somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কষ্ট, শীত এবং জন্মদিন।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্মদিনের নাম শুনলেই আমি মাঝে মাঝে বেশ বিমর্ষ হয়ে যাই। মানুষের জন্মদিনে সুখ স্মৃতি থাকে। ছোটবেলা থেকেই দেখা যায় সব থেকে দুঃখভরা দিনগুলা আমার জন্মদিনের আগে আগে হাজির হয়। হয়তবা জন্মদিনের আগে আগে এমন কোন কর্মকান্ড করব যাতে করে আব্বা আম্মার মেজাজ আমার উপর খারাপ ছোটবেলায় আমার জন্মদিন পালন করা হত না। এটা কেন হত আমার ঠিক জানা নেই। সম্ভবত আমার আব্বা ব্যাপারটা পছন্দ করতেন না। আমি পাড়ায় অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদের জন্মদিন খেয়ে বেড়ালেও নিজেরটাকে আর আলাদা করতে পারতাম না। একটা কারন অবশ্য এরকম ছিলযে আমার জন্মদিনটা হত বছরের শেষের দিকে। সেই সময় স্কুলে রেজাল্ট হত। বলা বাহুল্য আর দশটা বাবা-মার মত আমার বাবা-মাও চাইত তাদের ছেলে ফার্স্ট হোক। আর দশটা সাধারন ছেলের মতই আমি সেটা হতাম না। ছাত্র খারাপ ছিলাম না। কিন্তু ফার্স্ট হওয়ার জন্য অন্য কিছু করা লাগে। কিছু কিছু জিনিস আছে যা শুধু চেস্টা বা শুধু মেধা দিয়ে হয়না। এদের সংমিশ্রনটা সঠিক অনুপাত অনুযায়ী লাগে। সেটার একটা সুষম মিশ্রন লাগে। আর সব থেকে বড় ব্যাপার হল নিজের ইচ্ছা লাগে। আর আমি গভ ল্যাব স্কুলে পড়তাম যেটা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা স্কুল ছিল। প্রায়ই সেখান থেকে কেউ ফার্স্ট স্ট্যান্ড করত। কাজেই কম্পিটিশন থাকতই।

“আসি তবে ধন্যবাদ। না না সে কি আবার আসবেন. ………..” এরকম একটা কবিতা পড়েছিলাম। কবিতাটাতে একটা করুন কাহিনী বর্ননা করা ছিল। এক কেরানীর দাওয়াত ছিল তার বসের বাসায়। ডলির জন্মদিন। বসের মেয়ের জন্মদিন ভেবে সেই কেরানী মানুষ এক প্যাকেট চকলেট এনেছিলেন। পরে জানা যায় চকলেট আনা বৃথা যায়নি। কারন ডলি চকলেট খায়। তবে কেরানীর গলা দিয়ে আর খাবার নামেনা। কারন ডলি একটি কুকুর।

কবিতাটা মজার ছিল। জন্মদিন ব্যাপারটা হল একটা মানুষ যেদিন জন্মেছে সেই দিনটা পালন করা। যেহেতু একটা মানুষ জন্মেছে বছরের যে কোন একটা দিনে কাজেই প্রতি বছর সেই দিনটাকে একবার করে পাওয়া যাবে। ২৯ শে ফেব্রুয়ারী হলে ভিন্ন কথা। ৪ দিয়ে ভাগ করা যাবে এমন বছর ছাড়া তার জন্মদিন আসবেনা। তার জন্মদিন আর ফুটবল বিশ্বকাপ তাহলে একই বছরে হবে।


ছোটবেলায় জন্মদিনের নাম শুনলে বিতৃষ্ণা আসার আরও কারন ছিল। আমার বয়স যখন ৯ কি ১০ তখন পাড়ার কোন ছেলের জন্মদিন জানি খেতে গেলাম। সে পাড়া থেকে আমাকে সহ সবাইকে নিয়ে গেল কিন্তু শুধু আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল। ছোট বাচ্চাদের মধ্যে অনেক ব্যাপার থাকে এ মুহুর্তে যতদূর মনে পড়ে তার আমাকে বের করে দেওয়ার কারন আমার জন্মদিনটা কখনও পালিত হতনা। কাজেই আমি কেন অন্যের জন্মদিনটা খেতে যাব। এইভাবে বহু বছর জন্মদিন বিহীন থাকার পর বুড়া বয়সে প্রথম জন্মদিন পালন করলাম কলেজে উঠার পর। ঐ সময় একটা নতুন ট্রেন্ড হল। সবাই জন্মদিনে আমাকে দাওয়াত দিল। আমার জন্মদিন পালিত না হলেও আমার বাসায় অন্যান্য বন্ধু বান্ধব্দের আথিতীয়তাতে আমার মায়ের কোন কম ছিলনা। তাই সেবার আমার ১ না ২ না এলাকা আর কলেজ, স্কুল মিলায় ২৫ জনকে খাওয়ানো হল। তবে তারপরেও জন্মদিনের দিন আমার মন খারাপ ভাবটা গেলনা।


