somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাষ্ট্রদ্রোহিতা কোন যুক্তিতে অপরাধ হয় ?

২৮ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন নাগরিক দেশকে কি দিয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশ তার নাগরিককে কি দিয়েছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান বাবা-মাকে কি দিয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না, বাবা-মা সন্তানকে কি দিয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় বাবা মা অর্থের অভাবে সন্তানকে অনেক কিছু দিতে পারে না। দেশ গরীব হলে দেশও তার নাগরিককে অনেক সুযোগ সুবিধা দিতে পারে না; অনার্সের বিষয়ভিত্তিক চাকরী দিতে পারে না, গবেষণার সুবিধা দিতে পারে না, ভাল মানের Education provide করতে পারে না। ...... এতে আমার কোন আপত্তি নাই। আপত্তি তখন যখন বাবা মা ( দেশ ) সামর্থ্য থাকার পরেও তার সন্তানদের ( নাগরিকদের ) সুযোগ সুবিধা না দিয়ে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ ও উন্নতিকে বাধাগ্রস্থ করে ( যেমন - গতবছর Quantum Physics এর উপর আমার গবেষণাপত্র বিদেশী জার্নালে publish করতে গিয়ে দেখি বাংলাদেশের ব্যাঙ্ক থেকে বিদেশের ব্যাঙ্কে টাকা পাঠানোর আইন নাই। ক্রেডিট কার্ড ছাড়া bank to bank পেমেন্ট করা যায় না। ) এবং মাঝেমধ্যে সন্তানের সামান্য ভালর জন্য বিশাল ক্ষতি করে ফেলে ( তুচ্ছ বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য সুন্দরবন ধ্বংস করে ফেলা )।
আপনারা হয়ত বলবেন, "বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশ থেকে টাকা বিদেশে চলে গেলে দেশের ক্ষতি।"
না জানি আমার মত কত বাংলাদেশী গবেষক তাদের গবেষণা প্রকাশ করতে পারছে না। দেশ বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়ছে না ? এটা দেশের ক্ষতি না ? সবার তো ক্রেডিট কার্ড নাই।
আপনারা বলবেন, "দেশ বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়লে অত ক্ষতি নাই, অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়লে সমস্যা। সবার আগে অর্থনীতি।"
প্রধাণমন্ত্রী তার ভাষণে তো স্বীকার করে না যে বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ। বরং অর্থনীতিতে বাংলাদেশের উন্নতি দেখে ভারত পাকিস্তান পর্যন্ত স্তম্ভিত। পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উন্নতির জোয়ারে বাংলাদেশ ভাসছে - প্রধাণমন্ত্রীর দাবী তো এটাই। তাহলে বিদেশে টাকা পাঠাতে না পারার আইন বাতিল করে দিলে কি সমস্যা ?
তাছাড়া বাংলাদেশে paypal সাপোর্ট না করায় তরুণ প্রজন্ম ফ্রীল্যান্সিং এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে সমস্যা হচ্ছে। দেশ থেকে money বহির্গমন আটকাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকেও বাধাগ্রস্থ করছে এই আইন।

বাংলাদেশের সামর্থ্য না থাকলে কোন অভিযোগ ছিল না কিন্তু সামর্থ্য থাকার পরেও বাংলাদেশ আমাদের কিছুই দেয়নি। একটা অসভ্য জাতি উপহার দিছে। দুঃখ পেলে বা রাগ উঠলে সরি। কিন্তু যে জাতি লিঙ্গসমতায় বিশ্বাস করে না ( পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশী সুযোগ, সুবিধা, সম্মান দেয়া ), যে জাতি ধর্মানুভূতিকে গুরুত্ব দেয়, যে জাতি বিজ্ঞানীদের জাতির জনকের সমান মর্যাদা দেয় না, যে জাতি গুণী ব্যক্তির গুণের কদর করতে জানে না, যে জাতির ছাত্ররা ( ছাত্রলীগ ) শিক্ষাঙ্গনে মারামারি করে এবং শিক্ষকের গায়ে হাত তোলে, যে জাতি রাস্তায় লুঙ্গি তুলে প্রাকৃতিক কাজ সারতে বসে পড়ে, যে জাতির মেধাবী শিক্ষার্থীরা মেধার চর্চা ছেড়ে মুখস্তবিদ্যার (BCS) পথ ধরে, যে জাতি বিজ্ঞান শিক্ষক হবার জন্য বাংলা ব্যকরণ জানা মাথা পেতে মেনে নেয়, যে জাতি মৃত্যুদন্ডের মত অমানবিক আইন সাপোর্ট করে, যে জাতি অপ্রিয় সত্যি কথা সহ্য করতে না পেরে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অযৌক্তিক আইন বানিয়ে রাখছে সেই জাতি কিভাবে সভ্য হয় - আমাকে ব্যাখ্যা করে বুঝান।
Explain, Explain.
বাংলাদেশ আমার খাওয়া পড়ার খরচ দিচ্ছে না। আমি নিজের যোগ্যতায় ফ্রীল্যান্সিং এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা ইনকাম করি। সরকারের কাছ থেকে একটা পয়সাও নিই না। যখন বাবা মায়ের পয়সায় চলতাম, তখনও দেশ বা রাষ্ট্র ফ্রী ফ্রী আমার বাবা মাকে বেতন দিত না। কাজ করেই রাষ্ট্র থেকে বেতন আদায় করে নিত। সব রাষ্ট্রেই একই সিস্টেম। শুধু বাংলাদেশ নয় যেকোন রাষ্ট্র তার নাগরিককে যত সুবিধাই দিক ( শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, জল, গ্যাস ... ইত্যাদি ), সেগুলো ফ্রীতে দেয়া হয় না। নাগরিকদের অর্থ দেয়াই লাগে। গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ, সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার খরচ এসব তো দেয়াই লাগে তা আমি পৃথিবীর যে রাষ্ট্রেই থাকি না কেন। এজন্যই পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র নাগরিকদের কাছ থেকে অন্ধ আনুগত্য ( কখনোই রাষ্ট্রদ্রোহ করবে না ) আশা করতে পারে না।
এইজন্যই তো প্রশ্ন আসছে - যেকোন রাষ্ট্র তার নাগরিকের জীবনে কোন উপকারটা ফ্রীতে করেছে যে রাষ্ট্রকে ভালবাসতে হবে ? এই প্রশ্ন শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রই তো কর নেয়, ফ্রীতে তো কোন কিছুই দেয় না। তাহলে নাগরিকদের কাছ থেকে অন্ধ আনুগত্য আশা করে কোন সাহসে ?

