অসমাপ্ত আত্মজিবনি –
আমাদের দেশে যে আইন সেখানে সত্য মামলায়ও মিথ্যা সাক্ষী না দিলে শাস্তি দেওয়া যায়না । মিথ্যা দিয়ে শুরু করা হয়, আর মিথ্যা দিয়ে শেষ করতে হয়। যে দেশের বিচার ও ইনসাফ মিথ্যার উপর নির্ভরশীল সেদেশের মানুষ সত্যিকারের ইনসাফ পেতে পারে কি না সন্দেহ ! (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা : ১৯০) ০১
পাকিস্তানে যে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে, তাতেই আমাদের ভয় হল। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে গুলি করে হত্যা করা যে কত বড়ো জঘন্য কাজ তা ভাষায় প্রকাশ করা কষ্টকর । আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তারা এই সমস্ত জঘন্য কাজকে ঘৃনা করি । খাজা নাজিমুদ্দিন সাহেব তার মন্ত্রিত্বে একজন সরকারি আমলাকে গ্রহণ করলেন, তার নাম চৌধুরী মোহাম্মদ আলী । তিনি পাকিস্তান সরকারের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন । তাকে অর্থমন্ত্রী করা হল। এরপর আমলাতন্ত্রের প্রকাশ্য খেলা শুরু হল পাকিস্তানের রাজনীতিতে । একজন সরকারি কর্মচারী হলেন গভর্নর জেনারেল, আরেকজন হলেন অর্থমন্ত্রী । খাজা সাহেব ছিলেন দুর্বল প্রকৃতির লোক । তিনি অনেক গুনের অধিকারী ছিলেন, তবে কর্মক্ষমতা এবং উদ্যোগের অভাব ছিল । ফলে আমলাতন্ত্র মাথা তুলে দাড়াল । বিশেষ করে যখন তাদেরই একজনকে অর্থমন্ত্রী করা হল, অনেকের মনে গোপনে গোপনে উচ্চাশারও সঞ্চার হল । আমলাতন্ত্রের জোটের কাছে রাজনীতিবিদরা পরাজিত হতে শুরু করল । রাজনীতিকদের মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতা মুসলিম লীগে ছিল না, যারা এই ষড়যন্ত্রকারী আমলাতন্ত্রকে দাবিয়ে রাখতে পারে । নাজিমুদ্দিন সাহেব গণতন্ত্রের মুলে কুঠারাঘাত করলেন। কারণ জাতীয় পরিষদের সদস্য নন, েএকজন সরকারি কর্মচারী, তাকে চাকরি থেকে ড়দত্যাগ করিয়ে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার কি অর্থ তাকতে পারে ? (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা : ১৯৫ - ৯৬) ০২
এদিকে বাঙালিরা অনুভব করতে শুরু করেছে যে, তাদের উপর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে, ব্যবসা-বানিজ্য, সরকারি চাকরিতেও অবিচার চলছে । পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে রাজধানী হওয়াতে বাঙালিরা সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হতে শুরু করেছে । পুর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবি এবং শেষ পর্ন্ত সর্বদলীয় ‘গ্রান্ড ন্যাশনাল কনভেনশনে” স্বায়ত্বশাসনের দাবি করায় বাঙালিদের মনোভাব ফুটে উঠেছে । পুর্ব বাংলার মুসলিম লীগ নেতারা যতই জনগণের কাছ থেকে দুরে সরে যাচ্ছিলেন ততই পশ্চিম পাকিস্তানের কোটারি ও আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভর করতে শুরু করেছেন ক্ষমতায় থাকার জন্য । খাজা নাজিমুদ্দিন ও জনাব নুরুল আমিন জনগণকে ভয় রতে শুরু করেছেন । সেইজন্য টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরে অনেকগুলি আইনসভার সদস্যের পদ খালি হওয়া সত্বেও উপনির্বাচন দিতে সাহস পাচ্ছিলের না । (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা : ১৯৮) ০৩
মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীতে এই প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল । দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নাই । জনাব নুরুল আমিন বুঝতে পারলেন না, আমলাতন্ত্র তাকেকোথায় নিয়ে গেল । গুলি হল মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের এরিয়ার ভেতরে, রাস্তায়ও নয় । ১৪৪ ধার ভঙ্গ করলেও গুলি না করে গ্রেফতার করলেই তো চলত । আমি ভবলাম দেখব কি না জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে আর উপায় নাই । মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে । বাংলাদেশের মুসলিম লীগ নেতারা বুঝলেন না, কে বা কারা খাজা সাহেবকে উর্দুর কথা বলালেন, আর কেনই বা তিনি বললেন ! তারা তো জানতেন উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলে মিস্টার জিন্নাহর মত নেতাও বাধা না পেয়ে ফিরে যেতে পারেন নাই । সেখানে খাজা সাহেব এবং তার দলবলের অবস্থা কি হবে ? একটা বিশেষ গোষ্ঠী যারা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করতে শুরু করেছেন, তারাই তাকে জনগণ থেকে যাতে দুরে সরে পড়েন তার বন্দোবস্ত করলেন । সাথে সাথে তার সমর্থক নুরুল আমিন সাহেবও যাতে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান সে ব্যবস্থাও করালেন । কারণ ভবিষ্যতে এই বিশেষ গোষ্ঠী কোনো একটা গভীর ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে । যদিও খাজা সাহেবের জনসমর্থন কোনোদিন বাংলাদেশে ছিল না । (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা : ২০৪) ০৪
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




