somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

ব্লগারদের ঈদ ভাবনা ও ঈদ আড্ডা

০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


*** ঈদ মোবারাক ***



আমি প্রথমেই গভীর শোকের সাথে স্মরণ করছি এইতো কিছুদিন আগেই সাভার রানা প্লাজায় ঘটে যাওয়া ট্র্যাজেডি নিয়ে, যেসব শ্রমিকদের এই ঈদটা হয়ত আনন্দের কাটবেনা জীবনের এমন এক নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতায় কাটিয়ে।



আমি গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আমাদের সকলের প্রিয় ব্লগার নোবেলবিজয়ী_টিপু যিনি ব্লাডক্যান্সারে ভুগে মাত্র ২২ বছর বয়সে মারা যান এবং ব্লগার ইমন জুবায়ের যিনি মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত এই ব্লগ প্ল্যাটফর্মটিতে মমতার সাথেজড়িয়ে ছিলেন। সুস্থ, সমৃদ্ধ, দায়িত্বশীল এবং আনন্দময় ব্লগিং এর জন্যআমরা তাঁর কাছে ঋণী। আমরা আর কখনওই তাদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারব না । এই দুই জন গুণী ব্লগারের অসীম ভালোবাসায় সিক্ত হতে ।



সবশেষে গভীর আক্ষেপ নিয়ে স্মরণ করছি, ছোট্ট ছেলে মেঘ যার আর কখনওই তার বাবার সাথে ঈদের জামাত আদায় করতে যাওয়া হবেনা, ফিরে এসে মায়ের হাতের সেমাই খাওয়া হবে না। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার আজ ৫৪০ তম দিন । আমরা অন্ধকারে এখনও।



একমাস সিয়াম সাধনার পর সময় এসেছে ঈদ আনন্দ উদযাপনের। ঈদ মানেই বাঁধ ভাঙা আনন্দ। সেই আনন্দ বরণের জন্যই বাংলার মুসলমান সমাজ যেন উদগ্রীব। ক্ষীর, পায়েস, সেমাই, পোলাও, ভুনা খিচুড়ির, কোর্মা, কালিয়া এসব নানান ধরনের খাবার থাকবে খাবারের তালিকায়। নামাজ পড়ে মিষ্টি মুখ, এরপরই বন্ধু-বন্ধবীর সঙ্গে আড্ডা, বাদ যাবে না এর কোনো কিছুই। আর তাইত ঈদ এলেই মনের অজান্তেই গেয়ে উঠি আমাদের মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় ও আনন্দের উৎসব ঈদ-উল-ফিতর নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কালজয়ী গান।১৯৩১ সালে লেখার চারদিন পর শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের গলায় গানটি রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করার দুই মাস পরে ঈদের ঠিক আগে আগে এই রেকর্ড প্রকাশ করা হয়।



ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে , শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত , মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী
সেই গরীব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
ঢাল হৃদয়ের তশতরীতে শিরনি তৌহিদের,
তোর দাওয়াত কবুল করবেন হজরত হয় মনে উম্মীদ।।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।




ব্লগাররা একই সাথে ভার্চুয়াল ও বাস্তব জগতের বাসিন্দা। পাঠকরা ব্লগারদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চান। এখানে প্রাধান্য পাবে সমাজসেবার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা, সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে তাঁদের অবদান, তাঁদের পারিবারিক জীবনের মধুর ও ইতিবাচক দিক কিংবা তাঁদের ব্লগিং ও সংগ্রামের ইতিহাস।

ঈদ ঘিরে যেমন সবার থাকে অনেক স্বপ্ন , তেমনি ঈদ ঘিরেই থাকে সারা বছরের আয়োজন। ঈদ এলেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে আমজনতা থেকে আকাশগঙ্গার ওপারে থাকা নক্ষত্রকূলের সকলেই। ঈদ আসে, ঈদ চলেও যায়। কিন্তু ঈদ কী সত্যিই পূরণ করে আমাদের স্বপ্ন? আমরা কী কখনো ভাবি সেই ঈদের কথা, যা হবে আমাদের স্বপ্নের মতো। আমরা কী কখনো স্বপ্ন দেখি সেই ঈদের? এই অনুসন্ধিৎসা থেকেই আমি শরণাপন্ন হলাম আমাদের প্রিয় ব্লগারদের। জানতে চাইলাম, কেমন দেখতে চান আপনার স্বপ্নের ঈদ...



এই পোস্টে আমি ব্লগারদের নিকের বয়সের ক্রম অনুযায়ী তাদের ভাবনাগুলো সাজিয়েছি। তবে আমার যোগাযোগের এবং পোস্টের সীমাবদ্ধতার কারনে সবার ভাবনাগুলো দেয়া সম্ভব হয়নি বিধায় বাকিদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যেহেতু এটি ব্লগারদের ঈদ ভাবনা নিয়ে পোস্ট এবং সাথে আড্ডার আয়োজন করেছি তাই সকলের প্রতি আন্তরিক ভাবে চাইব যেন পোস্টের মন্তব্যের ঘরে এসে সবার ঈদ ভাবনা আমাদের সবার সাথে শেয়ার করবেন এবং মন-প্রান খুলে ঈদ আড্ডা জমিয়ে রাখবেন। পরিশেষে সবার প্রতি রইল ঈদের শুভেচ্ছা।



*** ব্লগার অন্যমনস্ক শরৎ ***

যখন আমাকে প্রশ্ন করা হল, "এবারের ঈদে কি করছেন?" তখন প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলাম। শতহোক প্রশ্নটা করেছেন একজন ব্লগার, ফলে গুরুত্ব কিছুটা হলেও ভিন্ন। যে উত্তরটা শুরুতেই মাথায় এল, তা হল ব্লগেই ঈদের বেশিরভাগ সময় কাটবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। চাঁনরাতের প্রথম শুভেচ্ছা পোষ্টটা কার হবে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। কে কি কেনাকাটা করছেন, এবং সেটা নিয়ে কেমন পোষ্ট দিচ্ছেন সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। আবার নিজেদের আনন্দের বাইরেও যারা অন্যদের, বিশেষত সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন; সেটা খুব মনযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করব। ঈদ পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে সেটা কোনভাবেই মাথা থেকে বের করতে পারবো বলে মনে করছি না। সেটার প্রভাব অনেক আগে থেকেই ব্লগে উপস্থিত হবে মনে করছি। এছাড়া ব্যক্তিগত জীবনে, ঈদের দু-তিনদিন আগে একটু শপিং করার চেষ্টা করবো, প্রিয়জনদের উপহার দেবার জন্য। ঈদের সকালে নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা হবে নিশ্চিত। অনেকদিন ছোট কাজিনদের সময় দেয়া হয় না, আশাকরি এবার সেই অপরাধ একটু হলেও কমানো যাবে। প্রিয় বন্ধু এবং শিক্ষকদের ঈদের এসএমএস পাঠানোর একটা অভ্যাস আছে। ফেইসবুক বন্ধুরাও বাদ যাবেন না নিশ্চয়ই। যদিও সবকিছুর পরও ব্লগে চোখ থাকবে। এই পোষ্টের সুবাদে ঈদ পূর্ব ভার্চুয়াল কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের আশা থাকবে সকল ব্লগারের সাথে। আবার সার্ভার এবং লগইন জটিলতার জন্য ঈদ পূর্ব ক্ষমাও চেয়ে নেবো। কিন্তু এর পরও কেউ কেউ যখন "মডু ঘুমায় মডু ঘুমায়" বলে ঈদ আনন্দ মিছিল করবে তখন "চউক্ষে পুরা পানি চইলা আসলেও" বলবো...ও মোর রমজানের ঐ রোযার শেষে এল খুশির ঈদ....শুভেচ্ছা আর কৃতজ্ঞতা সবার জন্য।



*** ব্লগার মিলটন ***

ঈদ। দুই অক্ষরের শব্দ একটি। কিন্তু এর ব্যাপ্তি অনেক। আমরা মুসলমানদের জন্য বছরে আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত দুটি দিন আনন্দের। আমরা পালন করি। অনেকে অনেক ভাবে পালন করে। আর আমাদের মত সৌহার্দ সপ্রীতির দেশে ধর্ম নির্বিশেষে সবাই কমবেশী উৎযাপন করি এই ঈদটাকে। আমি এক নষ্টালজিক টাইপের মানুষ। দিনের বেশীর ভাগ সময় যখন সাধারণত একা থাকি তখন নিজের স্মৃতির পাতা উল্টাই। কখনও হাসি আর কখনও কাঁদি। ঠিক সেই ভাবেই আমার মনে পড়ে আমার ছোটবেলার ঈদের কথা গুলো। কত রঙিন ছিল সেইদিনগুলো। কোন চিন্তা ছিল না। কোন দায়িত্ব ছিল না। শুধুই ঘুরে বেড়ানো। খুশিতে ঈদের আগের রাতে ঘুমই হতো না। সেলামির ব্যাপারটা তখন খুব একটা বুঝতাম না। আর নতুন জামা-কাপড়ের দিকে আমাদের পরিবারের ছেলেপুলেদের খুব নজর ছিল না। নিজের পছন্দ বলে কিছুই ছিল না। বাবা-মা যেটা দিতেন সেটাই সই। বাবার সাথে নামাজ পড়তে যেতাম। এক রাস্তা দিয়ে যেয়ে বাবা আরেক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে বাসায় ফিরতেন।

তারপর যখন কিশোর বয়সে আসলাম। তখন দু-চারটি বন্ধু হলো। তাদের বাড়ীতে বেড়ানো, তারা আমার বাসায় আসতো। এখানে ওখানে যাওয়া। তবে সত্যি কথা, কখনও সিনেমা দেখা হয়নি। যে বয়সটাতে অন্ততঃ অনেকেই ঈদের দিন সবার চোখের আড়ালে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতো। তবে আমাদের ঐ সময়ে সালামীর পরিমান খুবই কম ছিল। সেইটাই আমাদের কাছে অনেক ছিল। বাবা ঈদের বাজারটা আলাদা করে করতেন এবং সেটা বাসাতে আলাদা করেই রাখা হতো। একটা বাঁশের টুকরি/ডালাতে শেমাই, লাচ্ছি, পোলাওয়ের চাল, দুধের প্যাকেট, গরম মশলা ইত্যাদি রাখা হতো। এই দৃশ্যটা আমার খুব মনে পড়ে। আর ঈদের আগের রাতে পিঁয়াজ, রসুন, আদা ইত্যাদি মশলা বাটা হতো পাটায়। আর সারা বাড়ী একটা সুগন্ধে ভরে যেত। এখনও ঈদ আসলে আমি সেই সুগন্ধটা অদৃশ্য ভাবে পাই। ঈদের আগের রাতেই ঈদের দিনের জন্য দুই একটি রান্না করেন ফেলতেন আম্মা।

