গত তিনবছর থেকে আজকের এক সেকেন্ড আগ পর্যন্ত আমাদের ফ্ল্যাটে যা যা ঘটেছে তার সব তথ্য আমার বন্ধু সুমনের ভান্ডারে জমা আছে। কোন কিছুই তার অজানা থাকেনা । কোন কিছুই তার নজর এড়ায়নি। সকালে নীচতলার সিকিউরিটি ডোরের সামনে তার সঙ্গে দেখা হতেই সে আমাকে একপাশে নিয়ে গিয়ে বলল -
ঃ শোন , এইট-থ্রি ফ্ল্যাটের আমিনুল সাহেবের অতিরিক্ত যে ঘরটি এতদিন খালি পইড়া ছিল সেইটাতে একটা মেয়ে ভাড়া আসছে।
ঃ একা ?
ঃ হু। সে বলছে তার বাড়ী খুলনায় । ভার্সিটির সুবিধার জন্য এইখান থেকে আইসা যাইয়া পড়বে।
ঃ কোন ভার্সিটিতে পড়ে ?
ঃ কোন ভার্সিটিতেই না। মিথ্যা বলছে। আমি খোজ নিয়া দেখছি সে ভর্াির্সটিতে যায়না।
ঃ এর মধ্যে খোজ-ও নিয়া ফেলছিস।
ঃ তা না হইলে আমার আর দাম থাকল কি। মেয়েটা আসলে মডেল । নামকরা। টিভিতে একটা তেলের আর গানের মডেল হইছে। মডেল বললে ভাড়া নিতে অসুবিধা হবে বইলাই চাপা মারছে। মেয়েটারে তুই দেখলেই চিনবি। এখনই বাইরে যাওয়ার জন্য সে নীচে নাইমা আসবে। আমার সঙ্গে দাড়া।
নাস্তা করার জন্য বেরিয়েছি। দাড়িয়ে না থেকে গার্ডকে দিয়ে পরোটা ,ভাজি ,চা আনিয়ে নীচ তলায় বসেই নাস্তা করছি তখন মডেল এসে হাজির । মাথায় ডাই করা রেশমের লাল-সোনালী চুল। গায়ে ফতুয়া-ওড়না। দেখে মনে হয়না মডেল । মনে হয় তলোয়ারের মত পোচ দিয়ে কেটে ফেলা অসম্ভব সুন্দরী কোন সাধারন মেয়ে। কিন্তুু তার হেটে যাওয়ার ভঙ্গিটা অন্যসব মেয়েদের চেয়ে আলাদা্ মনে হল। সুমনের কাছ থেকে আগেই মডেল শুনেছি বলে এই বিভ্রম হতে পারে।
বাড়ির সামনেই সি.এন.জির হাট। সে একটাতে উঠে চলে যাওয়ার পর বাড়ির বাইরে এসে সুমনকে বললাম-
ঃ তুই ভুল তথ্য পাইছিস । দেখে মনে হচ্ছেনা মেয়েটা মডেল।
ঃ এইখানেইতো মডেলের কারিশমা। কেউ যেন ঝামেলা না করে সে জন্য সিম্পল থাকে।
ঃ হইতে পারে।
ঃ হইতে পারুক আর না পারুক । এই মেয়েটার সঙ্গে তোর ভাব জমাইতে হবে।
ঃ আমি তার সঙ্গে ভাব জমাইতে যাব কোন দুঃখে ।
ঃ ক্ষেপিস না। আমাদের ফ্ল্যাটে এমন ডানা কাটা পরী আইসা অবতরন করছে আর তার সাথে কেউ জলকেলিতে যাইব না এটা হয়না।
ঃ তুই যা না।
ঃ আমি তো যাইতামই। তোর বলা লাগতোনা। কিন্তু আমার এই কুখ্যাত ক্যারেক্টারে সুবিধা করতে পারুম না। এই মেয়েরা হাজার ছেলে ভাইজা খায়। চেহারা দেখলেই বুঝতে পারে কোনটা গী্রণ সিগন্যাল আর কোনটা রেড।
ঃ হুট কইরাতো আর অপরিচিত কারও সাথে ভাব জমানো যায়না।
ঃ সে জন্যই এর কথা তোরে বলতেছি। এরা সাধারন মেয়েদের মত ন্যাকা না। ঝামেলা না দেখলে সব ও-কে। স্ট্রেইট-কাট । তুই আজকেই বিকালে যাবি।
ঃ পরে কেউ দেইখা ফেলুক আর ক্যালেঙ্কারী হোক।
ঃ সেই দায়িত্ব আমার । তুই চারটার দিকে রেডি থাকিস। আমি তোরে ফোনে জানাইতেছি।
আমার প্রিয় সব গান গুলি একটা সিডিতে রাইট করা আছে। প্রতিদিন বিকালে বারান্দায় বসে সেখান থেকে কয়েকটা গান শুনে তারপর বের হই। আজকে ''বসে আছি একা কাঁচা রোদ বিকেলে''-গানটা শুনছি। তারমধ্যেই সুমনের কল এসে হাজির-'' জু (বন্ধুদের দেয়া আমার নাম), এভরিথিং ইজ ও.কে । তুই সরাসরি ফ্রন্টে চলে যা। আ'ল গিভ ইউ ব্যাকআপ। মুভ নাও।''
