প্রবালের সাথে আমি একটা বছর শুধু নির্মাণ করেছি। আমার ফেলে আসা ভালবাসার। আমার প্রবাল আমাকে নিংড়ে উজার করে ভালবাসা দিয়েছিল। আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছিল, নীল বিস্তৃত ঐ আকাশ দেখতে শিখিয়েছিল। সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল। তোকে বলেছিলাম অহনা প্রবাল তোর চেয়ে ছোট ওকে বিয়ে করিস না। ওরা স্ত্রীর মূল্যায়ন করতে জানে না। মন চঞ্চল হয়ে যাকে দেখে তাকেই ওদের ভাল লাগে। না আদ্রিকা প্রবাল এমন ছেলে না। আমার চেয়ে মাত্র তিন বছর বড় ছোটকী যায় আসে তাতে। শোন অহনা এখনও সময় আছে বিয়ে করে ফেল। নারে জীবনে একবারই বিয়ে হয়। অহনা তার হৃদয়ের কথা ডায়রিতে লিখে রাখে। প্রবাল যাবার পর সে কয়টি চিঠি দিয়েছিল সেই চিঠিগুলি বার বার বিরহ যন্ত্রনাকে অনেকটা সহজ করে তুলতো। এইভাবে অহনা ২২টি বছরপার করে দেয়। ছেলেকে লেখাপড়া করানোর জন্য কানাডায় পাঠিয়ে দেয়। কিছুতেই বাসায় মন টিকছিলো না। কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে খুলনায় খালার বাড়িতে বেড়াতে যায়। ছেলে কানাডায় যেয়ে পৌছেই সংবাদ দেয় ভালভাবে এসেছি। রাতে আবির ই-মেইল করে। সব কথা মাকে জানায়। আবির ই-মেইল করছে আর সব ঘটনা লিখছে। এখানে এসে রুনির সাথে পরিচয় হয়েছে। খুব ভাল ছেলে।
ওই দ্যাখো, বলছিলাম আমার এখানকার রুনিনের কথা। সেটাতো আগে শেষ করি। লাঞ্চ আমি অফিসে করি। যখন একা থাকি ভাবি, আমি বাপির মত অফিসে খাই। তুমি বলতে না বাপি বাসায় আসতো না। আমিও তাই। বাপি কফি পছন্দ করতো আমিও দুপুরে কফি খাই। রাত ৯ নাগাদ বাসায় ফিরি অফিসে ল্যাপটপে বসে কাজ করি বাসায় একা তাই দেরী করে খাই। এটাও বাপীর মত অভ্যাস হয়েছে তুমি বলবে। তুমিতো নানা ধরনের রেসিপি জান। তোমার আদরের সোনাবাবু রান্না করা শিখেছে। উপায় নেই মাকে ডাকলেই পাওয়া যায় না, মা বিদেশে। টিভি দেখি খানিকক্ষণ। স্টাডি করতে হয় প্রচুর, উইক এন্ড ডে জিমে যাই শপিং করি। তুমি বলতে না মা বাপি এক শার্ট বেশি দিন পরতে ভাল লাগে না। বাপির মত একই পোশাক বেশি দিন পড়তে ভাল লাগে না। বাবার মত চুজি হয়েছি। সে দিন সপিং করতে যেয়ে তোমার জন্যে স্রী গ্রীণ শাড়ী কিনেছি মনে হয় তোমার পছন্দ হবে। তুমি তো গল্প করেছিলে বাপি তোমাকে জীবনের প্রথম শাড়ি দিয়েছিলো এস কালার, উপরে লাল ব্লককরা। তোমার ভিষণ পছন্দ হয়েছিলো। বাইরে বেশি ক্ষন দেরি করি না। তুমি হয়তো ভাবছো রাত বিরেতে আমি ঘুরে বেড়াই না মা তা আমি করি না। আমার বন্ধুরা হেল্পফুল। ওরা আমাকে আগলে রাখে। ওরা জানে আমি তোমার আদরের ছেলে। এখন আর বলি না এটা খাব না, ওটা খাবনা। সব বায়না ঘুচে গেছে। মা দুশ্চিন্তা করো না আমার জন্য। তোমার সব চিঠিতে ভালো করে খাওয়া দাওয়া করবে। এটা, লেখা থাকে তোমার সব চিঠি পেয়েছি। ফোনে কথা বল ইমেল করো তাও কষ্ট করে চিঠি দাও। পার বটে মা। বাপি তোমার চিঠির উত্তর দিত না বলতে। আমার এখন বলবে তুই তো বাবার মত হয়েছিস। মা একটি কথা বল তো সত্যি করে যে কথা তোমার সামনে বলতে পারিনি। বাবা কেন তোমাকে নিয়ে