somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত "অনুবাদক সাংবাদিকতা" নিয়ে দুটি কথা

২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সারাবিশ্বে বিভিন্ন ধরণের সাংবাদিকতার প্রচলন আছে । বেশিরভাগ দেশেই সবচেয়ে জনপ্রিয় সাংবাদিকতা হলো বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রচার। এই ক্ষেত্রে রাজার পরনে জামা না থাকলে সাংবাদিকরা লিখেন, "রাজার পরনে জামা নাই, উদোম গায়ে শহর ঘুরে বেড়ালেন ন্যাংটা রাজা।" এইটা বেশিরভাগ দেশের কথা বললাম, সব দেশের না।

কিছু দেশে এইধরণের সাংবাদিকতাকে বাঁকা চোখে দেখা হয়; এইসব সংবাদকে মানহানিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত হিসেবে ধরা হয়। এসব দেশের নিরপেক্ষ (?) সাংবাদিকরা এইধরণের সংবাদ প্রকাশ না করে উনারা উত্তরবঙ্গের বাতাবিলেবুর ফলনের খবর প্রচার করেন। বাংলাদেশ এইসব গুটিকয় দেশের মধ্যে অন্যতম। বেশিরভাগ দেশের সাংবাদিকরা "বাতাবি লেবু" সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করেন। তবে হলুদ সাংবাদিকরা মনে করেন, কোনো কারণ ছাড়াই কারো গায়ে রং মাখানো মানবাধিকার লঙ্গন করে।
তবে মনে মনে হলুদ সাংবাদিকরা তাদের উপর আরোপিত রং এর ব্যাপারে খুব বিমর্ষ। এই রং থেকে নিজেদের রক্ষা করা জন্য তারা সম্প্রতি একটা ভিন্ন ধরণের সাংবাদিকতায় উৎসাহী হয়ে উঠেছে। ধরেন, এই নতুন প্রজাতির সংবাদকে আমরা "অনুবাদ সংবাদ" আর ঐসব সাংবাদিকদেরকে আমরা "অনুবাদক সাংবাদিক" নাম ডাকি। যেহেতু আমি সাংবাদিকতা ও যোগাযোগ বিষয়ে পড়াশুনা করি নাই, এই প্রজাতির সংবাদের কেতাবি নাম আমি জানি না। সেজন্য তাদের নাম ধরে নিলাম। কেউ মাইন্ড কইরেন না, পিলিগ।
এসব অনুবাদক সাংবাদিকদের কাজ হলো অনুবাদ করা। বিদেশী পত্রিকায় কোন একটা মুখরোচক সংবাদ পেলেই এরা কোমর বেঁধে বসে পরে অনুবাদ করার জন্য। অনুবাদ করা কোনো পাপ নয়। আমরা সবাই হাইস্কুল এ অনুবাদ করা শিখেছি। পাখি আকাশে উড়ে - Birds fly in the sky. ডাক্তার আসিবার আগেই রোগী মারা গেল - (এইটার ট্রান্সলেশন কখনো পারি নাই, এখনো পারি না)।
আপনারা মোটামুটি সবাই জানেন, অনুবাদ প্রধানত দুই ধরণের। ভাবানুবাদ এবং আক্ষরিক অনুবাদ। স্কুলে আমরা আক্ষরিক অনুবাদ শিখতাম। ভাবানুবাদ তেমনভাবে শিখানো হয় নি তখন। মনে হয় না হাইস্কুল এ ভাবানুবাদ শিখায়। বিদেশী ভাষার বিভিন্ন নথিপত্র সবসময় আক্ষরিক অনুবাদ করা লাগে। এইজন্য চট্টগ্রামের চকবাজার, আন্দরকিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুবাদকরা কাজ করে। এইটা একটা ভালো পেশা। নোটারি পাবলিকরা এইসব অনুবাদকে সার্টিফাই করে , অনেক টাকা লাগে এই সীল পাইতে। সেই হিসেবে ধরে নেয়া যায় এইটা খুব ভাল পেশা।

এইতো গেলো আক্ষরিক অনুবাদ এর কথা। এবার আসি ভাবানুবাদ এ। ভাবানুবাদ হলো ভাবের অনুবাদ। অক্ষরে অক্ষরে অনুবাদ না করলেও চলে এই টাইপের অনুবাদ। যেমন আমি বললাম "ছেলেটা না খাইতে খাইতে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। " এখন কেউ যদি এই কথাকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে বলে "The boy is suffering from malnutrition" তখন সেটা হবে ভাবানুবাদ। ভাবানুবাদের সুবিধা হলো যে যেভাবে চায় সেভাবেই এই ভাবের অনুবাদ করতে পারে। যেমন একই ভাবকে কেউ যদি বলে "The boy is skinny as hell" সেটাও সঠিক হিসেবে ধরে নেয়া যাবে। ভাবটাই এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, শাব্দিক অনুবাদ তেমন বেশি দরকার নাই। বলতে গেলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাব্দিক অনুবাদ ভাবটাকে নষ্ট করে দেয়। সেজন্যই সাহিত্যিকরা বিদেশী সাহিত্য সবসময় ভাবানুবাদ করে। আপনার যদি বাংলাদেশী "টিকা কার্ড" অথবা "কাবিন নামা" ইংরেজিতে অনুবাদ করা দরকার আপনি যাবেন নোটারি পাবলিক এর কাছে, আর যদি বাংলা সাহিত্য ইংরেজিতে অনুবাদ করা দরকার তখন আপনি যাবেন কোনো এক দোভাষী সাহিত্যিকের কাছে। যখন যেটা দরকার।

বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকরা এইসব জিনিস মাথায় রেখে বিদেশী সংবাদ অনুবাদ করে। যখন দরকার শাব্দিক, তখন তারা নোটারি পাবলিকের মতো চিন্তা করে, যখন দরকার ভাব, তখন তারা দোভাষের মতো চিন্তা করে। ইদানিং প্রায় সব পত্রিকায় খুব আগ্রহভরে বিদেশী সংবাদ অনুবাদ করে প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশী পত্রিকার সাংবাদিকরা এই দ্বৈতসত্তা থেকে সরে এসে আক্ষরিক অনুবাদকে পরিণত হয়েছে। তারা কোনো কন্টেক্সট ছাড়া টুকরা টুকরা বিদেশী সংবাদ প্রকাশ করছে, ভুলে ভরা সংবাদ প্রকাশ করছে, শাব্দিক অনুবাদে সংবাদ প্রকাশ করছে। উদাহরণস্বরূপ উপরের ছবিটা দেখুন । দৈনিক মানবজমিনে আজকে প্রকাশিত সংবাদ এটি। এখানে দেখুন, মাইক্রোসফট এর পাশে ব্রাকেট এর মধ্যে লেখা হয়েছে এমএসএফটি. এ থেকে আপনারা কি বুঝলেন? আমার কাছে মনে হয়েছে এই তথ্যটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বহীন। পুরো সংবাদটা ঠিক আছে, সংবাদের গুরুত্ব অবশ্যই আছে, আমি বলছি ব্রাকেটের মধ্যে যেটা আছে, সেটা গুরুত্বহীন। ব্রাকেটের মধ্যের তথ্যটার কোনো দরকার ছিল না।

এই লেখার শিরোনামে বলেছি দুইটি কথা বলবো। এর মধ্যে একটা বলে ফেলেছি। ব্রাকেটের মধ্যের তথ্যটা গুরুত্বহীন। এইটা প্রকাশ করার কোনো দরকার ছিল না। এইটা আমার প্রথম কথা। কেন এই কথাটা বললাম জিজ্ঞেস করতেছেন ? আচ্ছা ঠিক আছে বলছি। গুগুল এ ডুকে একটু কষ্ট করে সার্চ দিন "MSFT"। কি দেখলেন? নিচের ছবির মতো কিছু একটা আসার কথা।


MSFT হলো আমেরিকান স্টক মার্কেটে মাইক্রোসফট এর স্টক এর সংকেত। আমেরিকান সংবাদপত্র গুলোতে কোনো কর্পোরেশন এর সংবাদ ছাপা হলে তাদের নামের সাথে সাথে তাদের স্টক এর নাম ও দেয়া হয়। বিশেষ করে অনলাইন সংবাদ এ এই ফিচারটা অনেক সুবিধাজনক। পাঠক এই সংকেতের উপর ক্লিক করলেই স্টক বিভিন্ন তথ্য দেখতে পায়। যেহেতু বাংলাদেশে বসে কেউ মাইক্রোসফট এর স্টক কিনে নাই ধরে নেয়া যায় , আমার কথা হলো এই তথ্য বাংলাদেশী পত্রিকায় দেয়ার দরকার ছিল না।
তারপর ও যদি দিতে হয়, এই MSFT কে বাংলাতে অনুবাদ করার কোনো দরকার ছিল না। এইটাই আমার দ্বিতীয় কথা। এই অনুবাদ এখানে যে শুধু বেদরকারী তা নয়, অনুবাদ সংস্কৃতিতে যদি কোনো ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট থাকতো, তাহলে এই অনুবাদকরে সেই পানিশমেন্ট দেয়া দরকার। কারণ এই অনুবাদ আসল লেখার পুরো উপযোগিতাটাই নষ্ট করে দেয়। এই অনুবাদকে "অনুবাদ আইনে অপরাধ" হিসেবে ঘোষনটা করা যায়।

অনুবাদ সাংবাদিকতার এইটা একটা উদাহরণ মাত্র। কমবেশি সব পত্রিকাতেই এইরকম উল্টাপাল্টা অনুবাদ সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। একদিন দেখলাম একটা খবরে প্রকাশ, কে যেন কাকে বিড়াল ডেকেছে। পরে আসল খবর পরে দেখলাম, কেউ একজন আরেকজনকে বলেছে "You are a pussy"। এখানে ইংরেজিতে pussy আর বাংলাতে বিড়ালের মধ্যে অনেক পার্থক্য। এই pussy কে কেউ যদি বাংলাতে অনুবাদ করে "বলদ" কিংবা "কাপুরুষ" বলে তাহলে একটা কথা ছিল, তাই বলে বিড়াল?

শেষকথা হলো, এইসব সাংবাদিকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। উনারা কি হাইস্কুল পাশ করেই সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দিয়েছেন? কারণ হাইস্কুল পর্যন্ত আমাদের আক্ষরিক অনুবাদ শিখানো হয়েছে। নিশ্চিত এইসব সাংবাদিকরা হাইস্কুল এ খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। পরে কোনো কারণে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেনি, ইনকাম এ ডুকে গেছেন। অথবা অন্য কিছু?
আপনাদের কি মনে হয় জানান। আমার ধারণায় ভুল থাকতে পারে। বিস্তারিত ভুল ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ রইল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:২৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×