somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজকে জুম্মায়...

০১ লা জুলাই, ২০২৩ রাত ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





১২টা ১৫ মিনিটে আজান শোনার পর মনে হলো আজ শুক্রবার। ছুটি চলাকালীন সময়ে দিন তারিখ বারের খোঁজ থাকে না। তারপর গতকাল গেল ঈদ। গোসল করে রেডি হয়ে মসজিদে যেতে দেরীই হয়ে গেল। ইতিমধ্যে রাস্তায়, বাসার সামনের ফাঁকা গলিতে মানুষ জায়নামাজ পেতে বসে পড়েছে। অনেকে নিজে বাসার সামনেই জায়নামাজ পেতেছে। সালাম ফেরানো মাত্রই টুক করে বাসাতে ঢুকে পড়বে। কষ্ট করে মসজিদে যাবার কি দরকার?

আমি জায়গা পেলাম তিনতলায় । বলাযায় তিনতলা পুরোটাই ফাঁকা। উপরে আরো দুইতলা আছে। নিজের তলায় দেখলাম দরজার বাইরে দরজায় জটলা। কাঁচের দরজা বন্ধ। ভেতরে এসি চলছে। বাইরে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে যদি কোনভাবে এসি রুমে ঢুকে পড়া যায়। আজ এমনিতেই ঠান্ডা ঠান্ডা তবুও এসি রুমে ঢোকার তোড়জোড়্ কেন বুঝতে পারলাম না।

সুন্নত আদায় করে বসলাম। সামনের কাতারে এক মানুষ কে লক্ষ্য করলাম। বয়স বেশি না মানে আন্ডার ৩০ হতে পারে । তিনি একজন ব্লগার। নিজের পা টা টানটান করার চেষ্টা করছে বারবার। পায়ে কোন সমস্যা আছে। এই ব্লগারকে আমি চিনি। তিনি তাকিয়ে আছেন জুতা স্যান্ডেল রাখার বাক্সোর দিকে। মানুষ ওখানে জুতা স্যান্ডেল রাখছে। উনি সেটা পর্যবেক্ষণ করছেন। হয়ত জুতা রাখা নিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাইকোলজি বোঝার চেষ্টা করছেন। এই বিষয়ে প্রশ্ন করে তিনি হয়তো ব্লগে একটা পোষ্ট দিবেন।

আমার বামপাশে তিনজন পরেই একজন মানুষ এসেছেন তাঁর ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে। মেয়েটির মাথায় সুন্দরভাবে হিজাব প্যাচানো। নিশ্চয়ই মেয়েটির মা যত্ন করে পড়িয়েছেন। তাঁর পাশের একজন কে বলতে শোনা গেল - 'ভাই আপনে তো নামাজ টামাজ পড়েন না। আজ জুম্মাবারে হুট করে মেয়েকে নিয়ে মসজিদে এলেন যে?'
প্রশ্ন শুনে মানুষটাকে মোটেও বিব্রত মনে হলো না । অযত্নে পরা মাথার টুপিটা ঠিক করতে করতে বললেন- "মেয়েটা নামাজে আসতে চাইলো। তাকে তো আর একা একা আসতে দিতে পারি না তাই বাধ্য হয়েই আমাকে আসতে হলো। আমি শুধু জুম্মাবারে নয় নিয়মিত মসজিদে আসবো যদি এটা রুমে লাইব্রেরির ব্যবস্থা করেন। সেখানে ধর্মীয় বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই থাকবে। নামাজের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন হবে। "
মেয়ে নিয়ে নামাজ পড়তে আসা এই ব্লগারকে আমি চিনি।

