somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

» ফ্রেমবন্দির গল্প-৪

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


©কাজী ফাতেমা ছবি
=ফ্রেমবন্দির গল্প=
তো বলছিলাম, সেই ইস্পাহানী ইসলামীয়া চক্ষু হাসপাতালের কথা। এই হাসপাতালে আমার আম্মার চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছিলাম গত এপ্রিলে। সেই সুবাধে সেখানে দুই দিন দুই রাত থাকতে হয়েছে। সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়েই আজকের গল্প বা আবোল তাবোল কথা।

সেই হাসপাতালে আমার ক্লাসমিটের ছোট ভাইও ডাক্তারি করেন। প্রথমে ভাবছিলাম আত্মীয় পরিচয়ে না দেখানোই ভালো। এমনিতেই দেখাই। এমন করেই কয়েকদিন দৌঁড়াদৌঁড়ির পর গিয়ে তার স্মরণাপন্ন হয়েছিলাম। প্রথম দিকে অপারেশনের ডেট কিংবা কাগজপত্রের দৌঁড়াদৌড়িতেঁ কষ্ট হচ্ছিলো খুব। এরা সহজেই রোগী বা রোগীর সাথে যারা তাদের তেমন পাত্তাই দেয় না বা বুঝিয়ে কিছুই বলে না। অপারেশন লাগবে সেটা আমরা আগে থেকেই জানি। এখন শুধু ডেট দিবে । কাগজপত্র দেখে বললো আপনারা অমুক তারিখ আসুন সব গুছিয়ে, এই রাতেই ভর্তি হবেন। এ অপারেশন করতে এমন খরচ লাগবে তারা বললো। কী হুকের কথা বললো তাতে আরও দুইহাজার বেশী লাগবে। আমরাও সেই মতে এসে হাজির সেই তারিখে, কিন্তু কাগজপত্র নিয়ে যে নার্স না এদের কে কী বলে কী জানি, এমন গোলাপী ড্রেস পরা মেয়েগুলো এখানে সেখানে চেম্বারে বসা। এক জায়গা থেকে অন্যজায়গায় যেতে আসতে তাদের সাথে দেখা এবং কথা। সেই নার্সের কাছে আসলাম সে বলেছিলো অমুক তারিখ আসুন, সে এখন বলে কই আমি বলেছি আপনারা এই তারিখে আসবেন, এই কয়েক তারিখে ডাক্তারের সিরিয়াল নাই অপারেশনের। সব গুছিয়ে আমরা গিয়েছিলাম। মেজাজটা গরম হয়ে গেলো। আবার তারাই বললো যে, যে হুকের দাম দুই হাজার টাকা সেই হুকের দাম নাকি এখন ৫ হাজার টাকা। দশ বারো দিনের মাঝেই তিন হাজার টাকা বেড়ে গেলো।

ঠিক তখনই সেই ছোট ভাইয়ের স্মরণাপন্ন হলাম। তিনি আগামীকালের ডেট দিলেন। গেলাম পরেরদিন। সব কাগজপত্র দেখে অপারেশনের ডেট দিয়ে সেই মেয়েটার কাছে পাঠালেন। সেই মেয়ের কাছে গেলেই আদর যত্ন সহকারে আমাদের কাগজপত্র দেখলো এবং অপারেশনের খরচও কমালো। সেই হুকের কথা সে বললোই না। সে সময় ক্যাবিন না থাকায় আমরা ওয়ার্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। তারিখ অনুযায়ী আম্মাকে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। আগের দিন রাত ভর্তি পরের দিন অপারেশন। বেডে ভর্তি হইলো আম্মা আর আমি সাথে থাকবো। কিন্তু ওয়ার্ডের ভিতর রোগী ছাড়া অন্য কাউকে থাকতেই দিচ্ছিলো না, আর ছোট ভাই তো ভিতরেই ঢুকতে পারছিলো না। ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা বাইরে বসে থেকেছি। সে সময় প্রচুর গরমও ছিলো।

রাতে আমি ছাড়া কাউকে থাকতে দেবে না তাই ছোট ভাই চলে গেলো বাসায় । আমি আর আম্মা রয়ে গেলাম সেখানে। রাত যখন বারোটা তখন আমি ওয়ার্ড হতে বের হলাম। চারিদিকে কী সুনসান নিরবতা মাগো মা......... আর কী যে সুন্দর পরিবেশ।মুহুর্তেই মন ভালো হয়ে গিয়েছিলো আমার। অনেক লম্বা করিডোর ধরে হাঁটলাম আধাঘন্টা। রাতের হাঁটা আমার এখানেই হয়ে গেলো।

