গরীব উল্লাহ শাহ'র (রহ.) মাজার
সম্রাট শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশিকোর ভৃত্য ছিলেন "রুই উল্লাহ" নামে এক তরুণ। দারাশিকো সামুগড়ের যুদ্ধে পরাজিত ও বন্দি হবার পর রুই উল্লাহ যোগ দেন আওরঙ্গজেবের সেনাবাহিনীতে। তখন দারাশিকোকে বন্দি অবস্থায় আওরঙ্গজেবের দরবারে নেবার উদ্যোগ নেয়া হলে তিনি যোগ দেন তার সঙ্গি হিসেবে। দারাশিকোর বন্দি জীবনে তিনি তার ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেন। পরে জাগতিক ভোগ-বিলাস, তার কাছে অর্থহীন মনে হওয়ায় তিনি সৈনিক জীবন থেকে বিদায় নেন। চলে যান পাটনায়। সেখানে গিয়ে তিনি ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করেন এবং আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ হযরত রুকন উদ্দীনের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি গরীবউল্লাহ শাহ (রহ.) হিসেবে বহুলভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সম্ভবত সপ্তদশ শতকের প্রথমদিকে তিনি চট্টগ্রামে আসেন এবং বর্তমানে জিইসি মোড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমের পাহাড় চূড়ায় ইবাদতের জন্যে উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করেন।
কালক্রমে তার পরিচিতি ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি সপ্তদশ শতকের শেষদিকেই ইন্তেকাল করেন। মাজার গড়ে ওঠার পর দেশ-বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ আসেন এখানে। সবধরনের মানুষই প্রতিদিন এ মাজারে আসছেন মানসপূরণ উত্তর কাঙ্গালীভোজ, ওয়াজ মাহফিল, খতমে কোরান ও জেয়ারতের মানতে।
জঙ্গলাকীর্ণ এ পাহাড়টি ছিলো মাত্র শতবছর আগেও জনমানবহীন। পুলিশ লাইনের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে সংশ্লিষ্টদের আসা-যাওয়া থাকলেও পুরো এলাকায়ই ছিলো ভীতিকর পরিবেশ। সপ্তদশ শতকের শেষদিকে গরীব উল্লাহ শাহ'র (রহ.) ইন্তেকালের পর থেকে মাজারে ভক্ত-অনুরক্তের আগমন বাড়তে থাকে। দেখা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই গরীব উল্লাহ শাহ'র মাজারে মনোবাসনা পূরণ ও ওয়াজ, কোরানখানি ও দোয়া মাহফিলসহ দান-খয়রাত, কাঙ্গালিভোজ অব্যাহত থাকে। মাজার জেয়ারতে আসা আমীন উল্লাহ নামে এক তরুণ জানান, সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বাদেও মাঝে মধ্যে তিনি মাজার জেয়ারতে আসেন। ধর্ম ও পীর-আওলিয়ার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভক্তিই তার প্রধান আকর্ষণ বলে জানান এ কলেজ ছাত্র।
আয়েশা আক্তার নামে এক গৃহিণী জানান, মনস্কামনা পূরণে তিনি এসেছেন। মাজার জেয়ারত ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেছেন। মাজারে ওঠার সিঁড়ির উত্তর পাশে রয়েছে কাঙ্গালিভোজ ও ছোটখাট ব্যক্তি উদ্যোগের "মানতি ভোজ"-এর রান্না-বান্নার ব্যবস্থা। বর্তমানে গরীব উল্লাহ শাহ (রহ.) মাজার-সিঁড়ি কার্যত ভিক্ষুকপূর্ণ হয়ে থাকে আগমনকারীদের কাছ থেকে দান-খয়রাতের বাড়তি প্রত্যাশায়। বৃহস্পতিবারে হয় ভক্ত ও ভিক্ষুকের বাড়তি ভিড়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১১:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




