগাং। কারন ট্রেন এর জার্নিটা যেভাবেই হোক মিস করা যাবেনা। ট্রেন দেখলেই আমার ওই ডিডিএলযে ফ্যান্টাসি এর কথা মনে পড়ে। কিন্তু না। বাস্তবের কি আর এমন হয়!!তবে মাঝে মাঝেই স্বপ্ন দেখি। আমি ট্রেন এ উঠে গেছি। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। কু ঝিক ঝিক , কুউউউ ঝিক ঝিক, হটাত দূর থেকে স্বপ্নের রাজকন্যা ট্রেন ধরার জন্য ছুটছে, আহা, হাত বাড়িয়ে দিলাম, আস , আস তুমি আস, হাত ধরবই আর ট্রেন এ তুলবই, এইতো প্রায় ধরে ফেললাম, আরেকটু, ট্রেন এর হুইসল বাজছে, কু ঝিক ঝিক, আর এক স্টেপ আসলেই হাতটা ধরে ফেলব।


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৫১
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×