এরপর আসি, আমি যখন বড় হলাম। চাকুরীতে ঢুকলাম। প্রথমদিকে অল্প বেতন দিয়েই সবাইকে খুশি করতে চাইতাম। আমি চাইতাম পরিবারের সবাইকে কিছু না কিছু গিফট দিবো। তাই সবার জন্য শপিং করতাম। আমার ভালো লাগতো। বাবা-মা, বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে দিয়েছি আমার সাধ্য মত।

এখন সন্তানরা বড় হয়েছে। এখনও ঈদের নামাজ পড়ে এসে মা’র পা ছুঁয়ে সালাম করি। মা মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেন। তারপর আমাদের পরিবারের রেওয়াজ হিসেবে সবাই একসাথে বসে মাংশ দিয়ে খিচুড়ি খাওয়া হয়। আমার সন্তানরা এখন আনন্দ করে। আমি দেখি তাকিয়ে তাকিয়ে। আমার ভালো লাগে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা মোবাইলে বিনিময় করি। ঈদের দিন বাসাতেই থাকতে পছন্দ করি। কারণ আমি ঘরকুণে একটা মানুষ। বড়ই অলস। বড়ই।

এভাবেই চলে আসছে আমার বছরের পর বছরের ঈদগুলো। সবাইকে ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা।



*** ব্লগার এস্কিমো ***

ছোটভাই জানতে চাইলো ঈদ নিয়ে আপনার ভাবনা কি? ১৮ ঘন্টার রোজা রেখে - বিশেষ করে রমাদানের শেষ দিকে তারাবী, কিয়ামুল লাইল আর পরপর নামাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময় কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে ভাই ঈদ কবে হবে, তখন প্রশ্নকারীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষন - রমাদান শেষ হয়নি এখনই ঈদ নিয়ে চিন্তার সময় কই? সত্য কথা বলতে কি, ঈদের ভাবনা আসলে মনে একটা কষ্ট তৈরী করে - বিশেষ করে যখন মনে হয় একটা বিশেষ মাস শেষের দিকে চলে আসছে - আগামী রমাদান পর্যণ্ত হয়তো বেঁচে থাকবো না - আমি কি পারলাম পরম করুনাময়ের রহমত আর মাগফেরাত অর্জন করতে। যাই হোক ,তারপরও ঈদ আসবে, ঈদের দিনটা চমৎকারভাবে কাঁটানো একটা চিন্তাতো থাকেই। ছোট কালে ঈদকে আনন্দমুখর করার দায়িত্ব ছিলো সর্বসাধারনের - এখন সেই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে লেখকরা - যারা অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে ঈদ সংখ্যার ম্যাগসাইজ লেখাগুলো লেখেন, কিছুটা দায়িত্ব নিয়েছে ফ্যাশন ডিজাইনারা - নিত্যনতুন ফ্যাশান আর নামের বাহারের পোষাক বাজারে আনছেন আর আছে টিভি চ্যানেলগুলো - যারা রমাদানের কথা ভুলে গিয়ে ঈদের অনুষ্টান বানাচ্ছেন - সুতরাং আমাদের শুধু দরকার কিছু সময় আর অর্থ - যা ব্যয় করে ঈদের একটা প্যাকেজ আনন্দ কিনে ফেলা যায় সহজেই।

আমার জন্ম একটা দরিদ্র পরিবারের বড় হয়েছি - সেই কারনে ঈদের মুল আনন্দ ছিলো উন্নত মানের খাবারগুলো। আমাদের মতো পরিবারের শুধুমাত্র মেহমান আসলেই পোলাও কোর্মা রান্না হতো - আর যদি মেহমান ভোজনরসিক হতো - তাহলে শুধু ঘ্রানে অর্ধ ভোজনেই আমার তৃপ্ত থাকতে হতো। সেই বিবেচনায় ঈদের দিনটা রান্না হতো আমাদের জন্যেই - মন ভরে পেট পুরে খাও - সাথে সেমাই এর সংযোগ ঈদকে স্বপ্নীল আনন্দে ভরে দিতে। তার উপরে যদি কোন বছর নতুন কাপড় পেয়ে যেতাম - সেই ঈদের আনন্দ স্বর্নাক্ষরে লেখার মতোই হয়ে উঠতো।

বড় হয়ে উঠার সাথে সাথে ঈদের আনন্দ অনেকটা ফিকে হয়ে গেলো - দারিদ্রতা দুর হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে খাবারের আনন্দ আর রইল না - আর পোষাক তো নিত্যদিনের সরবরাহের বিষয়ে পরিনত হওয়ায় ঈদকে আনন্দময় করতে মুলত প্রতিযোগীতার দিকে যেতে হতো - কে কত দামী পোষাক কিনলাম - আর কারটা কত ভাল স্টাইল - তারই প্রদর্শনী হয়ে উঠলো ঈদ। এক সময় এই প্রতিযোগীতার আনন্দও ফিকে হয়ে আসলো। এক সময় ঈদকে বিরক্তিকর বিষয় মতো হতো।

পরে যখন ধর্মকর্মের দিকে মন দিলাম - তখন ঈদ হয়ে উঠলো নতুন একটা আনন্দের দিন। সেই আনন্দ সম্পূর্ন ভিন্ন আনন্দ। রমাদানের সিয়াম শেষে ঈদের দিন ভোরে যখন মনে হয় আমি শেষ করতে পেরেছি একটা মাস - যা ছিলো সম্পূর্ন আমার স্রষ্টার জন্যে নিবেদিত - যেখানে ছিলো না কোন প্রতিবন্ধকতা - সরাসরি আমি ছিলাম আমার প্রতিপালকের অনুগত। ঈদের দিন মনটা ভরে উঠে এই ভেবে - আজ আমার আনন্দের দিন - কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন - কারন মহান প্রতিপালকের কাছে পুরষ্কারের আশায় দাড়ানোর দিন।

এখন ঈদ মুলত অন্যের আনন্দের বিষয়টাই বেশী গুরুত্বপূর্ন হয়ে আসে। প্রথমত দেখি দেশে থাকা আত্নীয়স্বজনরা কিভাবে ঈদ করছেন - তাদের ঈদের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করা যায় কি না - তাদের আনন্দের ভাগ পাওয়া যায় কিনা। তারপর প্রচেষ্টা থাকে বাচ্চাদের সাথে ঈদকে আনন্দময় করা। সাম্প্রতিক টরন্টোর বাঙালীপাড়ায় খোলা মাঠে ঈদের জামাতের আয়োজন করছে একটা গ্রুপ - এই আয়োজন ঈদের দিনকে আরো বেশী তাৎপর্যময় করে তুলছে। তবে প্রায়শই ভিন্ন ভিন্ন মসজিদ ভিন্ন দিনে দিন পালন করায় বন্ধুবান্ধবের মাঝে ঈদের দিন নিয়ে সমস্যা হয় - তা অবশ্য ঈদের আনন্দ খবি একটা কমাতে পারে না।

ঈদের দিনটাতে সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে তাদের যারা গত বছরও ছিলেন আমাদের সাথে - কিন্তু এই বছর নেই। এইটাই নিয়ম - হয় তো আগামী ঈদে আমিও থাকবো না। সেই চিন্তা থেকে আল্লাহ তালার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই - এখনও আমি আমার স্বজন আর বন্ধুদের মাঝে ঈদের দিনটা উপভোগ করতে পারছি।



*** ব্লগার আমিনুর রহমান ***

আমিনুর রহমান ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন তার ঈদ নিয়ে আলাদা করে কোন ভাবনা নেই। সারাটা বছর নানান কাজের ব্যাস্ততায় কাটে তাই ঈদের এই ছুটির দিনটিতে তিনি সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিবেন। তবে তিনি সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

তবে তিনি ঈদ ভাবনা নিয়ে আরও কিছু ব্লগারদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকছেন যার আপডেট পাওয়া যাবে নিচের লিঙ্কটিতে

এবারের ঈদ যেন হয়ে উঠে সকলের জন্য আনন্দের...



*** ব্লগার ধীবর ***

রাজনৈতিক বিষয়ে ব্লগার পরিচিতি থাকলেও, খাদক বলেই বেশি পরিচিত বলে মনে করি নিজেকে। তাই ঈদের ঠিক আগের রাত থেকেই পরদিনের ভুড়িভোজনের দিকে মাথা কাজ করে বেশি। তবে এক মাসের সংযমের পর চোখের তুলনায় পেটের খিদে মিটে যায় বলে, প্রতি বছরই আক্ষেপে ভুগতে হয়। তবে চাঁদ রাত্রিটাই আমার কাছে সারা বছরের সব রাতের চাইতে বেশি মোহনীয় লাগে। ছিটেফোটা যা রোমান্টিসিজম আমার মধ্যে আছে, এই রাতেই সেটা প্রস্ফুটিত হয়। আর ঈদের নামাজ শেষ হবার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ঈদের আমেজ শেষ হয়ে যায় আমার। গত নম্ভেবরে আমার বাবা ইন্তেকাল করেছেন। তাই এই বছর শ্রেফ সামাজিকতার জন্য ন্যূনতম যতটুকু দরকার, তার বেশি কিছু করা হবে না। ঈদ মোবারক সবাইকে।



*** ব্লগার নিমচাঁদ ***

খুব ব্যক্তিগত একটা বিষয় শেয়ার করবো ।ঈদ আনন্দের দিন , খুশীর দিন এই দিনে সবাইকে খুশী রাখতে হয়।কান্ডারী অথর্ব যখন বলল ঈদের ভাবনা লিখে দিতে , আমি হঠাত ই ভাবলাম জুলাই মাসের ৪ তারিখ থেকে যে কাহিনীটা অনলাইনের কারো সাথে শেয়ার করতে পারি নাই, সেটা নিয়েই কিছু লিখি। মাসুম আমার অফিসের হিসাব রক্ষক।জুলাই মাসের ৪ তারিখে আমি যখন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসের বাজি ফুটানো দেখছি, সেই সময় ঢাকার বনশ্রীতে তার বউ বাসার সুয়ারেজের জমানো গ্যাসের আগুনে ভীষণভাবে অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে।বাসায় কারেন্ট ছিলো না , সুয়ারেজের বিষাক্ত গ্যাস লিক করে বাথরুমে ঢুকেছিলো, আর তার বউ পুড়ে গেলো মোমবাতির আগুনের উৎসে।৪৫% বার্ণ এবং ঢাকা মেডিক্যালে সাধারণ ward এ ভর্তি কিন্তু আই সি ইউ তে জায়গা হচ্ছিলো না।এই সময় আমি খবর পেলাম এবং সকল যোগাযোগের চূড়ান্ত সীমানায় পৌছে সামন্ত লাল সেনের কাছে পৌছালাম এবং মাসুমের বউকে ভর্তি করতে পারলাম ।সে এখনও বেচেঁ আছে , তবে শ্বাস নালী পুড়ে গেছে, আগুন ইনহেল করার কারনে। ভদ্রমহিলা সেন্ট্রাল কলেজের শিক্ষিকা এবং ফুটফুটে এক ছেলের মা ।মাসুমের ভাগ্য ভালো সে তার অফিসের ৫ জন মালিকের কাছ থেকে সব ধরনের সহায়তা পাচ্ছে এবং ঈদের দিনও পাবে। আমি খুব একটা পুণ্যবান মানুষ নই, কেনো জানি না , আমি নির্মমতা , ভাগ্যের পরিহাস এই সব জিনিস সহ্য করতে পারি না। মাসুমের বউকে ঈদের দিন দেখা আসাটা , তার পাশে বসে তাকে কিছুটা সময় দিয়েই ,আমার এই ঈদ কাটবে।এই ছাড়া আমার আর বিশেষ কোন কাজ নেই ।তার পর অবশ্য প্রথামাফিক আজিমপুর কবরস্থানে যেতে হবে , সব ঈদেই যাই , যেখানে আমার আত্মজ চিরদিনের মতোন ঘুমিয়ে আছে ।



