somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জয়গুলো।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়

বাংলাদেশ স্কটল্যান্ড খেলাতে যে খালেদ মাসুদকে ওপেনিং-এ পাঠানো হবে সে ব্যাপারটা আগেই আঁচ করা ছিল। আইসিস ট্রফির সেমিফাইনালে পাইলট ৭০ রান করেছিলেন। তবে এ যাত্রায় তেমন লাভ হয়নি পাইলট শূন্য রানেই আউট হলেন। মোটামুটি ১০ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশের ইনিংসের অর্ধেক ব্যাটসম্যান নেই। বাংলাদেশের রান ২৫/৫। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু স্কটল্যান্ডের সাথে জয়টা যে খুবই দরকার। ড্রেসিংরুমের পরিস্থিতি খারাপ। শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুতের ধারনা সব শেষ, বাংলাদেশের আর কোন আশা নেই (কিছুক্ষন আগে তার সাক্ষাতকার পড়লাম ডেইলি স্টারে)। ঠিক তখনি নাইমুর রহমান দূর্জয় অস্বাভাবিক ভাবে একটা চার মারলেন। মোটামুটি অফ সাইডের বলটাকে টেনে ফ্লিক করলেন। সেটা দেখেও অবশ্য ভরসা পেলাম না। বিকাল বেলা, তাই নিজেই ক্রিকেট খেলতে বাইরে গেলাম। শুনতে পেলাম দূর্জয় আর নান্নুর জুটিটা একটু জমে গেছে। কিন্তু ৯৭ রানে আবার ৭ উইকেট শেষ। দূর্জয়র পর সুজনও আউট। হাসিবুল হোসেন শান্তর একটা সাক্ষাতকারে শুনেছিলাম তখন ড্রেসিংরুমে বসে সবাই এটাই প্রার্থনা করছিল কোনোরকমে জানি স্কোরটা ১৫০ পেরিয়া যায়। তা হল অবশ্য। এরপর এনামুল হক মনি আর শান্ত-এর ব্যাট ধরেই ১৮৩ তে ঠেকল। তবে পুরা কৃতিত্ব মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর। শুরুতে যিনি স্কোয়াডেই ছিলেননা, প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তাকে দলে নেওয়া হয়। তিনি করলেন ৬৮। ১৮৩ স্কোরটা খারাপ না যদি ভালো বোলিং করা যায়। শান্ত আর মঞ্জুরুল ইসলাম শুরু করল দারুন ভাবে। স্কটল্যান্ড ৮ রানে ৩ উওইকেট শেষ। ফারুক আহমদ দারুন একটা ক্যাচ ধরে সালমন্ডকেও আউট করলেন। কিন্তু তখনও যে গ্যাভিন হামিল্টন বাকি!! এই একটা লোক খুবই জালাইতেসে। যখনি খেলা বাংলাদেশের পক্ষে থাকে সে একটা একটা করে ৪ মারছে। এক পর্যায়ে স্কটল্যান্ডের দরকার ৪৮ বলে ৪৮ রান হাতে ৪ উইকেট। হ্যামিল্টন ৬৩ রানে ক্রিজে তবে নন স্ট্র্যাইকিং প্রান্তে। যেহেতু বাংলাদেশি কোন বোলারের বলে সে আউট হবেনা কিন্তু কোটি কোটি বাঙ্গালী তখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় ব্যাস্ত তাই আল্লাহই তাকে আউট করে দিলেন। ব্যাটসম্যান ড্রাইভ করল। স্ট্রেট দ্রাইভ। বল গিয়ে নন্সট্রাইক প্রান্তে স্ট্যাম্পে আঘাত আনল। বেল পড়ল। তার আগে বোলার মাঞ্জুরুল ইসলাম আলতো ছোয়া দিয়ে দিলেন। গেভিন হ্যামিল্টন রান আউট। পরে বাংলাদেশ ২৩ রানে জিতে যায় ম্যাচ। ঐতিহাসিক এক জয়। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়।


