somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী-ঈশ্বরকে মাটিচাপা দেয়ার জন্য শুধু পুরোহিতরা নয় প্রত্নতাত্ত্বিকরাও দায়ী

০৫ ই মে, ২০০৭ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(নারীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে একক ঈশ্বরের প্রবক্তারা-৩)
মূল কথা ছিল নারীপ্রধান ‌বা মাতৃতান্ত্রিক একটা সমাজ যদি আদিকালে থেকে থাকে তবে সে সমাজে মাতৃমূর্তি বা নারী-ঈশ্বর বা দেবীদের উপাসনা হওয়ারই কথা। এখন আমরা একক ঈশ্বরের ধারণা পৃথিবীতে চালু হওয়া ও তার সাথে মহাদেবী বা নারী-ঈশ্বর পূজার বিরোধের সন্ধান করতে পারি।

বাইবেল ও কোরানে আদম-ইভের যে ঈশ্বরের গল্প আমরা পাই তার বয়স মানুষের চেয়ে অনেক কম। নবী মুহাম্মদকে আদমের ২৫ তম প্রজন্ম ধরে আদম ও তার সন্তানদের বয়সে উদার হাতে গ্রেস দিলেও আদমের স্বর্গপতনের ইতিহাস ৪৫০০ বছরের বেশি পুরনো বানানো যায় না। তবে ইসরাইল-আরবের এই ঈশ্বরের আগেও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানবগোষ্ঠীর মধ্যে একক-পুরুষ-ঈশ্বরের যে গল্পকথা শোনা যায় তা প্রায় ১৪ হাজার বছরের পুরনো। অর্থাত্ আদমের ঈশ্বরের চেয়েও সে ঈশ্বর দশ হাজার বছর পুরনো।

কোনো সন্দেহ নেই, ঈশ্বরের ধারণা পৃথিবীর এক বিন্দুতে জন্ম হয়ে পরে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে নি। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আলাদা আলাদা করে তাদের ঈশ্বর কল্পনা করেছে। এতো বিজ্ঞানের সূত্র নয় যে সর্বত্র একই যোগফল হবে। ধর্ম বরং কলা বা মানবিক শাখার মত; বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বিভিন্ন ভাবে ছবি আঁকবে বা কবিতা লিখবে, গল্প ফেনাবে। গোল বাঁধিয়েছেন কার্ল মার্কসের দেশি ফাদার উইলহেম স্মিদ। ১৯১২ সালে তিনি বই লিখলেন ‘দি অরিজিন অভ দি আইডিয়া অব গড‘। এতে তিনি তত্ত্ব দিলেন প্রিমিটিভ মনোথিইজমের। যার মোদ্দা কথা হচ্ছে পৃথিবীর সব অঞ্চলের সব আদিবাসীদের ধর্ম শুরু হয়েছে একজন আকাশ-ঈশ্বরের কল্পনা থেকেই। অন্যান্য দেব-দেবী যুক্ত হয়েছে পরে। যদিও স্মিদ, ক্যাথলিক ফাদার ছিলেন, যদিও তিনি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করতেন না, যদিও তিনি ফ্রয়েডকে গাল-মন্দ করতেন, তবু্ও তার এই তত্ত্ব চার্চ পার হয়ে সমাজবিজ্ঞানের অনেক শাখায় স্থায়ীত্ব পেয়েছে।
http://en.wikipedia.org/wiki/Wilhelm_Schmidt

নৃতাত্ত্বিকরা অনেক আদিবাসী সমাজে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন যে তারা দূরবর্তী এক আকাশ-ঈশ্বরের কথা বলে তবে সে ঈশ্বর মানুষের কোনো কাজে সাড়া দেয় না বলে তারা বিভিন্ন শক্তির দেব-দেবী মূর্তি পূজা করতে বাধ্য হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ বিবৃতদাতার তাদের এসব আকাশ-ঈশ্বরের যে বর্ণনা দেয় তাতে পুরুষালী বৈশিষ্ট প্রধান, সুতরাং আদিম ঈশ্বরের একটা পুরুষমত ধারণা আমরা পাই।

http://en.wikipedia.org/wiki/Plutarch
এর বিপরীতে আমরা নারী-ঈশ্বর, মহাদেবীর কিছু কাহিনীও পাই। কিন্তু পুরুষ-প্রধান সমাজ ব্যবস্থায় নারী-ঈশ্বরের কথা কেউ জোরালো কণ্ঠে বলে না। তবু্ও ১০০ খ্রিস্টাব্দে গ্রিক ঐতিহাসিক প্লুটার্ক মহাদেবী ইসিস-কে চিহ্নিত করেন প্রকৃতির নারী উপাদান হিসেবে। প্লুটার্কের মৃত্যুর সময়কালে আরেক গ্রিক দার্শনিক এপুলিউস ‘দি গোল্ডেন এ্যাস‘ নামে এক বই লেখেন সেখানে দেখা যায় মহাদেবী ইসিস বলছেন:
‘আদিম ফ্রাইজিয়ানরা আমাকে ডাকতো পেসিনানটিকা, দেবতাদের মাতা; এথেন্সবাসী আমাকে ডাকে সেক্রোপিয়ান আর্টেমিস, সাইপ্রাস দ্বীপের বাসিন্দাদের কাছে আমি পাফিয়ান আফ্রোদিতি, ক্রিটের শিকারীদের কাছে আমি ডিকটায়ানা, ত্রিভাষী সিসিলিয়ানদের কাছে প্রোসারপাইন। কেউ আমাকে চেনে জুনো নামে, কেউ চেনে বেলোনা নামে, কিন্তু ইথিওপিয়ানদের দুই গোত্র আর মিশরবাসী, যারা আদি বিদ্যায় বুত্পত্তি অর্জন করেছিল, ...তারা আমাকে ডাকে আমার আসল নামে, রাণী ইসিস।‘