*** ব্লগার ত্রিশোনকু ***

সারা জীবন আমার ঈদ ভাবনা একটাই-তিতাসের পাড়ের আমার গ্রামটিতে ঈদ করা। আমার নানার বাড়িটিও ছিল আরেকটি নদীর পাড়ে-যমুনার। গ্রামের নাম ছিল তারাকান্দি। সে গ্রামটি যমুনা গর্ভে বিলিন হয়েছে আমারো জন্মের আগে। নানা বাড়িত গ্রামে ঈদ করা আর সম্বব ছিল না। ছোট বেলায় ঈদের ছুটিল বেজায় লম্বা। এক মাসেরও বেশী দেখা। ছুটি শুরু হবার অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হত তাদের ছুটি কাটানর সরব সব পরিকল্পনা। বালি হাসের ডিম চুরি করে এনে কিভাবে তা ধান সেদ্ধর হাড়িতে সেদ্ধ করে মজা করে খাবে। লম্বা সরু বাশের আগায় জিহবার আঠা লাগিয়ে তা দিয়ে ফড়িং ধরবে। সাঝ রাতে গ্রামের সব খেজুরের রসের হাড়ি খালি করবে। বড়দের সাথে ঈদের দুদিন আগে গ্রামের দুস্থদের কিভাবে সাহায্য করবে। বকের বাসা, ঘুঘুর বাসা থেকে কিভাবে বাচ্চা নিয়ে এসে পালা। ফাঁদ পেতে কিভাবে কাইম আর ডাহুক ধরবে। আমি হা করে শুনতাম। কখনোই ওদের কথায় অংশ নিতে পারতাম না। আমার কাছে তা ছিল রূপকথা। রাতে স্বপ্ন দেখতাম। ডাহুক ধরেছি ফাঁদ পেতে। আমার বড় চাচা বাবার চেয়ে উনিশ বছরের বড় ছিলেন। দাদা গত হন বাবা যখন সপ্তম শ্রেণীতে। বার চাচার শখ ছিল ডাক্তার হবার। ঢাকায় তখন কোন মেডিকেল কলেজ ছিল না। তিনি ঢাকা ইউনিতে বায়ো কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন। সম্ভবত তখন সেটা এপ্লায়েড কেমিস্ট্রি নাম ছিল। চাচা মাস্টার্স যে বছর শেষ করেন সে বছরই ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচ নেয়া হয়। তিনি ডাক্তারীতে ভর্তি হন। ডাক্তারী পাশ করে চাচা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে পশার জমিয়ে ফেলেন অতি অল্প দিনেই। একটা জমিও কেনেন ওখানে। একদিন তিনি দাদীকে বলেন যে গ্রামের ভিটার ওপর কাঠের বাড়িটি উনি শহরে অনার কেনা জমিটিতে উঠিয়ে নিয়ে স্থাপন করবেন। দাদীর সাফ জবাব তা বাবা তুমি যাই করোনাকেন আমি আমার স্বামীর ভিটা ছেড়ে কক্ষণো যাবো না কোথাও।

সে দিন গ্রামের ভিটা ঠকে চাচার শহরের জমিতে বাড়িটি উঠিয়ে নেয়া হয়, তার আগের রাতে দাদী মারা যান। এ সমস্ত ঘটনা আমার জন্মের আগের। আমার না আছে নানানাড়ি তারাকান্দি আর না আছে দাদা বাড়ি শাহবাজপুর। সারা জীবন আমি নিরানন্দ নাগরিক ঈদ করে এসেছি। নানা বাড়িত গ্রামে ঈদ করা আর সম্বব ছিল না। ছোট বেলায় ঈদের ছুটিল বেজায় লম্বা। এক মাসেরও বেশী।

আমার খুব সাধ যে শাহবাজপুর মির্দা বাড়িত ভিটিতে আমি একটা ছোট বাড়ি বানাবো যেখানে আমি আমার ঈদগুলো কাটাবো সারা জীবন।



*** ব্লগার জুল ভার্ন ***

প্রিয় কান্ডারী, আমি আজই সিংগাপুর থেকে চিকিতসা শেষে ফিরেছি। একটা লেখা দিলাম-প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন করতে পারো নির্ধিধায়। শুভ কামনা।

ব্যাক্তি জীবনে আমি অনেকটাই একাকীত্ব প্রিয় মানুষ। আমার অন্যতম সুন্দর সময়টুকু হচ্ছে একা থাকা-তাইবলে আমি মোটেই নিঃসংগতা পছন্দ করিনা। তবে সেই ছেলে বেলা থেকেই ঈদ নিয়ে বাড়াবাড়ি রকম হৈ চৈ আমার ভাল লাগেনা বরং নানান কারনে আমার কাছে অনেকটাই বিরক্তিকর দিন হচ্ছে ঈদের দিন।ঈদের দিন ঈদের নামাজ শেষে বাকিটা সময় আমার কাছে “ঘুম দিবস”!

বর্তমানে ঈদ উতসব মিডিয়া রিপ্রেজেন্টেশন নির্ভর হয়ে পরেছে।এই উতসবে না আছে কোনো আন্তরিকতা, না আছে প্রানের স্পন্দণ। এখন ঈদ মানেই একশ্রেনীর মানুষের জৌলুশ প্রদর্শন। প্রাগাধুনিক কালে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধর্মীয় উতসব পালনে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করত, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের রীতিনীতি ও আচার সংস্কারের ছক বেঁধে দিতো। আর এখন সেই স্থান দখল করে নিয়েছে মিডিয়া। মধ্যযুগের সমাজে ধর্মের যে দাপট ছিল আজ সেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে মিডিয়ার হাতে। আমাদের চলন-বলন সবই নির্ধারিত হচ্ছে মিডিয়া মারফতে, এমনকি ধর্মের বিশ্বাসও এখন মিডিয়া নির্মিত। মিডিয়া আজ সর্বত্র, সর্বব্যাপী। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিডিয়া প্রবল প্রতাপে বিবর্তমান আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক চর্চাগুলোর ভিতর মধ্যস্থতায় লিপ্ত হয়েছে, ব্যক্তিক ও সামষ্টিক পরিচয় নির্মাণ করছে এবং আমাদের যাপিতব্য জীবনের নকশা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে আজ ঈদ উতসবও মিডিয়ার জলসিঞ্চনে সিক্ত। বস্তুত বলা চলে, আজ মিডিয়া নির্মিত প্রতীক ও ইমেজের মধ্যস্থতায় আমরা স্বার্বজনী্ন ঈদ উতসবকে ইলেক্ট্রনিকস বেড়াজালে আবদ্ধ করে রেখেছি-যেখানে শুধুই রংগের সমাহার, নেই অন্তরের নির্যাষ!

তবে পুরনো জামানার মানুষেরা নতুন যুগের মিডিয়া-সংস্কৃতির সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে। আর নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠছে মিডিয়া-সংস্কৃতির পেটের ভিতর থেকে, যাদের জীবনের ভাষা অর্থাত্ লাইফস্টাইল, হাঁটা-চলা-কথা বলা একেবারে আলাদা। ক্যারিয়ার, প্রফিট, উপভোগ, উদযাপন, গতি এদের অতি প্রিয় শব্দ। মিডিয়া থেকে এক মুহূর্তও এরা বিচ্ছিন্ন থাকতে জানে না-তাই ঈদের দিনে আন্তরিক কোলাকুলির যায়গায় এখন হাই-হ্যালো-হাই ফাইভে উন্নীত। মিডিয়া-ইন্ডাস্ট্রি নির্মিত এই সাংস্কৃতিক পরিসরের মানুষেরা এমন এক জীবনের স্বপ্নের হাতছানিতে প্রতিদিন আন্দোলিত হন যে জীবন শাহরুখ খানের, ঐশ্বরিয়া রাই-ক্যাটারিনা-কারিনায় বন্দী। বস্তুত এখন ইন্টারনেট-ফেসবুক-টুইটার ইত্যাদি নিত্যনতুন সব প্লাটফর্ম আমাদের ভার্চুয়াল জগতের নেশাতুর-সেখানে ঈদ কোথায়!
কালের পরিক্রমায় এত সুন্দর একটি ঐতিহ্যও আজ কর্পোরেটের কবলে পতিত।

সবার জন্য ঈদ শুভেচ্ছা।



*** ব্লগার রেজোওয়ানা ***

'ঈদের দিন কি করবেন'....এই প্রশ্নটা শুনলে নিজেকে কেমন জানি সেলিব্রেটি সেলিব্রেটি লাগে......হি হি হা হা হে হে!

ঈদের যে জিনিসটার জন্য অপেক্ষা করি সেটা হলো ঈদের আগের রাতে সোহার বাবা আমি, সোহা আর ওর সব ভাগ্নিদের হাতে মেহেদি পড়িয়ে দেয়। প্রতি ঈদের আগের রাতে তাই খুব এটা নিয়ে খুব মজা হয় বাসায়, সবাই চলে আমাদের বাসার। ঈদের দিনটির জন্য আসলে তেমন নির্দিষ্ট কোন প্লান থাকে না, তবে ঈদের নামাজ শেষ হলে আমার শাশ্বুড়ি মা'কে সলাম করতে যাই, এটা মাস্ট! উনি সেই বিয়ের পর থেকেই সালামি হিসেবে আমাকে একটা পাঁচ টাকার নতুন নোট দেন, আমি এই বিষয়টা খুব এনজয় করি। সালাম পর্ব শেষে আবার বাসায় ফিরে আসি, বিকেল পর্যন্ত বাসাতেই থাকি। সুতরাং কেউ আমার বাসায় আসতে চাইলে চলে আসতে পারেন এই সময়ে । আর আমি রান্না করতে খুব পছন্দ করি, প্রথাগত রান্না না, একটু ভিন্নধরনের কিছু। এবার হায়দারাবাদি বিরিয়ানি, হাঁসের রোস্ট করবো আর ছানার পায়েস এবং ছানার পোলাও। আর অন্য সব ফরমাল খাবার তো থাকবেই। এই তো আমার ঈদ, সাধারণ মানুষের সাধারণ ঈদ তবুও অনেক আনন্দের। সবাই কে ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।



