somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাকরির বয়স বাড়ানোর জন্য রাজপথে আন্দোলন যে কারণে গ্রহণযোগ্য নয়

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের মোট দেশজ আয়ে শিশু শ্রমিকদের অবদান কত সে বিষয়ে কোথাও কোনো পরিসংখ্যান নেই, থাকলে হয়ত আমরা চমকে উঠতাম, লজ্জ্বা না পেলেও লজ্জ্বা পাওয়ার ভাণ করতে বাধ্য হতাম। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পরিচালিত জাতিয় শিশু শ্রম জরিপের তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু নানা ধরনের শ্রমের সাথে জড়িত। এর মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশুই ঝুঁকি পূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। তবে এই পরিসংখ্যানের সাথে আমরা যারা শিশুশ্রম নিয়ে কাজ করি তাদের দ্বীমত রয়েছে। সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি হবে।
অন্যদিকে বাংলদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সারা দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার ছিল। বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত তরুণ-তরুণী অর্থাৎ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। নিশ্চয়ই এখানে শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কারণ, তাদেরকে শ্রমশক্তি ধরা হয় না। অর্থাত শ্রমশক্তিই নয় যারা তারা কর্মে জড়িত আছে এমন সংখ্যা হচ্ছে ৩৪ লাখ (সরকারি হিসেব মতে) আর বেকার বলা হচ্ছে সরকারি জরিপে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার লোককে। অদল বদল করে নিলে কি আর বেকার থাকে?
এটা তর্কের খাতিরে বলা, নিজেদেরকে লজ্জ্বা দেওয়া জন্য বলা। মূল সংকটের জায়গাটি আরো গভীরে, আরো বিস্তৃত। এটা কি কোনো কাজের কথা হতে পারে যে ত্রিশ বছর পর্যন্ত আমরা শুধু পড়াশুনাই করব সার্টিফিকেট অর্জন এবং একটি চাকরি পাওয়ার জন্য? সরকারি হিসেবে দেশে বর্তমানে গড় আয়ু বলা হচ্ছে ৭২.৩ বছর। তবে প্রকৃতপক্ষে এটি কতটা যুক্তিযুক্ত সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ রয়েছে। এটিকেই যদি সঠিক ধরি, তাহলেও কী দাঁড়াচ্ছে? জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় আমরা ব্যয় করছি কোনো উৎপাদনশীল কাজ না করে! এটা কি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে? মূল বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি -উভয় জায়গাতেই বড় ধরনের গলদ রয়েছে।
পড়াশুনার পর্ব বেশিরভাগের ক্ষেত্রে যেমন বিশ বাইশের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়া দরকার, পাশাপাশি মাধ্যমিক পাশ করবার পর থেকেই কোনো না কোনো উৎপাদনশীল বা জীবীকা নির্ভর কোনো কাজে প্রত্যেকের যুক্ত হওয়া দরকার।
দেশের বড় সংকট তাই কোটা কিংবা চাকরির বয়স নয়। যারা এসব আন্দোলন করছেন তারা দেশের সংকটগুলোকে কীভাবে বোঝেন বা আদৌ বুঝতে চান কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। চাকরির বয়স বাড়ানো কোনো আন্দোলনের বিষয় হতে পারে না। এই আন্দোলনটা বড়জোর ভার্চুয়ালি হতে পারত, এজন্য রাজপথে নামার দরকার ছিল না। বরং সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং সরকারের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথে নামা দরকার। চাকরির বয়স বাড়ানো না বাড়ানো বিশেষজ্ঞদের হোমওয়ার্কের বিষয়।
“চাকরির বয়স ত্রিশ হওয়াতে ৩০ বছর পর্যন্ত অকর্মণ্য হয়ে থাকতে হয় এখন, চাকরিতে ঢোকার বয়স ৩৫ করলে তো ৩৫ পর্যন্ত গাইড বই নিয়ে দৌঁড়াবে সবাই। লাভ কী হবে তাতে?” মূল কথা হচ্ছে, কিছু সংখ্যক মানুষের ব্যক্তিগত সংকটকে জাতীয় সংকট হিসেবে দেখানোর সুযোগ নেই।
এটা সত্য যে বিপরীত কিছুও হবে। অনেকেই উদ্ভাবনী কিছু করার চেষ্টা করবে। ভাববে, বয়স তো অনেক আছেই, নিজের পথে কিছুদিন চেষ্টা করে দেখি, ব্যর্থ হলে তখন চাকরিতে ঢোকা যাবে। তবে এরকম ভাবনার মানুষ তৈরি হবে খুব কম। বেশিরভাগই ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত বেকার থাকতে চাইবে! তাই নয় কি?