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নারী-ঈশ্বর,মহাদেবী বা দেবীর পূর্ণাঙ্গ নামের তালিকার জন্য এই ওয়েবসাইটটিতে ঢুঁ মারতে পারেন:
http://www.mothergoddess.com/

অনেকেই অভিযোগ তোলেন, (এই ধারাবাহিক সম্পর্কে মন্তব্যতে সম্ভবত: যূথচারী বলেছিলেন) কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক খননেই নারী-‌ঈশ্বর বা মহাদেবীর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কথাটা অসত্য এবং ভুল তত্ত্বের কারণে বিভ্রান্তিতে সৃষ্ট মতবাদ। প্যালিওলিথিক যুগের খনন কাজে শুধু ইউরোপের ৩ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে প্রায় ১ হাজার নারী মূর্তি বা ছবির সন্ধান পাওয়া গেছে। যেগুলোর কিছু কিছু ২৭,০০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দের।

http://en.wikipedia.org/wiki/Marija_Gimbutas
সমস্যা হচ্ছে এসব নারী-মূর্তি বা ছবির ব্যাখ্যায়। কেউ ব্যাখ্যা দিয়েছেন এগুলো কোনো বিশেষ নারীর প্রতিকৃতি, কোনো প্রাচীন সুন্দরী রমণীর ভাষ্কর্য, অথবা গ্রাগৈতিহাসিক পর্ণোগ্রাফি বা ইরোটিকা। আজ থেকে ৩০ হাজার বছর আগের মানুষ ইরোটিকার জন্য নারী-মূর্তি বানাতো এ শুধু পুরুষ প্রত্নতাত্ত্বিকদের পক্ষেই কল্পনা করা সম্ভব। এখানেই প্রমাণ, শুধু ধর্ম নয়, বিজ্ঞানও নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, যেহেতু কিছু পুরুষরা এর নেতৃত্বে ছিল বলে। মাত্র বিংশ শতাব্দীতে এসে প্রত্নতাত্ত্বিক মারিয়া গিমবুতাস (১৯২১-১৯৯৪) ব্যাখ্যা দিলেন যে এসব মূর্তি হচ্ছে মিথোলজিক্যাল চরিত্র এবং বিভিন্ন ঋতুতে বা বিভিন্ন মিথকে পুনরানুষ্ঠান করার আশায় এসব মূর্তি ব্যবহৃত হতো। মারিয়া প্রথম ব্যাখ্যা দেন যে, প্রাচীন ইউরোপ ছিল নারী-ঈশ্বর/মহাদেবী কেন্দ্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক। অন্যদিকে ব্রোঞ্জ যুগের ইন্দো-ইউরোপিয়ান সমাজের সংস্কৃতি ছিল পিতৃতান্ত্রিক।বলাবাহুল্য, তার ব্যাখ্যা অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কিন্তু মারিয়া মানুষের ইতিহাসে নারী ও নারী-ঈশ্বরের নতুন অবস্থান তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

এখন অনেকেই মনে করেন যে, এসব নারী-মূর্তির সাথে জমির উর্বরতা প্রার্থনা, নারী দেবীদের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা, ঋতু-উপাসনা এবং মহাদেবী পূজার যোগসূত্র রয়েছে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এপিআই প্ল্যান্ট

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৮




ওষুধে দুটো উপাদান থাকে। ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলে, যেমন— স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার।

এপিআইয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে ভারত-আফগানিস্তান মিলে পাকিস্তানকে ভাতে ও পানিতে মারতে পারে

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৪


যুদ্ধ শুধু অস্ত্র দিয়ে হয় না, বুদ্ধি দিয়ে হয়। সিন্ধু নদীর শাখা নদী হচ্ছে ৬টি।এর মধ্যে তিনটি নদী রাবি, বিয়াস এবং শতদ্রু এই তিনটি নদী ভারতের ভেতরে অবস্থিত।এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান আর চালাক হলো না!

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৬


ওরা আগেও বলদ ছিলো, এখনও আছে। এই বক্তব্যর পর ভারত এখন আরও জোর গলায় বলবে যে কাশ্মীরের সাম্প্রতিক হামলা পাকিস্তানের ইন্ধনেই হয়েছে এবং ফুল ফোর্স নিয়ে স্ট্রাইকে গিয়ে কাশ্মীরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ছবিটি http://www.gettyimages.com থেকে সংগৃহিত।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক নৈকট্যের গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:১৬


কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় এবং ভারত বিদ্বেষী(যৌক্তিক কারণ আছে) হওয়ায় এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×