পাকিস্তানকে হারানো, প্রথম কোন টেস্ট দলকে হারানো।

পাকিস্তান আর সাউথ আফ্রিকা ছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেরা দুটি দল। সবাই তাদের বিরুদ্ধে নামছে আর হারছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে নামল তখন উলটা চিন্তা করাটা এত সহজ হিলনা। পাকিস্তানের বোলিং সাইডটা দেখুন। ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতার, ওয়াকার ইউনুস, সাকলাইন মুস্তাক আর আজহার মাহমুদ। বাংলাদেশ অবশ্য শুরুতে ভাল করল। ওপি আর বিদ্যুত মিলে ৬৯ রান তুলে ফেলল। মাঝখানে ছন্দপতন হলেও শেষমেশ ২২৩ রান তুলে ফেলল। দুর্জয়কে ওয়াকার যেই বলে বোল্ড করল সেরকম বল আরো কয়েকটা হলে অবশ্য সমস্যা ছিল। আর বিদ্যুত ওয়াকারকে ফ্লিক করে একতা চার মেরেচ্ছিল যেটা দেখার পর সুনীল গাভাস্কার বলল, এই বিশ্বকাপের এটাই মনে হয় কোন বাংলাদেশীর খেলা সেরা শট। আকরাম খান ৪২ রান করেন। পাকিস্তান ব্যাটিং-এ আসল, হারল এবং অনেকে মতে ম্যাচটা পাতানো ছিল। আমি খুব সহজ ভাষায় প্রমান করতে পারব সেটা পাতানো ছিলনা। আফ্রিদীর কোন ফর্ম নাই তখন। যেভাবে মিস টাইমিং করে আউট হন সেটাই তার প্রমান। ইজাজ আহমেদ সাফিউদ্দিন বাবুর বলে প্লেড-অন হয়ে বোল্ড হন। ইচ্ছা করে বোল্ড হওয়া যায়, ক্যাচ হওয়া যায় কিন্তু প্লেড-অন হয়ে বোল্ড হওয়া যায় না। সাইদ আনোয়ার থাকলে বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হত। তা সেই সুবিধা করে দেন ইনজামাম। এরকম অসংখ্য বার তিনি অন্য ব্যাটসম্যানদের রান আউট করেছেন আর দূর্জয়ের ফিল্ডিংটা ছিল দারুন। আর ইনজামাম নিজে যেভাবে আউট হন এরকম ক্যাজুয়াল শট খেলতে গিয়ে তার আউট হওয়ার নিদর্শন আছে। আর সেলিম মালিক ঐ বিশ্বকাপের কোন খেলাতেই ৫ এর বেশি ৬ করেনায়। পাকিস্তান কিছু বুঝার আগেই তাদের ৫ উইকেট নেই। কিছু বুঝার পর আবার ওয়াসিম আকরামের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে আজহার মাহমুদ রান আউট। আর থাকে মইন খান। তা সব সময় কি আর মইন খান সুপারম্যান হবে নাকি! দিনটি ছিল বাংলাদেশের। দিনটি ছিল আমাদের ক্রিকেটের জন্য অন্যতম গৌরবের একটি দিন। খেলা শেষ হওয়ার পরে ফারুক আহমেদ যখন বুলবুলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল একজন আবেগী জাতি হিসেবেই আমাদের পরিচয় প্রকাশ পাচ্ছিল। খেলা হারার পর ওয়াসিম আকরাম বলেন “ WE are proud to lost to our brothers.” – আমরা হেরেও গর্বিত কারন ভাইদের কাছে হেরেছি। পাকিস্তানীদের ভাই মানা কঠিন। খালি ওয়াসিম আকরামের জন্য একবার মেনে নিলাম।



