somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুতির খালের হাওয়া - ২৬ঃ সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচকের মতভিন্নতা

১৪ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
২০১১ সালে বিশ্বজিৎ ঘোষ স্যার (বর্তমানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য), কলাভবনের ২০১৭ নম্বর রুমে দাঁড়িয়ে আমাদের সাবসিডারি বাংলা কোর্সে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাগৈতিহাসিক গল্প পড়াতে গিয়ে, মন্তব্য করেছিলেন - এই গল্পের সবশেষ প্যারাগ্রাফটি পুরো গল্পের সবচে দুর্বল অংশ। অথচ, এই প্যারাটি ছিল আমার পুরো গল্পটির মধ্যে সবচে পছন্দের জায়গা। এখনও, দশ বছর পরেও। শেষ লাইনটা যদি তুলে দিই -
.
"...কিন্তু যে ধারাবাহিক অন্ধকার মাতৃগর্ভ হইতে সংগ্রহ করিয়া দেহের অভ্যন্তরে লুকাইয়া ভিখু ও পাঁচী পৃথিবীতে আসিয়াছিল এবং যে অন্ধকার তাহারা সন্তানের মাংসল আবেষ্টনীর মধ্যে গোপন রাখিয়া যাইবে তাহা প্রাগৈতিহাসিক, পৃথিবীর আলো আজ পর্যন্ত তাহার নাগাল পায় নাই, কোনোদিন পাইবেও না।"
.
২।
স্যার এই অংশ পছন্দ করেন নি, কারণ, একজন সমালোচক হিসেবে তিনি এটা চান নি যে মানিক তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেবেন। বুঝিয়ে দেবেন, গল্পের মাঝে, গল্পকার নিজেই যে - প্রাগৈতিহাসিক বলতে লেখক আসলে কোন জিনিসটাকে মিন করছেন। স্যারের শ্লাঘায় আঘাত করেছিল ব্যাপারটা হয়তো।
.
৩।
স্যারের ঐ রিঅ্যাকশন এখনও আমায় ভাবায়। সাহিত্যিক আর সাহিত্য সমালোচকদের চিন্তার প্যাটার্নের তফাৎটা হয়তো এজায়গাতেই। সমালোচক ভাবেন, কিছু কথা উহ্য থেকে গেলে ভালো। সব এক্সপ্লিসিটলি বয়ান করে দেয়াটা তাঁরা তাদের মেধার প্রতি লেখকের ভ্রুকুটি হিসেবে বিবেচনা করেন। আর লেখকদের একটা বড় অংশের টেনশন থাকে - পাঠক পর্যন্ত তার লেখা পৌঁছলো কিনা। পাঠক বুঝল কিনা। গ্রহণ করলো কি না।
.
সমালোচকের মন্তব্য বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে জায়গা করে দেবে - অন্তত এই বাংলাদেশে সে সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। সমালোচকরা বেশীরভাগ সময়েই এই ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না। বুঝলেও তাদের সহানুভূতি থাকে না। না খেতে পেয়ে মারা না গেলে কবি সাহিত্যিক কিসের - এটাই, মোটাদাগে তাদের হিসেব। জীবনানন্দ সাধে লেখেন নি-
.
"...পাণ্ডুলিপি, ভাষ্য, টীকা, কালি আর কলমের ’পর
ব’সে আছে সিংহাসনে— কবি নয়— অজর, অক্ষর
অধ্যাপক; দাঁত নেই— চোখে তার অক্ষম পিঁচুটি;
বেতন হাজার টাকা মাসে— আর হাজার দেড়েক
পাওয়া যায় মৃত সব কবিদের মাংস কৃমি খুঁটি..."

.
৪।
সমালোচকের খুঁটে খাওয়ার মতো মৃত কবি সাহিত্যিক পাওয়া যাবে। স্বদেশে না হলে পাশের দেশে, নইলে পাশের মহাদেশে। লেখকের সম্বল কেবল তার নিজের কাগজ কলম, আর নিজ দেশের গুটিকতক পাঠক, এই হচ্ছে বাংলাদেশের অবস্থা। জানিনা মানিকের সময় বিষয়টা কেমন ছিল। সাহিত্যের সমালোচকদের খুশী করবার জন্যে লেখার বদলে আমি বরং আজ হতে ত্রিশ বছর পরের সেই কিশোরের জন্যে লিখতে আগ্রহী, যে নতুন নতুন লেখা শিখতে চাইছে, তাইজন্যে তার আগের জেনারেশনের সমস্ত লেখকদের লেখা খুঁটিয়ে পড়বে বলে কোন লাইব্রেরীর কর্নার থেকে খুঁজে বের করেছে আমার একটি উপন্যাস, অতলান্তিক মহাসাগরের বুকে ভেসে ওঠা নতুন একটি দ্বীপ আবিষ্কারের আনন্দে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×