আন্দোলনকারীরা হয়ত ভাবছে বেশি সময় পাওয়া গেলে অনেক বেশি পড়াশুনা করে চাকরি একটা পাওয়াই যাবে, আসলে কি তাই? চাকরির ক্ষেত্র যদি না বাড়ে তাহলে প্রতিযোগিতা কমবে কীভাবে বয়স বাড়ালে? বিষয়টা তো সবার জন্য একই থাকছে। তাছাড়া এত কষ্ট করে চাকরি পাওয়া চেয়ে অন্য কিছু করাই তো ভালো। প্রত্যেকের স্ব স্ব মেধা থাকে, কিন্তু পড়াশুনার মেধাটা সবার থাকে না। তাই সবাইকে এ প্রতিযোগিতার মধ্যে টেনে না আনাই ভালো। হিসেবে করে দেখেছেন কি যে দশ বছর বেকার থাকলে তাতে জীবনের যে ক্ষতি হয় ৩৫ বছর বয়সে চাকরি পেয়ে কি সে ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়া যায়? বিয়ে থা, বাচ্চা কাচ্চা -এসব তাহলে কোন বয়সে হবে?
আমিও চাকরির বয়স বাড়ানোর পক্ষে, তবে আমি মনে করি চাকরিতে ঢোকার কোনো বয়সই থাকা উচিৎ নয়। ৫০ বছর বয়সে গিয়ে যদি কারো মনে হয় সে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হবে তাহলে রাষ্ট্র কেন বাধা হয়ে দাঁড়াবে? অবসরের বয়স থাকবে, কিন্তু সেনাবাহিনী, পুলিশ -এরকম বিশেষ কিছু ক্ষেত্র বাদে চাকরিতে ঢোকার কোনো বয়স থাকবে না। বিশেষ করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষক হবার বয়স সীমা উন্মুক্ত রাখার কথা ভাবা যেতেই পারে। কিন্তু আমাদের মত নিম্ন আয় এবং বর্ধিত জনসংখ্যার দেশে এরকম ভাবনা বিপরীত যুক্তিতে খুব বেশি হালে পানি পাবে না, যদিও পৃথিবীর অনেক দেশে এরকম নজির আছে যে যে কোনো বয়সেই অনেক চাকরিতে প্রবেশ করা যায়।  
তবে মূল সমাধানটা লুকিয়ে আছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মধ্যে। পারিবারিক এবং সামাজিক শিক্ষায় পরিবর্তন আনার মধ্যে। সর্বাধিক কর্মক্ষম বয়স (১৬ থেকে ৩৫), এই বয়সটুকু শুধু মুখস্থ করে আর ঘুরেফিরে কাটিয়ে দেওয়ার আমাদের যে সংস্কৃতি -এ সংস্কৃতি ভাঙতে হবে। শিশু শ্রম না হলেও (বাধ্যবাধকতা নয়) শিশু বয়স থেকেই কর্মমুখী কাজে যুক্ত হওয়ার শিক্ষা আমাদের পাঠ্যসূচীতে থাকতে হবে।
বিষয়টি সরকারের পরিকল্পনার মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়। ছাত্রাবস্থায় যারা কর্মে যুক্ত হবে পড়াশুনার ক্ষেত্রে তাদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়। সামাজিকভাবে তাদেরকে মর্যাদার জায়গায় নিয়ে আসা যায়। এটি করতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য যেমন অভিজ্ঞ এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে, পাশাপাশি এর প্রভাব দেশজ  উৎপাদনের ওপরও ইতিবাচকভাবে পড়বে।


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৪
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×