একসময় ঝড়ও আসছিলো, বৃষ্টিও হয়েছিলো প্রচুর। ঝড়ের পর গিয়ে দেখি নিচের ফুলবাগান তছনচ। টবগুলো উল্টে পড়ে আছে। তবে রঙিন আলোতে তখনো সব ঝকমক করতেছিলো। সবুজ ঘাস আরও সবুজ দেখা যাচ্ছিল। কতক্ষণ ছবি তুললাম, ভিডিও করলাম। একা একা নিচে গিয়ে হাঁটলাম। মাঝে মাঝে আম্মাকে দেখে গেলাম। পরের দিন অপারেশন হয়েছিলো। আলহামদুলিল্লাহ আমার সেই ছোট ভাইই যত্ন সহকারে আম্মার অপারেশন করেছেন। আরেকটা চোখ তিনিই অপারেশন করবেন তবে সেটা আমাদের হবিগঞ্জ শহরেই। আল্লাহ ভরসা। পরেরদিন রাত আবারও সেই দুর্দশা আমি আমার ছোট ভাই ওয়ার্ডের ভিতর প্রবেশ করতে না পারায়, গিয়ে নিচে বসে চা কফি খেলাম। ভাইবোন মিলে অনেকক্ষণ ছবি উঠালাম। মাছের একটা একোরিয়াম ছিলো তার কাছে দাঁড়িয়ে মাছ দেখেছিলাম অনেকক্ষণ। ছবি আর ভিডিও কিন্তু করেছিলাম। শুধু যে রাতের ছবি তুলেছি তা কিন্তু নয়। দিনে ফুলের ছবি উঠিয়েছি, তা না হয় আরেকদিন দেবো। খুবই মনোরম পরিবেশ সেখানে রাতের বেলা। অথচ দিনের বেলা এত মানুষ, গিজগিজ করে। এতটুকুন জায়গা থাকে না পা ফেলার।

একটা দু:খের কথা হলো, সেই হাসপাতালে মেয়েদের জন্য নামাজের কোনো জায়গা করেনি বা রাখেনি। এতমানুষের মাঝে কী যে ক্ষ্ট করে নামাজ পড়তে হয়েছিলো। এমন একটা জায়গা নেই যেখানে চেয়ারে বা টুলে বসে নামাজ পড়া যাবে। নার্সদের বলে কয়ে তাদের বসার চেয়ার নিয়ে চিপাচাপা খুঁজে সবাই নামাজ পড়েছিলো। অথচ সেই হাসপাতালের নাম ইসলামীয়া চক্ষু হাসপাতাল। এটা একটা অন্যায় কাজ আমার ভালো লাগেনি ব্যাপারটা। মেয়েদের জন্য সব জায়গাতেই নামাজের জায়গা করে রেখেছে। এই পর্যন্ত যতগুলো হাসপাতালে থাকা হয়েছে বা গিয়েছি তার মধ্যে এই হাসপাতাল আর শিশু হাসপাতাল এই দুইটাতে নামাজের জায়গা করে রাখেনি কর্তৃপক্ষ। সেইখানকার কিছু স্মৃতি নিয়ে দুইদিন পর ফিরে এসেছিলাম সহিসালামতে আম্মাকে নিয়ে বাসায়। ভালো থাকুন সবাই। ফি আমানিল্লাহ।

১। নিচে বসার জায়গায় ওখানে ব্যাঙের ছাতা গজিয়েছে, ঘাসের ফঁাকে ফাঁকে দেখতে ভালোই লেগেছিলো।



২। বসার জায়গায় লাইটিং সিস্টেম খুব সুন্দর রাত



৪।



৬। নিরিবিলি রাত



৭। একুরিয়াম



৮। মাশরুম



৯। রঙিন মাছ



১০। বাহিরের রাস্তা, রাত দশটার পরও ব্যস্ত



১১। একটু পরেই রাস্তা কিছুটা নিরব



১৩। হাসপাতালের ভিতর



১৪। একটু কাছ থেকে তোলা



১৫। লাইটিং রাস্তা



১৬। একেকসময় একের রঙের লাইট



১৭। ঝড়ের পর অবস্থা



১৮। দূর থেকে একটি মসজিদের মিনার



৫। রাতের বেলা




১৯। সুনসান করিডোর



২০।এই করিডোর দিয়ে হেঁটেছি



অট: নামাজের কথা বলেছি বলে মনে করবেন না এটা প্রচারের জন্য সরি, শুধু বলতে চেয়েছি নামাজের জন্য ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিলো সেখানে। যদি কর্তৃপক্ষের নজরে পড়তো বিষয়টি ভালো হতো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:৫২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×