ঘর সংসার করলো না। আমি তোমার বৈধ সন্তানঅথচ বাবাকে কোন দিন দেখতে পেলাম না। মাঝে মাঝে মনটা কেঁদে উঠে বাবার জন্য। ছোট বেলা থেকে বাবাকে ঘৃণা করতে শেখাওনি। শুধু ভালবাসতে শিখিয়েছো। আবির প্রশ্ন করে তার মাকে, কেন মা? যে লোকটি মাত্র সাত আট মাস তোমার সাথে থেকেছে তার প্রতি এত ভালবাসা? কেন আমি ব্যাপারটা মেনে নিতে পারি না। আমার কথাগুলি তোমার কাছে খাপ ছাড়া লাগতে পারে। বাবা কেন দাদার কথা শুনলো? বাবা তো পাস করে ভাল চাকরি করতো তিনিতো বেকার ছিলেন না। তুমি বল তোমার বয়স টাই বাধা? না তানা, বাবা তোমাকে যদি এত ভালবাসতো তাহলে কেন ছেড়ে যাবে বাবার ভালবাসায় খাঁদ ছিল। প্রেমের জন্য রাজা রাজ্য ছেড়ে দেয় আর বাবা কিনা দাদার সম্পত্তির জন্য তোমাকে ছেড়ে অন্য মেয়ে বিয়ে করলো। তোমার তো কত প্রপার্টিজমি বাড়ি ঘর সব তো নানা তোমাকে দিয়ে গেছে বাবার কি দরকার ছিল দাদার সম্পদের। মা তুমি যত কথা বল বাবা তোমাকে তোমার মত করে ভালবাসেনি। আমাকে সে এই পৃথিবীতে আসতে দিতে চায়নি তুমি জেদ করে আমাকে এই পৃথিবীর আলো দেখালে। তুমি বিয়েও করলে না এভাবে জীবন কাটালে আমার দিকে তাকিয়ে। তোমাকে কোনভাবে দুঃখ দেবার ইচ্ছা আমার নেই মা। তবে তোমার জীবনটা তোমারই। আমি হয়তো বিয়ে করবো বউ নিয়ে চাকুরী স্থলে থাকবো। তখন তুমি আমার কাছে আসবে না। বললেই বলবে নারে বাবা যাব না। তোর বাবার স্মৃতি স্পর্শ পাই সব জায়গায় বাবা। এক কাজ করো জীবন এভাবে চলে না একজন সঙ্গির দরকার তুমি বিয়ে করো আবার মা আমি বলছি তোমার। তুমি ভাবছো হয়তো আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। না মা তোমার জীবনে এত কষ্ট আমি সইতে পারি না তুমি শুধু বল একদিন হলে তোর বাবা আমার জীবনে ফিরে আসবে এমন করে অনেক বছর পার করে দিলে। সেই ছাত্রী জীবন থেকে। পরিশেষে আলাহকে বলি আলাহ জেন তোমার মনের আশা পূরণ করেন। তবু অনেক কথা বলে ফেললাম আমার কথা গুলি যদি তোমাকে হার্ট করে থাকে তাহলে মাফ করে দিও। আই লাভ ইউ বোল ভেরি মাচ আই মিস ইউ। ফোন করো কিন্তু আমার টাকা যায় অনেক ফোন দিলে। তুমি ফোন দিবে।
-তোমার আবির
অহনা ছেলের চিঠি পেয়ে ভিষণ কান্নাকাটি করে। মিলি এসে বলে অহনার ভাইয়ের স্ত্রী আপু কী হয়েছে কাঁদছেন কেন? অহনা কোন জবাব দেয়না। কেঁদেই চলে, কেঁদেই চলে। এভাবে মন খারাপ থাকে কদিন কলেজ বন্ধ। সময় একেবারে কাটে না। অহনা ভাবে কদিন ঘুরে আসি খুলনা থেকে ফুপুর সেখানে হয়তো ভাল কাটবে। তখন রওনা হয় খুলনায় বাস থেকে নেমে রিকসা নেবে তখন পিছন থেকে কে যেন ডাকছে অহনা বলে। বুঝতে পারছে না পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে প্রবাল। অহনা থমকে যায়। দীর্ঘ ২৫ বছর পর দেখা হঠাৎ এভাবে তার সাথে দেখা হবে অহনা কল্পনাও করতে পারেনি। পিছন থেকে বার বার ডেকেই যায় অহনা, অহনা বলে। ফিরে আর দেখে না সোজা ফুফুর বাসা চলে আসে অহনা। প্রবাল পিছু নেয়। কেয়ারটেকার এসে একটি চিরকুট ধরিয়ে দেয় অহনার হাতে। সেখানে প্রবালের বাসার ঠিকানা থাকে।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