ব্যাপারটার সাথে আমি একভাবে মেনেই নিয়েছি। যে আমার জন্মদিন যখন হবে ঠিক তার আগে আগেই কোন না কোন অঘটন ঘটবে আর আমার মন মেজাজ খারাপ হবে। তবে একবারে যে পালন করা হয়নি তা না। দুয়েকবার বন্ধুরা বাসায় এসেছে। বাসায় থেকেছে। তারা আসার কারনে আমার মনকে সায় দিতে হয়েছে। মন খারাপ থাকলেও সেটাকে লুকিয়ে রাখতে হয়েছে। তা সেইসব মন খারাপ গুলাকে সবসময় বলাও যাচ্ছেনা। বন্ধুরা আসছে দেখে একটা কেক আনা হয়েছে। কেক কাটছি কিন্তু শান্তি পাচ্ছিনা। অন্যান্যদের মত নিজের জন্মদিনে খুশি থাকার অভ্যাসটাই যে আমার নেই।

এবারের জন্মদিনের দিন পরীক্ষা। তার পরের দিনেও পরীক্ষা। এটা একদিক দিয়ে ভাল। শুধু আগের থেকেই মন খারাপ করার থেকে পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকা ভাল। কেক কিনেও কাউকে খাওয়াতে হবেনা। ইচ্ছে আছে সেই কেকের টাকাটা ‘আমরা খাটি গরীব’ গ্রুপে দিয়ে দিব। এনারা পথ শিশুদের আম খাইয়ে ছিলেন। এবার শীতার্ত মানুষদের পাশে দাড়াবেন। তাদেরকে সামান্য কিছু টাকা দিলে কেউ হাজী মুহমদ উপাধী দিবেনা কিন্তু মনের একটা শান্তি হয়ত পাওয়া যাবে। আমার কেকের থেকে একটা কম্বল এখন অনেক জরুরী একটা জিনিস।





আপনাদের যাদের এখন জন্মদিন নাই তারাও চাইলে শীতার্ত লোকদের সাহায্য করার জন্য " আমরা খাটি গরীব " দের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে একটা সংশয় অনেকের থাকে আপনার কষ্টের টাকা ঠিক জায়গায় যাবে কিনা। তবে এইখানের লোকজন সবাই রস-আলোর লোকজন। তার বাইরে থেকে এই সমাজ সেবা মুলক কর্মকান্ড করে। তারা বলেনা গরীবদের সাহায্য করবে। তারা বিশ্বাস করে তারা নিজেরাই গরীব। তাই তারা বলে " আমরা খাটি গরীব"।এই বিশ্বাসের দরকার আছে। বড়লোকরা কখনও গরীবদের অন্তরে যেতে পারবেনা। কারন বিমানে করে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া যাওয়া যায় কিন্তু্ গরীবদের অন্তরে না। গরীবদের অন্তরে কখনও কোন বিমান যায়না।


"আমরা খাটি গরীব" ফ্যান পেজ - Click This Link

" আমরা খাটি গরীব" গ্রুপ - Click This Link

শীতার্তদের জন্য সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা

Acc Name - Rohit Hasan Kislu
Acc No: - 110.101.97783
Dutch - Bangla Bank Ltd



এখন আবার আমার জন্মদিনের প্রংঙ্গে ফিরে আসি। বয়স কত হল সেই হিসাব দেই। যখন আমার বয়স ১ থেকে ২ হয় তখন হয়ত ধারনা করেছিলাম (বুঝার মত বয়সই ছিলনা) বয়স মনে হয় সবসময় ডাবল হয়ে যায়। সেই ভাবে জ্যামিতিক হিসাব করলে ৫ বছর বয়সে বয়স হয়ে যেত ১৬। তাহলে আগামী কাল ২৮ শে ডিসেম্বর বয়স হয়ে যাবে ৬৭,১০৮,৮৬৪ মানে প্রায় সাতষট্টি মিলিয়ন বছর। তবে বয়স জ্যামিতিক হারে বাড়েনি। সমান্তর ভাবেই বেড়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। বয়স বাড়বেই। সময় স্রোতের সাথে ছেলেদের বয়সও সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তবে মেয়েদেরটা আটকিয়ে রাখতে হয়। তাদের বয়সটা এগিয়ে দিতে হয়না।

শীতার্ত মানুষদের সাহায্য করার ব্যাপারটা ভেবে দেখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ রাত ১২:৩৬
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×