*** ব্লগার জুন ***

ঈদ আমার জন্য একদিকে খুশি আরেকদিকে মন খারাপ নিয়ে আসছে। ভেবেছিলাম এই অসুস্থ অবস্থায় ও গিয়ে ছেলের জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনবো আড়ং থেকে। এক জন যাচ্ছে তার হাতে দেব। কিন্ত ছেলে আমার তখন জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটিতে একটা ওয়ার্কশপে যোগ দিতে জাপান থাকবে । ব্যাংককএ নিজের ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে ১৫ দিন পর ১৪ই অগাস্ট।ঈদের শেষ।এমনিতে বিদেশ বিভুইতে ইদের আমেজ একদিনই থাকে কান্ডারী। আর জানোতো সন্তান হবার পর বাবা মা দুজনেরই ঈদ ঘিরে থাকে তাদের নিয়ে। ঈদ আসলেই আম্মু আমার বন্ধুদের কিন্ত দাওয়াত দিয়েছি ঈদের পরদিন। এটা রান্না করবে ওটা রান্না করবে। মজা যেন হয়।রান্নার সময় একশবার উকি ঝুকি। আজ আমরা টোনাটুনি দুজন চুপচাপ ঘরে বসে থাকি গত দুই ঈদ থেকে। শুধু বাসার সিকিউরিটি গার্ড দুজনের জন্য একটু পোলাও কোর্মা সেমাই রান্না করি এটা আমার স্বামির অনুরোধে। নিজের কিছু মুখে দিতে আমার ইচ্ছেই করে না। সুতরাং ঈদে আমাকে নিয়ে আর কি লিখবে বলো? ইন্ডিয়া থেকে অনেকগুলো থ্রি পিস আর শাড়ি কিনেছিলাম। অম্নি বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে। না থ্রি পীস সেলাই হয়েছে না শাড়ির ব্লাউজ ফলস লাগানো।ঈদ আর আমার কাছে তেমন আনন্দ নিয়ে আসে কই? তুমি আর কাউকে বেছে নাও যে হয়তো অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবে। আমি আগেই জানিয়েদিলাম আমার ব্যার্থতার কথা। নাহলে হয়তো তুমি আমার লেখার জন্য অপেক্ষা করবে কান্ডারী। অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার কথা মনে করার জন্য। ভালো থেকো বাসার সবাইকে নিয়ে।



*** ব্লগার প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার ***

ঈদ, ঈদের মাহাত্ম্যের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ভিতরে মুসলিম ভাতৃত্ববোধ, ধনী গরিবের সাম্যতার যে সব গল্প বলা হয় সেসব বাস্তবিক অর্থেই পরীক্ষার খাতা আর পত্রিকার জ্ঞানগর্ভ কলামে সীমাবদ্ধ। আমাদের শহরে একপাশে সীমানহীন জৌলুসতা, আরেকপাশে মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়ন আর নিম্নবিত্ত পরিবারে রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার দীর্ঘশ্বাস! তবে এটা সত্য বছরের দুইটা ঈদ সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীতেই আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসে, কোথাও ছোট ছোট সুখ আর আনন্দ, কোথাও ঝলমলে বিলাসিতা- বাস্তবিক অর্থে আনন্দেও শ্রেণী বৈষম্য!

সময়ের বিবর্তনের সাথে, আমাদের মনোটোনাস জীবন, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা সবমিলিয়ে ঈদের আনন্দের কোমল পেলবতা থেকে এখন কেমন পেশাদারি আনন্দ চলে এসেছে, সেই ছোটবেলার আনন্দ কই? ঈদের স্মৃতি রোমন্থন করতে গেলেই মনে পড়ে শৈশবের কথা, হাড়কাপানো শীতের সকালে গোসল করে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে মায়ের হাতের সেমাই খাওয়া, পিঠা খাওয়া, নতুন পায়জামা পাঞ্জাবি পড়ে বাবা-মা, চাচাচাচীদের সালাম করে সালামী বুঝে নেওয়া, কানে আতরসমৃদ্ধ তুলো গুজে নেওয়া – এসব কি গভীর আনন্দে আঁচড় কেটে যায় স্মৃতির ভেতর। তারপর গ্রামের মানুষের ভিড়ে কুয়াশাপূর্ণ ঈদগাহতে খুতবা শুনা, নামাজ শেষে অতীব আনন্দের শেষে বড় ছোট নির্বিশেষে কুলাকুলি করা, ঈদ্গাহ এড় পাশেই ক্ষণস্থায়ী ঈদমেলা, মেলা থেকে বন্দুক, কাঠের তলোয়ার কিনে টিপু সুলতান ভাব ধরতে ধরতে বাড়ি ফিরে আসা- আহ! এইসব স্মৃতি আজ বড় দীর্ঘশ্বাস।

এখনকার ঈদ মানে নাগরিক ব্যস্ততার মাঝে একটুখানি অবসর, ঘুম আর টিভি দেখে কাটানো, বড় হয়ে গেছি বলে হয়ত ভুলে গেছি আনন্দগ্রাম, ভুলে গেছি ঈদেরদিনের উচ্ছ্বাসঘ্রাণ! সময়ের সাথে তথাকথিত ব্যক্তিগত সাফল্য এবং তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগসূবিধার মহাসড়ক যেমন সম্প্রসারিত হছে তেমন করে ব্যাস্তানুপাতিক হারে সঙ্কুচিত হচ্ছে সুখানুভূতির শিরা-উপশিরা। তবুও আমরা হাসি, শহরের ব্যস্ততা পেরিয়ে গ্রামে, মফস্বলে মা-বাবার কাছে ফিরে যাই, আমাদের শেষ আশ্রয়, সর্ববেশ আনন্দ!

সবাইকে ঈদ মোবারাক !



*** ব্লগার তন্ময় ফেরদৌস ***

ঈদ ব্যাপারটা আমার কাছে একটু অন্যরকম। ঈদের দিনটা আসলে কিছুটা সিম্বলিক। নিজের ছোটবেলা বড়বেলা আলাদা করার একটা মাপকাঠি বলতে পারেন। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। নতুন জামা, বিশাল গেটটুগেদার, ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি, সালামী...ফ্রেন্ডের মায়ের হাতের সেমাই, পকেটে কচকচে নতুন টাকা নিয়ে ভাব দেখানো। হায় !! ছোটবেলার মত আর ঈদ করতে পারিনা। এখন আমি বড়দের মত ঈদ করি। কিন্ত ব্যাপারটা আসলে তেমন একটা সুখকর না। ঈদের আনন্দটা সোশ্যাল ফরমালিটির কাছে কেমন যেন ম্লান হয়ে যায়। গত বেশ কজ বছর ধরে আমার এক ঈদ একরকম যাচ্ছে। কোন ঠিক ঠিকানা নাই। গতবার ঈদ কাটালাম একা একা। আম্মু আব্বু ভাই বোন গুষ্টিশুদ্ধ হজ্বে। এর আগের বার সবাই গেলো গ্রামের বাড়িতে, আর আমি ঢাকায়। তার আগের বার ... এইবার সবার সাথে ঈদ করছি। দেখি, সকালে ঊঠে নামাজটা পরবো। অনেক দিন অভ্যাস নাই। ঈদের নামাযের নিয়ত টা আম্মুর কাছ থেকে মনে করে নিতে হবে। বাসায় এসে কিছু খেয়ে বহু পুরাতন আবাস কলোনীতে একটু ঘুরে আসবো। সেই সাথে কিছু স্কুল বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটাবো। নষ্টালজিক হবো। দুপুরে বাসায় ফিরে কিছু খেয়ে বের হবো তাকে নিয়ে। লাগামছাড়া কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করবো। যে দিকে খুশি গাড়ি ছুটাবো। বিকালে গণহারে সব ফ্রেন্ডরা মিলে রাইফেল স্কয়ার, বেলী রোড আর বনানী ১১ তে থাকবো। রাতে পার্টি শেষ করে লেট নাইটে ঘরে ফিরবো। বলা যায় ফ্রেন্ডস, গার্লফ্রেন্ড আর কিছুটা ফ্যামিলি কেন্দ্রিক ঈদ হবে। আত্মীয় সজনের বাসায় যাওয়ার কোন ইচ্ছা আপাতত নাই। একটা সিক্রেট শেয়ার করি। এই ঈদে কিছুটা চাইল্ডিস্ট আর একটু উগ্র হতে ইচ্ছা করছে। আবার যদি পুরাতন আমিকে খুঁজে পাওয়া যায়, এই আরকি। তবে মনে হয় পারবো না। আমরা না বড় হয়ে গেছি ? আচ্ছা, আপনাদের ইচ্ছা করেনা ছোটবেলায় নিষ্পাপ ঈদের আনন্দটা আবার পেতে ? সবাইকে ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।



*** ব্লগার নোমান নমি ***

ঈদ গ্রামে করি। তবে আমার কাছে ঈদের মজা আসলে ঈদের আগের রাতে। পুরো এক বছর পর গ্রামের বন্ধুদের সাথে দেখা হয়,এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গার সব বন্ধুরাও তখন গ্রামে চলে আসে। এরকম এক চাঁন রাতে,সব বন্ধু বান্ধব গ্রামে হাজির। সারারাত ব্যাপী চলবে ডাব চুরি।হঠাৎ জানতে পারলাম এলাকায় এক ভদ্রলোক হঠাৎ বেশ টাকা পয়সা কামিয়েছেন এবং নিজের বাড়ীর নাম রেখেছেন “ইঞ্জিনিয়ার বাড়ী”। ছেলেপেলের যৌক্তিক দাবি খাওয়া দাওয়া মেজবান ছাড়া কোন ভাবেই এই পরিবর্তন তারা মানে না। তাদের দাবি জিয়া বিমান বন্দরের নাম চেঞ্জ করতে অনেক টাকা লেগেছে। আর এই ভদ্রলোক কেবল একটা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিবে তা হবে না! অতএব আজ রাতেই কিছু একটা করতে হবে। এক বন্ধুর আবার বিশেষ জ্বলুনি ছিলো সে বাড়ীর প্রতি। সে বাড়ীর মেয়ে দ্বারা ছ্যাকান্বিত হয়েছে।প্রাথমিক আলোচনায় সিদ্ধান্ত হলো তাদের বাড়ীর সাইনবোর্ড তুলে ফেলে দেয়া হবে। কনকনে শীতে হ্যাইয়ো হ্যাইয়ো বলে সাইনবোর্ড তোলা হলো। তখন রাত তিনটারও বেশী।হুট করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সাইনবোর্ড একটা বড় পুকুরের মাঝখানে রেখে আসার সিদ্ধান্ত হলো। শীতকাল,পুকুরে পানি কম। কনকনে শীতের মধ্যে গ্রামের সবচে বড় পুকুরের মাঝখানে রেখে আসা হলো ইঞ্জিনয়ার বাড়ীর সাইনবোর্ড। পরদিন টক অব দ্যা ভিলেজ ছিলো এটা। এবং খুব খেয়াল করে দেখলাম বেশীর ভাগ মানুষ খুব খুশি!



