somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাক-স্বাধীনতাঃ সরকার এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



খুব সম্প্রতি (বাংলাদেশ সময় ২রা জানুয়ারি, সোমবার) জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার আমেরিকান আইনপ্রণেতা মারজরি টেইলার গ্রীন এর একাউন্ট পাকাপোক্তভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে এই প্লাটফরমে ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ আরও কয়েকজন জনপ্রিয়* রাজনীতিবিদের একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বিস্তারিত দেখুন নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই খবরে

https://www.nytimes.com/2022/01/02/technology/marjorie-taylor-greene-twitter.html

উল্লেখ্য, বিভিন্ন বিষয়ে শৃংখলা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কাতারে টুইটার একাকী নয়, বরং ইউটিউব, ফেসবুকসহ আরও অনেক সামাজিক প্লাটফরম এইরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২০২১ সালে এসে করোনাভাইরাসের বিস্তার, প্রতিরোধ, এবং প্রতিকারের বিভিন্ন উপায়কে রাজনৈতিকভাবে মেরুকরন করায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বুদ্ধিজীবিরা করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধের অন্তরায় হিসেবে প্রাথমিকভাবে এইসব বিভ্রান্তিকে দায়ী করে। আমেরিকাসহ অন্যান্য উন্নতবিশ্বের দেশগুলোতে টীকাবিরোধী আন্দোলন (ভ্যাক্সিন হেজিটেন্সী) উস্কে দেয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনীতিবিদ মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য তাদের সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। যেমন, ক্ষমতায় থাকাকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকান চিকিৎসকদেরকে মাউথওয়াশ পান করার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমন প্রশমন করা যায় কিনা পরীক্ষা করে দেখতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিছু রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবি ঘোড়ার জন্য প্রস্তুতকৃত আইভারমেক্টিন ওষুধ দিয়ে মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা করতে জোর দিয়েছিলেন। তার উপর, করোনাভাইরাসের টীকার মাধ্যমে মানবশরীরে মাইক্রোচিপ স্থাপনের অভিযোগ অনেক পুরোনো। এর বাইরেও কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা "টীকার প্রমানপত্র" বা "ভ্যাকসিন পাসপোর্ট" বহনের আইডিয়াকে মানবজাতির উপর আল্লাহ (গড) প্রদত্ত স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী বলেও মতামত প্রকাশ করেছেন। এইসব রাজনৈতিক মেরুকরন করোনা মোকাবেলাকে সংকটময় করে তুলছে দেখে অনেক সামাজিক ওয়েবসাইট তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য বিভিন্ন ব্যবহারবিধি (ইউজার গাইডলাইন) বানিয়েছে। রিপ্রেজেন্টেটিভ গ্রীন এইসব ব্যবহারবিধি পরপর পাঁচবার লঙ্গন করে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হলেন আজ। টুইটারের এই আচরন বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন মিস. গ্রীন এর রাজনৈতিক সমর্থকেরা।

এব্যপারে টুইটারের পক্ষে কেটি রসবোরো বলেছেন, "আমরা পরিস্কারভাবেই বলে দিয়েছিলাম, পরপর পাঁচবার নীতিমালা ভংগ করলে তার একাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে"। তবে মারজরি গ্রীন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে টুইটারের কাছে আপীল করতে পারবেন। টুইটারের কাছে আপীল, সরকারী কোন আদালতে নয়। পরবর্তীতে বিভ্রান্তি রোধে ব্যাপারটা একটু খুলে বললাম।

টুইটারের মত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এরকম নীতিমালা বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ কিনা সে ব্যাপারে "চায়ের কাপে ঝড়তোলা" আলোচনা অনেক পুরোনো। বিভিন্ন সময়ে আইনের ছাত্র-শিক্ষক এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ এই বিষয়ে মতামত দিয়েছে। আমেরিকান সংবিধান অনুযায়ী টূইটারের এই কর্মকান্ড "বেআইনী" নয়। আমেরিকান সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে বাকস্বাধীনতার যে অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সেটা সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রযোজ্য বলে গন্য হয়। যেমন, নিজের মতামত প্রকাশের জন্য সাধারণত সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান কোন নাগরিকের বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা নিতে পারবে না। ভিন্ন মতের কোন সংবাদ প্রচারে বাধা দিতে পারবে না, ভিন্ন মতের কোন যোগ্য নাগরিককে চাকরিবঞ্চিত করতে পারবে না, ইত্যাদি। এইসব বিধিনিষেধ সরকারের টাকায় চলে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের জন্যই শুধু প্রযোজ্য হবে। সেই হিসেবেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত জাঁদরেল প্রেসিডেন্টের একাউন্ট ব্লক করার পরেও এইসব সামাজিক মাধ্যমের বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হয়নি। মারজরি গ্রীনের একাউন্ট ব্লকের পর সেই বিতর্ক আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও মনে হয় না টূইটারের বিরুদ্ধে আইনি কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে।

বিশ্বের সব বড় বড় যোগাযোগমাধ্যম গুজব ছড়ানো প্রতিরোধে তাদের ইউজার গাইডলাইন নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। তারা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, গুজব কখনো বাকস্বাধীনতার অংশ নয়। বাকস্বাধীনতার নামে কমিউনিটি গাইডলাইন ভংগ করাকে তারা মেনে নিচ্ছে না সেটা ২০২১ সালে খুব ভাল করেই জানিয়ে দিয়েছে। ২০২২ সালের শুরুতেই টুইটারের এই শৃংখলামূলক কাজ এই বছরকেও মাতিয়ে রাখবে বলেই ধারনা করছি।

বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতার এই ব্যপারগুলো কিভাবে দেখা হয়? বাংলাদেশের সংবিধান এ বাকস্বাধীনতার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে কোন ধারা আছে কি? আইনী দৃষ্টিকোন থেকে বাকস্বাধীনতাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করে? আমি আইনের ছাত্র না হওয়ায় এই ব্যাপারে আমার প্রাতিষ্ঠানিক কোন জ্ঞান নাই। আপনি জেনে থাকলে এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার আহবান রইল। সামু ব্লগে অন্তত একজন আইনজীবি ব্লগার এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আর কেউ যদি এগিয়ে না আসে, অন্তত উনার প্রতি এই নগন্য ব্লগারের একটা দাবি রইল।

*জনপ্রিয়তা কখনো সততা কিংবা ভালোমানুষির মানদন্ড হতে পারে না। আমার এই লেখায় "জনপ্রিয়" শব্দের ব্যবহারকে ভিন্নভাবে না নেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ রইল। পৃথিবীর অন্যান্য যেকোন দেশের চাইতে আমেরিকার নির্বাচন সুষ্ঠু হয় সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। নির্বাচনের নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু নিয়ামানুগ নির্বাচনে হয়েছে কিনা এই প্রশ্নে আমেরিকা খুব বজ্র কন্ঠে "হ্যা" উত্তর দিতে পারে। সেরকম একটা দেশে ডোনাল্ড ট্রাম্প এর প্রেসিডেন্ট হওয়া, কিংবা লরেন বোবার্টের কংগ্রেসওমেন হওয়া চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, জনপ্রিয় মানেই ভালমানুষ না। সেকারনেই সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা মাথায় রেখে এই ব্লগে "জনপ্রিয়" শব্দের যথাযথ ব্যবহার হয়েছে কিনা সে বিতর্কে নিজের মতামত তুলে ধরলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:৩০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×