somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফসোস, আফসুস, আপচুস এবং আবসুস। (সামান্য রম্য)

২৫ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বেইলিরোড এর কলনীর জীবনটা একদিক দিয়ে খুবি অর্থবহ ছিল। বিভিন্ন উৎসবে উদ্দীপনার কোনই অভাব ছিলনা। উপলক্ষ্যও কম ছিলনা। কালচারাল ফাংশন প্রায় লেগেই থাকত। সেইসব অনুষ্ঠান এর নিয়ম ছিল শুরু হবে বাচ্চা পোলাপাইনদের কবিতা দিয়ে। তারপর নাচ গান এবং সব শেষে ব্যান্ড শো এবং বলা বাহুল্য সেটাই আসল। তখন মাইলস এর "ফিরিয়ে দাও" আর বাচ্চু’র "সেই তুমি" মাত্র বের হইসে। পুরা বাংলাদেশ এর প্রতিটি মানুষ উঠতে বসতে খালি “ফিরিয়ে দাও” আর “ সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে” গায়। এইরকম অবস্থায় আমিও যেহেতু বাচ্চা পোলাপাইন তাই সবার সাথে গিয়ে নাম লিখালাম কবিতা আবৃত্তি করব। যথাসময়ে যথাস্থান এ অনুষ্ঠান শুরু হল। প্রথমে দুই তিনটা মেয়ে “ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাও গেরাম” টাইপ কবিতা বলে বলে গেল। আমার আগে সৌতি কবিতা বলবে। সৌতি স্টেজ এ গেল কবিতা বলতে। খুবই বিরল একটা ঘটনা ঘটল। ১৬ লাইনের কবিতার প্রথম ৮ লাইন বলার পর সৌতি কবিতাটা ভুলে গেল। এখন উপায়!! সৌতি স্টেজ এই কান্না শুরু করে দিল। দর্শকদের কাতারে শুরুতেই সৌতির বাবা। সৌতিকে গিয়ে বলল আরে তোমার পকেট এই কবিতাটা লিখে দেওয়া আছে ওটা পরে বল। সৌতি না হয় ঐটা দেখে বলবে কিন্তু ভাল কথা, আমি এখন কি করি? এর পরেই যে আমার নাম। সৌতির ঐ অবস্থা দেখে আমার কেরোসিন অবস্থা। পকেট হাত দিয়ে দেখলাম আমি তো আর কবিতা লিখে নিয়ে আসিনাই। তাইলে উপায়। কি কবিতাটা যে পরসিলাম সেটা আজকে ১৬ বছরেও মনে করতে পারিনাই। উপস্থাপক আমার নাম ডাকল। কিন্তু আমারে পাইলে তো!! আমি তার আগেই ভো দৌড় দিয়ে একেবারে বাসায় চলে আসছি। এরপর আর জীবনে স্টেজ এ উঠার সাহসই করতে পারিনাই। মঞ্চনাটক বানাইসি কিন্তু না, স্টেজ এ যাব না। নেভার। এইটা আফসোস এর ঘটনা।



১৯৯৮ সালের দিকে হাসপাতাল এ লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর সাথে দেখা। হাসপাতাল এ। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় এর সাবেক সচিব আমার সেঝ চাচা হাসাপাতালের যেই রুম এ এডমিট পাশের রুমেই হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবাল এর মা। তিনিও অসুস্থ। হুমায়ুন আহমেদ তখন শাওন সম্পর্কিত ঝামেলার কারনে পরিবার থেকে বিচ্যুত। জাফর ইকবাল স্যার এর সাথে দেখা এবং তার “পৃ” বইটি তখন আমার হাতে। স্যারকে বইটি এগিয়ে দিলাম। স্যার আমার এই বিশাল দেহটাকে সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করে লিখল, “ছোট জিকোকে অনেক স্নেহ”। আরে আজব ব্যাপার এত বড় অপমান। গতবছর একটা কাজে স্যার কে মেইল করলাম। ব্যাপারটা এমন না যে স্যারের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। স্যার মেইল এর রিপ্লাই দিল। “ডিয়ার নাইন্টি টু কেজি জিকো” সম্বোধন করা। স্যার তো স্যার ই। একেবারে যথাযথ সম্মানপূর্বক মেইল। আফসুস।