*** ব্লগার মোস্তফা কামাল পলাশ ***

নীচের লিঙ্কটিতে দেখুনঃ

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ স্পন্সর দরকার


প্রবাস জীবনের ঈদ গুলো ঠিক ঈদ মনে হয় না আমার কাছে। আরও যদি সেই ঈদ হয় কোন কর্ম দিবসে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পাবলিক বসে করে শহরের একমাত্র ঈদের নামাজ পড়ার স্থান একটা ইনডোর ফুটবল খেলার মাঠে গিয়ে নামাজ পড়া। সেখান থেকে বাসায় ফিরে মা-বাবা, ভাই-বোনের সাথে ঘণ্টা খানেক কথা বলে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া।

আমরা প্রবাসীরা বিশেষ করে যারা ইউরোপ, কানাডা ও আমেরিকায় থাকি তাদেরকে ঈদ উদযাপন করার জন্য অপেক্ষা করতে হয় পরবর্তী শনি/রবিবার পর্যন্ত। আমাদের কাছে ঈদ আনন্দ হলো ঠিক যেন টেলিফোনের মাধ্যমে বিয়ের মত। বিয়ে হয়েছে এখন অপেক্ষা কবে বাসর রাতে বিড়াল মারব।

তবে এবারে আমার ঈদটা কাটবে একটু ভিন্ন ভাবে। কিছুদিন পূর্বে আম্মাকে কথা দিয়েছিলাম যে এবারের ঈদে গ্রামের ২০/৩০ জন গরিব মানুষকে শাড়ি ও লুঙ্গি কিনে দেব। কিন্তু রমজান শুরু হবার পড়ে মনে হল এর চেয়ে বেশি মানুষকে খুশি করা সম্ভব কি না?

অনেক ভেবে চিন্তে ছোটভাইকে বললাম তার ডাক্তার দুই বন্ধু ও এক মামাত ভাইয়ে সাথে কথা বলার জন্য যে আমাদের এলাকায় ঈদের ১ দিন পরে একটা ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন করতে চাই তারা সাহায্য করবে কি না? আমাকে অবাক করে দিয়ে তাদের সকলেই রাজি হয়েছে।

তাই এবারে ঈদের পূর্বের কয়েক দিন সহ ঈদের পরের ২ দিন মনের ভিতরের একটাই ভাবনা কিভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক দুস্থ মানুষকে বিনে পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্হা করা যায়, সেই সাথে যথা সম্ভব ফ্রি ঔষধের ব্যবস্হা। আপনারা সকলেই দোয়া করবেন যেন আমাদের উদ্যোগটি সফল হয়।



*** ব্লগার আলাউদ্দিন আহমেদ সরকার ***

আজ দুপুরে কান্ডারী অর্থব ভাই বললেন ঈদ ভাবণা নিয়ে কিছু লিখতে! কলম হাতে নেই না অনেকদিন। সেখানে ঈদ ভাবণা নিয়ে লিখবো সে তো আরো বেশি কঠিন মনে হলো আমার কাছে! আর তখনই এই কবিতা এলো! আর তাই এই কবিতা কান্ডারী ভাইয়ের।

বেলাশেষের ঐকতান

মেঘজল চেয়ে অবিরাম তাকিয়ে আছি আকাশপানে
আজ ঊনআশি কিংবা সাতাশি দিন
সময়ের বড্ড স্রোত, মিনিটের কাঁটা অবিরাম ঘোরে
ঘন্টার কাঁটা মধ্যাহ্নভোজের তক্ষকসুর বাজিয়ে
দাপিয়ে বেড়ায় ক্ষুধার হাঁটে!

মন হারানো পথে কত মাইল বেগে
ছুটে গিয়েছি, হারিয়ে এসেছি সেই পুরনো বাঁকে
কালাকেশের সেই সিঁথি রামধনুর যার স্মৃতি
বরিষণ জাতক মন চাতক হয়ে ঘুরে বেড়ায়
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি টুপটাপ বৃষ্টির আশায়!

শান্ত সৌম্য অখেয়ালি বালক বসে আছে
সেই ফিনিক্স পাখির আশায় যার ঠোঁটে থাকবে
প্রতীক্ষার প্রহর শেষের গান!
ঘোর লাগা সন্ধ্যায় রক্তের দাগ আকাশে
বাতাসে ঘূর্ণি; শার্সিতে প্রানের স্পন্দন!

আজ ঊনআশি কিংবা সাতাশি দিন
না হিসেবের খাতায় ঊনপাজুরে খতিয়ান
প্রানের স্পন্দন তবু জাগে না প্রান
অঘ্রাণের শেষে নবান্নের আয়োজনে
কলমীলতা মেয়ে; ছলছল অভিমান!

তির তির করে করে কাঁপে
খামখেয়ালি এলোমেলো সব ভাবণা
বরিষন জাতক মেঘের কোল ঘেষে
তীব্র হয়ে আসে শীত
বিগত অধ্যায়
রাত জাগা পখিদের পাখা ঝাপ্টানোয়
শীতের প্রকোপ
বেলাশেষের ঐকতান!




*** ব্লগার আরজুপনি ***

আমার মাথায়তো কিছুই আসে না পুরাই জ্যাম তবে শুধু এটুকু বলতে পারি যে, বেশ কিছু নতুন এবং অল্প পুরনো কিছু কাপড় নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রামের বাড়িতে যাব ওখান থেকে খোঁজ নিয়ে যাদের বেশি প্রয়োজন মনে হবে তাদেরকে দিয়ে আসবো। আপাতত ঈদ ভাবনা এই। এর বেশি আর তেমন কিছু নেই। আর প্রিয় মানুষগুলোর জন্যে বই উপহার চলছে।



*** ব্লগার সাবরিনা সিরাজী তিতির ***

ঈদ ! পিচ্চিবেলায় ভাবতাম ঈদ কেন মাত্র দুইবার । হিন্দু ধর্মে কি মজা । কতো পূজা হয় ! ( বাড়ির পাশেই মন্দির থাকার কারণে ওদের সব উৎসব দেখতাম ) । কতো রাতভর ওরা গান বাজনা করে ! আমাদের মাত্র দুইটা ঈদ । তখন তো এখনকার মত মোড়ে মোড়ে গান বাজাতো না ছেলেরা । মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে । সব কিছুতে ভীষণ হিসেব । রোজা না রাখলে বকা ! সেহরিতে গুঁড়া দুধ পেতাম ভাত খাবার জন্য । এটাই একমাত্র বিনোদন । ( আমি ঘুম থেকে উঠেই খেতে পারি না । কিন্তু সেহরিতে না খেলে রোজা রাখা কষ্ট । দুধের আশায় ভাত খেতাম । ) সারদিন বাধ্য করা হতো নামাজ পড়তে এবং কোরআন পড়তে । বাধ্য করলে আমার কিছুই ভালো লাগতো না । কিন্তু আম্মা , আব্বু এটা বুঝতেন না। কি আর করা ? তারপর ছিলো ছেলে মেয়ে বিদ্বেষ । এক ভাই এক বোন আমরা । কপাল গুণে আমি মেয়ে ! তাই মিনা কার্টুনের রাজুর মত সব ভালো কিছু আমার ভাইয়ের ভাগ্যে । ফালতু গেছে শৈশব । ক্লাস নাইনে ওঠার পর বন্ধুরা বাসায় এসে আমাকে ওদের সাথে নিয়ে যেতো । এটাই ছিল আমার আনন্দ । ওদের সাথে রিক্সায় ঘুরতাম । ওদের সাথে ওদের বাসায় যেতাম । ওদের আনন্দ দেখতাম । হিংসে হতো, কানা আসতো । মুখে ঝুলিয়ে রাখতাম হাসির মুখোশ ( এটা আমার বিরাট অস্ত্র ) । সবাই ভাবতো তিতির ! ও তো পৃথিবীর সবথেকে সুখি মেয়ে ! হা হা হা হা! তারপর বিয়ে হলো । আরেক জীবন । দায়িত্ব আর দায়িত্ব । খুব আগ্রহ নিয়ে ঢুকে গেলাম সংসারে । মাথায় সারাক্ষণ কাজ করতো কাকে কি করে সুখি করবো । শাশুড়ির জন্য নিজ হাতে শাড়ি কাজ করতাম , বরের জন্য নিজ হাতে পাঞ্জাবী । আমার হাতের রান্না ছাড়া কেউ খেতে পারে না । সব একা করতাম। কখনো এমন হয়েছে প্রায় সারাদিনে ২০০ লোক এসেছে । আমি ঈদের ড্রেস পরার ও সময় পাই নাই। গভীর রাতে মায়ের বাসায় গেছি ( এক পাড়ায় বাড়ি ) ।সালাম করেই দৌড় । আমার মা চোখের পানি ফেলতেন । বেচারি এই এক জিনিস পারেন । ঈদের পর তিন চার দিন ধরে চলে এক রকম। আমি সারামাস রোজা রেখে সবাইকে খুশি করার চেষ্টায় মত্ত থাকি । ঈদ কিভাবে চলে যায় টের পাই না। একরাশ ক্লান্তি আমাকে জানায় ঈদ শেষ । আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি । এখন হয়তো একটু রেস্ট । এখন মেয়েরা বড় হয়েছে । ওদের জন্য করি । ভালো লাগে । ওরা খুশি হয় । ওদের বন্ধুরা আসে । আমার রান্না খুব ভালোবাসে ওরা । এটাই আমার ঈদ । ওরা ভালো থাকুক । আমি আমার জীবন ওদের দিতে চাই না । ওরা বাঁচুক ওদের মত । সবার জন্য করুক । নিজের জন্য করুক । দিনশেষে কিছু প্রাপ্তি নিয়ে ঘুমোতে যাক । এটাই একমাত্র চাওয়া । আমি এসব লিখতে চাইনি । কান্ডারী অথর্ব লিখতে বলল । বললাম আমার ঈদ এমন। লিখব? মিথ্যে সুখ লিখতে ভালো লাগে না । ও বলল , লেখ । তাই লেখা । অনেকে আনন্দের পোস্ট দেবে । আমার এই লেখা সেগুলোর মধ্যে কাঁটার মত বিঁধে থাকবে । কিন্তু আমার কোন ঈদ নাই । আমার মেয়েদের ঈদ মানেই আমার ঈদ । ভালো থেকো সবাই । ঈদ মোবারক ।



