somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে লেখায় কোন তাল নেই

২৭ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৮ সালের মিনি ওয়ার্ল্ডকাপ সময়কার ঘটনা। তখন ক্লাস এইটে পড়ি। থাকি ইস্কাটন গার্ডেন অফিসার্স কোয়ার্টারে। বাংলাদেশ ক্রিকেট শক্তি হিসেবে তখনও পুরাপুরি জেগে ওঠেনি। নিজ দেশে মিনি ওয়ার্ল্ড কাপ কিন্তু বাংলাদেশ দল খেলবেনা। ক্রিকেট পাগল জাতিকে তাতেও বেধে রাখা যাচ্ছেনা। অবিশ্বাস্য ভাবে তারা খেলা দেখছে। স্টেডিয়ামের গেট খুলবে ১ টায় সবাই সকাল ছয়টার সময় পশ্চিম গ্যালারীর ১৯ নম্বর গেট ধরার তালে আছে। জাতির জনকের নামের স্টেডিয়াম বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তখন পশ্চিম গ্যালারী মানে ১৯ নম্বর গেট আর পূর্ব গ্যালারী মানে ১০ নম্বর গেট। পশ্চিম গ্যালারীর টিকেটের দাম ১৫০ টাকা পূর্বগ্যালারী ১০০ টাকা। তবে সেই দামে কেউ টিকেট কিনছেনা। এবার মূল গল্পে আসা যাক। প্রথম পর্বে অনেক জমজমাট খেলার পাশাপাশি সব থেকে বাজে খেলাটি ছিল নিউজিল্যান্ড আর শ্রীলংকার মধ্যে। যেই নিউজিল্যান্ড চরম নাটকীয়তার মাধ্যমে জিম্বাবুয়েকে শেষ বলে ক্রিস হ্যারিসের চারের মাধ্যমে হারায় সেই নিউজিল্যান্ড দেখা গেল শ্রীলংকার সাথে ৪৫ নম্বর ওভারেও ঠেকাচ্ছে। স্টেডিয়াম মানেই গালিগালাজের সমারোহ। স্টেডিয়াম হলো সেই জায়গা যেইখানে সব থেকে ভদ্র ভদ্র লোকেরাও গালি না দিয়ে বের হবেনা। যারা একদমই গালি জানেনা, ভদ্র ছেলে, তাদের মুখেও শোনা যাবে শালার পুত এডাম প্যারোর! প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে আইছস? শরীরের বিশেষ অংশের চুলের নামও নিবে হয়ত। আর আমাদের মত বেয়াদপ খারাপ ছেলেদের কথা আলিদা। তারা প্লেয়ারদের এমন গালি দিবে যাতে প্লেয়ারদের মায়েদের সাথে একটা সম্পর্ক স্থাপন হবে। আপত্তিকর। সামাজিকভাবে যার স্বীকৃতি নেই। উফ গল্পটাই বলতে পারছিনা। খেলার অবস্থা হল নিউজিল্যান্ড করেছে ১৯৬। শ্রীলংকা ৬ রানে ৩ উইকেট। ৩ টাই পেয়েছে সায়মন ডৌল। আমাদের গ্যালারীর ধারে কাছে আশার পর আমরা বাংলাতেই চিল্লালাম ইয়ো হারামী সায়মন দৌল, ওয়েল ডান মযান। সায়মন ডৌল মাথার টুপি খুলে তার ৩২ দাঁত দেখিয়ে দিল। হারামী মানে তার জানার কথা না। লেখার শুরুতে ইস্কাটন গার্ডেনের কথা বলেছিলাম। আমরা ক্রিকেট পাগল ছেলেপেলের ক্রিকেট প্রতিভা এলাকায় যার কারনে বিকশিত হচ্ছেনা তিনি হলেন মহিবুল্লাহ আংকেল। হটাৎ আমাদের মধ্যেই একজন আবিষ্কার করল সেই মহাবুল্লাহ আংকেল খেলা দেখতে এসেছেন। তিনি অবশ্য পশ্চিম গ্যালারীর পাশে ক্লাব হাউজে বসে আছেন। দেখে আমাদের মেজাজ খারাপ। ইনি আমাদের কলনীতে ক্রিকেট খেলাতে বাধা দেন গ্লাস ভাঙ্গে দেখে আর নিজে আসছে ক্রিকেট দেখতে। এই বেয়াদবী মানার নয়। খেলার তখন শ্রীলংকার ভাল অবস্থা। রানাতুঙ্গআ আর সাদাভিথারানা দুঃখিত কালুভিথারানার পার্টনারশীপ জমজমাট। জাফারুল্লাহ শারাফতের ভাষায়- খেলা কিন্তু জমজমাট। আমাদের মধ্যে একজন ছিলেন রুম্মান ভাই। তিনি তখন পাশের লোককে বললেন ভাই জানেন রানাতুঙ্গার আরেক নাম মহিবুল্লাহ। এ এক আজব ব্যাপার। রানাতুঙ্গআর নাম মহিবুল্লাহ হওয়ার কোন কারন নাই। কিন্তু রুম্মান ভাইয়ের চেষ্টারও ত্রুটি নাই। তিনি বলেই যাচ্ছেন রানাতুঙ্গার আরেক নাম মহিবুল্লাহ। ভাইসব আজকে পেপারে আসছে, রানাতুঙ্গা বাপ মায়ের কুড়ানো সন্তান। বাপ মা আদর করে মাঝে মাঝে রানাতুঙ্গা ডাকেন। উপস্থিত গ্যালারী জনতা তখনো জমেনি। তবে রানাতুঙ্গা চার মারলেই রুম্মান ভাই চিল্লায় উঠেন, ইয়া মহিবুল্লাহ , মহিবুল্লাহ। তার সাথে তখন আমরাও তাল দেওয়া শুরু করলাম, মহিবুল্লাহ, মহিবুল্লাহ। খুবই অবাক করা ব্যাপার আশে পাশের জনগন বুঝুক আর না বুঝুক তারাও মহিবুল্লাহ মহিবুল্লাহ বলে তাল দেওয়া শুরু করল। পশ্চিম গ্যালারীর ক্লাব হাউজের দিকে প্রায় ২০০ জন চিল্লাচ্ছে মহিবুল্লাহ মহিবুল্লাহ। আর ক্লাব হাউজে থাকা মহিবুল্লাহ আংকেল অবাক নয়নে আমাদের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছেন ব্যাপারটা কি। তবে কিছু করার নাই। স্টেডিয়াম তো আর ছোটখাট কোন জায়গা না।


পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমোশনাল সুপারহিরোজদের একটা গ্রুপ ছিল।মানে আমি যখন ঢাবি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তখন ফ্রেন্ড সার্কেলের একটা গ্রুপ ছিল যাদেরকে বলা হত ইমোশনাল সুপারহিরোজ। সুপারহিরো হওয়ার মত পটেনশিয়াল এদের মধ্যে আছে কিন্তু ইমোশনাল হওয়ার কারনে এরা সুপারহিরো হতে পারছেনা। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে আইপিএল এর আদলে পিসিএল মানে ফিজিক্স ক্রিকেট লীগ চালু করার সময় এদের দলের নাম ছিল ইমোশনাল সুপার হিরোজ। সব মিলিয়ে ১৪ টি দল ছিল। ফ্রেন্ড সার্কেলে আমার অবস্থান সব সময়ে পরমানুর সর্বশেষ স্তরের ইলেক্ট্রনের মত। দুর্বল ইলেক্ট্রন। পরমানু কোন কারনে শেল কমিয়ে দিতে হলে সেই ইলেক্ট্রন বিসর্জন দেয়। এই ইলেকট্রনকে বলে ভ্যান্ডার ইলেকট্রন। স্কুল হোক, কলেজ হোক, ভার্সিটি হোক সব জায়গাতেই ফ্রেন্ড সার্কেলে আমি ভ্যান্ডার ইলেকট্রন। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় বললে এরা হল আইসিসির জিম্বাবুয়ে আর বাংলাদেশ। ইমোশনাল সুপার হিরোজদের গল্প বলছিলাম। ফার্স্ট ইয়ারে যখন পড়ি তখন এদের দুইজনের সাথে আমাকে প্র্যাক্টিকাল গ্রুপ করতে হয়েছিল। আমাদের প্র্যাক্টিকাল ক্লাসের কোর্ডিনেটর ছিলেন নওরীন ম্যাডাম। ইমোশনাল সুপারহিরোজের অন্যান্য সদস্যরা অন্য গ্রুপে তাদের দিনও অন্য খালি দুইজন নওরীন ম্যাডামের গ্রুপে। তারা গিয়ে নওরীন ম্যাডামকে বলল, ম্যাডাম আমরা পাঁচজন এক সাথে থাকি একই মেসে থাকি তাই আমাদের একই দিনে হলে খুব ভাল হয়। ম্যাডাম নিমরাজী থেকে পড়ে রাজী হয়ে গেল। যেখানে যেখানে ঘুঘু থাকে সেখানে সেখানে ফাঁদ থাকে। পড়েরদিন ম্যাডাম বলল, আচ্ছা আমার এক ভাতিজা ঢাকায় এসেছে থাকার জায়গা পাচ্ছেনা তোমাদের সাথে কি রাখা যায়? কোথাও কোন মেস নাই। এই তোমরাদের কেউই একসাথে থাকেনা। এইবার ঠ্যালা সামলাও। ইয়ে ম্যাডাম আমাদের সাথে আসলে থাকার সুযোগ নেই। ম্যাডাম আমাদের খাওয়ার কষ্ট। ম্যাডাম বুয়া ঠিকমত আসেনা। ম্যাডাম মেসে মাঝে মাঝে ভুমিকম্প হয়। ম্যাডাম আপনার ভাতিজার জন্য বিপদজক। যাই হোক ম্যাডামও আগ্রহ হারাল।

