আজ হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা: । প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র মক্কায় আল্লাহতায়ালার প্রেরিত সর্বশেষ নবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সা: জন্মগ্রহণ করেন। নবুয়তের মহান দায়িত্ব পালন শেষে আবার একই মাসের একই তারিখে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি লাভের মাধ্যমে আরবের অ�ধকারাচ্ছন্ন সমাজে ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ববাসীর সামনে ইসলামের মডেল উপস্খাপন করেন মহানবী সা:। বিশ্ববাসীর সামনে এ এক জীবন্ত জীবনাদর্শ। তাঁর উপস্খাপিত ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এবং মানুষের জীবনের সব দিক ও বিভাগের সব সমস্যার সমাধান এর মধ্যে রয়েছে। ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কুরআন শত শত বছর পর আজও অবিকৃত অবস্খায় আছে।
বিশ্বের মুসলমানরা প্রতি বছর হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী, সিরাতুন্নবী, নবী দিবসসহ বিভিন্ন নামে পালন করে থাকেন। রাসূল সা:-এর প্রতি দরূদ পাঠ, তার জীবনী ও আদর্শ আলোচনা, আনন্দ মিছিল, স্বাগত মিছিল প্রভৃতি কর্মসূচি পালন করা হয় এ উপলক্ষে।
দুনিয়ায় প্রচলিত সব বিধি-বিধান ও ব্যবস্খার ওপরে আল্লাহর দেয়া দ্বীন বা জীবনব্যবস্খাকে বিজয়ী করার জন্য আল্লাহতায়ালা রাসূল সা:-কে নবুয়তের দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। রাসূল সা: ৪০ বছর বয়সে তার মিশন সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর থেকে ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনে সেই জীবনব্যবস্খাকে বিজয়ী করা তথা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। রাসূল সা: কাজটি করেছেন আল্লাহ প্রদত্ত ওহির জ্ঞানের আলোকে। এ কাজ করতে গিয়ে তাকে নানা বাধা বিঘ�, অত্যাচার-জুলুমের ব�ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। নিজ জন্ম স্খান মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত পর্যন্ত করতে হয়েছে। অবশেষে দ্বীনকে বিজয়ী করতে সক্ষম হন তিনি। আল কুরআনের ভিত্তিতে ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্খা হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালনে তিনি সফল হন।
তিনি যে ইসলামী জীবনব্যবস্খা উপস্খাপন করে গেছেন তাতে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষের জীবনে যা কিছু দরকার, যে সব ঘটনা প্রবাহের মুখোমুখি হতে হয়, যা যা করতে হয় তার সব কিছুরই অত্যন্ত যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত সমাধান দেয়া আছে। সর্বশেষ ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করে তিনি পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে দেখিয়ে গেছেন যে রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি সব কিছুই ইসলামী জীবনব্যবস্খার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মানুষের কল্যাণ সাধনই ছিল রাসূল সা:-এর সব কাজের এক মাত্র লক্ষ্য। মানুষের কল্যাণ চিন্তায় হেরা পাহাড়ে ধ্যানরত অবস্খায়ই তার কাছে সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়। ৪০ বছর বয়সে সেই ওহির মাধ্যমেই নবুয়ত লাভ করেন তিনি।
রাসূল হজরত মোহাম্মদ সা: ছিলেন একজন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ। মক্কা থেকে মদিনা হিজরতের পর মদিনা সনদ তৈরি, বদর যুদ্ধে বিজয়, ওহুদের যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা, হুদায়বিয়ার স�িধ এবং রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়সহ অসংখ্য ঘটনা থেকে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় ফুটে ওঠে।
রাসূল সা: এমন একটি জীবনব্যবস্খা মানুষের সামনে তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিকভাবে উপস্খাপন করেন যাতে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক সব কিছুর সুসমন্বয় ঘটেছিল। তিনি নিজে একজন সফল রাজনীতিবিদ, সমরবিদ, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বময় পরিচিতি লাভ করার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামের পরিরপূর্ণতা বিধানের সনদ লাভ করেই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা: ছিলেন মানবতা ও পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক। তিনি তদানীন্তন আরবে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন তার নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। তিনি ধর্মের নামে অনাচার, ব্যভিচার, কুসংস্কারের অবসান ঘটিয়ে সুস্খ, সুন্দর সাবলীল একটি ধর্মীয় ব্যবস্খা মানুষকে উপহার দেন। সামাজিক ক্ষেত্রে তিনি যে সংস্কার সাধন করেন তা ছিল এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। তিনি সামাজিক ভেদাভেদ ও বৈষম্য দূর করে সবাইকে একই কাতারে নিয়ে আসেন। নৈতিক ও আধ্যাত্মিক গুণাবলিকে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।
মহানবী সা: সব নাগরিকের সমান অধিকার ও বাকস্বাধীনতাসহ মানুষের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শোষণের হাতিয়ার সুদকে হারাম করে মুনাফাভিত্তিক ইসলামী অর্থনতি চালু করেন। ধনীদের সম্পত্তিতে গরিবের অধিকার আছে ঘোষণা দিয়ে জাকাতের বিধান দেন। তিনি নারী-পুরুষ সবার জন্য জ্ঞান অর্জনকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা দেন। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। দাসদের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