*** ব্লগার স্বপ্নবাজ অভি ***

ঈদ নিয়ে আমার ভাবনা অনেক সহজ এবং সরল ! পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে মজা করাটাই সব সময় বুঝে থাকি ! বয়স যত বাড়ছে ঈদের মজা তত অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে ! ছোটবেলা থেকেই ঈদের দুদিন আগে চলে যাই সোজা গ্রামের বাড়ি , দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একান্নবর্তী পরিবার হিসেবে চাচারা দুদিন আগে থেকেই হাজির হত ! আব্বুরা চাচাত- জেঠাত মিলিয়ে মোট ৫১ জন , ৩০ জন তো থাকতোই ঈদের দিন ! এখন ১০ জন ও নেই ...সব বড় হয়ে গেছে , দেশের বাইরে ! ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি অনেক মজার ! তখন ক্লাস ৫ এ পড়ি , আম্মু আমাকে একটা রোজাও রাখতে দেয় নি ! আমার এক চাচা বিমান বাহিনীতে চাকুরীরত , ঈদের দিন এসে আমার দুঃখগাথা শুনে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা আম্মুর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো ! ঈদের দিন নামাজে যাবার আগেই পুরো বাড়ি পোষ্টারে ভর্তি , গাছে , দেয়ালে , জানালায় ... "স্বৈরাচারী আম্মু মানিনা ... আমার রোজা ফিরিয়ে দাও " ! হাহাহা ! তবে এখনকার ঈদ একটু অন্য রকম , ঈদের আগের দিন যাই , চাচারা অনেকেই নেই ! ঘরে বসেই কাটে , ঈদের দিন নামাজে যাবার আগে আমি আর আমার ক্লাস ৬ এ পড়া ছোট ভাই দাদী আর আম্মুকে সালাম করে , তারপর আব্বুর জীবিত চাচীদের সালাম , পুরো বাড়ীর সবাইকে সালাম করতেই আমার লাগে ৩০ মিনিট ! তারপর ঈদের নামাজ ! এই প্রথম আমরা নামাজে যাবো আমার দাদাকে ছাড়া !ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন জানি লাগছে ... নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারত্ , আব্বু , দাদাদের চোখে দেখতাম পানি , এবার সম্ভবত আমার চোখেও থাকবে ! তারপর বাড়ি গিয়ে হালকা একটু খেয়েদেয়ে সোজা কুমিল্লা শহরে , গ্রামের বাড়িতে এখন আর সময় কাটতে চায় না ! ওখানে ফ্রেন্ডরা মিলে সারাদিন ঘুরাঘুরি , তারপর রাতে কুমিল্লা শহরের ফ্ল্যাট শুধুই আমাদের , ইটস পার্টি টাইম , আম্মু তো গ্রামের বাড়িতে কে কি বলবে !আগে আমাদের গ্রামের বাড়ির ঈদ এতটাই জমাট হতো , ফুফুরাও চলে আসতো আঙ্কেলদের ফেলে ! কালের গহবরে হারিয়ে যাচ্ছে সে সব ! আর সালামীর কথা কি বলবো গত দুই ঈদে যা পাই তার দ্বিগুন দিতে হয় ~! দিয়ে আনন্দ পাবার বয়স টা বোধ হয় হয়েই গেলো ! সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছে।



*** ব্লগার *কুনোব্যাঙ* ***

এটা যখন লিখছি তখনও জানিনা ঈদের দিনটা কোথায় কাটাতে যাচ্ছি ঢাকা নাকি ঘাটাইল। ঘাটাইলে থাকলে ছেলেবেলার বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটাই আমার কাছে সবচাইতে গুরুত্বপুর্ণ এবং আনন্দের। আবার ঢাকা থাকলে এখানকার বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো এটাও একটা চমৎকার অনুভূতি। আসলে আমার জীবনটা অনেকাংশেই বন্ধু নির্ভর বলেই হয়তো বন্ধুদের কথা আগে চলে আসল। ঈদের যে জিনিষটা আমাকে সবচাইতে আবেগাপ্লুত করে সেটা হচ্ছে ঈদের নামাজের পর বা সারাদিন দেখা হওয়া মাত্রই সবার সাথে কোলাকুলি। কোন এক বিচিত্র কারণে ঈদের এই জিনিষটা আমার খুব ভালো লাগে।

যেখানেই থাকি ঈদের নামাজ পড়ে এসে আবার হালকা কিছু খেয়ে সবার আগে যে কাজটা করি সেটা হচ্ছে দুপুর পর্যন্ত ঘুম। কিন্তু ব্লগে আসার পর দেখতে পাচ্ছি ব্যাপারটার ব্যত্যয় ঘটছে। গত দুই ঈদের মত নামাজের পর থেকে দুপুর পর্যন্ত অনেকটা সময়ই মনেহয় প্রিয় সব ভার্চুয়াল সঙ্গীদের সাথে থাকতে মনিটরে চোখ রাখব। আর ঈদের সময়ে আমার সবচাইতে বড় কষ্টটা হচ্ছে আত্নীয় পরিজনদের বাড়ী ঈদের দাওয়াত খাওয়া। কি কারণে জানিনা, নিজের ঘর আর রেস্তোরা ছাড়া অন্য কোথাও খেতে আমার যথেষ্ট অনীহা এবং কারো বাড়ীতে বলতে গেলে আমি খেতেই যাইনা। কিন্তু ঈদের সময় এত বড় বড় ঢেঁকি গেলাটা ব্যাক্তিগতভাবে আমার কাছে দারুণ অসহ্য। টিভি আমি দেখিনা বললেই চলে কিন্তু কেন জানি ঈদের সময় চ্যানেলগুলোর ঈদ ঈদ আবহ আর নতুন নতুন বিজ্ঞাপন দেখতে বেশ ভালোই লাগে। তবে এবার আর সেটা হবে বলে মনে হয়না। কারণ সেই আরেকটা চতুষ্কোণ মনিটরে চোখ রাখা। তাই বলা যায় সব মিলিয়ে ঈদের বেশী সময়টা হয়তো ভার্চুয়াল সঙ্গীদের সাথেই কেটে যাবে। আর ঈদের খাওয়া দাওয়া। ঢাকা বা ঘাটাইল যেখানেই ঈদ করি মা'র আঁচল ধরেই করব যখন তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে মা'র হাতের মিষ্টান্ন পোলাও খেয়ে দিন কাটাতে। যদি না বাধ্যতামূলক ঢেঁকি গিলতে হয়।



*** ব্লগার চাঁপাডাঙার চান্দু ***

এই নিয়ে তৃতীয় বছরের মতো প্রবাসে ঈদ করছি। প্রবাসের ঈদটা সেই অর্থে কখনোই পূর্ণতা পায় না। ক্লাস, কাজ, পরীক্ষা সব কিছুই একই নিয়মে চলে। মায়ের হাতের সেমাই, বাবাকে সালাম করে নামাজে না গেলে বোধহয় ঈদটা অপূর্ণই থেকে যায়। তবুও বন্ধুরা মিলে টুকটাক একসাথে কিছু করার চেষ্টা করি। সবচেয়ে মজা লাগে নামাজ শেষে যখন দলবেঁধে পাঞ্জাবী পড়ে রাস্তায় নামি। স্থানীয়দের বিস্মিত দৃষ্টিটা উপভোগই করি। সবার জন্য সুন্দর সুস্থ ঈদ কামনা রইল। আর মুশাসির জন্য অনেক শুভকামনা রইল। এইবার তার পাশে দাঁড়াতে পারিনি, ভবিষ্যতে একদিন তার মহৎ কাজে শরীক হতে পারবো ইন শাআল্লাহ।



*** ব্লগার মনিরা সুলতানা ***

এই মুহূর্তে আমার ঈদ ভাবনার পুরটা জুড়ে আছে সামহোয়্যার ইন পরিবার এর সাথে আমার প্রথম ঈদ , পারিবারিক সকল কাজ এর মাঝে আমি অপেক্ষা করব ,আমার সহ ব্লগার দের সাথে ঈদ এর আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ।,এর পর এক্সসাইটেড আছি দেশ এ যাচ্ছি ঈদ করতে ইনশাআল্লাহ দুই এক দিন এর মাঝে সেটা নিয়ে । মা এর সাথে দেখা করে একদম গ্রামে চলে যাব , প্রতিবার এর মত । শপিং আমার কোন কালেই আগ্রহের তালিকাতে ছিল না , যথেষ্ট বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। এবার ও নাই । ছেলে কে ছেলের বাবা কে নামাযে পাঠিয়ে , সবার সাথে ঈদ এর রান্নায় যোগ দিব যেহেতু অনেক বড় পরিবার আমাদের , প্রতিবেলায় ৪০ জন এর রান্না হয় । সবাই মিলে মিশে ই করি । সারাজীবন আধা শহুরে জীবন কাটানো আমার কাছে এটা অনেখানি আনন্দের ব্যাপার । মাঝে মাঝে ব্লগিং ,ফোন এ কথা আর বিশেষ কারো কাছে থেকে কল এর অপেক্ষায় কেটে যাবে আমার ঈদ ।



*** ব্লগার একজন আরমান ***

আগে ঈদে অনেক মজা হতো। প্রতিবারই ঈদের ২/৩ দিন কাটানো হয় গৌরনদীতে। সেখানে এলাকার ভাই ব্রাদারদের সাথে আড্ডা দিতাম। এরপর কাজিনদের সাথে ঘুরতে যেতাম। ঈদের ২/৩ দিন পর যখন বরিশাল যেতাম তখন শুরু হতো স্কুল ফ্রেন্ডদের সাথে রেগুলার আড্ডাবাজি উইথ ঈদ ফ্লেভার কিন্তু গত ঈদ দুইটা আমার ঘুমের মাঝে কেটেছে। এইবার কেমন হবে তা জানি না। এর আগে প্রতিবার তো ঈদের প্রায় ২ সপ্তাহ আগে বরিশাল চলে যেতাম। কিন্তু এবার নতুন চাকরিতে জয়েন করলাম। ছুটি না পাওয়া পর্যন্ত আটকে গেছি।



*** ব্লগার কাল্পনিক_ভালোবাসা ***

প্রিয় কান্ডারী ভাই, আপনি যদি একান্তই আমার ঈদ ভাবনা জানতে চান তাহলে আমি বলব, ভাই, ঈদ নিয়ে আমার আপাতত তেমন কোন ভাবনা নেই। আগামী পাঁচ তারিখের মধ্যে ব্যবসায়িক বিল আদায় করতে হবে, বিল পরিশোধ করতে হবে, স্টাফদের স্যালারি ও বোনাস দিতে হবে। তাই এই নিয়ে অনেক ব্যস্ততার মাঝে সময় কাটাচ্ছি। আপাতত ঈদ ভাবনা বলতে, ব্যবসায়ীক লেনদেন কেই বুঝছি। দ্বিতীয়ত যদি বলেন ভাই ফরমাল কিছু বলেন, তাহলে বলব, সবার জীবনে ঈদ বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি, আনন্দ এবং সাম্যবস্থা। ধনী, দরিদ্র, উচু, নিচু ইত্যাদি সামাজিক সকল বাঁধা পেরিয়ে ঈদ হোক সার্বজনীন। তৃতীয়ত, ঈদ মানে আমার জন্য কিছু সুন্দর ছুটির দিন। দেরী করে ঘুম থেকে উঠে টিভি দেখা। ভালো কিছু অনুষ্ঠান দেখতে চাই। ও হ্যাঁ "ভাবনা" নামে আমার জনৈক এক বান্ধবী ছিল, দেখি সময় সুযোগ করতে পারলে না হয় ভাবনাকে নিয়েই ভাবা যাবে। আপনার জন্য ঈদের অনেক শুভেচ্ছা!!!