লেখালেখি তেমন একটা জমতেছেনা তাই এখানেই আপাতত থামায় দেই। প্রিয় লেখকের মৃত্যুতে মন খুবই খারাপ। মন খারাপ দূর করার জন্য লেখকের বইয়েই আশ্রয় নিয়েছিলাম। মন ভালো হয়নি উল্টা আরও খারাপ হয়ে গেছে। কার লেখা পড়ব এখন থেকে কে জানে! শেষ করার আগে কোথাও কেউ নাটকের একটা অংশ তুলে দেই। বাকের ভাই জেলে। তাকে দেখতে গেছে মুনা।

মুনাঃ বাকের ভাই। এই জেলে চার দেয়ালের মাঝখানে আপনার খারাপ লাগেনা?
বাকেরঃ নাহ। বেশি খারাপ লাগেনা। খালি ঐযে হাওয়ামে উড়তা গানটা । ঐটার জন্য মাঝে মাঝে মনটা খুব আনচান করে।
মুনাঃ আচ্ছা পৃথিবীতে এত গান আছে। ঐ একটা গানের মধ্যে আপনি কি পেলেন বলুন তো?
বাকেরঃ পৃথিবীতে পুরুষ মানুষও তো অনেক আছে। কিন্তু তোমার পছন্দের পুরুষ মানুষও তো একটাই। মামুন সাহেব। কি ঠিক বলেছি না।

পৃথিবীতে লেখক অনেক আছে। কিন্তু আমার প্রিয় লেখক একজনই। হুমায়ূন আহমেদ। তিনি এখন দূর মহাকাশের তারা হয়ে আছেন তবে বাংলার আকাশ অনেক খানি জুড়ে তাঁর অবস্থান। এই বাংলায় যতদিন বৃষ্টি পড়বে তা হুমায়ূন আহমেদের কথাই বলবে কারন বৃষ্টি বিলাস তিনি আমাদের শিখিয়েছেন। যতদিন চাঁদের আলো বাধ ভেঙ্গে জোৎস্না ছড়াবে তাও তাঁর কথাই বলবে। তিনিই আমাদের জোৎস্না ও জননীর গল্প শুনিয়েছিলেন।
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×