ইস্কাটন এ ফুটবল টুর্নামেন্ট হত। এবং আমি সেখানে খেলতাম। মিনি পোস্ট এ খেলা তাই একদল এ ৫ জন। যেহেতু তখন ছোট ছিলাম কাজেই আমার কাছে টাকা পয়সা থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক। টুর্নামেন্ট আয়োজনের কিছু খরচ আছে, বড়রা দিবে ৩০০ আর আমরা ছোটরা ১৫০। আব্বার কাছে টাকা চাইলাম। আব্বাও বলল, ভাল করে খেলিস, দেখবনে কেমন খেলিস। বাসার বারান্দা দিয়ে মাঠ দেখা যায়। সমস্যা হল আমার যখন খেলা থাকে তখন আব্বা কখনই দেখেনা। আব্বা যখনই বারান্দায় আসে তখনই অন্য দলগুলার খেলা থাকে আর আমাকে পাওয়া যায় লাইন্সম্যান হিসেবে। আব্বা তো একদিন কথাই শুনায় দিল, কিরে লাইন্সম্যান হইতে গেসিলি? এর মাঝে একটা খেলায় দারুন একটা গোল দিলাম। মাঝমাঠ থেকে দুইজনকে কাটিয়ে তীব্র শট। আপচুস, আব্বা বাসাতেই নাই, বারান্দা দিয়ে আর দেখবে কি!!। ফাইনাল এর দিন আব্বাকে বললাম আমাদের টিম ফাইনাল এ। হেভি খেলা হইতেসে বৃষ্টি এর মধ্যে। হটাৎ একটা বল কিছু করতে না পেরে সুয়ারেজ (এবারের উরুগুয়ে) এর মত হাতে লাগাইলাম। রেফারি ভদ্র ছিল। হলুদ কার্ড দিল। সেটা দেখল বারান্দা দিয়ে আব্বা। কে জানি গিয়া আবার আব্বাকে বলে দিল পুরা টুর্নামেন্ট এ একটাই হলুদ কার্ড দেখানো হইসে আর সেটা খাইসে জিকো ভাই। আপচুস।



মাত্র কয়েকদিন আগে ঢাবি পাবলিক এড ডিপার্টমেন্ট এ গেলাম। উদ্দেশ্য চাচার রুম। আমার ছোট চাচা প্রফেসর মাহবুবুর রহমান ডিপার্টমেন্ট এর সাবেক চেয়ারম্যান। আব্বা বিশেষ কাজে পাঠাইসে। চাচা নিজ রুমে তখন একাই ছিল। সাথে আরেকজন টিচার আর পিয়ন। আব্বা যা দিয়ে পাঠাইসে চাচাকে দিলাম। চাচা হটাৎ বলে বসল, এই তুই লুঙ্গি পড়স? না চাচা জীবনেও পড়ি নাই।চাচা বলল, খুব ভাল কাজ করসস এইখানে একটা লুঙ্গি আসে তোর আব্বারে গিয়ে দিবি। চাচা একটা প্যাকেট দিল লুকায় লুকায় ব্যাগ এ ভরতে যাব এই সময় মুসিব্বতের ফালুদা, চাচা বলে, দেখ দেখি সেলাই আসে কিনা। আমি বললাম, কি দরকার!! চাচা বলে আরে দেখ না। চাচারে খেপানো ঠিক হবেনা দেখে লুঙ্গি খুললাম সেলাই দেখার জন্য। এতক্ষন কেউ ছিলনা হটাৎ রুম এর দরজা থেকে দুই ছাত্রী বলে, স্যার আসতে পারি। চাচা বলল, আস। দুইটা মেয়ে রুমে দেখে আমি একটা লুঙ্গি খুলে হাতে নিয়ে দাঁড়ায় আসি। অনেক কষ্টে তারা হাসি আটকায় আসে। কি যে ঘটনা সব সময় আমার সাথে। রুম থেকে বের হওয়ার পর দেখি তখনও মেয়েগুলা হাসতে হাসতে যাইতেসে!! আবসুস। X((

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ৭:১২
৩৮টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×