*** ব্লগার মাক্স ***

ঈদ নিয়ে ভাবলেই আমার চোখের সামনে একটা ছবি ভেসে উঠে এবং একটা ঘটনা। অতি অবশ্যই পিচ্চিকালের! চার কি পাঁচ বছর বয়েসি এক বালক। স্কুলে ভর্তি হয়নি এখনো, তবে ভর্তির পায়তারা চলছে। এই শীতেই তাকে স্কুলে ভর্তি করানো হবে। ব্যাপারটা নিয়ে সে শঙ্কিত তবে আজকের শঙ্কার কারণ ভিন্ন। গ্রামের বাড়ি থেকে একটু দূরেই থানা সদরের পাকা সড়ক। একটা ছায়াদায়ী গাছের নিচে সে বসে আছে । তার পরনে নীল পাঞ্জাবী, কোন কারণে বালকের মন খারাপ হলে এসে এখানে একা একা বসে থাকে। আজ ঈদের দিন, তার এখানে বসে থাকার কথা না। তবুও বসে আছে। তার ভুলে যাওয়ার রোগ আছে। সকালে তার পকেটে কয়েকটা কয়েন ছিল কিন্তু বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সেগুলো খুজে পাচ্ছে না। না পেয়েই মন খারাপ, এবং একা একা বসে থাকার কারণ এটাই। সম্ভবত সারাদিনই সে এখানে বসে থাকবে। সারাদিন বসে ছিল কিনা মনে নেই কারণ আগেই বলেছি বালকের ভুলে যাওয়ার বাতিক আছে নিজ থেকে ঈদ নিয়ে ভাবলেই আমার ঐ ঘটনা মনে পড়ে, ছোটবেলায় কত ছোট অকারণেই না মন খারাপ হত। তবে কান্ডারী ভাই যখন আপনার ঈদ ভাবনা কি জিজ্ঞেস করল, তখন মনে হল, আজকে অবিবাহিত না হলে চুমু খেয়ে ঈদের দিনটা শুরু করা যেত, ভাগ্য খারাপ তাই দিন শুরু হবে অতিরিক্ত চিনি দেয়া মিষ্টি জাতীয় কিছু একটা গিলে। ছবির কথাতো বলা হয় নাই, এক বছরের কিছু বেশী বয়েসি একটা পিচ্চির ছবি। চেয়ারে বসে আছে, কোলে একটা অফ হোয়াইট রংয়ের তোয়ালে। পিচ্চির কপালের ডানদিকে বড় করে একটা কাজলের ফোটা দেয়া।(গ্রামের বাচ্চাদের কপালে এই ধরনের ফোটা দেয়া হত, যাতে বদ নজর না লাগে!) ছবিটা আমার! লোকমুখে শুনেছি জন্মের পরের তৃতীয় ঈদের দিন সকালের দিকে তোলা হয়েছিল। আমার বেডরুমের দেয়ালে এই ছবি অনেকদিন ছিল। এই ঈদ আমার ৫৩তম ঈদ। এইমাত্র হিসাব করে বের করলাম! ভাবতেসি এই ঈদে ছোট্টবেলার ঐ দিনের মত কাটাব! নো ফ্রেন্ডস নো ফ্যামিলি একলা একা আমার আমি! দেখি কতটুকু কি হয়?



*** ব্লগার সোনালী ডানার চিল ***

ঈদ এখন নিঃসঙ্গ, আলগা এবং সাদাকালো- অথচ, একটা সময় ছিল; ঘুম হতো না কয়েকরাত ধরে শুধু ঈদের প্রতিক্ষায়! নতুন জামা, সকালের গোছল অথবা সিমাই-এর সুঘ্রাণ এখনও কোন কোন ঈদে আমাকে পোড়ায়! তারপর তারুন্যের ঈদ, সলিমুল্লাহ হলে এক ঈদে একা ছিলাম, অভিমান করে সেবার বাড়ী ফেরা হয়নি, আসলে একটা সময় থাকে না! যখন অকারনে রাগ হয়, অভিমানে মনে হতো হিমু হয়ে যায়, আর সঙ্গী ছিল: সেই তারাভরা রাতে, দুঃখিনী দুঃখ করো না, সুইটি এসব অসাধারণ ট্রাক..... সেবার নিউমার্কেট ঘুরে সবচে দামী সিগারেট কিনেছিলাম পুরো এক প্যাকেট!! আহা! সে মোহময় সময়েরা, কেঁদেকেঁটেও ফেরানো যাবেনা আর।

তারপর, বেশ কিছু বছর এই দুর পরবাসে তারা গোনা। ভোতা আবেগ নিয়ে স্মৃতির সাথে দরকশাকশি কম হয় না, মিস্ করি খুব প্রিয় শহরকে, প্রিয় মানুষ আর ভুলে যাওয়া সেই সুগন্ধী সাবানের ঘ্রাণ। তবুও অতীতাশ্রয়ী এ দু'চোখে এ আমি একা একা গহীনে, অতলে ডুবে যাওয়া ম্লান নক্ষত্রের আলোয় খুঁজে ফিরি সেই ঈদ, সেই ময়দান, কোলাকুলির অন্তরঙ্গতা।।



*** ব্লগার তাসনুভা সাখাওয়াত বিথি ***

প্রতিটা ঈদেরই সবচাইতে বড় অনুভূতি হচ্ছে আম্মুর হাতের অসাধারণ পায়েশ আর আব্বু-আম্মুর ঈদ সালামি নিয়ে আমার ঈদের শুরু। এবার ঈদের দিনের অর্ধেক সময়টাই কাটবে হসপিটালে অসুস্থ সব রোগীদের সাথে। যারা নিজেদের পরিবার পরিজন ছেড়ে হসপিটালের বেডে শুয়ে সুস্থ হয়ে পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ঈদের দিনে আমার চেষ্টা থাকবে সেইসব রোগীদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়া। ডাক্তার হওয়ার পর প্রথম ঈদেই রোগীদের সাথে ঈদ ভাগ করে নেয়ার অনুভূতিটাও নিশ্চই অন্যরকম হবে। তবে সব মিলিয়ে ঈদে একটি সুন্দর সময় কাটাতে যাচ্ছি মনে হচ্ছে । তবে ঈদের দিন কিছুটা খারাপ লাগে কারণ একটি পবিত্র মাস চলে গেল আরেকবার এই পবিত্র মাস ভাগ্যে থাকবে কিনা কে জানে !!!



*** ব্লগার মামুন রশিদ ***

"ঈদ আনন্দ" মানেই ছোটবেলাকার ঈদ আনন্দ । কিংবা মানুষের জীবনের সকল নির্মল আনন্দই বুঝি ঘটে ঐ ছোটবেলায় । তখন ৮০'র শুরু, এত মিডিয়া ছিল না । তাই ঈদ নিয়ে তেমন শোরগোলও হত না । নতুন জামা কেনা তখনও ঈদের কোন সার্বজনীন অনুসঙ্গ হয়ে উঠেনি । ঈদের মুল উত্তাপ আসা শুরু হত ঘর থেকেই । সারাদিন কানে আসত ঢেঁকিতে আতপ চাল গুড়ো করার ধুপধাপ শব্দ । নতুন লাল মাটি দিয়ে ঘরে আল্পনা আঁকা হত । তারপর কয়েকদিন ধরে চলত পিঠা বানানোর ধুম । দাদী, মা-চাচী আর বোনরা সবাই ব্যস্ত হরেক রকম পিঠা বানানো আর ঘর সাজানো নিয়ে ।

অবশেষে আসত অনেক প্রতীক্ষার ঈদের সকাল । বাড়ীর সামনের বিশাল দিঘীতে সুগন্ধী সাবান দিয়ে গোছল সেড়ে এসে পিঠা-পায়েশ খেয়ে মিষ্টিমুখ করতাম । তারপর নতুন জামা গায়ে বড়দের সাথে বড় ঈদগাহের দিকে যাত্রা । আমার মা প্যান্টের দুই পকেট পুড়ে বাঁশের ব্যাংকে জমানো পাঁচ পয়সার কয়েন দিয়ে দিতেন । ঈদগাহে যেতে যেতে রাস্তার দুই পাশে বসে থাকা ভিখারীদের থালায় পাঁচ পয়সা ছুঁড়ে মারতাম, আর ঝুনঝুন পয়সা পতনের শব্দে মুগ্ধ হয়ে যেতাম । ঈদের নামায শুরু হওয়ার পর মুসল্লীরা যখন রুকুতে যেত, আমরা পিচ্চির দল সমস্বরে ইয়ায়া.. ধ্বনি তুলে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে তুলতাম । একই কাজ সেজদার সময়েও, ডানে-বামে-সামনে-পিছনে হাজার হাজার কাতারবন্দী মানুষের সেজদারত দৃশ্য দেখে যারপরনাই আনন্দিত আর বিস্মিত হতাম ।

এখন নিজের সন্তান-পরিবারের আনন্দই আমাদের ঈদ আনন্দ । তবে গত ঈদুল ফেতর ছিল আমার জীবনের স্পেশাল । একটা ফেবু স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে আমাদের এলাকার একজন অসুস্থ সহায়হীন মুক্তিযোদ্ধাকে সাহায্যের জন্য আমরা বন্ধুরা মিলে ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলাম । দেশে এবং প্রবাসে থাকা এলাকার লোকজন এতে বিপুল সাড়া দেয়, বিশেষ করে আমাদের গ্রামের লন্ডন প্রবাসীদের অংশগ্রহন ছিল ব্যাপক । প্রায় দুই লাখ টাকা সংগ্রহ করেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধা নির্ধন গোপ কে ঐ টাকা দিয়ে একটা থাকার ঘর আর একটা ছোট মুদি দোকান করে দিয়েছিলাম । ঈদের পরদিন এলাকায় আনুষ্ঠানিক ভাবে ঐ মুক্তিযোদ্ধার হাতে সাহায্য তুলে দেয়া হয় । এটা নিয়ে সামুতে একটা পোস্টও দিয়েছিলাম ।

সব শেষে প্রিয় কান্ডারী ভাইকে ধন্যবাদ, ঈদ নিয়ে কিছু মধুর স্মৃতিচারণার সুযোগ দেয়ার জন্য । সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা- ঈদ মোবারক !!



