"মুখোশ "
"বাবা তোমাকে ছেড়ে তোমার রাজকন্যা চলে যাচ্ছে। হা করে তাকিয়ে আছ কেন বাবা। তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে আদর করবেনা। চেয়ে দেখ বাবা চীরদিনের জন্য চলে যাচ্ছি আমি।" ডুকরে কেঁদে উঠলো মেয়েটা। ভিতর টা ছিড়ে যাচ্ছিল আমার, কিন্তু কিছুই বলতে পারছিলাম না, ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছি, কতক্ষণ মনে নেই।
যখন জ্ঞ্যান ফিরল দেখলাম বৌয়ের সাজে উদগ্রীব হয়ে মেয়েটা আমার মুখের উপর ঝুঁকে আছে। আমার রাজকন্যা। কত কত না পাওয়া দিয়ে ওকে আমি বড় করেছি। অসময় প্রেমে পরা, না চাইতেই মেয়ের জন্ম হওয়া, টানাটানির সংসারে ওকে মানুষ করা,ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পরেছিলাম আমরা দু'জন।
কিছু চাইলে দিতে না পারার কষ্ট টা একটা মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে শান্তনায় ভরিয়ে দিতে চাইতাম,খুশি হয়ে যেত, হয়তো অদৃশ্য কোনো জাদুবলে মেয়েটা বাবার কষ্টটা বুঝতে পারত।
তখন মাত্র ফাইভে উঠেছে ও। কোন এক বন্ধুর গায়ে দেখা আড়ংয়ের একটা জামার কথা বলতেই আড়ংয়ে চলে এলাম। পকেট তো আর আমার কষ্টের কথা জানেনা। হিসেব করতেই গলা শুকিয়ে এলো, তাও মনে সাহস হারালাম না। একটা ড্রেস পছন্দ করতেই এমন একটা ভান করলাম যেন এই ড্রেস হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ড্রেস। মেয়েও কি বুঝলো জানিনা,বললো, " বাবা চলোতো অন্য কোথাও যাই। এখানে ড্রেস গুলো বেশি ভালো না।" এভাবেই মেয়েটাকে আমি না পাওয়া জলতরঙ্গের জলস্রোতের মাঝে একাকী বৈঠা হাতে এগিয়ে চলার কৌশল শিখিয়েছি। সেই মেয়েটাই আজ আমার হৃদয় ভেঙে চুরমার করে অন্যের ঘর আলোয় ভরিয়ে দিতে যাছে। খুশি হওয়ার বদলে কেন যেন আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। আজ থেকে আমি যে অন্ধকার ঘরে
হাতড়ে বেড়াব আমার হৃদয়ের রাজকন্যাকে।
হাত পা গুলো অসার হয়ে আসছিল আমার। চেষ্টা করে ও মুখে কোনো শব্দ হলো না। দু' চোখের জলের ধারা আমায় বুঝিয়ে দিলো আমার সময় শেষ। এতোদিনের লুকানো অসুখটা হয়তো আমাকে আর এপারে রাখতে চাইছেনা। মনে হলো আমার সব শেষ, দেহটা শুধু পরে আছে এপারের মায়া জ্বালে। হঠাৎ মনে হলো কানের কাছে কেউ যেন ফিসফিস করে বলছে,
" মুখোশের আড়ালেও তুমিই ছিলে আমার একজন অসাধারণ বাবা, শ্রেষ্ঠ বাবা। সারাজীবন তুমিই আমার হিরো বাবা, আর চুপ করে থেকনা। ফিরে এসো লক্ষ্মী বাবা আমার, কথা বলো বাবা কথা বলো। আমায় একা করে চলে যেওনা বাবা প্লিজ... প্লিজ...
--------------
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:০৭