আমি যা বুঝাতে চাচ্ছি তা হল - রাষ্ট্রদোহিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। পৃথিবীর সব দেশেই এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু আমরা অন্য দেশের ভাল রীতি, ভাল আইন গ্রহণ করব। বাজে আইন গ্রহণ করব না। একটা মানুষ চাইলে তার রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানের বিরুদ্ধে যেতেই পারে। এটাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা শিখবে।
দয়া করে এই বালের ডায়লগ দিয়েন না, "যে মানুষ স্বদেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব ও সংবিধানের বিরুদ্ধে যায়। তার কোন অধিকার নাই স্বদেশে থাকার।"
নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন। তাহলে বেশী কাজে দিবে। ইতিহাস থেকে উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরো পরিস্কার হবে।
প্রাচীন ভারতের এক রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তার গুরু চাণক্যর পরামর্শে অখন্ড ভারত গঠন করার জন্য পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো আক্রমণ করত এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে সেগুলোকে নিজের দখলে আনত। তারপর দখলকৃত রাজ্যগুলোর রাজারা যখন স্বাধীনতার জন্য ষড়যন্ত্র করত তখন রাজদ্রোহের অপরাধে তাদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হত। ভারতে এখনও রাজ্য আছে। প্রতিটা রাজ্যের আলাদা আলাদা সরকার আছে যাদেরকে রাজ্য সরকার বলে। আবার সম্পূর্ণ দেশেরও একটা সরকার আছে। প্রাচীন ভারতের শক্তিশালী রাজারা পাশের রাজ্যগুলো দখল না করে সব রাজ্য থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে জাতিসংঘের মত কমিটি গঠন করলেই অখন্ড ভারত গঠন করা হয়ে যেত। চাণক্যর মত কুবুদ্ধিদাতা ও চন্দ্রগুপ্তের মত নরহত্যাকারীদের ভারতে এত সম্মান কেন ? বুুঝিনা।
বৃটিশরাও একই কাজ করেছে। যারা ভারতের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিল তাদের দেশদ্রোহী বানিয়ে ফাঁসীতে ঝুলিয়েছে। যদি মুক্তিযুদ্ধে আমরা হারতাম তবে মুক্তিযোদ্ধারাই পাকিস্তানীদের কাছে যুদ্ধাপরাধী হয়ে যেত।
রাষ্ট্রদ্রোহিতা অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার পিছনে কোন লজিক নাই। বিদ্রোহ করাটা কখনো wrong হতে পারে না। যদিও আমি স্রষ্টায় বিশ্বাস করি না। তবু তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই যে আল্লাহ, আদম-হাওয়া ও ইবলিশের কাহিনী সত্য। তাহলে আদমকে সেজদা না করে আল্লার কথা অমান্য করে ইবলিশ কোন অন্যায় করেনি। আল্লার প্রতি বিদ্রোহ করে ইবিলিশ কোন অপরাধ করেনি। এটা ইবলিশের ব্যক্তিস্বাধীনতা। ঠিক সেরকম, রাষ্ট্রদোহ করাটাও ব্যক্তি স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের নীতির সাথে ব্যক্তির মতের অমিল থাকতেই পারে। বাংলাদেশের 18 কোটি মানুষের আঠারো কোটি মতামত। তার মানে তো এই নয় যে সবার মতামত সঠিক। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতকে রাষ্ট্রের নীতিতে অন্তর্ভূক্ত না করে, যে মতটা সবচেয়ে বেশী মানবিক সেটা গ্রহণ করতে। বেশীর মানুষই শাস্তির পক্ষে অর্থাৎ বেশীরভাগ মানুষই অমানবিক। সর্বাপেক্ষা মানবিক নীতি গ্রহণ করলেই যে আর বিদ্রোহ হবে না, তা নয়। তারপরও বিদ্রোহ হবে এবং এই বিদ্রোহকে স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে। অপরাধ হিসেবে নেয়া যাবে না। একজন মানুষ কখন বিদ্রোহ করে ? যখন সে মনে করে, নিয়মে সমস্যা আছে তখন। রাষ্ট্রদ্রোহকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করে তার মতটা শুনলে কি হয় ? শুনার পর রাষ্ট্র মেনে না নিলে যদি সে বিদ্রোহ বা আন্দোলন করতে থাকে শাহবাগের মোড়ে দাড়িয়ে। তাতে রাষ্ট্রের তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না। সমস্যা কি ?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২০ রাত ৮:২৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×