যে শহর ২৪ ঘন্টা যন্ত্রের মত সচল থাকে।করোনায় থমকে গেছে সে শহরের গতিময়তা।নিস্তব্দ হয়ে গেছে পুরো শহরটি।সর্ব বিষয়ে প্রায় প্রথম অবস্থানে থেকেও হিমশিম খাচ্ছে সাস্থ্য ব্যাবস্থা নিয়ে। পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে গেছে করোনার কাছে। জি হ্যা আমেরিকা নয় সারা পৃথিবির রাজধানিতে মৃত্যুর মিছিল লেগে গেছে আজ। পৃথিবির যে কোন দেশের তুলনায় বাঙালীদের মৃত্যুর হার এই শহরেই মনে হয় সবচাইতে বেশি।গতকাল পর্যন্ত সরকারি হিসেবেই নিউ ইয়র্কে ২১ জনের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।আজ সেটা কোথায় গিয়ে দাড়াবে আমরা কেউ জানিনা।এটার একটা কারন আমি উপলব্দি করতে পারছি। করোনার জন্য কতটা সাবধানতা প্রয়োজন সেটা উপলব্দি করতে শতভাগ ব্যার্থ হয়েছে বাঙালী কমিউনিটি।গুরুত্ব দেয়নি ইমিগ্রান্টরা।একমাত্র জাতি আমরা কোন উপলক্ষ ছাড়া শুধু আড্ডা দিয়ে সময় অতিবাহিত করি।এবং এটা করি যেখানে সেখানেই দলবদ্ধভাবেই।সেটারই প্রতিফল আজ দেখতে পাচ্ছি।এখানকার সরকার বা লোকাল গভর্মেন্ট যদি মানুষকে গৃহবন্দি করে না রাখতো তাহলে এই অসেচতনতা চলতেই থাকতো।
আমেরিকা ধারনা করেছিলো তার সাস্থ্য-ব্যাবস্থা যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম।তাই চায়নার প্রায় ২/৩ মাস পরে প্রথম আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ পরিবেশনের পর আজ আক্রান্তের সংখ্যায় ১ নম্বরে চলে এসেছে। অথচ ধারনা ছিলো সর্ব নিম্ন পর্যায়ে থাকবে। বিশেষ করে আজকের পরিস্থিতিতে আমি পুরোপুরি হতভম্ব।এমন অসহায় আত্মসমর্পন আর কখনই দেখিনি আমি । নিউ ইয়র্কে গার্বেজ ব্যাগ পড়ে নার্সরা সেবা দিচ্ছে এটা কি ধারনা করা যা্য! ব্যাস্ততার কারনে মাসে একবারও ব্লগে আসতে পারিনা সেই আমি আজ করোনায় বন্দি। বাচতে হলে যেমন জানতে হয়।এই শহরে থাকতে হলে কাজের কোন বিকল্প নেই।করোনা বাধ্য করেছে সকল কিছু বন্ধ করতে। সব উন্নতি মুখ থুবরে পড়েছে ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কারনে। অহংকার যে শুধু একজনই করতে পারে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সবাই।
এবার আসি বাংলাদেশের প্রস্তূতিতে । ইউরোপ ,আমেরিকা নয় চায়নাকে অনুসরন করাই সঠিক বলে মনে করছি আমি করোনা বিষয়ে। কাগজে কলমের বা বক্তৃতা বিবৃতির প্রস্তুতি নয়। কাজে কর্মের প্রস্তুতি প্রয়োজন ।এখনও সময় চলে যায়নি ,ফাঁকা আওয়াজ না করে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে । যত দ্রুত সম্ভব ব্যাপক পরিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে আলাদা করে ফেলতে হবে করোনা আক্রান্তদের। ডাক্তার ,নার্সদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।কারন করোনার বিরুদ্ধে মূল লড়াইটা করতে হবে এদেরকেই।প্রধানমন্ত্রী কিংবা সেনাপতি বা বাগারম্বর করা মন্ত্রীদের বেইল নাই এখানে। সমন্বয় করা ও প্রয়োজনিয় পদক্ষেপে যেনো কোন বাধা না আসে সেটা করাই শ্রেয় হবে।চায়না কথা কম বলে কাজ বেশি করেছে বলেই নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসেছে প্রায়।কাজেই বাংলাদেশকে আমি সেই পথেই হাটার জন্য অনুরোধ করছি। অনুগ্রহ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবরগুলো এড়িয়ে চলুন সবাই।আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি বাঙালী যদি চায় তাহলে যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা করার সামর্থ্য তাদের নিজেদের মধ্যেই নিহিত আছে।প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যদি নিয়ন্ত্রনের ব্যাবস্থা করা হয় তাহলে মানুষ বেশি আস্থা পাবে।আপডেট করার জন্য টাস্কফোর্সের গঠণ জরুরী। মনে রাখাটা খুব জরুরী ব্যার্থতার জন্য কিন্তু কঠিন মূল্য দিতে হবে। আল্লাহ্-র উপর ভরসা করে কাজে ঝাপিয়ে পড়াটাই এখন উত্তম। ডিফেন্সিভ নয় করোনার বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক হওয়াই সঠিক বলে মনে করছি আমি। আসুন দুরে থেকেও পাশে দাড়াই আমরা একে অপরের।সামাজিক দূরুত্ব নয় শারিরিক দুরত্বই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে আপনাকে ,আপনার আপনজন ও অন্যদেরকে। কথাটা বলতে চাইনি তবুও প্রকাশের ভাষা খুজে পাচ্ছিনা বলে বলছি ।মৃত্যুপরিতে দাড়িয়ে আছি আমরা নিউ ইয়র্ক প্রবাসীরা।আমাদের জন্য একটু প্রার্থণা করুন সৃষ্টিকর্তার কাছে। ছিডিছি-র গাইড লাইন মেনে চলুন ,সবাই নিরাদে থাকুন। আল্লাহ আমাদের এই সংকট থেকে রক্ষা করুন । ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৪৭