ভারতকে হারানো

পরেরদিন আমার ভাইভা পরীক্ষা কিন্তু এই খেলা না দেখাটা পাপ। এই প্রথম বারের মত বাংলাদেশ কাউকে আগেই হুঙ্কার দিয়ে হারাচ্ছে। মাশরাফী আগেই বলেছে, "যদি টস জিতে ফিল্ডিং নেই, ভারতকে ধরে দিবানী"। টস অবশ্য হাবিবুল বাশারের জিতা হয়নি। তবে মাশরাফী ভারতকে ধরে ঠিকি দিল। গায়ে তখন মাশরাফীর ১০১ ডিগ্রী জ্বর। দুইদিন আগে প্রিয় বন্ধু মাঞ্জুরুল ইসলাম রানাকে হারানোর শোক। সব মিলায় শক্তি হয়ে শুরুতেই শেহওয়াগের স্ট্যাম্প নাই। মাশরাফীকে কেন্দ্র বাংলাদেশের প্রতিটা বোলার যে যেভাবে পারল চেপে ধরল। ভারত ১৫৯/৯ হওয়ার পর মাশরাফীর একটা বলে ফার্স্ট স্লিপ দিয়ে বেরিয়ে গেল। টিভিতেই দেখলাম মাশরাফী সুমনকে বলছে, “ স্লীপ দেন না!!” সুমন বরাবরই ডিফেন্সিভ। ভারত করল ১৯৩। আমার এক বন্ধু কানাডায় বসে খেলা দেখছিল। এক ভারতীয় এসে বলে যায় তোমরা বাংলাদেশীরা মুনাফ প্যাটেলের বলে ১০০ তে অলআউট হবা। তামিম ধোলাই শুরু হওয়ার পর মুনাফ প্যাটেল অবশ্য দুইটা উইকেট নিয়েছিল। তবে আমার বন্ধু জবাব দিয়ে আসে মুনাফ প্যাটেলটা কে ছিল? তাকে তো দেখলাম না!! ভাল কথা। পরেরদিন ভারতীয় এক চ্যানেলে দুইজনের কথাটা তুলে দেই।

“ মনে হচ্ছিল যেন একটা বাচ্চা ছেলে গামা পালোয়ানকে ধরে আছাড় মারছে” – নভোজাত সিং সিধু

“ জিতার জন্য দিল থাকাটাও খুব জরুরী, আর ঐ দিলটা পুরাপুরিই ছিল বাংলাদেশীদের সাথে।“ – অজয় জাদেজা।

সাউথ আফ্রিকাকে হারানো

ব্যাটিঙ্গে আশরাফুল ২৫১ পর্যন্ত এগিয়ে দিল। স্লো ট্র্যাকে খেলা। সৈয়দ রাসেল এমনিতেই স্লো বল করেন। তার মধ্যে স্লোয়ার দেওয়াতে অ্যালান ডোনাল্ডের ভাষায় সেটা হয়ে গেল সুপার স্লোয়ার। তাতেই গ্রায়েম স্মিথ আউট। ক্যালিসকে নিয়ে ভয় ছিল কিন্তু ক্যালিসও আউট। এইভাবে একে একে ৮৭ রানে ৬ ইউকেট নাই সাউথ আফ্রিকার। গিবস নিজের মত করে খেলে কোনরকমে পরাজয়ের ব্যাবধানটা কমাল। কেপলার ওয়েসলেস খুব ঝাড়ল, “ গ্রায়েম স্মিথদের দেখে মনে হয়েছে তারা পার্কে ঘুরতে গেছে, ক্রিকেট খেলতে না”।

এই খেলা জিতায় অবশ্য ভারতীয়রা খুব খুশি ছিল। আর এই খেলার আগে সাউথ আফ্রিকার ১ নম্বর দল ছিল। বাংলাদেশ তাদের ২ নম্বরে নামিয়ে আনে।


বাংলাদেশ এদের বাদেও গত বিশ্বকাপে বারমুডাকে হারিয়েছিল।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ সকাল ৯:৪৮
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×