somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূতীর খালের হাওয়া ২৪ঃ শিরোনামহীন আরেকটি জার্নাল এন্ট্রি

০৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
শিল্পী সাহিত্যিক ফিল্মমেকারদের সৃষ্টকর্মে তাদের জীবনসঙ্গী, বা সাংসারিক জীবনের আলাপ অনেকটা অনুপস্থিত, এমনটা আমার অব্জারভেশন। আপনাদেরও কী তাই মনে হয় না?
.
যেমন , খুব পরিচিত পরিসর থেকে যদি উদাহরণ দিই, হুমায়ূন আহমেদের অমর চরিত্র হিমুর নায়িকা যে রূপা, সেই রূপা কী মিসেস গুলতেকিন? আবার সুনীলের প্রেমের কবিতায় নীরার অহরহ উপস্থিতি। এই নীরা কী তার স্ত্রী স্বাতী গাঙ্গুলি? অঞ্জন দত্তের স্ত্রী ই কী তার বেলা বোস?
.
আমার মনে হয় যাপিত সাংসারিক জীবন, অর্থাৎ, যে সংসার জীবন শিল্পী নিজে যাপন করছে সত্যি সত্যি - তা সরাসরি শিল্পের ক্যানভাসে তুলে আনা মুশকিল।
.
২।
এখন কেন যে মুশকিল, এটা বুঝিয়ে বলা আরও মুশকিল।
.
তার একটা কারণ হয়তো এই যে, নিজের দাম্পত্য জীবনকে শিল্পের ক্যানভাসে ছুঁড়ে মারাটা অস্বস্তিকর। সবার পক্ষে কিম কারদেশিয়ান হওয়া সম্ভব না।
.
দ্বিতীয়ত, দাম্পত্যের সম্পর্ক প্রেমের সম্পর্কের চে' অনেক বেশী জটিল।
.
একজন আপাদমস্তক রোম্যান্টিক মানুষের জন্যে প্রেমের সম্পর্ক সাধারণত অন্ধ, নন জাজমেন্টাল, কাণ্ডজ্ঞানহীন, কামনাবাসনাময়। অপরদিকে, একজন সংবেদনশীল মানুষের নিজের স্পাউসের প্রতি যে অনুভূতি, তা উপরের লিস্টের অনুভূতিগুলো, এবং অনুভূতির আরও অনেক বেশী ডিপ এবং ওয়াইডস্প্রেড ডাইমেনশনকে কাভার করে।
.
নিজের শিল্পকর্মে উপস্থিত লিনিয়ার ডাইমেনশনের প্রেমের সম্পর্কের ব্যাপারে নিজের দাম্পত্য জীবন থেকে তাই হিন্ট নেয়ার সুযোগ কম।
..
ছোট একটা উদাহরণ যদি দিই।
.
প্রায় পূর্ণিমায় আমাদের বেডরুমে মাথার কাছে যে জানালা, তা দিয়ে চাঁদের আলো প্রবেশ করে। আমার অভ্যাস রাতে ঘুমানোর আগে বই পড়বার। যখন ঘুমে চোখ জড়ায়ে আসে, আর আমি বই বন্ধ করে ল্যাম্প নিভায়ে দিই, সে মুহূর্তে জোছনার আলো মশারী ভেদ করে পাশে ঘুমন্ত আমার স্ত্রীর মুখচ্ছবিতে অপরূপ আলোছায়ার কারুকার্য সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে আমার মনের মধ্যে অদ্ভুত প্রশান্তিসহ এই প্রশ্ন জাগে যে - এই যে অলৌকিক একটা দৃশ্য, এটা তাহলে জীবনসঙ্গী বিষয়ক আমার সমস্ত প্রার্থনার উত্তরসমূহের মধ্যে একটা ?
.
ঐ মুহূর্তের এই যে একটা জটিল অনুভূতির বুনন, যার কিছুই আসলে লেখার হরফে ফুটায়ে তুলতে পারলাম না, এবং যার ভারবহন করতে করতে আমার মস্তিষ্ক আরও দ্রুতগতিতে ক্লান্ত হয়ে যায়, এবং আমি ঘুমে ঢলে পড়ি - এরকম, এবং দাম্পত্যজীবনের এরকম আরও অসংখ্য জটিল অনুভূতির নকশা আঁকা সাধারণ প্রেমের সম্পর্কের প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের বাস্তবতায়, প্রায় অসম্ভব।
.
৩।
হয়তো এই সমস্ত কারণে নিজের সৃষ্টকর্মে শিল্পীরা প্রেমিক - প্রেমিকার চরিত্র চিত্রনের সময় ব্যাকস্লাইড করে নিজের বা নিজের পরিচিতজনের পেছনের অকার্যকর সম্পর্কগুলির সহায়তা নেয়। ঐ সম্পর্ক মোটের ওপর লিনিয়ার, সহজসরল, একরৈখিক। তাতে নন জাজমেন্টাল, কাণ্ডজ্ঞানলুপ্ত, কামনাবাসনাময় ভালোবাসাই থাকে কেবল। আর যে বিচ্ছেদ অতিক্রম করা গেছে একবার, তাকে ভাষার জালে বন্দী করা যায়। নিজেরে নৈব্যত্তিক একটা অবস্থানে এনে সেই সম্পর্কের দিকে ফিরে তাকানো যায়, কোন অনুভূতির উদ্রেক ছাড়াই। তাই হয়তো কবি সাহিত্যিক, চিত্রকর, ফিল্মমেকাররা নিজেদের শিল্পকর্মে প্রেমের সম্পর্ক ডেপিকশনে প্রায়ই জীবনের অপূর্ণ সম্পর্কগুলিরে শিল্পের ক্যানভাসে প্রক্ষেপ করে কাটাছেঁড়া করে।
.
তবে এতে শিল্পীদের জীবনসঙ্গীদের চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু নাই। নাই অসম্মানের কিছুও। কারণ প্রতিটা মানুষের জীবনের ম্যাগনাম ওপাস, বা মহাকাব্য আসলে একটাই। সেটা হচ্ছে তার যাপিত জীবন। সেই যাপিত জীবনের একচ্ছত্র আধিপত্য সেই মহীয়সীর। সেই উপন্যাস, যেটা মূল উপন্যাস, জীবন নামে সেই উপন্যাসের মুখ্য নারী চরিত্র যদি তিনি হন, এটা যেকোনো ফিকশনাল ক্যারেক্টার হিসেবে গল্প উপন্যাসে উপস্থিতির চে' অনেক বেশী সম্মানের। এবং দামী।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২১ রাত ৯:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×