*** ব্লগার আজ আমি কোথাও যাবো না ***

কান্ডারী ভাই সেদিন নক করে বললেন ব্লগারদের ঈদ ভাবনা নিয়ে পোস্ট দিবেন। আমার ভাবনাও সেখানে দেয়া হবে। ভাবনা টুকু লিখে দিতে বললেন। আমি সম্মত হলাম এবং ঢোঁক গিললাম। ঈদ নিয়ে কি ভাবছি চিন্তা করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু মাথায় ঘুরছে শপিং, পরীক্ষা, বন্ধু-বান্ধবদের কথা। লিখতে বসে মহাবিপদে পড়লাম। ভাবনা সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। রোবটের লিখলাম “ঈদ মানেই আনন্দ। আনন্দের এই দিনটা শুরু হবে আব্বুকে সালাম করার মধ্য দিয়ে। এরপর মিষ্টি মুখ। কিছুক্ষণ পরে নতুন জামা পড়ে..... ” এই যা এতো মনে হচ্ছে বাংলা পরীক্ষার খাতায় রচনা লিখছি। আসলে ঈদের নিয়ে অগ্রীম কিছু ভাবি না। ঈদ আমার কাছে “ইচ্ছাপুরন দিবস”। সেই ছোটবেলা থেকেই আব্বুর নিয়ম ঈদের দিন কোন কাজের জন্যে বকা দেয়া হবে না। ঈদের দিন যা ইচ্ছা হয় করতে পারি। আর কি কি ইচ্ছা পুরন করবো সেটাও ঠিক করি না আগে থেকে। তখন যা ইচ্ছা হয় করি। গতবছরে ঈদের দিন চলে গিয়েছিলাম নৌকাভ্রমনে। ঈদ নিয়ে বাস্তবিক অর্থেই ভাবতাম ছোটবেলায়। ঈদ শুরু হওয়ার দিন পনেরো আগ থেকে নিজ হাতে ঈদ কার্ড বানানো থেকে শুরু করে কার কাছ থেকে কত সালামী আদায় করবো তার একটা লিস্ট করে ফেলতাম! আর কাজিন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে কত মজাই না হবে ভেবে ঘুম আসতো না রাতে। এখন বড় হয়ে গেছি (সবাই তাই বলে) আগের মতো হুল্লোড় করতে পারবো না। শুধু চেষ্টা করবো আম্মুর কাজের লোডটা কমাতে। আমাদের আম্মুদের ঈদের দিনের প্রায় অনেক খানি রান্নাঘরেই কাটে। একফোঁটা বিরক্ত না হয়ে হাসিমুখে সবাইকে আপ্যায়ন করতে থাকেন। এবার আমার চিন্তা আম্মুর এসিসটেন্ট হবো। আম্মুর মতো হাসিমুখে আন্তরিক ভাবে সবাইকে ঈদ মোবারক বলবো আর আপ্যায়ন করবো। ঈদ মোবারক শব্দ দুটোর মধ্যে একটা জাদু আছে। আনন্দ বন্টন হয় এই শব্দ দুটিতে। তবে বিকালের পরের সময় টুকু আমার। তখন জামাকাপড় পড়ে রেডি হয়ে যা করতে ইচ্ছা হয় তাই করবো। আর ইচ্ছা গুলো তখনই জানার চেষ্টা করবো। নিজেকে নিজেই সারপ্রাইজ করবো। এই সময়টুকু নিয়ে অগ্রীম কিছু ভেবে সারপ্রাইজ নষ্ট করতে চাই না! সবাইকে ঈদ মোবারক!



*** ব্লগার অপর্ণা মম্ময় ***

আমার ঈদ ভাবনা লিখলাম সংক্ষেপে। অনেক মানুষরে লেখা তো যাবে তাই ছোট করেই দিলাম । ছোটবেলার ঈদ ভাবনা, ঈদের আমেজ বড় হবার পর অতটা আন্দোলিত না করলেও " ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ ..." এই গানটা শেষ রোজার দিন শুনলে এখনো সেই ছোটবেলার মতো প্রচণ্ড ভাল লাগা দেয় সাময়িক সময়ের জন্য।

এই বয়সে এসে মনে হয় ঈদের প্রথম খুশির ঝলক এই একটি মাত্র গান থেকেই আমি পাই । ছোট বেলায় তো ঈদ মানেই সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন জামা পড়ে বড়দের কাছে সালামী আদায় করা । আর এখন ছোটদের সালামী দিয়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস কে চাপা দিয়ে রাখতে হয় ! ওই সময়ে মনে হয় কেন যে বড় হয়ে গেলাম ! ভাইয়াকে সালাম করতে গেলে এক লাফ দিয়ে সামনে থেকে সরে যায় " আরে করে কি , করে কি বলে ! " জোর করে সালাম করলেও সালামী দেয় না ! আফসোস ! ঘ্যান ঘ্যান করে মায়ের কাছ থেকে কিছুটা বখশিশ আদায় করি অবশ্য। আর সিজনাল রাঁধুনি বলে ভদ্রতাবশত একটু রান্নাঘরে উঁকি দিতেই হয় । তবে দুপুরের পর থেকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কাটাই। একটা ব্যাপার খেয়াল করে অবাক হলাম, ঈদে আমার বেড়াতে যাওয়ার কোনো জায়গাই নাই ! সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ঈদ মোবারক।



*** ব্লগার ঘুড্ডির পাইলট ***

ঈদ বলতে আমার কাছে মনে হয় এইটা এক্টা খরচের বিষয় !!! মনে হচ্ছে ঈদের সঠিক ধারনা থেকে আমরা সরে আসছি। প্রতি ঈদে নতুন জামা কাপড় না কিনলে সকলের সামনে লজ্জা পাওয়াটা আমাদের মজ্জাগত হয়ে গেছে । অথচ এমন অনেক মানুষ আছে যারা খালিগায়ে ঈদের দিনটা পার করে । ধর্মীয় মূল্যবোধ হতে সরে আসা এই ঈদ আমি মানি না । এটাই আমার ঈদ ভাবনা।



*** ব্লগার না পারভীন ***

ঈদের দিন যেন ঈদ ঈদ লাগে সে জন্য নতুন জামা পরেই সালামী আদায় করার জন্য সব বড়দের পা খুঁজে বের করব , আর উদার হস্তে সালামী দিবে এটাই আশা করব । শুধু সালামী নিলেই হবে ? দিতেও হবে । কিপ্টার মত ছোটদের সালামী দিব। তারপর ই ফোনবুক নিয়ে বসে পড়ব ।বন্ধু বান্ধব গুটিকয়েক কে ফোন দিয়ে ঈদ মোবারক বলব । তারপর ল্যাপি নিয়ে বসব । ফেসবুকে যারা যারা ঈদের শুভেচ্ছা লিখে স্ট্যাটাস দিবে , সেগুলিতে লাইক দিব । এরপরপর ই আমার ওয়ান এন্ড ওনলি ব্লগ সামুতে চলে যাব ।এটাই সামুর আত্নীয়দের সাথে আমার প্রথম ঈদ । তাই বাকি সময় পুরোটাই সামুর জন্য । প্রিয় ব্লগারদের পোস্টে " পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা,” লিখব মন্তব্যের ঘরে। সারাদিন হৈ চৈ করব আর বিটিভিতে বাংলা ছবি দেখব। প্রার্থনা থাকবে আমাদের সবার প্রতিটি দিন যেন ঈদের দিনের মত আনন্দের হয় ।



*** ব্লগার এরিস ***

ঈদের চেয়েও বেশি ভাবছি বিয়ে নিয়ে। ঈদের ৬ দিন পর বিয়ের ডেট পড়েছে। সব কিছু ঠিক গুছিয়ে নিতে হবে। রাশেদ বলেছে যত টাকা যাক, ভালো পার্লার ঠিক করতে হবে। এতোসব ঝামেলা। ফেইস আর্টজে গিয়েছিলাম চুল কাটতে। ওরা ভলিউম কাটতে জানে না। পরে রেডরোজে গিয়ে চুল কেটে আসলাম। ওদিকে ও বলছে ঈদের দিন বেরুবে। শাড়ি নিয়েছি। কিন্তু ম্যাচ করে বাকিসব মেলাতে পারছিনা। আসলে বিয়ে মানেই ঝামেলা, এর উপরে ঈদ আরও বেশি ব্যস্ত করে রেখেছে। ফুলের অর্ডার করেছি শাড়ির সাথে পরার জন্যে। ফেসিয়ালটা কোথায় নিলে ভাল হয় বুঝতে পারছিনা... ব্লা ব্লা ব্লা... আমার বান্ধবীর ঈদ এবং ঈদোত্তর বিবাহপ্রস্তুতি। আমি নীরব শ্রোতা। আমার ঈদের ব্যস্ততা বলতে ঐ গাধীটার ফোনের উপর ফোন। আর কিছু না। প্রতি ঈদে প্ল্যান থাকে আমরা একসাথে বাইরে বেরুবো। সব ঠিকঠাক। জাস্ট ঈদের দিন আমি আউট অফ রিচ হয়ে যাই। বাসাতেই থাকি। বাইরে কোথাও না। ঈদের সকালে আম্মু কাঁদবে, আমিও একটু কাঁদবো, লুকিয়ে কাঁদবো। আব্বুর কথা সেদিন বেশিই মনে পড়বে। আম্মুকে মিথ্যে হেসে জিজ্ঞেস করবো, মা, কাঁদতেছছ তুই? আম্মা বলবে, নারে গাধী, চুলার তাপে চোখ জ্বলতেছে। প্রতি ঈদের শুরু এভাবেই। ফেসবুক ডিঅ্যাক্টিভেট হবে, ফোন অফ। সকাল ৭ টা থেকে বাসার ভেতর লাইন শুরু হবে। আমি যেখানে থাকি, সেই বস্তির সব আণ্ডা, বাচ্চা, কিশোরী, তরুণী, বৌয়েরা এসে জুটবে, সাজগোজ করিয়ে দিতে। ঈদের আগের রাতে যারা হাতে মেহেদী লাগানোর জন্যে লাইন দিয়েও শিডিউল পায়নি, তারাও ঘ্যানর ঘ্যানর প্যানর প্যানর করতেই থাকবে। ওদের নিজেদের কিছুই আনবেনা, সাজুগুজু, মেহেদী। সব আমাকেই দিতে হবে, শপিং বলতে ওটাই। কোন মেহমান আসবেনা, আর সব ঈদের মতো। চাচাতো ভাই টেলুরিয়াম( টেলি সামাদ এর ব্রিফ) আসবে, ৩ প্লেট হালিম খাবে। ওর মেয়েলি সাজ নিয়ে হাসাহাসি করবো। ব্যস, এইতো , আমার ঈদ, আমাদের ঈদ। জীবন থেকে জীবনে উৎসব উদযাপনের বিস্তর ভেদাভেদ আমরা ঘোচাতে পারবোনা। তবু মানুষ ভিন্নতা বুঝতে পারুক, কষ্টের ক্ষতে মুছে দেয়া যাবে না, অন্তর ব্যথা বুঝতে পারুক। একদিন সব বঞ্চিত মানুষগুলোকে নিয়ে একসাথে হাসতে চাই। সবার ঈদ ঈদের মতো হোক।



এই পোস্টের জন্য যারা লেখা দিয়েছেন, সেই সকল শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় সহব্লগারদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ রইলাম এবং সকলের প্রতি রইল আমার ঈদের আন্তরিক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। শুভকামনা রইল সকলের পরিবারের প্রতি।



ছবির জন্য কৃতজ্ঞতায় ব্লগার অন্যমনস্ক শরৎ





সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৫০
১৩০টি মন্তব্য ১৩০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×