একেবারে সামনের কাতারে ডানপাশে এক কোনায় এক বাবা এসেছেন তার ছেলেকে নিয়ে। ছেলেটা বেশ ছোট। বয়স তিন চার বছর হবে। বোঝা যায় ছেলেটা বাপের পিছ ছাড়ে না। বাবা যেভাবে নামাজ পড়ছে ছেলেও তেমন করছে। আবার কখনো জায়নামাজ ছেড়ে নামাজরত বাবার পিঠে উঠার চেষ্টা করছে। এতো ছোটছেলেকে নিয়ে মসজিদে আসায় অনেক মুসল্লীকে বিরক্ত মনে হলো।
এই বাবাকে আমি চিনি। তিনি একজন ব্লগার। তার ব্লগে এই ছেলের কথা মাঝে মধ্যেই উঠে আসে। ছেলেকে দেয়ার জন্য তার একটা রাশিয়ান শৈশবও আছে।

খুতবার একামত শুরু হচ্ছে। জুম্মার খুতবা হলে অনেক মসজিদে লাল বাতি জ্বালিয়ে দেয়। নিচে লেখা থাকে - লাল বাতি জ্বলিলে নামাজের নিয়াত বাঁধিবেন না। এইটাইপ কিছু। কিন্তু অনেক কেই নিয়ত করে নামাজ পড়তে দেখা গেল। খুতবা শোনা নাকি ওয়াজিব। তাই খুতবা না শুনি নামাজ আদায় করা ঠিক কিনা, এটা জানতে কাউকে জিজ্ঞেসা করতে ইচ্ছা হচ্ছে। আমার ঠিক সামনে একজন দাঁড়িয়ালা , মোচ ছোট করা পুরদস্তুর ইসলামী পোশাক পড়া একজন মানুষকে দেখা গেল। তিনি একমনে খুতবা শুনছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে কিনা জানি না। তাঁকে আমি চিনি। তিনি একজন মাওলানা। একজন ব্লগার। তিনি আজ দেরি করে এসেছেন কেন বুঝতে পারছি না।

সালাম ফেরানোর সাথে সাথে মানুষের মধ্যে বাড়ির পথে পা বাড়ানোর তোড়জোর শুরু হলো। কেউ কেউ আবার সালাম ফেরানোর সাথে সাথেই সুন্নতের নিয়ত করে ফেলে। যারা বাসায় ফেরার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে তারা আর নামাজীর সামনে দিয়ে যেতে পারছে না। তাদের কে দেখে ভয়ঙ্কর অসহায় মনে হচ্ছে। মোনাজাত শুরু হয়েছে। অনেকেই একহাতে স্যান্ডেল আর অন্যহাতে মোনাজাত ধরে মসজিদ থেকে বের হচ্ছে।

নামাজ শেষ। সিঁড়িতে ভীষণ জটলা। মানুষ নামছে খুব ধীরে। পেছন থেকে বেশ বয়সী বেশ কড়া গলায় বলে উঠলেন- "মানুষ নিশ্চয়ই গেটের মুখে দান খয়রাত শুরু করেছে। একটু সরে গিয়ে এই কাজটা করবে তানা। ইডিয়ট, লিলিপুটিয়ান।"
উনাকে জুম্মাবারে মসজিদে দেখে অবাক হলেও পরে মনে হলো উনি তো ঈদের নামাজ পড়তেও গেছিলেন।

নিচে নেমে দেখি বৃষ্টি হয়েছিল খানিকটা। এখন থেমে গেছে। যে যার বাড়ি ফিরছে। বাপ ছেলেকে দেখলাম হেঁটে যাচ্ছে। ছেলেটা চলছে লাফিয়ে লাফিয়ে। জলকাদা ছিটছে। ছেলেটার চেয়ে ব্যাপারটা বাবা বেশী উপভোগ করছে । কারো কারো বাড়িতে প্রিয়জন অপেক্ষা করছে। টেবিলে খাবার সাজানো। নানান রকম খাবার। আমার কোথাও ফেরার নেই। আমার জন্য খাবার সাজিয়ে কেউ অপেক্ষা করে না। না আছে খাবারের গন্ধ না আছে খিদে। আমাকে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম। আমার দিকে কেউ তাকিয়ে আছে। আমার দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে খুব ভয় হয়। ইতস্ততবোধ করি।




ছবিঃ সংগ্রহ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২৩ রাত ২:২৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×