নতুন এসেছে বলে মেয়েটি এখনও কলিং বেল লাগাতে পারেনি। নক করার পর দরজা খুলে আমাকে চিনতে না পেরে কিছু বললনা। ভুড়ু কুচকে তাকাল। তার তাকানোর ভঙ্গি থেকেই বোঝা যাচ্ছে সে আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেনা। জানতে চাচ্ছে -হু এম আই? আমি বললাম -
ঃ আমি এই বাড়িতে টুয়েলভ সি তে থাকি । নতুন এসেছেন দেখে পরিচিত হতে আসলাম। অবশ্যি চোখের দেখার পরিচয় এর মধ্যে হয়ে গেছে। কথার পরিচয় হয়নি । সকালে আপনার সাথে নীচতলায় দেখা হয়েছিল। আপনি নামছেন ,আমি আর আমার বন্ধু তখন বসে বসে পরোটা ভাাজি খাচ্ছি। হাতে ঝোল ছিল বলে হাত বাড়িয়ে এসে পরিচয় দিতে পারিনি।
মেয়েটি ফিক করে হেসে ফেলে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
ঃ এখন নিশ্চয়ই আর হাতে ঝোল নেই । আমি তৃণা।্
ঃ আমি জুল। এটা আমার নিক নেম। বন্ধুরা জু বলে ডাকে । যদিও আমার মধ্যে কোন পশু পাখি নেই তবুও আপনি আমাকে জু বলে ডাকতে পারেন।
সকালে বেরুবার সময় তৃণার গায়ে ছিল ফতুয়া,জিনস, ওড়না। এখন গায়ে ওড়না না থাকলেও সেই ফতুয়াটাই পড়া। ফিরে আর চেঞ্জ হতে পারে নাই। সে দরজা খুলে বলল-
ঃ ভিতরে আসেন......ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড দেন ভিতরে আস । তোমার সাথে কথা বলে ভালই লাগছে। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নেই।
ঘরে একটা শোয়ার বিছানা, একটা বসার সোফা , ছোট ওয়্যার ড্রয়ার আর একটা কম্পিউটার ছাড়া কিছু নেই। আমি বিছানাতেই বসলাম । তরুনী মেয়েদের বিছানায় বসার ফিলিংসই আলাদা। তৃণা বাথরুমের দরজা খোলা রেখেই পানি ছেড়ে হয়ত মুখ ধুচ্ছে। তার মাঝেই আমি কথা চালাচ্ছি।
ঃ তৃণা। তুমি যে ভার্সিাটিতে পড়না। তুমি মডেলিং কর এটা আমি জানি।
পানি পড়ার শব্দের কারনে বুঝতে পারলাম না সে বিস্মিত বা চমকে উঠেছে কিনা। শুধু বলল- কিভাবে ?
ঃ সকালে আমার সাথে যে বন্ধুটা ছিল , সুমন। সে বলেছে। এই বাড়িতে যে-ই আসুক সুমন তার সম্পর্কে এ টু জেড খবর রাখে । কোন কিছুই তার অজানা নেই। কোন মেয়ের সাথে হুট করে এসে পরিচিত হবার চেষ্টা আমি কখনও করিনি। কিন্তু সুমন বলল তুমি মডেলিং কর । তার ধারনা মডেলদের সাথে ভাব জমানো খুব সোজা। তারা ন্যাকামী করেনা।
তৃণা বাথরুম থেকে বেড়িয়ে ঘরের মাঝখানে দাড়িয়ে আামার দিকে তাকিয়ে বলল - তোমার বন্ধু সবই ঠিক বলেছে। শুধু আসল একটা কথা বলেনি। সেটা হচ্ছে তারা খুব ভয়ংকরও হয় ।
ঃ মানে?
তৃণা কোন জবাব দিয়ে আমার সামনেই আচমকা ফতুয়া খুলে ফেলল। আমার মনে হল আমি এক লাখ ভোল্টের একটা শক খেয়েছি। আর সাথে সাথে মারা গেছি।
তৃণার ঘর থেকে মৃত বের হয়ে এসে সুমনের কাছে মারা যাওয়ার পর তৃণা আর কিকি করেছে তা বলার পর সে আমাকে বলেছে -
ঃ তুই কাউকে কিছু বলবিনা। বললে তোর খবর আছে।
ঃ ঠিক আছে দোস্ত।
ঃ জনে জনে বলে যদি গ্যাঞ্জাম বাধাস তবে আমি আর নেই।
ঃ ও-কে।
সুমনের কথা মত কাউকেই কিছু বলিনি। কিন্তু বাকি ঘটনা গুলি লিখলে ঝামেলা হবে কিনা সে আমাকে হেল্প করবে কিনা সেটা তাকে জিজ্ঞেস করিনি। সে যদি বলে প্রব্লেম হবেনা তবে শুক্রবারে বাকী ঘটনা ডাইরীতে লিখে ফেলব। এর মধ্যে আর বসার সময় পাবনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




